মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৩৪৫
প্রথম অনুচ্ছেদ - ভয় ও কান্না
৫৩৪৫। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বান্দাকে সেই অবস্থায় উঠান হইবে যেই অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করিয়াছে। —মুসলিম
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُبْعَثُ كُلُّ عَبْدٍ عَلَى مَا ماتَ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. অর্থাৎ, ঈমানে বা কুফরে, পাপ করিয়া বা পুণ্য করিয়া শেষ মুহূর্তে যেইভাব মৃত্যুবরণ করে, তাহাকে সেই অনুযায়ী জায়া দেওয়া হইবে।

২. এ হাদীছে জানানো হয়েছে, মানুষের মৃত্যু যে অবস্থায় হয় সেই অবস্থায়ই তাকে কবর থেকে ওঠানো হবে। যদি ভালো অবস্থায় মৃত্যু হয়, ভালো অবস্থায় ওঠানো হবে। আর মন্দ অবস্থায় মৃত্যু হলে মন্দ অবস্থায় ওঠানো হবে। এর ইঙ্গিত পোশাক-আশাকের দিকে নয় যে, ভালো কাপড় দিয়ে কাফন পরানো হলে সে ভালো কাফন নিয়ে উঠবে। কাফন তো পরানো হয় মৃত্যুর পর। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য আমল ও ইখলাস। অর্থাৎ যে আমলে রত থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়, সে অবস্থায় তাকে কবর থেকে ওঠানো হবে। যেমন হযরত ইবন 'আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, যে ব্যক্তি মুহরিম অবস্থায় মারা যায়, তার হাশর হবে তালবিয়া পাঠে রত অবস্থায়।কানযুল উম্মাল।
কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, কেউ যদি বাদ্যযন্ত্র হাতে থাকা অবস্থায় মারা যায়, তবে কবর থেকে সে এ অবস্থায় উঠবে যে, তার হাতে বাদ্যযন্ত্র থাকবে।
আমলে ইখলাস থাকা না থাকার বিষয়টাও এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন হযরত 'আব্দুল্লাহ ইবন 'আমর রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি যদি জিহাদে ধৈর্যশীল ও ছাওয়াবের আশাবাদী থাকা অবস্থায় নিহত হও, তবে তোমাকে কবর থেকে ধৈর্যশীল ও ছাওয়াবের আশাবাদীরূপে ওঠানো হবে। পক্ষান্তরে তুমি যদি নিহত হও রিয়াকার ও দর্পকারীরূপে, তবে তোমাকে ওঠানো হবে রিয়াকার ও দর্পকারীরূপেই।সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৫১৯; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ২৪৩৭; বায়হাকী, হাদীছ নং ১৮৫৪৮
যেমন অপর এক হাদীছে আছে, মানুষকে তাদের কবর থেকে ওঠানো হবে আপন আপন নিয়ত অনুযায়ী।মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯০৯০; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৪২২৯
কেউ জানে না কার কখন মৃত্যু হবে। মৃত্যুকালীন অবস্থায়ই যখন হাশর হবে, তখন প্রত্যেকের কর্তব্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উত্তম অবস্থায় কাটানো। প্রতিটি কাজ করবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মোতাবেক। প্রতিটি কথা ও কাজে উদ্দেশ্য রাখবে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি, যাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন খাঁটি অনুসারীরূপে মৃত্যু লাভ হয় এবং সে অবস্থায় কবর থেকে উঠা যায়। সতর্ক থাকতে হবে কোনও কথা ও কাজ যেন সুন্নতের পরিপন্থি না হয়। কোনও রকম বিদ'আত যেন স্পর্শ করতে না পারে। কে জানে কখন মৃত্যু হয়ে যাবে। আল্লাহ না করুন যদি বিদআতে রত থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়ে যায়, তবে সে অবস্থায়ই তো হাশর হবে। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ লাভের আশা কতটুকু থাকবে? আল্লাহ তা'আলা আমাদের প্রতি রহমত করুন এবং সুন্নত মোতাবেক জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজ সম্পন্ন করার তাওফীক দিন, আমীন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উত্তম অবস্থা তথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মোতাবেক কাটানোর প্রতি উৎসাহ দান করে।

খ. বার্ধক্যে পৌঁছে গেলে যেহেতু মৃত্যু অতি কাছে এসে যায়, তাই এ সময় সৎকর্মে অধিকতর ব্যস্ত থাকার অনুপ্রেরণাও এর দ্বারা লাভ হয়।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৫৩৪৫ | মুসলিম বাংলা