মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৮- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৪২২
প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবিগ্রহ সম্পৰ্কীয়
৫৪২২। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত কায়েম হইবে না; যেই পর্যন্ত না এমন সময় আসিবে যে, মীরাস বণ্টিত হইবে না এবং গনীমতের মালেও লোকেরা আনন্দিত হইবে না। অতঃপর হযরত ইবনে মাসউদ [(রাঃ) ইহার ব্যাখ্যায়] বলিয়াছেন, দুশমন অর্থাৎ, রোমক নাসারাগণ সিরিয়ার মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক বিরাট সেনাদল সমাবেশ করিবে। আর মুসলমানগণও রোমকদের মুকাবিলায় এক বিরাট বাহিনী একত্রিত করিবে। অতঃপর মুসলমানগণ নিজেদের একটি দলকে নির্বাচন করিয়া শত্রুর মুকাবিলায় মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধ চালাইয়া যাইবার জন্য পাঠাইয়া দিবে, পূর্ণ বিজয় লাভ না করিয়া যাহারা ফিরিয়া আসিবে না। তারপর উভয়পক্ষ যুদ্ধ করিতে থাকিবে রাত্রির অন্ধকার নামিয়া বাধা সৃষ্টি না করা পর্যন্ত। অতঃপর উভয় পক্ষের প্রত্যেকেই আপন আপন শিবিরে ফিরিয়া আসিবে। কেহই কাহারও উপর বিজয়ী হইবে না। অবশ্য উভয় সেনাদলের অগ্রগামী সৈন্যরা সকলেই নিহত হইয়া যাইবে। অতঃপর (দ্বিতীয় দিন) মুসলমানগণ নিজেদের একটি দলকে নির্বাচন করিয়া মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধ চালাইয়া যাইবার জন্য প্রেরণ করিবে, যাহারা বিজয়ী হওয়া ছাড়া ফিরিয়া আসিবে না বলিয়া প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইবে, তারপর উভয় পক্ষ যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া পড়িবে। অবশেষে রাত্র তাহাদের মধ্যে আড়াল হইয়া যাইবে এবং উভয় দলই বিজয় ছাড়া ফিরিয়া আসিবে। ইহাদের অগ্রগামী দলও নিহত হইয়া যাইবে। ইহার পর তৃতীয় দিনও মুসলমানগণ একদল সৈন্য প্রেরণ করিবে এবং বিজয়ী হওয়া ব্যতীত ফিরিয়া আসিবে না বলিয়া প্রতিজ্ঞা করিবে। অতঃপর সন্ধ্যা পর্যন্ত উভয় পক্ষ যুদ্ধ চালাইয়া যাইবে। পরিশেষে উভয় পক্ষই বিজয়ী হওয়া ছাড়া ফিরিয়া আসিবে। ইহাদের অগ্রগামী দলটিও নিঃশেষ হইয়া যাইবে। অতঃপর চতুর্থ দিন মুসলমানদের অবশিষ্ট সকলেই একত্রে মুকাবিলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করিবে, তখন আল্লাহ্ তা'আলা কাফেরদিগকে পরাজিত করিয়া মুসলমানদিগকে তাহাদের উপর বিজয় দান করিবেন। এই যুদ্ধে মুসলমানগণ এমন লড়াই করিবে যে, ইতিপূর্বে এই ধরনের ঘোরতর যুদ্ধ আর কখনও দেখা যায় নাই। এমন কি যদি কোন উড়ন্ত পাখী উক্ত লড়াইয়ের ময়দানের নিকট দিয়া অতিক্রম করে, তবে উহা সেনাদলকে পিছনে ফেলিয়া যাইতে সক্ষম হইবে না। বরং উহা মরিয়া পড়িয়া যাইবে (পচা লাশের দুর্গন্ধের কারণে অথবা যুদ্ধক্ষেত্র অতিক্রম করিতে অক্ষম হইয়া)। কোন পিতা বা পরিবারের একশত সন্তান থাকিলে যুদ্ধ শেষে গনিয়া দেখিবে, উহাদের মধ্যে মাত্র একটি লোক বাঁচিয়া আছে, এমতাবস্থায় কিভাবে গনীমতের মাল দ্বারা কোন ব্যক্তি আনন্দিত হইতে পারে ? আর কারই বা মীরাস বন্টিত হইবে? মুসলমাগণ এই অবস্থায় থাকিতেই হঠাৎ ইহা অপেক্ষা আরও একটি বিরাট যুদ্ধের সংবাদ শুনিতে পাইবে। তাহারা এই ঘোষণা শুনিতে পাইবে যে, তাহাদের অনুপস্থিতিতে দাজ্জাল (সদলবলে) তাহাদের পরিবার-পরিজনদের মধ্যে পৌঁছিয়া গিয়াছে। এই সংবাদ শ্রবণমাত্রই তাহাদের হাতে যাহাকিছু ছিল উহা সেখানে ফেলিয়া দিয়াই দাজ্জালের উদ্দেশ্যে ছুটিয়া চলিবে এবং শত্রুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিবার জন্য দশ জন অশ্বারোহীকে অগ্রগামী হিসাবে প্রেরণ করিবে। রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন : যেই দশ জন অশ্বারোহীকে অগ্রগামী হিসাবে পাঠান হইবে, আমি নিশ্চিতভাবে তাহাদের ও তাহাদের বাপ-দাদাদের নাম-ধাম এবং তাহাদের অশ্বগুলির বর্ণ কিরূপ হইবে উহা অবগত আছি। তাহারা হইবে সর্বাপেক্ষা উত্তম অশ্বারোহী। অথবা বলিয়াছেন, তৎকালীন ভূপৃষ্ঠের উত্তম সওয়ারীদের অন্যতম। —মুসলিম
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: إِنَّ الساعةَ لَا تقومُ حَتَّى لَا يُقْسَمَ ميراثٌ وَلَا يُفْرَحَ بِغَنِيمَةٍ. ثُمَّ قَالَ: عَدُوٌّ يَجْمَعُونَ لِأَهْلِ الشَّامِ وَيَجْمَعُ لَهُمْ أَهْلُ الْإِسْلَامِ (يَعْنِي الرّوم) فيتشرَّطُ الْمُسْلِمُونَ شُرْطَةً لِلْمَوْتِ لَا تَرْجِعُ إِلَّا غَالِبَةً فَيَقْتَتِلُونَ حَتَّى يَحْجِزَ بَيْنَهُمُ اللَّيْلُ فَيَفِيءُ هَؤُلَاءِ وَهَؤُلَاء كل غير غَالب وتفنى الشرطة ثمَّ يَتَشَرَّطُ الْمُسْلِمُونَ شُرْطَةً لِلْمَوْتِ لَا تَرْجِعُ إِلَّا غالبة فيقتتلون حت يَحْجِزَ بَيْنَهُمُ اللَّيْلُ فَيَفِيءُ هَؤُلَاءِ وَهَؤُلَاءِ كُلٌّ غير غَالب وتفنى الشرطة ثمَّ يشْتَرط الْمُسْلِمُونَ شُرْطَةً لِلْمَوْتِ لَا تَرْجِعُ إِلَّا غَالِبَةً فيقتتلون حَتَّى يُمْسُوا فَيَفِيءُ هَؤُلَاءِ وَهَؤُلَاءِ كُلٌّ غَيْرُ غَالِبٍ وَتَفْنَى الشُّرْطَةُ فَإِذَا كَانَ يَوْمُ الرَّابِعِ نَهَد إِليهم بقيةُ أهلِ الإِسلام فيجعلُ الله الدَبَرةَ عَلَيْهِم فيقتلون مَقْتَلَةً لَمْ يُرَ مِثْلُهَا حَتَّى إِنَّ الطَّائِرَ ليمر يجنابتهم فَلَا يُخَلِّفُهُمْ حَتَّى يَخِرَّ مَيِّتًا فَيَتَعَادَّ بَنُو الْأَبِ كَانُوا مِائَةً فَلَا يَجِدُونَهُ بَقِيَ مِنْهُمْ إِلَّا الرَّجُلُ الْوَاحِدُ فَبِأَيِّ غَنِيمَةٍ يُفْرَحُ أَوْ أيّ مِيرَاث يقسم؟ فَبينا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ سَمِعُوا بِبَأْسٍ هُوَ أَكْبَرُ مِنْ ذَلِكَ فَجَاءَهُمُ الصَّرِيخُ: أَنَّ الدَّجَّالَ قَدْ خَلَفَهُمْ فِي ذَرَارِيِّهِمْ فَيَرْفُضُونَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ وَيُقْبِلُونَ فَيَبْعَثُونَ عَشْرَ فَوَارِسَ طَلِيعَةً . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَأَعْرِفُ أَسْمَاءَهُمْ وَأَسْمَاءَ آبَائِهِمْ وَأَلْوَانَ خُيُولِهِمْ هُمْ خَيْرُ فَوَارِسَ أَوْ مِنْ خَيْرِ فَوَارِسَ عَلَى ظَهْرِ الأَرْض يَوْمئِذٍ» . رَوَاهُ مُسلم
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান