মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৯৮৬
৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - গনীমাতের সম্পদ বণ্টন এবং তা আত্মসাৎ করা
৩৯৮৬। হযরত আবু কাতাদাহ্ (রাঃ) বলেন, হোনায়নের যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিত বাহির হইলাম। যখন আমরা শত্রুর সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হইলাম তখন মুসলমানদের মধ্যে পরাজয়ের ভাব দেখা দিল। এমন সময় আমি দেখিলাম, এক মুশরিক একজন মুসলমানের উপর চড়িয়া বসিয়াছে, অমনি আমি পিছন হইতে তাহার গর্দানের রগে তলোয়ার দ্বারা আঘাত করিলাম এবং তাহার লৌহবর্ম কাটিয়া ফেলিলাম। তখন সে আমার দিকে ফিরিয়া আমাকে এমনভাবে জড়াইয়া ধরিল যে, আমি যেন উহা হইতে মৃত্যুর গন্ধ পাইলাম। অতঃপর তাহার মৃত্যু আসিয়া পৌঁছিল এবং আমাকে ছাড়িয়া দিল। ইহার পর আমি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাবের সাথে মিলিত হইলাম এবং বলিলাম, লোকদের কি হইয়াছে? তিনি বলিলেন, সব কিছু আল্লাহর হুকুম। অতঃপর সমস্ত মুসলমান পুনরায় ফিরিয়া আসিলেন (এবং সমবেত হইলেন)। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জায়গায় বসিয়া ঘোষণা করিলেন, (আজ) যে কেহ কোন কাফেরকে হত্যা করিয়াছে যাহার জন্য তাহার নিকট প্রমাণ রহিয়াছে, তবে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত (কাপড়-চোপড়, হাতিয়ার ও বাহন ইত্যাদি) সে-ই পাইবে। আবু কাতাদাহ্ বলেন, আমি দাড়াইয়া বলিলাম, কেহ আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে কি? এই কথা বলিয়া আমি বসিয়া পড়িলাম। অতঃপর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় পুর্বের ন্যায় ঘোষণা করিলেন আর আমিও দাঁড়াইয়া বলিলাম, কেহ আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে কি? এই কথা বলিয়া আমি আবারও বসিয়া পড়িলাম। অতঃপর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও অবিকল পূর্বের ন্যায় ঘোষণা করিলেন আর আমি এইবারও সেই কথা বলিলাম। তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন: হে আবু কাতাদাহ্ তোমার কি ব্যাপার? আমি ঘটনা বর্ণনা করিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি বলিয়া উঠিল, আবু কাতাদাহ্ সত্য কথাই বলিয়াছেন এবং সেই নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত বস্তু আমার কাছেই আছে। আপনি আমার পক্ষ হইতে তাহাকে সন্তুষ্ট করিয়া দিন যে, সেই মাল আমিই ভোগ করি। এই কথা শুনিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক (রাঃ) বলিলেন, আল্লান কসম তাহা কখনও হইতে পারে না। আল্লাহর সিংহসমূহের একটি সিংহ, যে আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের পক্ষ হইতে লড়াই করিয়াছে, তাহার হাতে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত বস্তু নবী (ছাঃ) তোমাকে দিতে পারেন না। তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আবু বকর ঠিকই বলিয়াছে। মালগুলি আবু কাতাদাহুকে দিয়া দাও। তখন সে সমুদয় মাল আমাকে প্রদান করিল। আবু কাতাদাহ্ বলেন, ঐ মাল বিক্রি করিয়া আমি বনু সালেমার একটি বাগান খরিদ করিলাম। অতএব, ইসলাম গ্রহণের পর ইহাই আমার অর্জিত প্রথম সম্পদ। -মোত্তাঃ
وَعَن أبي قتادةَ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ حُنَيْنٍ فَلَمَّا الْتَقَيْنَا كَانَتْ لِلْمُسْلِمِينَ جَوْلَةٌ فَرَأَيْتُ رَجُلًا مِنَ الْمُشْرِكِينَ قَدْ عَلَا رَجُلًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ فَضَرَبْتُهُ مِنْ وَرَائِهِ عَلَى حَبْلِ عَاتِقِهِ بِالسَّيْفِ فَقَطَعْتُ الدِّرْعَ وَأَقْبَلَ عَلَيَّ فَضَمَّنِي ضَمَّةً وَجَدْتُ مِنْهَا رِيحَ الْمَوْتِ ثُمَّ أَدْرَكَهُ الْمَوْتُ فَأَرْسَلَنِي فَلَحِقْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ فَقُلْتُ: مَا بَالُ النَّاسِ؟ قَالَ: أَمْرُ اللَّهِ ثُمَّ رَجَعُوا وَجَلَسَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَنْ قَتَلَ قَتِيلًا لَهُ عَلَيْهِ بَيِّنَةٌ فَلَهُ سَلَبُهُ» فَقُلْتُ: مَنْ يَشْهَدُ لِي؟ ثُمَّ جَلَسْتُ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ فَقُمْتُ فَقَالَ: «مَا لَكَ يَا أَبَا قَتَادَةَ؟» فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ رَجُلٌ: صَدَقَ وَسَلَبُهُ عِنْدِي فَأَرْضِهِ مِنِّي فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: لَا هَا اللَّهِ إِذاً لَا يعمدُ أَسَدٍ مِنْ أُسْدِ اللَّهِ يُقَاتِلُ عَنِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَيُعْطِيكَ سَلَبَهُ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ فأعطه» فأعطانيه فاتبعت بِهِ مَخْرَفًا فِي بَنِي سَلِمَةَ فَإِنَّهُ لَأَوَّلُ مالٍ تأثَّلْتُه فِي الإِسلامِ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হোনায়নের যুদ্ধে প্রথমে মুসলমানদের মধ্যে কিছুটা বিশৃংখলা পরিলক্ষিত হইয়াছিল। কিছু সংখ্যক লোক ময়দান হইতে পলায়নও করিয়াছিল। পরে হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর আহ্বানে পুনরায় তাঁহারা প্রত্যাবর্তন করিয়া কাফেরদের উপর আক্রমণ চালাইয়া তাহাদিগকে চরমভাবে পরাজিত করিল।
“আপনি তাহাকে আমার পক্ষ হইতে সন্তুষ্ট করিয়া দিন” ইহার অর্থ, ঐ সমুদয় মালগুলির পরিবর্তে কিছু দিয়া আপনি তাহাকে রাযী করিয়া দিন। অথবা বিনা পরিবর্তে এমনি সমঝোতার মাধ্যমে আপনি তাহাকে রাযী করিয়া দিন।
“আপনি তাহাকে আমার পক্ষ হইতে সন্তুষ্ট করিয়া দিন” ইহার অর্থ, ঐ সমুদয় মালগুলির পরিবর্তে কিছু দিয়া আপনি তাহাকে রাযী করিয়া দিন। অথবা বিনা পরিবর্তে এমনি সমঝোতার মাধ্যমে আপনি তাহাকে রাযী করিয়া দিন।
