মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৮- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৪৯৪
- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৪৯৪। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত, একদা (আমার পিতা) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একদল সাহাবার সহিত রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ইবনে ছাইয়্যাদের কাছে গমন করিলেন। তাঁহারা সকলে ইবনে ছাইয়্যাদকে বনী মাগালার টিলার পাদদেশে অন্যান্য বালকদের সহিত খেলাধুলা করিতে দেখিতে পান। সেই সময় ইবনে ছাইয়্যাদ সাবালকত্বে পৌঁছার কাছাকাছি বয়সী ছিল। কিন্তু সে নবী (ছাঃ)-এর আগমন অনুভব করিতে পারে নাই, অবশেষে হুযূর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহার পিঠে হাত মারিয়া বলিলেন: তুমি কি সাক্ষ্য প্রদান কর যে, আমি আল্লাহর রাসূল? তখন সে রাসুলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর দিকে তাকাইয়া বলিল, আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল। অতঃপর ইবনে ছাইয়্যাদ রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-কে লক্ষ্য করিয়া বলিল, আপনি কি সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, আমি (ইবনে ছাইয়্যাদ) আল্লাহর রাসূল? তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া বলিলেন, আমি আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনিয়াছি। ইহার পর তিনি ইবনে ছাইয়্যাদকে জিজ্ঞাসা করিলেন; তুমি কি দেখিতে পাও? সে বলিল, আমার কাছে সত্যবাদী (ফিরিশতা) ও মিথ্যাবাদী (শয়তান) উভয়ই আগমন করিয়া থাকে। তখন রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন; তোমার নিকট প্রকৃত ব্যাপার এলোমেলো হইয়া গিয়াছে। হুযুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন; আমি (আমার অন্তরে) একটি বিষয় তোমার নিকট গোপন করিয়াছি, (যদি পার উহা কি বলিয়া দাও।) বর্ণনাকারী বলেন, সেই সময় হুযূর (ছাঃ) يومَ تَأتي السَّماءُ بدُخانٍ مُبينٍ তাহা হইতে গোপন রাখিলেন। ইবনে ছাইয়্যাদ বলিল, লুক্কায়িত কথা হইল, 'দোখ' (ধোঁয়া)। হুযুর (ছাঃ) বলিলেন; তুমি দূর হও। তুমি কখনও নিজের সীমার বাহিরে যাইতে পারিবে না। (অর্থাৎ, জ্ঞানপ্রাপ্তির বিশেষ উৎস ওহী সম্পর্কে তোমার কোন ধারণাই নাই।) এই সময় উমর (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমাকে অনুমতি প্রদান করুন, আমি তাহার গর্দান উড়াইয়া দেই। উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন; ইহা যদি সেই (দাজ্জাল) হয়, তাহা হইলে তুমি তাহাকে কাবু করিতে সক্ষম হইবে না। আর যদি সে না হয়, তাহা হইলে তাহাকে হত্যা করায় কোন কল্যাণ নাই।

ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, ইহার পর একদিন রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হযরত উবাই ইবনে কা'ব আনসারী (রাঃ) সেই খেজুর বাগানের দিকে রওয়ানা হইলেন, যেখানে ইবনে ছাইয়্যাদ ছিল। তিনি খেজুর গাছের আড়ালে লুকাইয়া অগ্রসর হইলেন, তাঁহার লক্ষ্য ছিল, ইবনে ছাইয়্যাদ তাহাকে দেখিবার আগেই তিনি তাহার কিছু কথা শুনিয়া লইবেন। তখন ইবনে ছাইয়্যাদ একখানা চাদর জড়াইয়া তাহার বিছানায় শোয়া ছিল এবং গুনগুন শব্দ করিতেছিল। তখন ইবনে ছাইয়্যাদের মা দেখিতে পাইল, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর গাছের শাখার আড়ালে রহিয়াছেন। সুতরাং সে ইবনে ছাইয়্যাদকে ডাক দিল, হে ছাফ্। আর ইহা ইবনে ছাইয়্যাদের নাম, এই যে মুহাম্মাদ! তৎক্ষণাৎ ইবনে ছাইয়্যাদ নিবৃত্ত হইয়া গেল। রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, যদি তাহার মা তাহাকে অমনি থাকিতে দিত, তাহা হইলে সমস্ত কিছু স্পষ্ট হইয়া যাইত। আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, ইহার পর রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনগণের মধ্যে (ভাষণ দিতে) দাড়াইলেন। আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করিয়া দাজ্জালের বিষয় উল্লেখ করিয়া বলিলেন: আমি অবশ্যই তোমাদিগকে দাজ্জাল সম্পর্কে বিশেষভাবে সাবধান করিয়া দিতেছি। বস্তুতঃ এমন কোন নবী অতীত হন নাই যিনি তাহার জাতিকে দাজ্জাল সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করেন নাই। নূহ (আঃ)-ও তাঁহার কওমকে ভয় প্রদর্শন করিয়াছেন; কিন্তু আমি তাহার সম্পর্কে এমন একটি কথা বলিতে চাই, যাহা অন্য কোন নবী তাঁহার জাতিকে বলেন নাই। তোমরা জানিয়া রাখ, সে (দাজ্জাল) কানা। আর তোমরা ইহাও জানিয়া রাখ যে, আল্লাহ্ কানা নহেন। মোত্তাঃ
كتاب الفتن
بَاب قصَّة ابْن الصياد: الْفَصْل الأول
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ عُمَرَ بن الْخطاب انْطَلَقَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَهْطٍ مِنْ أَصْحَابِهِ قِبَلَ ابْنِ الصياد حَتَّى وجدوهُ يلعبُ مَعَ الصّبيانِ فِي أُطُمِ بَنِي مَغَالَةَ وَقَدْ قَارَبَ ابْنُ صَيَّادٍ يَوْمَئِذٍ الْحُلُمَ فَلَمْ يَشْعُرْ حَتَّى ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ظَهْرَهُ بِيَدِهِ ثمَّ قَالَ: «أتشهدُ أَنِّي رسولُ الله؟» فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ الْأُمِّيِّينَ. ثُمَّ قَالَ ابْنُ صَيَّادٍ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟ فَرَصَّهُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «آمَنت بِاللَّه وبرسلِه» ثمَّ قَالَ لِابْنِ صيَّاد: «مَاذَا تَرَى؟» قَالَ: يَأْتِينِي صَادِقٌ وَكَاذِبٌ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُلِّطَ عَلَيْكَ الْأَمْرُ» . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي خَبَّأْتُ لَكَ خَبِيئًا» وَخَبَّأَ لَه: (يومَ تَأتي السَّماءُ بدُخانٍ مُبينٍ) فَقَالَ: هُوَ الدُّخُّ. فَقَالَ: «اخْسَأْ فَلَنْ تَعْدُوَ قَدْرَكَ» . قَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَأْذَنُ لي فِي أَنْ أَضْرِبَ عُنُقَهُ؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ يَكُنْ هُوَ لَا تُسَلَّطْ عَلَيْهِ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ هُوَ فَلَا خير لَك فِي قَتْلِهِ» . قَالَ ابْنُ عُمَرَ: انْطَلَقَ بَعْدَ ذَلِكَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بْنُ كَعْبٍ الْأَنْصَارِيُّ يَؤُمَّانِ النَّخْلَ الَّتِي فِيهَا ابْنُ صَيَّادٍ فَطَفِقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ وَهُوَ يَخْتِلُ أنْ يسمعَ مِنِ ابْنِ صَيَّادٍ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ يَرَاهُ وَابْنُ صَيَّادٍ مُضْطَجِعٌ عَلَى فِرَاشِهِ فِي قَطِيفَةٍ لَهُ فِيهَا زَمْزَمَةٌ فَرَأَتْ أُمُّ ابْنِ صَيَّادٍ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ. فَقَالَتْ: أَيْ صَافُ - وَهُوَ اسْمُهُ - هَذَا مُحَمَّدٌ. فَتَنَاهَى ابْنُ صَيَّادٍ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ تَرَكَتْهُ بَيَّنَ» . قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسَ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ: «إِنِّي أُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا وَقَدْ أَنْذَرَ قَوْمَهُ لَقَدْ أَنْذَرَ نُوحٌ قَوْمَهُ وَلَكِنِّي سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইবনে ছাইয়্যাদ মদীনার এক ইহুদীর সন্তান। কেহ কেহ তাহাকে ইবনে ছায়েদও বলিয়াছেন । কাহারও কাহারও ধারণা, ইবনে ছাইয়্যাদই দাজ্জাল। তবে অনেকের মতে এই কথাটি সহীহ্ নহে। কেননা, সে মদীনাতেই মরিয়া গিয়াছে। আল্লামা ইবনে হাজার আস্কালানী 'ফতহুল বারী' গ্রন্থে বলিয়াছেন, শেষ যমানায় যেই দাজ্জাল বাহির হওয়ার কথা সহীহ্ হাদীসসমূহে উল্লেখ রহিয়াছে, ইবনে ছাইয়্যাদের মধ্যে উহার কিছু কিছু নিদর্শন বিদ্যমান ছিল, তবে সে প্রকৃত দাজ্জাল নহে ।

ইবনে ছাইয়্যাদ মদীনার এক ইহুদী সন্তান। সে জ্যোতিষী বা গণক হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিল। তাহার তেলেসমাতি কর্মকাণ্ডে প্রথম প্রথম সাহাবায়ে কেরামদের ধারণা হইয়াছিল, ইহাই দাজ্জাল অথবা দাজ্জালদের মধ্যে অন্যতম। অবশ্য পরে সে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছিল।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান