মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৩০৮
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) ও সবর (ধৈর্যধারণ) প্রসঙ্গে
৫৩০৮لأ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ)-এর যমানায় এমন দুই ভাই ছিল তাহাদের একজন নবী (ﷺ)-এর খেদমতে আসিত এবং অপর ভাই রুযী-রোযগার করিত। একদা এই পেশাদার ভাই হুযূর (ﷺ)-এর কাছে ঐ ভাইয়ের সম্পর্কে অভিযোগ করিল (যে, সে কাম-কাজ না করিয়া আমার উপর নির্ভরশীল রহিয়াছে,) তখন তিনি বলিলেনঃ হইতে পারে যে, তোমার সেই ভাইয়ের উসীলায় তোমাকে রিযক প্রদান করা হইতেছে। —তিরমিযী। তিনি বলিয়াছেন, হাদীসটি সহীহ্ গরীব।
وَعَن أنسٍ قَالَ: كَانَ أَخَوَانِ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانَ أَحَدُهُمَا يَأْتِي النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْآخَرُ يَحْتَرِفُ فَشَكا المحترف أَخَاهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «لَعَلَّكَ تُرْزَقُ بِهِ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث صَحِيح غَرِيب
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ বর্ণনায় যে দুই ভাইয়ের কথা বলা হয়েছে তাদের পরিচয় জানা যায় না। কিন্তু এতটুকু স্পষ্ট যে, তারা দু'জন সাহাবী ছিলেন। তাদের একজন নিয়মিত নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে আসতেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে সাহাবীগণের আগমন তো দীন শিক্ষার জন্যই হত। তিনি কখন কী বলেন এবং কী করেন, তারা গভীর মনোযোগের সঙ্গে তা লক্ষ করতেন। আর এভাবে তাদের দীনী ইলম হাসিল হত। তাদের মধ্যে অনেকে আয়-রোযগারের কাজও করতেন, পাশাপাশি তাঁর মজলিসে এসে দীনের শিক্ষাও লাভ করতেন। আবার অনেকে সর্বক্ষণই তাঁর মজলিসে (মসজিদে নববীতে) পড়ে থাকতেন। তারা 'ইলমে দীন হাসিলের জন্য নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। হাদীছটির বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, যার সম্পর্কে অভিযোগ করা হয়েছে তিনিও সেরকমই একজন সাহাবী ছিলেন। সর্বক্ষণ 'ইলমে দীন হাসিলে নিয়োজিত থাকার কারণে তার পক্ষে জীবিকা উপার্জন সম্ভব হত না। এতে তার ভাইয়ের উপর চাপ পড়ত। বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় উপার্জনকারী ভাই-ই তার ব্যয়ভার বহন করতেন। তিনি যে কোনও আয়-রোযগার করেন না, এ সম্পর্কে একদিন তার ভাই এসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ করলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এই বলে সান্ত্বনা দিলেন যে-لعلك ترزق به (সম্ভবত তার কারণেই তোমাকে রিয্ক দেওয়া হচ্ছে)। এ কথাটির দুই ব্যাখ্যা হতে পারে।
এক. তুমি যে তোমার ভাইয়ের সাহায্য করছ ও তার ব্যয়ভার বহন করছ, তাতে খুশি হয়ে আল্লাহ তা'আলাও তোমার সাহায্য করছেন এবং তোমার আয়-রোযগারে বরকত দিচ্ছেন। কেননা আল্লাহ তা'আলার নীতি হল- কোনও বান্দা যখন তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় লিপ্ত থাকে, তখন আল্লাহ তা'আলাও তার সাহায্য করতে থাকেন। যেমন এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে—
وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيْهِ
আল্লাহ বান্দার সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে। সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬৯৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৪৯৪৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৪২৫; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২২৫
দুই. তোমার ভাই যেহেতু 'ইলমে দীন হাসিলে রত আছে, তাই আল্লাহ তা'আলা তার জীবিকার দায়িত্ব নিজে নিয়ে নিয়েছেন। অর্থাৎ জীবিকার জন্য অন্যদের যেমন চেষ্টা করতে হয়, তার ক্ষেত্রে সেই চেষ্টার প্রয়োজন বাকি রাখেননি; বরং তিনি গায়েবীভাবেই এর ইস্তিজাম করেন। সেই ইন্ডিজামেরই একটা রূপ এই যে, অন্য কোনও বান্দাকে তার খেদমতে লাগিয়ে দেন এবং সে যাতে সহজে তার খেদমত করতে পারে সেজন্যে তার কামাই-রোযগারে বরকত দান করেন। সুতরাং তুমি যে কামাই-রোযগারে বরকত পাচ্ছ, খুবসম্ভব তা তার ‘ইলমে দীন হাসিলে রত থাকারই ফল।
প্রকাশ থাকে যে, 'ইলমে দীন হাসিল করা ও তার সেবায় নিয়োজিত থাকা দীনের শ্রেষ্ঠতম খেদমত। দীনের খেদমত করা এতবড় মর্যাদাকর কাজ যে, আল্লাহ তা'আলা এ কাজকে ‘তাঁর সাহায্য করা' নামে অভিহিত করেছেন। আর তিনি ঘোষণা করেছেন-
وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ
অর্থ : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাহায্য করবে, আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তার সাহায্য করবেন।সূরা হজ্জ, আয়াত ৪০
সে সাহায্যেরই একটা অংশ জীবিকার ব্যবস্থা করা। এক বর্ণনায় আছে-
من طلب العلم تكفل الله له برزقه
'যে ব্যক্তি ইলমে দীন সন্ধানে রত থাকে, আল্লাহ তা'আলা তার রিয্কের যিম্মাদারী গ্রহণ করে নেন।মুসনাদে আবী হানীফা (আবুন নু'আইম কর্তৃক বর্ণনা) ১/২০: তারীখে বাগদাদ (বাশশার সংস্করণ) ৪/২৯৬। বর্ণনাটি শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল। তবে একে মুনকারুল মতন বলাও ইশকাল থেরে খালি নয়।
এমনিতে তো সমস্ত সৃষ্টির জীবিকাই আল্লাহর হাতে। তা সত্ত্বেও যে বিশেষভাবে তালিবে 'ইলম সম্পর্কে বলা হয়েছে তার জীবিকার যিম্মাদারী আল্লাহর হাতে, তার অর্থ জীবিকার জন্য অন্যদের মত কষ্ট-পরিশ্রম ও দৌড়ঝাপ তাকে করতে হবে না। সে যেহেতু তার মাওলার ও দীনের খেদমতে নিয়োজিত আছে, তাই জীবিকার দৌড়ঝাপ থেকে আল্লাহ তাকে মুক্ত রাখেন এবং অকল্পনীয়ভাবে তার কাছে রিয্ক পৌঁছে দেন। সুতরাং তালিবে “ইলমের কর্তব্য আল্লাহ তা'আলার উপর পুরোপুরি তাওয়াক্কুল রাখা এবং আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যখন যে জীবিকা তার অর্জিত হয় তাতে সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত থাকা ।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহর উপর প্রকৃত তাওয়াক্কুল করলে আল্লাহ তা'আলা অতি সহজে জীবিকার ব্যবস্থা করে দেন।
খ. কারওই নিজ অর্থসম্পদকে কেবলই নিজ চেষ্টা-শ্রমের ফল মনে করা উচিত নয়। অসম্ভব নয় যে, অন্য কারও অসিলায় আল্লাহ তা'আলা তাকে তা দান করেছেন। তাই প্রত্যেকের উচিত নিজ অর্থসম্পদে অন্যেরও হক আছে বলে বিশ্বাস রাখা এবং সেই হক আদায়ে সচেষ্ট থাকা।
গ. 'ইলমে দীন হাসিলের মেহনত অনেক বড় মর্যাদাকর কাজ। এ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির জীবিকার যিম্মাদারী আল্লাহর উপর। তালিবে ইলমের উচিত অন্তরে সেই বিশ্বাস অটুট রাখা।
ঘ. যাদের অর্থ ও সম্পদ আছে তাদের সকলের কর্তব্য 'আলেম-উলামা ও তালিবে ‘ইলমের সেবায় নিয়োজিত থাকা এবং তা করতে পারাকে নিজের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় মনে করা।
এক. তুমি যে তোমার ভাইয়ের সাহায্য করছ ও তার ব্যয়ভার বহন করছ, তাতে খুশি হয়ে আল্লাহ তা'আলাও তোমার সাহায্য করছেন এবং তোমার আয়-রোযগারে বরকত দিচ্ছেন। কেননা আল্লাহ তা'আলার নীতি হল- কোনও বান্দা যখন তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় লিপ্ত থাকে, তখন আল্লাহ তা'আলাও তার সাহায্য করতে থাকেন। যেমন এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে—
وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيْهِ
আল্লাহ বান্দার সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে। সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬৯৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৪৯৪৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৪২৫; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২২৫
দুই. তোমার ভাই যেহেতু 'ইলমে দীন হাসিলে রত আছে, তাই আল্লাহ তা'আলা তার জীবিকার দায়িত্ব নিজে নিয়ে নিয়েছেন। অর্থাৎ জীবিকার জন্য অন্যদের যেমন চেষ্টা করতে হয়, তার ক্ষেত্রে সেই চেষ্টার প্রয়োজন বাকি রাখেননি; বরং তিনি গায়েবীভাবেই এর ইস্তিজাম করেন। সেই ইন্ডিজামেরই একটা রূপ এই যে, অন্য কোনও বান্দাকে তার খেদমতে লাগিয়ে দেন এবং সে যাতে সহজে তার খেদমত করতে পারে সেজন্যে তার কামাই-রোযগারে বরকত দান করেন। সুতরাং তুমি যে কামাই-রোযগারে বরকত পাচ্ছ, খুবসম্ভব তা তার ‘ইলমে দীন হাসিলে রত থাকারই ফল।
প্রকাশ থাকে যে, 'ইলমে দীন হাসিল করা ও তার সেবায় নিয়োজিত থাকা দীনের শ্রেষ্ঠতম খেদমত। দীনের খেদমত করা এতবড় মর্যাদাকর কাজ যে, আল্লাহ তা'আলা এ কাজকে ‘তাঁর সাহায্য করা' নামে অভিহিত করেছেন। আর তিনি ঘোষণা করেছেন-
وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ
অর্থ : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাহায্য করবে, আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তার সাহায্য করবেন।সূরা হজ্জ, আয়াত ৪০
সে সাহায্যেরই একটা অংশ জীবিকার ব্যবস্থা করা। এক বর্ণনায় আছে-
من طلب العلم تكفل الله له برزقه
'যে ব্যক্তি ইলমে দীন সন্ধানে রত থাকে, আল্লাহ তা'আলা তার রিয্কের যিম্মাদারী গ্রহণ করে নেন।মুসনাদে আবী হানীফা (আবুন নু'আইম কর্তৃক বর্ণনা) ১/২০: তারীখে বাগদাদ (বাশশার সংস্করণ) ৪/২৯৬। বর্ণনাটি শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল। তবে একে মুনকারুল মতন বলাও ইশকাল থেরে খালি নয়।
এমনিতে তো সমস্ত সৃষ্টির জীবিকাই আল্লাহর হাতে। তা সত্ত্বেও যে বিশেষভাবে তালিবে 'ইলম সম্পর্কে বলা হয়েছে তার জীবিকার যিম্মাদারী আল্লাহর হাতে, তার অর্থ জীবিকার জন্য অন্যদের মত কষ্ট-পরিশ্রম ও দৌড়ঝাপ তাকে করতে হবে না। সে যেহেতু তার মাওলার ও দীনের খেদমতে নিয়োজিত আছে, তাই জীবিকার দৌড়ঝাপ থেকে আল্লাহ তাকে মুক্ত রাখেন এবং অকল্পনীয়ভাবে তার কাছে রিয্ক পৌঁছে দেন। সুতরাং তালিবে “ইলমের কর্তব্য আল্লাহ তা'আলার উপর পুরোপুরি তাওয়াক্কুল রাখা এবং আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যখন যে জীবিকা তার অর্জিত হয় তাতে সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত থাকা ।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহর উপর প্রকৃত তাওয়াক্কুল করলে আল্লাহ তা'আলা অতি সহজে জীবিকার ব্যবস্থা করে দেন।
খ. কারওই নিজ অর্থসম্পদকে কেবলই নিজ চেষ্টা-শ্রমের ফল মনে করা উচিত নয়। অসম্ভব নয় যে, অন্য কারও অসিলায় আল্লাহ তা'আলা তাকে তা দান করেছেন। তাই প্রত্যেকের উচিত নিজ অর্থসম্পদে অন্যেরও হক আছে বলে বিশ্বাস রাখা এবং সেই হক আদায়ে সচেষ্ট থাকা।
গ. 'ইলমে দীন হাসিলের মেহনত অনেক বড় মর্যাদাকর কাজ। এ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির জীবিকার যিম্মাদারী আল্লাহর উপর। তালিবে ইলমের উচিত অন্তরে সেই বিশ্বাস অটুট রাখা।
ঘ. যাদের অর্থ ও সম্পদ আছে তাদের সকলের কর্তব্য 'আলেম-উলামা ও তালিবে ‘ইলমের সেবায় নিয়োজিত থাকা এবং তা করতে পারাকে নিজের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় মনে করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
