মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৯৬৭
৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা
৩৯৬৭। কাতাদাহ (রঃ) বলেন, হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হযরত আবু তালহা হইতে আমাদিগকে বর্ণনা করেন যে, বদরের যুদ্ধের দিন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চব্বিশজন কুরাইশ নেতার লাশ (কূপে ফেলা) সম্পর্কে নির্দেশ দেন, অতঃপর বদর প্রান্তরে একটি নোংরা ও আবর্জনাপূর্ণ কূপে তাহাদেরে নিক্ষেপ করা হইল। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল, কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করিলে তিনি সেই যুদ্ধ ময়দানে তিন রাত অবস্থান করিতেন। বদর প্রান্তরেও তৃতীয় দিনে যাত্রার জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ দিলেন। সুতরাং সওয়ারীসমূহের জিন-গদী বাঁধা হইল, অতঃপর তিনি কিছু চলিলেন। সাহাবাগণও তাঁহার অনুগমন করিলেন। অবশেষে তিনি ঐ কূপের পার্শ্বে গিয়া দাড়াইলেন এবং কূপে নিক্ষিপ্ত মরদেহের ও তাহাদের বাপ-দাদার নাম ধরিয়া ডাকিতে লাগিলেন, হে অমুকের পুত্র অমুক। হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কি এখন বুঝিতে পারিয়াছ যে, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য করিলে এখন খুশী হইতে পারিতে ? আল্লাহ্ আমাদের সঙ্গে যে অঙ্গীকার করিয়াছিলেন আমরা তাহা পুরাপুরিই সঠিক পাইয়াছি। তোমরা কি তোমাদের সাথে কৃত তোমাদের প্রভুর ওয়াদা সঠিক পাইয়াছ? তখন হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যেই সমস্ত দেহে প্রাণ নাই আপনি তাহাদের সাথে কথা বলিতেছেন? নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, সেই মহান সত্তার কসম, যাঁহার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, আমি যাহা বলিয়াছি, তাহা তোমরা উহাদের চাইতে অধিক শুনিতে পাও নাই।
অন্য আরেক রেওয়ায়তে বর্ণিত হইয়াছে, তোমরা তাহাদের অপেক্ষা অধিক শুনিতে পাও নাই, কিন্তু তাহারা জওয়াব দিতে পারে না। মোত্তাঃ
বুখারী অতিরিক্ত বলিয়াছেন, কাতাদাহ্ বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথাগুলি শুনাইবার জন্য আল্লাহ্ তা'আলা তাহাদিগকে জীবিত করিয়া দিয়াছিলেন যেন তাহারা ধমকি, লাঞ্ছনা, অপমান, অনুশোচনা ও লজ্জা অনুভব করিতে পারে।
অন্য আরেক রেওয়ায়তে বর্ণিত হইয়াছে, তোমরা তাহাদের অপেক্ষা অধিক শুনিতে পাও নাই, কিন্তু তাহারা জওয়াব দিতে পারে না। মোত্তাঃ
বুখারী অতিরিক্ত বলিয়াছেন, কাতাদাহ্ বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথাগুলি শুনাইবার জন্য আল্লাহ্ তা'আলা তাহাদিগকে জীবিত করিয়া দিয়াছিলেন যেন তাহারা ধমকি, লাঞ্ছনা, অপমান, অনুশোচনা ও লজ্জা অনুভব করিতে পারে।
وَعَنْ قَتَادَةَ قَالَ: ذَكَرَ لَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ عَنْ أَبِي طَلْحَةَ أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ يَوْمَ بَدْرٍ بِأَرْبَعَةٍ وَعِشْرِينَ رَجُلًا مِنْ صَنَادِيدِ قُرَيْشٍ فَقَذَفُوا فِي طَوِيٍّ مِنْ أَطْوَاءِ بَدْرٍ خَبِيثٍ مُخْبِثٍ وَكَانَ ذَا ظهرَ عَلَى قَوْمٍ أَقَامَ بِالْعَرْصَةِ ثَلَاثَ لَيَالٍ فَلَمَّا كَانَ بِبَدْرٍ الْيَوْمَ الثَّالِثَ أَمَرَ بِرَاحِلَتِهِ فَشَدَّ عَلَيْهَا رَحْلَهَا ثُمَّ مَشَى وَاتَّبَعَهُ أَصْحَابُهُ حَتَّى قَامَ عَلَى شَفَةِ الرَّكِيِّ فَجَعَلَ يُنَادِيهِمْ بِأَسْمَائِهِمْ وأسماءِ آبائِهم: «يَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ وَيَا فُلَانُ بْنَ فُلَانٍ أَيَسُرُّكُمْ أَنَّكُمْ أَطَعْتُمُ اللَّهَ وَرَسُولَهُ؟ فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجدتمْ مَا وعدَكم رَبُّكُمْ حَقًّا؟» فَقَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا تُكَلِّمَ مِنْ أَجْسَادٍ لَا أَرْوَاحَ لَهَا؟ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ مِنْهُمْ وَلَكِنْ لَا يُجِيبُونَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَزَادَ الْبُخَارِيُّ: قَالَ قَتَادَةُ: أَحْيَاهُمُ اللَّهُ حَتَّى أَسْمَعَهُمْ قولَه توْبيخاً وتصغيرا ونقمة وحسرة وندما
হাদীসের ব্যাখ্যা:
অধিকাংশ হানাফী মাশায়েখদের মতে মৃত ব্যক্তি জীবিতের কোন কথা শুনিতে পায় না। অতএব, যদি কেহ কসম করে যে, আমি অমুকের সাথে কথা বলিব না। আর সে ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর মরদেহের সাথে কথা বলে, সে হানেস (কসম ভঙ্গকারী) হইবে না। কাজেই কাফ্ফারাও দিতে হইবে না। কিন্তু এই হাদীস হইতে বুঝা যায় যে, মৃত ব্যক্তি জীবিতের কথা শুনিতে পায়। অবশ্য আল্লাহর বাণী وما انت بمسمع من فى القبور انك لا تسمع الموتى দ্বারা বুঝা যায় যে, মৃত ব্যক্তি জীবিতের কথা শুনিতে পায় না। তবে অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে, ان الميت ليسمع قرع نعالهم اذا انصرفوا অর্থাৎ, মৃত ব্যক্তি জীবিতের জুতার শব্দ শুনিতে পায়, যখন তাহারা মৃতকে দাফন করিয়া বাড়ীর দিকে ফিরিয়া যায়। এই উভয়ের মধ্যে সমন্বয় এইভাবে হইতে পারে যে, প্রকৃতপক্ষে শুনিতে পায় না, তবে বদরে নিহত কাফেরদিগকে দুঃখ কষ্টে দ্বিগুণ ব্যথা দেওয়ার জন্য আল্লাহর নবীর কথাগুলি সেইসব মরদেহকে শুনানো হইয়াছে। সুতরাং ইহা হুযূর (ﷺ)-এর মোজেযা। এবং আল্লাহর কালামঃ لا
لا تسمع الموتى -এর অর্থ এই যে, আপনি নিজে শুনাইতে পারিবেন না। আল্লাহ্ তা'আলা ইচ্ছা করিলে বিশেষ ক্ষেত্রে ও বিশেষ অবস্থায় শুনাইতে পারেন।
لا تسمع الموتى -এর অর্থ এই যে, আপনি নিজে শুনাইতে পারিবেন না। আল্লাহ্ তা'আলা ইচ্ছা করিলে বিশেষ ক্ষেত্রে ও বিশেষ অবস্থায় শুনাইতে পারেন।
