মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৮- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৪২১
প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবিগ্রহ সম্পৰ্কীয়
৫৪২১। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হইবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না রোমকগণ (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) 'আমাক' অথবা 'দাবাক' নামক স্থানে অবতরণ করিবে এবং মদীনার তৎকালীন উত্তম লোকদের একটি সেনাদল উহাদের মুকাবিলায় বাহির হইবে। লড়াইয়ের জন্য যখন মুসলমানগণ কাতারবন্দী হইবে, তখন রোমকগণ বলিবে, তোমরা আমাদের জন্য ঐ সব লোকদের রাস্তা ছাড়িয়া দাও, যাহারা আমাদের সহিত যুদ্ধ করিয়া আমাদের কিছুসংখ্যক লোকজনকে কয়েদ করিয়া নিয়া আসিয়াছে। তাহাদের সহিতই আমরা যুদ্ধ করিব। মুসলমানগণ বলিবেন, আল্লাহর কসম! ইহা কখনও হইতে পারে না। আমরা আমাদের সেই সমস্ত মুসলমান ভাইদিগকে তোমাদের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য ছাড়িয়া দিতে পারি না। ইহার পর মুসলমানগণ রোমক কাফেরদের সহিত যুদ্ধে লিপ্ত হইবে, কিন্তু মুসলমানদের এক-তৃতীয়াংশ রোমকদের মুকাবিলা হইতে পলায়ন করিবে। আল্লাহ্ এই পলায়নকারীদের তওবা কখনও কবুল করিবেন না। আর এক-তৃতীয়াংশ নিহত হইবে, তাহারা আল্লাহ্ তা'আলার নিকট উত্তম শহীদ হিসাবে গণ্য হইবে। আর এক-তৃতীয়াংশ রোমকদের উপর বিজয়ী হইবে, আল্লাহ্ তা'আলা তাহাদিগকে কখনও ফিতনায় নিপতিত করিবেন না। অবশেষে তাহারাই কনস্টান্টিনোপল জয় করিবে। অতঃপর যখন তাহারা গনীমতের মাল-সম্পদ বণ্টনে ব্যস্ত হইবে এবং তাহাদের তরবারিসমূহ যয়তুন গাছের সাথে ঝুলাইয়া রাখিবে, ঠিক এমতাবস্থায় হঠাৎ শয়তান এই ঘোষণা দিবে যে, তোমাদের অনুপস্থিতিতে মাসীহে দাজ্জাল তোমাদের বাড়ী-ঘরে ঢুকিয়া পড়িয়াছে। এতদশ্রবণে মদীনার সেই সেনাদল সেই দিকে বাহির হইয়া পড়িবে। অথচ সেই ঘোষণাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। যখন মুসলমানগণ কনস্টান্টিনোপল ত্যাগ করিয়া সিরিয়ায় প্রবেশ করিবে তখনই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটিবে। এই সময় মুসলমানগণ দাজ্জালের সহিত যুদ্ধ করিতে প্রস্তুতি নিতে থাকিবে এবং সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াইয়া যাইবে, তৎক্ষণাৎ নামাযের উদ্দেশ্যে (মুয়াযযিন কর্তৃক) একামত দেওয়া হইবে এবং এই মুহূর্তে হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আকাশ হইতে দামেশকের জামে মসজিদের মিনারায়) অবতরণ করিবেন এবং মুসলমানদিগকে ইমামতি করিয়া নামায পড়াইবেন। অতঃপর যখন আল্লাহর দুশমন (দাজ্জাল) তাঁহাকে দেখিতে পাইবে, তখন সে এমনিভাবে গলিয়া যাইতে থাকিবে যেমনিভাবে লবণ পানিতে গলিয়া যায়। আর যদি হযরত ঈসা (আঃ) তাহাকে এমনিতেই ছাড়িয়া দিতেন, তবুও সে এমনিতেই গলিয়া ধ্বংস হইয়া যাইত, কিন্তু 'আল্লাহ তা'আলা তাহাকে হযরত ঈসা (আঃ)-এর হাতেই হত্যা করাইবেন। অতঃপর হযরত ঈসা (আঃ) যেই বর্শা দ্বারা তাহাকে হত্যা করিবেন, রক্তমাখা সেই বর্শাটি তিনি লোকদিগকে সকলকেই দেখাইবেন। —মুসলিম
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَنْزِلَ الرُّومُ بِالْأَعْمَاقِ أَوْ بِدَابِقَ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِمْ جَيْشٌ مِنَ الْمَدِينَةِ مِنْ خِيَارِ أَهْلِ الْأَرْضِ يَوْمَئِذٍ فَإِذَا تَصَافُّوا قَالَتِ الرُّومُ: خَلُّوا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الَّذِينَ سَبَوْا مِنَّا نُقَاتِلْهُمْ فَيَقُولُ الْمُسْلِمُونَ: لَا وَاللَّهِ لَا نُخَلِّي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ إِخْوَانِنَا فَيُقَاتِلُونَهُمْ فَيَنْهَزِمُ ثُلُثٌ لَا يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ أَبَدًا وَيُقْتَلُ ثُلُثُهُمْ أَفْضَلُ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ اللَّهِ وَيَفْتَتِحُ الثُّلُثُ لَا يُفْتَنُونَ أَبَدًا فَيَفْتَتِحُونَ قسطنطينية فَبينا هُمْ يَقْتَسِمُونَ الْغَنَائِمَ قَدْ عَلَّقُوا سُيُوفَهُمْ بِالزَّيْتُونِ إِذْ صَاحَ فِيهِمُ الشَّيْطَانُ: إِنَّ الْمَسِيحَ قَدْ خَلَفَكُمْ فِي أَهْلِيكُمْ فَيَخْرُجُونَ وَذَلِكَ بَاطِلٌ فَإِذَا جاؤوا الشامَ خرجَ فَبينا هُمْ يُعِدُّونَ لِلْقِتَالِ يُسَوُّونَ الصُّفُوفَ إِذْ أُقِيمَتِ الصَّلَاة فَينزل عِيسَى بن مَرْيَمَ فَأَمَّهُمْ فَإِذَا رَآهُ عَدُوُّ اللَّهِ ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ فَلَوْ تَرَكَهُ لَانْذَابَ حَتَّى يَهْلِكَ وَلَكِنْ يَقْتُلُهُ اللَّهُ بِيَدِهِ فيريهم دَمه فِي حربته . رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

‘আ'মাক' ও ‘দাবাক' দামেশকের দুইটি জায়গার নাম। আর মদীনার সেনাদল মানে ইমাম মাহদীর অনুসারী মুসলমানগণ। (قسطنطينية) কনস্টান্টিনোপল তৎকালীন রোমের রাজধানী এবং সর্ববৃহৎ ও প্রসিদ্ধ শহর। সাহাবাদের যুগে ইহা মুসলমানদের দখলে আসিয়াছে। হযরত আবু আইউব আনসারী (রাঃ) এইখানেই শহীদ হন, বর্তমানে তাঁহার কবরও সেখানে ।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান