মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ৪০২৮
৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৪০২৮। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বদর যুদ্ধের দিন সারিতে (ব্যূহে) দাঁড়াইয়া আমার ডানে ও বামে তাকাইলাম। দেখিলাম, আমি দুইজন অল্প বয়স্ক তরুণ আনসারীর মাঝে দাঁড়াইয়া আছি। তখন আমি মনে মনে এই আকাঙ্ক্ষা পোষণ করিলাম, কতই না উত্তম হইত যদি আমি এই দুইজন তরুণ অপেক্ষা বীর যোদ্ধার মাঝখানে দাঁড়াইতাম। ইত্যবসরে তাহাদের একজন আমাকে টোকা দিয়া বলিল, চাচাজান! আপনি কি আবু জাহলকে চিনেন? আমি বলিলাম, হ্যাঁ, চিনি। তবে হে বৎস! তাহাকে তোমার কি প্রয়োজন? সে বলিল, আমাকে সংবাদ দেওয়া হইয়াছে যে, সে নাকি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে গালি দেয়। যাঁহার অধিকারে আমার প্রাণ, তাঁহার শপথ করিয়া বলিতেছি, যদি আমি তাহাকে দেখিতে পাই, তাহা হইলে আমাদের (অর্থাৎ, আমার ও আবু জাহলের) মধ্যে যাহার মৃত্যু আগে নির্ধারিত সে মৃত্যুবরণ না করা পর্যন্ত তাহার ও আমার দেহ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইবে না। আব্দুর রহমান বলেন, তাহার কথা শুনিয়া আমি বিস্মিত হইলাম। তিনি আরও বলেন, ইত্যবসরে অপর তরুণটিও আমাকে টোকা দিয়া একই ধরনের কথা বলিল । আমাদের কথাবার্তা শেষ না হইতেই দেখিতে পাইলাম, আবু জাহল লোকদের মাঝে ঘোরাফেরা করিতেছে। তখন আমি তরুণদ্বয়কে বলিলাম, তোমরা উভয়ে যাহার সম্পর্কে আমার কাছে জানিতে চাহিয়াছ, ঐ সেই ব্যক্তি। আব্দুর রহমান বলেন, আমার কথা শুনামাত্রই তাহারা উভয়েই তরবারি হাতে দ্রুতবেগে যাইয়া তাহাকে আক্রমণ করিল, এমন কি তাহাকে হত্যা করিয়াই ফেলিল। অতঃপর তাহারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর কাছে ফিরিয়া আসিয়া তাহাকে ঘটনাটি অবহিত করিল। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমাদের মধ্যে কে তাহাকে হত্যা করিয়াছে? তাহারা উভয়েই বলিল, “আমিই তাহাকে হত্যা করিয়াছি।” এইবার তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, আচ্ছা, তোমরা কি নিজ নিজ তরবারিখানা মুছিয়া ফেলিয়াছ? তাহারা বলিল, না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাহাদের উভয়ের তলোয়ার দুইখানা দেখিয়া বলিলেনঃ তোমরা উভয়েই তাহাকে হত্যা করিয়াছ। এই বলিয়া রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাহার (আবু জাহলের) পরিত্যক্ত বস্তুগুলি মুআয ইবনে আমর ইবনে জমুহ্ পাইবে বলিয়া রায় দিলেন। এই তরুণদ্বয় ছিল মুআয ইবনে আমর ইবনে জমুহ্ ও মুআয ইবনে আফরা। —মোত্তাঃ
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: إِنِّي وَاقِفٌ فِي الصَّفِّ يَوْمَ بَدْرٍ فَنَظَرْتُ عَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي فَإِذَا بِغُلَامَيْنِ مِنَ الْأَنْصَارِ حَدِيثَة أسنانها فتمنيت أَنْ أَكُونَ بَيْنَ أَضْلَعَ مِنْهُمَا فَغَمَزَنِي أَحَدُهُمَا فَقَالَ: يَا عَمِّ هَلْ تَعْرِفُ أَبَا جَهْلٍ؟ قُلْتُ: نَعَمْ فَمَا حَاجَتُكَ إِلَيْهِ يَا ابْنَ أَخِي؟ قَالَ: أُخْبِرْتُ أَنَّهُ يَسُبُّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَئِنْ رَأَيْتُهُ لَا يُفَارِقُ سَوَادِي سَوَادَهُ حَتَّى يَمُوتَ الْأَعْجَلُ مِنَّا فَتَعَجَّبْتُ لِذَلِكَ قَالَ: وَغَمَزَنِي الْآخَرُ فَقَالَ لِي مِثْلَهَا فَلَمْ أَنْشَبْ أَنْ نَظَرْتُ إِلَى أَبِي جَهْلٍ يَجُولُ فِي النَّاسِ فَقُلْتُ: أَلَا تَرَيَانِ؟ هَذَا صَاحِبُكُمَا الَّذِي تَسْأَلَانِي عَنْهُ قَالَ: فابتدراه بسيفهما فَضَرَبَاهُ حَتَّى قَتَلَاهُ ثُمَّ انْصَرَفَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فأخبراهُ فَقَالَ: «أَيُّكُمَا قَتَلَهُ؟» فَقَالَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا: أَنَا قَتله فَقَالَ: «هلْ مسحتُما سيفَيكما؟» فَقَالَا: لَا فَنَظَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى السَّيْفَيْنِ فَقَالَ: «كِلَاكُمَا قَتَلَهُ» . وَقَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَلَبِهِ لِمُعَاذِ بن عَمْرِو بن الْجَمُوحِ وَالرَّجُلَانِ: مُعَاذُ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْجَمُوحِ ومعاذ بن عفراء

হাদীসের ব্যাখ্যা:

প্রকৃতপক্ষে মুআয ইবনে আমর ইবনে জহই সর্বপ্রথম আবু জাহলকে আঘাত করিয়া কাবু করিয়া ফেলিয়াছিল। অতঃপর ইবনে আফরা তাহার উপর আঘাত হানিয়াছে। তবে তাহাদের উভয়কে উৎসাহিত করা এবং তাহাদের মনঃতৃপ্তির উদ্দেশ্যেই হুযূর (ﷺ) বলিয়াছেন, তোমরা উভয়েই তাহাকে হত্যা করিয়াছ। আর নিহতের পরিত্যক্ত জিনিসের প্রকৃত হকদার যে মুআয ইবনে আমর হইয়াছে তাহা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই হুযূর (ﷺ) উহা তাহাকেই দিয়াছেন। মুআয ও মুআববেয, তাঁহাদের উভয়ের মাতা হইল আফরা, কিন্তু পিতা হইল পৃথক পৃথক। যেমন যুআয ইবনে আমর ও মুআববেয ইবনে হারেস। সুতরাং তাঁহারা পরস্পর বৈপিত্রেয় ভাই। আর এক হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে, আফরার দুই পুত্রই আবু জাহলের হত্যাকারী।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান