মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৬৬৭
২. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনুমতি প্রার্থনা
৪৬৬৭। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা হযরত আবু মুসা (আশ'আরী [রাঃ]) আমাদের কাছে আসিয়া বলিলেন, হযরত উমর (রাঃ) আমাকে ডাকিয়া পাঠাইয়াছিলেন। সেই মতে আমি তাহার বাড়ীতে গেলাম এবং (প্রবেশের অনুমতির উদ্দেশ্যে) তিনবার সালাম করিলাম। কিন্তু তিনি সালামের জবাব দেন নাই, তাই আমি ফিরিয়া আসিলাম। পরে হযরত উমর (রাঃ) আমাকে (কৈফিয়তের সুরে) জিজ্ঞাসা করিলেন, আমার কাছে আসিতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়াছিল ? আমি বলিলাম, আমি অবশ্যই আপনার বাড়ীতে গিয়াছিলাম এবং বাড়ীর দরজায় দাঁড়াইয়া তিনবার সালামও করিয়াছিলাম। কিন্তু আপনারা আমার সালামের জওয়াব দেন নাই, তাই আমি ফিরিয়া আসিয়াছি। কেননা, রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন । তোমাদের কেহ তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরও যদি অনুমতি না পায়, সে যেন ফিরিয়া আসে। তখন হযরত উমর (রাঃ) বলিলেন, এই কথার উপর তুমি প্রমাণ পেশ কর। আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, তখন আমি আবু মুসা (রাঃ)-এর সাথে হযরত উমর (রাঃ)-এর নিকট গেলাম এবং সাক্ষ্য দিলাম (যে, হাদীসটি সহীহ)। — মোত্তাঃ
بَابُ الْإِسْتِئْذَانِ: الْفَصْل الأول
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: أَتَانَا أَبُو مُوسَى قَالَ: إِنَّ عُمَرَ أَرْسَلَ إِلَيَّ أَنْ آتِيَهُ فَأَتَيْتُ بَابَهُ فَسَلَّمْتُ ثَلَاثًا فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيَّ فَرَجَعْتُ. فَقَالَ: مَا مَنَعَكَ أَنْ تَأْتِيَنَا؟ فَقُلْتُ: إِنِّي أَتَيْتُ فَسَلَّمْتُ عَلَى بَابِكَ ثَلَاثًا فَلم تردَّ عليَّ فَرَجَعْتُ وَقَدْ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا اسْتَأْذَنَ أَحَدُكُمْ ثَلَاثًا فَلَمْ يُؤْذَنْ لَهُ فَلْيَرْجِعْ» . فَقَالَ عُمَرُ: أَقِمْ عَلَيْهِ الْبَيِّنَةَ. قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: فَقُمْتُ مَعَهُ فذهبتُ إِلى عمرَ فشهِدتُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. ‘ইসতিযান' অর্থঃ অনুমতি চাওয়া। আল্লাহর কালামে আছেঃ
لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَىٰ أَهْلِهَا অর্থাৎ, সালাম না করিয়া এবং অনুমতি না লইয়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করিও না। অন্য আয়াতে আছেঃ
وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا অর্থাৎ তোমাদের নাবালেগরাও যেন বালেগ হওয়ার পর (গৃহে প্রবেশ করিতে হইলে) অনুমতি প্রার্থনা করে। উলামাদের অনেকেই বলেন, শুধু সালাম করিলেই অনুমতি চাওয়া হইল। কিন্তু উসতাদুল মুহতারাম আল্লামা শায়খুল আদব (রহঃ) বলিয়াছেন, সালামের সাথে 'অনুমতি' চাওয়াই উত্তম। কেননা, আমাদের সমাজে 'সালাম' দ্বারা অনুমতি চাওয়ার রেওয়াজ নাই।
হযরত উমর (রাঃ) হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ)-কে মিথ্যাবাদী মনে করেন নাই। তবুও অন্যান্যদের সতর্ক করার উদ্দেশে প্রমাণ চাহিয়াছিলেন, যেন কেহ মিথ্যা হাসীস বর্ণনা করিতে সাহস না পায়।

২. বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।

খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৪৬৬৭ | মুসলিম বাংলা