মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ৪০৪২
৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সন্ধি স্থাপন
৪০৪২। হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা ও মারওয়ান ইবনে হাকাম (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তাহারা উভয়ে বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হোদাইবিয়ার বৎসর এক হাজারেরও অধিক সঙ্গী সাথে লইয়া রওয়ানা হইলেন এবং যুল-হোলাইফা নামক স্থানে আসিয়া কোরবানীর পশুর গলায় কিলাদাহ্ (বিশেষ হার চামড়া ঝুলাইলেন এবং এশআর করিলেন (অর্থাৎ, উটের গলার পাশে কোন কিছুর দ্বারা হাল্কা জখম করিয়া উক্ত স্থানে রক্ত মাখাইয়া দিলেন।) আর তথা হইতে ওমরার এহরাম বাধিয়া রওয়ানা দিলেন। অবশেষে তাহার উষ্টী সেই গিরিপথে বসিয়া পড়িল, যেই স্থান হইতে লোকেরা মক্কায় যাতায়াত করে। এই সময় উটকে উঠিবার জন্য) লোকেরা হাল- হাল বলিতে লাগিল; (কিন্তু সে উঠিল না। এই সময় তাহারা বলিল,) কাছওয়া জিদ করিয়াছে, কাছওয়া জিদ করিয়াছে। তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন: কাছওয়া জিদ করে নাই এবং ইহা তাহার স্বভাবও নহে; বরং যিনি হাতীকে আটকাইয়াছিলেন তিনিই উহাকে আটকাইয়াছেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, সেই সত্তার কসম, যাঁহার হাতে আমার প্রাণ তাহারা (অর্থাৎ, কুরাইশরা) আল্লাহর সম্মানিত বিষয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে যে কোন শর্ত আরোপ করিতে চাহিবে, আমি উহা অবশ্যই মানিয়া লইব। তার পর তিনি উষ্টীকে ধমক দিলে সে সঙ্গে সঙ্গে উঠিয়া দাড়াইল (এবং দ্রুত চলিতে লাগিল ); বরং এইবার তিনি মক্কার সরাসরি পথ হইতে সরিয়া অন্য পথে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। অবশেষে হোদাইবিয়ার প্রান্তে একটি স্বল্প পানির কূপের নিকট অবতরণ করিলেন। লোকেরা উহা হইতে অল্প অল্প করিয়া পানি লইতেছিল। অল্পক্ষণ পরেই তাহাও শেষ করিয়া ফেলিল এবং রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিয়া পিপাসার অভিযোগ করিল। এই কথা শুনিয়া তিনি স্বীয় থলি হইতে একটি তীর বাহির করিয়া তাহাদিগকে আদেশ করিলেন, ইহাকে কূপটির মধ্যে ফেলিয়া দাও। আল্লাহর কসম! তৎক্ষণাৎ পানি উপচাইয়া উঠিতে থাকিল তাহারা তথা হইতে ফিরিয়া যাওয়া পর্যন্ত (এবং তাহারা উহা হইতে পানি ব্যবহার করিল)। তাহারা এই অবস্থায় ছিলেন, এমন সময় বোদাইল ইবনে ওরাকা খোযাযী খোযাআ গোত্রের কতিপয় লোকজনসহ তথায় উপস্থিত হইল। অতঃপর ওরওয়া ইবনে মাসউদ আসিল। পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করিতে যাইয়া বর্ণনাকারী বলেন, পরিশেষে সোহাইল ইবনে আমর আসিয়া উপস্থিত হইল। অতঃপর হুযূর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [হযরত আলী (রাঃ)-কে] বলিলেন, লিখ, “ইহা আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পক্ষ হইতে সম্পাদিত সন্ধিপত্র।” এই কথা শুনিয়া সোহাইল বলিয়া উঠিল, আল্লাহর কসম! যদি আমরা আপনাকে আল্লাহর রাসূল বলিয়া জানিতাম, তাহা হইলে কখনো আপনাকে বায়তুল্লাহ্ হইতে বাধা দিতাম না এবং আপনার সাথে যুদ্ধও করিতাম না; বরং আপনি এইভাবে লিখুন, “আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদের পক্ষ হইতে।” রাবী বলেন, তাহার কথা শুনিয়া নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর সত্য রাসূল, যদিও তোমরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলিয়া প্রতিপন্ন কর। আচ্ছা। (হে আলী!) মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ই লিখ। (সন্ধিপত্র লিখা হইতেছিল, এমন সময় সোহাইল বলিল, অন্যান্য শর্তাবলীর সাথে ইহাও লিখা হউক, যদি (মক্কা হইতে) আমাদের কোন লোক আপনার নিকট আসে তাহাকে অবশ্যই (মক্কায়) আমাদের নিকট ফেরত পাঠাইয়া দিতে হইবে, যদিও সে আপনার ধর্মে বিশ্বাসী হয়। (বর্ণনাকারী বলেন,) সন্ধিপত্র লিখা শেষ হইলে রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদিগকে বলিলেন, উঠ, তোমরা নিজেদের পশু কোরবানী করিয়া দাও। অতঃপর মাথা মুড়াইয়া ফেল। (অর্থাৎ, এহরাম হইতে হালাল হইয়া যাও।) ইহার পর কতিপয় মহিলা ইসলাম গ্রহণ করিয়া (তাহার নিকট) আসিল। এই সময় আল্লাহ্ তা'আলা এই আয়াত নাযিল করিলেন: অর্থ: “হে মু'মিনগণ! কোন মু'মিন মুসলমান নারী হিজরত করিয়া তোমাদের নিকট আসিলে তাহাদিগকে ভালোভাবে পরীক্ষা করিয়া লও।” এই আয়াত দ্বারা সেই সমস্ত মুসলমান রমণীদিগকে ফেরত পাঠাইতে আল্লাহ্ তা'আলা নিষেধ করিলেন এবং নির্দেশ দিলেন যে, (যদি সেই সমস্ত মহিলাদের কাফের স্বামীগণ তাহাদের মহর পরিশোধ করিয়া থাকে, তাহা হইলে তোমরা) তাহাদের মহর ফেরত দিয়া দাও। অতঃপর নবী (ছাঃ) মদীনায় প্রত্যাবর্তন করিলেন। এই সময় আবু বাছীর নামে কুরাইশ বংশীয় এক ব্যক্তি মুসলমান হইয়া (মক্কা হইতে মদীনায়) নবী (ছাঃ)-এর নিকট আসিল। আর কুরাইশরাও তাহার সন্ধানে দুইজন লোক পাঠাইল। হুযুর (ছাঃ) তাহাকে সেই ব্যক্তিদ্বয়ের নিকট সোপর্দ করিলেন। তাহারা আবু বাছীরকে সঙ্গে লইয়া রওয়ানা হইল এবং যুল-হোলাইফা নামক স্থানে পৌঁছিয়া তাহারা নিজেদের খেজুর খাওয়ার জন্য এক জায়গায় নামিল। এই সময় আবু বাছীর তাহাদের একজনকে বলিল, হে অমুক! আল্লাহর কসম! তোমার তলোয়ারখানি দেখিতে তো খুবই চমৎকার! আমাকে একটু দাও দেখি, আমি উহাকে ভালোভাবে দেখিয়া লই। লোকটি তলোয়ারখানি আবু বাছীরের হাতে দিতেই সে উহার দ্বারা তাহাকে এমনভাবে আঘাত করিল যে, সে সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুবরণ করিল। অপর লোকটি পালাইয়া শেষ পর্যন্ত মদীনায় আসিয়া মসজিদে নববীতে প্রবেশ করিল। তাহাকে দেখিয়াই নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, মনে হয় লোকটি ভীত, সন্ত্রস্ত। সে (হুযূর [ছাঃ ]-এর কাছে যাইয়া বলিল, আল্লাহর কসম! আমার সঙ্গীকে হত্যা করা হইয়াছে। সুযোগ পাইলে আমাকেও কতল করা হইত। এই সময় আবু বাছীরও সেইখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাহাকে দেখিয়া নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আক্ষেপ তাহার মায়ের উপর, সে তো যুদ্ধের আগুন জ্বালাইয়া দিতে চায়, যদি তাহার সহিত তাহার সাহায্যকারী কেহ থাকিত। যখন সে এই কথা শুনিল, তখন সে বুঝিতে পারিল যে, নবী (ছাঃ) অচিরেই তাহাকে পুনরায় কাফেরদের নিকট ফেরত পাঠাইয়া দিবেন। তখন সে সেইখান হইতে বাহির হইয়া সরাসরি সাগরের উপকূলের দিকে চলিয়া গেল। বর্ণনাকারী বলেন, ইতিমধ্যে সোহাইলের পুত্র আবু জান্দাল বন্দীমুক্ত হইয়া আবু বাছীরের সাথে মিলিত হইল। এইভাবে মক্কার কুরাইশদের নিকট হইতে কোন মুসলমান পালাইয়া আসিতে সক্ষম হইলে সেও সরাসরি যাইয়া আবু বাছীরের সাথে মিলিত হইত। এইভাবে সেইখানে একটি দল সমবেত হইয়া গেল। আল্লাহর কসম! যখনই তাহারা শুনিতে পাইত যে, কুরাইশদের কোন তেজারতী কাফেলা সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হইয়াছে, তখনই তাহারা সেই কাফেলার উপর বাধা সৃষ্টি করিত এবং তাহাদিগকে হত্যা করিয়া তাহাদের মাল-সামান ইত্যাদি ছিনাইয়া লইত। ফলে অতিষ্ঠ হইয়া কুরাইশরা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এই প্রস্তাব পাঠাইল যে, তিনি যেন আত্মীয়তার সহানুভূতি ও আল্লাহর ওয়াস্তে আবু বাছীর ও তাহার সঙ্গীদিগকে লুটতরাজ হইতে বিরত রাখেন এবং এখন হইতে মক্কার কোন মুসলমান রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসিলে তাহাকে আর ফেরত দিতে হইবে না। অতঃপর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বাছীর ও তাহার সঙ্গীদিগকে (মদীনায়) ডাকিয়া পাঠাইলেন। -বুখারী
بَابُ الصُّلْحِ: الْفَصْل الأول
عَنِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ وَمَرْوَانَ بْنِ الْحَكَمِ قَالَا: خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ فِي بِضْعَ عَشْرَةَ مِائَةً مِنْ أَصْحَابِهِ فَلَمَّا أَتَى ذَا الْحُلَيْفَةِ قَلَّدَ الْهَدْيَ وَأَشْعَرَ وَأَحْرَمَ مِنْهَا بِعُمْرَةٍ وَسَارَ حَتَّى إِذَا كَانَ بِالثَّنِيَّةِ الَّتِي يُهْبَطُ عَلَيْهِمْ مِنْهَا بَرَكَتْ بِهِ رَاحِلَتُهُ فَقَالَ النَّاسُ: حَلْ حَلْ خَلَأَتِ القَصْواءُ خلأت الْقَصْوَاء فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا خَلَأَتِ الْقَصْوَاءُ وَمَا ذَاكَ لَهَا بِخُلُقٍ وَلَكِنْ حَبَسَهَا حَابِسُ الْفِيلِ» ثُمَّ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يَسْأَلُونِي خُطَّةً يُعَظِّمُونَ فِيهَا حُرُمَاتِ اللَّهِ إِلَّا أَعْطَيْتُهُمْ إِيَّاهَا» ثُمَّ زَجَرَهَا فَوَثَبَتْ فَعَدَلَ عَنْهُمْ حَتَّى نَزَلَ بِأَقْصَى الْحُدَيْبِيَةِ عَلَى ثَمَدٍ قَلِيلِ الْمَاءِ يَتَبَرَّضُهُ النَّاسُ تَبَرُّضًا فَلَمْ يَلْبَثْهُ النَّاسُ حَتَّى نَزَحُوهُ وَشُكِيَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعَطَشَ فَانْتَزَعَ سَهْمًا مِنْ كِنَانَتِهِ ثُمَّ أَمَرَهُمْ أَنْ يَجْعَلُوهُ فِيهِ فو الله مَا زَالَ يَجِيشُ لَهُمْ بِالرِّيِّ حَتَّى صَدَرُوا عَنْهُ فَبَيْنَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ جَاءَ بُدَيْلُ بْنُ وَرْقَاءَ الخزاعيُّ فِي نفَرٍ منْ خُزَاعَةَ ثُمَّ أَتَاهُ عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ وَسَاقَ الْحَدِيثَ إِلَى أَنْ قَالَ: إِذْ جَاءَ سُهَيْلُ بْنُ عَمْرٍو فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اكْتُبْ: هَذَا مَا قَاضَى عَلَيْهِ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ . فَقَالَ سُهَيْلٌ: وَاللَّهِ لَوْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ مَا صَدَدْنَاكَ عَنِ الْبَيْتِ وَلَا قَاتَلْنَاكَ وَلَكِنِ اكْتُبْ: مُحَمَّدَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَاللَّهِ إِنِّي لَرَسُولُ اللَّهِ وَإِنْ كَذَّبْتُمُونِي اكْتُبْ: مُحَمَّدَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ فَقَالَ سُهَيْلٌ: وَعَلَى أَنْ لَا يَأْتِيَكَ مِنَّا رَجُلٌ وَإِنْ كانَ على دينِكَ إِلاَّ ردَدْتَه علينا فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ قَضِيَّةِ الْكِتَابِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَصْحَابِهِ: «قُومُوا فَانْحَرُوا ثُمَّ احْلِقُوا» ثُمَّ جَاءَ نِسْوَةٌ مُؤْمِنَاتٌ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذا جاءكُم المؤمناتُ مهاجِراتٌ)

الْآيَةَ. فَنَهَاهُمُ اللَّهُ تَعَالَى أَنْ يَرُدُّوهُنَّ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَرُدُّوا الصَّدَاقَ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى الْمَدِينَةِ فَجَاءَهُ أَبُو بَصِيرٍ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ وَهُوَ مُسْلِمٌ فَأَرْسَلُوا فِي طَلَبِهِ رَجُلَيْنِ فَدَفَعَهُ إِلَى الرَّجُلَيْنِ فَخَرَجَا بِهِ حَتَّى إِذَا بَلَغَا ذَا الْحُلَيْفَةِ نَزَلُوا يَأْكُلُونَ مِنْ تَمْرٍ لَهُمْ فَقَالَ أَبُو بَصِيرٍ لِأَحَدِ الرَّجُلَيْنِ: وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرَى سَيْفَكَ هَذَا يَا فُلَانُ جَيِّدًا أَرِنِي أَنْظُرْ إِلَيْهِ فَأَمْكَنَهُ مِنْهُ فَضَرَبَهُ حَتَّى بَرَدَ وَفَرَّ الْآخَرُ حَتَّى أَتَى الْمَدِينَةَ فَدَخَلَ الْمَسْجِدَ يَعْدُو فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ رأى هَذَا ذُعراً» فَقَالَ: قُتِلَ واللَّهِ صَحَابِيّ وَإِنِّي لَمَقْتُولٌ فَجَاءَ أَبُو بَصِيرٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَيْلَ أُمِّهِ مِسْعَرَ حَرْبٍ لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ» فَلَمَّا سَمِعَ ذَلِكَ عَرَفَ أَنَّهُ سَيَرُدُّهُ إِلَيْهِمْ فَخَرَجَ حَتَّى أَتَى سِيفَ الْبَحْرِ قَالَ: وَانْفَلَتَ أَبُو جَنْدَلِ بْنُ سُهَيْلٍ فَلَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ فَجَعَلَ لَا يَخْرُجُ مِنْ قُرَيْشٍ رَجُلٌ قَدْ أَسْلَمَ إِلَّا لَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ حَتَّى اجْتَمَعَتْ مِنْهُمْ عِصَابَةٌ فو الله مَا يَسْمَعُونَ بِعِيرٍ خَرَجَتْ لِقُرَيْشٍ إِلَى الشَّامِ إِلَّا اعْتَرَضُوا لَهَا فَقَتَلُوهُمْ وَأَخَذُوا أَمْوَالَهُمْ فَأَرْسَلَتْ قُرَيْشٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُنَاشِدُهُ اللَّهَ وَالرَّحِمَ لَمَّا أَرْسَلَ إِلَيْهِمْ فَمَنْ أَتَاهُ فَهُوَ آمِنٌ فَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم إِلَيْهِم. رَوَاهُ البُخَارِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সুলেহ্ শব্দের অর্থ হইল, মানুষের পরস্পরের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করা। আল্লাহর বাণীঃ

لَّا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِّن نَّجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ

অর্থঃ “যেই ব্যক্তি দান-খয়রাত, সৎ কাজ ও লোকদের মীমাংসার হুকুম দেয়, ইহা ব্যতীত তাহাদের অধিকাংশ চুপি চুপি গোপন আলাপের মধ্যে কোন কল্যাণ নিহিত নাই।” এই সুলেহ্ বিভিন্ন প্রকারের হইতে পারে। যেমনঃ মুসলমান ও কাফেরের মধ্যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, প্রতিষ্ঠিত ন্যায়পরায়ণ শাসক ও বিদ্রোহীদের মধ্যে, বিবদমান দুই দলের মধ্যে এবং যৌথ মালিকানাধীন বস্তুর মধ্যে ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সামাজিক ব্যবস্থা হইতে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত আপোষ -মীমাংসা করিয়া বিদ্যমান মুখোমুখি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষকে প্রশমিত করিয়াছেন। আল্লাহর কালামের নির্দেশঃ وَإِن جَنَحُوا لِلسَّلْمِ فَاجْنَحْ لَهَا অর্থাৎ, “যদি তাহারা (প্রতিপক্ষ) সন্ধি করিতে উদ্যত হয়, তখন তুমিও সেই দিকে ঝুঁকিয়া যাও।” এই আয়াতের তাৎপর্য হইল, সর্বদা সর্বাবস্থায় কাফেরদের সহিত কেবলমাত্র যুদ্ধ চালাইয়া যাইবেন এমন কোন কথা নহে; বরং যদি মুসলমান শাসক সুলেহ্ সন্ধি করার মধ্যে নিজেদের কল্যাণ কিংবা আশু প্রয়োজন মনে করেন, তখন তিনি তাহাও করিতে পারেন। ইসলামের ইতিহাসে হোদাইবিয়ার সন্ধি উহার জ্বলন্ত প্রমাণ ।

হোদাইবিয়ার সন্ধির সময় নবী (ﷺ) সাহাবীদের একটি জমাআতসহ যুদ্ধের উদ্দেশ্যে নহে; বরং ওমরার নিয়তেই মদীনা হইতে আসিয়াছিলেন। "حبسها حابس الفيل" দ্বারা ইয়ামন দেশীয় কাফের রাজা আবরাহার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হইয়াছে। সে বায়তুল্লাহ্ শরীফকে ধ্বংস করিবার উদ্দেশ্যে হাতী সওয়ার সৈন্য লইয়া যুলমাজায নামক স্থান পর্যন্ত পৌঁছিয়াছিল, তখন তাহার হাতী আর মক্কার দিকে অগ্রসর হইল না; বরং সেইখানেই বসিয়া পড়িল। অবশ্য অন্যদিকে যাইতে বলিলে অনায়াসে চলিত। অনুরূপভাবে হুযূর (ﷺ)-এর উষ্ট্রী মক্কার নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছার পর বসিয়া পড়িল। حل حل ইহা একটি আঞ্চলিক পরিভাষা। চলার পথে উট হঠাৎ কোথাও থামিয়া বা বসিয়া গেলে এই শব্দ বলার সাথে সাথে সে উঠিয়া চলিতে থাকে। হোদাইবিয়ার সন্ধিপত্রে আরো কতিপয় শর্ত ছিল। তবে যেই শর্তটি এইখানে বর্ণনা করা হইয়াছে, উহা সেইগুলির অন্যতম।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৪০৪২ | মুসলিম বাংলা