মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়
হাদীস নং: ৫০৮৮
১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৮৮। হযরত সাহল ইবনে মুয়া'য (রাঃ) তাঁহার পিতা হইতে বর্ণনা করেন, নবী (ﷺ) বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি ক্রোধকে সংযত করে, অথচ সে উহা চরিতার্থ করিতে পূর্ণ সক্ষম। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা'আলা তাহাকে সমস্ত সৃষ্টির সম্মুখে ডাকিবেন এবং যে হুর সে পছন্দ করে. তাহাকে উহার অনুমতি প্রদান করিবেন। —তিরমিযী ও আবু দাউদ। তিরমিযী বলিয়াছেন, এই হাদীসটি গরীব।
وَعَن سهلِ
بن معاذٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَى أَنْ يُنفِّذَه دعاهُ اللَّهُ على رؤوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ فِي أَيِّ الْحُورِ شَاءَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
بن معاذٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَى أَنْ يُنفِّذَه دعاهُ اللَّهُ على رؤوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ فِي أَيِّ الْحُورِ شَاءَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছ দ্বারা রাগ দমনের ফযীলত জানা যায়। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা রাগ দমনকারীকে সমস্ত মাখলুকের সামনে ডেকে নেবেন। এটা এক বিশাল মর্যাদার কথা। তারপর তাকে বড় বড় চোখ বিশিষ্ট যে-কোনও হুর বেছে নিতে বলবেন। এটা বাড়তি নিআমত। এমন মর্যাদা ও নিআমত যাকে দান করবেন, বোঝাই তো যাচ্ছে সে একজন জান্নাতবাসী। মর্ম এটা দাঁড়াল, ক্রোধ সংবরণকারী জান্নাতে যাবে। এ মর্মের এক হাদীছ হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত আছে। তাতে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি রাগ চরিতার্থের ক্ষমতা রাখে, তা সত্ত্বেও তা হজম করে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তর নিরাপত্তা ও ঈমান দ্বারা ভরে দেন। হযরত ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি রাগ সংযত করে, আল্লাহ তাআলা তার দোষ গোপন রাখেন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে–
وَسَارِعُوا إِلى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّلاتُ والأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ الَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي السَّراءِ وَالضَّرَّاءِ وَ الْكَلِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ : এবং নিজ প্রতিপালকের পক্ষ হতে মাগফিরাত ও সেই জান্নাত লাভের জন্য একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও, যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতূল্য। তা সেই মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর জন্য অর্থ) ব্যয় করে এবং যারা নিজের ক্রোধ হজম করতে ও মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত। আল্লাহ এরূপ পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন।
এ আয়াতে আল্লাহর কাছে ক্ষমালাভ ও জান্নাতে পৌঁছার জন্য যেসব গুণ অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে ক্রোধ হজম করাও একটি। এ প্রসঙ্গে একটি চমৎকার ঘটনা উল্লেখ করা যায়।
হযরত হুসাইন রাযি. এর পুত্র আলী যাইনুল আবিদীন রহ. একদিন ওযু করছিলেন। তাঁর গোলাম পানি ঢেলে দিচ্ছিল। ওষু শেষে গোলাম পাত্র সরাতে গেলে হযরত যাইনুল আবিদীন রহ.-এর মুখে তার আঘাত লাগে। তাতে তাঁর একটি দাঁত ভেঙে যায়। তিনি রাগত দৃষ্টিতে গোলামের দিকে তাকালেন। গোলাম ভয়ে বলে উঠল,
وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ
(যে রাগ হজম করে)।
সংগে সংগে তিনি বললেন, আমি রাগ হজম করলাম। একথা শুনে গোলামের মনে আশা জাগল। সে পরের অংশ উচ্চারণ করল,
وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ
(এবং যারা মানুষকে ক্ষমা করে দেয়)।
তিনি বললেন, আচ্ছা মাফ করে দিলাম। এবার গোলামের আশা তুঙ্গে উঠল। সে আয়াতের শেষাংশ পাঠ করল,
وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
(আল্লাহ ইহসানকারীকে ভালোবাসেন)।
তিনি বললেন, যাও, তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিলাম। সাহাবায়ে কিরাম ও বুযুর্গানে দীনের ক্রোধ সংবরণের এরকম হাজারও ঘটনা ইতিহাস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত আছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণের তাওফীক দান করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল, রাগের সময় ধৈর্যধারণ করা অত্যন্ত ফযীলতের কাজ।
খ. যার রাগ চরিতার্থ করার ক্ষমতা আছে, তার উচিত তা চরিতার্থের বাহাদুরী না দেখিয়ে রাগ হজমের বীরত্ব প্রদর্শন করা।
وَسَارِعُوا إِلى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّلاتُ والأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ الَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي السَّراءِ وَالضَّرَّاءِ وَ الْكَلِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ : এবং নিজ প্রতিপালকের পক্ষ হতে মাগফিরাত ও সেই জান্নাত লাভের জন্য একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও, যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতূল্য। তা সেই মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর জন্য অর্থ) ব্যয় করে এবং যারা নিজের ক্রোধ হজম করতে ও মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত। আল্লাহ এরূপ পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন।
এ আয়াতে আল্লাহর কাছে ক্ষমালাভ ও জান্নাতে পৌঁছার জন্য যেসব গুণ অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে ক্রোধ হজম করাও একটি। এ প্রসঙ্গে একটি চমৎকার ঘটনা উল্লেখ করা যায়।
হযরত হুসাইন রাযি. এর পুত্র আলী যাইনুল আবিদীন রহ. একদিন ওযু করছিলেন। তাঁর গোলাম পানি ঢেলে দিচ্ছিল। ওষু শেষে গোলাম পাত্র সরাতে গেলে হযরত যাইনুল আবিদীন রহ.-এর মুখে তার আঘাত লাগে। তাতে তাঁর একটি দাঁত ভেঙে যায়। তিনি রাগত দৃষ্টিতে গোলামের দিকে তাকালেন। গোলাম ভয়ে বলে উঠল,
وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ
(যে রাগ হজম করে)।
সংগে সংগে তিনি বললেন, আমি রাগ হজম করলাম। একথা শুনে গোলামের মনে আশা জাগল। সে পরের অংশ উচ্চারণ করল,
وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ
(এবং যারা মানুষকে ক্ষমা করে দেয়)।
তিনি বললেন, আচ্ছা মাফ করে দিলাম। এবার গোলামের আশা তুঙ্গে উঠল। সে আয়াতের শেষাংশ পাঠ করল,
وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
(আল্লাহ ইহসানকারীকে ভালোবাসেন)।
তিনি বললেন, যাও, তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিলাম। সাহাবায়ে কিরাম ও বুযুর্গানে দীনের ক্রোধ সংবরণের এরকম হাজারও ঘটনা ইতিহাস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত আছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণের তাওফীক দান করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল, রাগের সময় ধৈর্যধারণ করা অত্যন্ত ফযীলতের কাজ।
খ. যার রাগ চরিতার্থ করার ক্ষমতা আছে, তার উচিত তা চরিতার্থের বাহাদুরী না দেখিয়ে রাগ হজমের বীরত্ব প্রদর্শন করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
