মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৮- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৪৭৬
- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা
৫৪৭৬। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেনঃ একসময় দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটিবে এবং একজন মর্দে মুসলিম তাহার সম্মুখে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হইবে। তখন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একদল লোক অর্থাৎ, দাজ্জালের বাহিনীর সহিত তাহার সাক্ষাৎ ঘটিবে। তাহারা জিজ্ঞাসা করিবে, তুমি কোথায় যাইতে ইচ্ছা করিতেছ? সে বলিবে, ঐ ব্যক্তির নিকট যাইতে চাই যে বাহির হইয়াছে। রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; তখন তাহারা লোকটিকে বলিবে, তুমি কি আমাদের রবের (দাজ্জালের) প্রতি ঈমান স্থাপন কর নাই ? সে বলিবে, আমাদের প্রকৃত রব তো অজানা নহেন। তখন তাহারা বলিবে, এই লোকটিকে কতল করিয়া ফেল। তখন তাহারা পরস্পরে বলিবে, তোমাদের রব (দাজ্জাল) কি এই বলিয়া নিষেধ করে নাই যে, তাহার সম্মুখে উপস্থিত করা ব্যতীত যেন কাহাকেও তোমরা হত্যা না কর ? তখন তাহারা লোকটিকে দাজ্জালের নিকট লইয়া আসিবে। যখন সেই মর্দে মু'মেন দাজ্জালকে দেখিবে, তখনই সে লোকদিগকে উদ্দেশ্য করিয়া। বলিবে, হে লোকসকল! এই তো সেই দাজ্জাল, যাহার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছিলেন। রাসুলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন; এই কথা শুনিয়া দাজ্জাল ঐ লোকটিকে কঠোরতম সাজা দেওয়ার নির্দেশ করিবে এবং বলিবে, ইহাকে কষিয়া ধর এবং তাহার মাথায় জোরে আঘাত কর। তখন লোকটিকে এমনভাবে প্রহার করা হইবে যে, তাহার পিঠ ও পেট চেপ্‌টা হইয়া যাইবে। হুযুর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন; তখন দাজ্জাল বলিবে—তুমি কি এখনও আমার প্রতি ঈমান আনিবে না? জবাবে লোকটি বলিবে, “তুমিই তো মিথ্যাবাদী মাসীহ্। এইবার দাজ্জাল লোকটিকে করাত দ্বারা চিরিয়া ফেলার নির্দেশ দিবে। তখন সেই মর্দে মু'মেনকে মাথা হইতে চিরা হইবে, এমন কি তাহার পদদ্বয় পর্যন্ত দ্বিখন্ডিত করা হইবে। অতঃপর দাজ্জাল সেই খন্ডিত দুই টুকরার মাঝখান দিয়া হ্যাঁটিয়া যাইবে তারপর সে উক্ত খণ্ডকে লক্ষ্য করিয়া বলিবে, 'তুমি দাঁড়াইয়া যাও।' এইবার লোকটি জীবিত হইয়া সোজাভাবে দণ্ডায়মান হইবে। অতঃপর দাজ্জাল তাহাকে বলিবে, এখন কি তুমি আমার প্রতি ঈমান আনিবে ? উত্তরে সেই মর্দে মু'মেন বলিবে, এখন তো আমার বিশ্বাসের দৃঢ়তাই বৃদ্ধি পাইয়াছে। রাসুলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন; অতঃপর সেই মর্মে মু'মেন লোকদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিবে, হে লোকসকল! তোমরা জানিয়া রাখ। এই দাজ্জাল এই যাবৎ আমার সহিত যাহাকিছু করিয়াছে, আমার পরে আর কোন মানুষের সহিত তাহা করিতে সক্ষম হইবে না। হুযূর (ছাঃ) বলেন; এইবার দাজ্জাল তাহাকে পুনরায় জবাই করিতে উদ্যত হইবে। কিন্তু লোকটির গর্দান ও সীনার মধ্যবর্তী স্থান তামায় পরিণত করিয়া দেওয়া হইবে, ফলে সে তাহাকে হত্যা করিতে সক্ষম হইবে না। হুযুর (ছাঃ) বলেন; এইবার দাজ্জাল তাহার হাত পা বাঁধিয়া ফেলিবে এবং তাহাকে (অগ্নির মধ্যে) নিক্ষেপ করিবে। উপস্থিত লোকেরা ধারণা করিবে, দাজ্জাল তাহাকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করিয়াছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে তাহাকে জান্নাতের মধ্যে নিক্ষেপ করা হইয়াছে।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; এই মর্দে মু'মেনই হইবে রাব্বুল আলামীনের নিকট সর্বাপেক্ষা বড় শহীদ ব্যক্তি। —মুসলিম
كتاب الفتن
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَخْرُجُ الدَّجَّالُ فَيَتَوَّجُهُ قِبَلَهُ رَجُلٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فَيَلْقَاهُ الْمَسَالِحُ مَسَالِحُ الدَّجَّالِ. فَيَقُولُونَ لَهُ: أَيْنَ تَعْمِدُ؟ فَيَقُولُ: أَعْمِدُ إِلَى هَذَا الَّذِي خَرَجَ. قَالَ: فَيَقُولُونَ لَهُ: أَو مَا تبَارك وَتَعَالَى ؤمن بِرَبِّنَا؟ فَيَقُولُ: مَا بِرَبِّنَا خَفَاءٌ. فَيَقُولُونَ: اقْتُلُوهُ. فَيَقُولُ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ: أَلَيْسَ قَدْ نَهَاكُمْ رَبُّكُمْ أَنْ تَقْتُلُوا أَحَدًا دُونَهُ . قَالَ: فَيَنْطَلِقُونَ بِهِ إِلَى الدَّجَّالِ فَإِذَا رَآهُ الْمُؤْمِنُ قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ هَذَا الدَّجَّالُ الَّذِي ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ . قَالَ: فَيَأْمُرُ الدَّجَّال بِهِ فَيُشَبَّحُ. فَيَقُولُ: خُذُوهُ وَشُجُّوهُ فَيُوسَعُ ظَهْرُهُ وَبَطْنُهُ ضَرْبًا . قَالَ: فَيَقُول: أَوَ مَا تُؤْمِنُ بِي؟ قَالَ: فَيَقُولُ: أَنْتَ الْمَسِيحُ الْكَذَّابُ . قَالَ: «فيؤْمر بِهِ فَيْؤشَرُ بالمنشارِ مِنْ مَفْرِقِهِ حَتَى يُفَرَّقَ بَيْنَ رِجْلَيْهِ» . قَالَ: ثُمَّ يَمْشِي الدَّجَّالُ بَيْنَ الْقِطْعَتَيْنِ ثُمَّ يَقُولُ لَهُ: أتؤمنُ بِي؟ فَيَقُول: مَا ازْدَدْتُ إِلَّا بَصِيرَةً . قَالَ: ثُمَّ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ لَا يَفْعَلُ بَعْدِي بِأَحَدٍ مِنَ النَّاسِ . قَالَ: «فَيَأْخُذُهُ الدَّجَّالُ لِيَذْبَحَهُ فَيُجْعَلُ مَا بَيْنَ رَقَبَتِهِ إِلَى تَرْقُوَتِهِ نُحَاسًا فَلَا يَسْتَطِيع إِليه سَبِيلا» قَالَ: «فَيَأْخذهُ بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَيَقْذِفُ بِهِ فَيَحْسِبُ النَّاسُ أَنَّمَا قَذَفَهُ إِلَى النَّارِ وَإِنَّمَا أُلْقِيَ فِي الْجَنَّةُ» فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا أَعْظَمُ النَّاسِ شَهَادَةً عِنْدَ رَبِّ الْعَالَمِينَ» . رَوَاهُ مُسلم
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৫৪৭৬ | মুসলিম বাংলা