মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৯- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৬৯৫
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৬৯৫। হযরত যিয়াদ ইবনে কুসাইব আদভী বলেন, একদা আমি আবু বাকরা (রাঃ) -এর সাথে ইবনে আমেরের মিম্বরের নীচে বসা ছিলাম। তিনি ভাষণ দিতেছিলেন ; আর তাঁহার পরনে ছিল একখানা চিকন ও মিহিন কাপড়। ইহা দেখিয়া আবু বেলাল বলিল, তোমরা আমাদের আমীরের দিকে একটু তাকাইয়া দেখ, তিনি ফাসেকদের পোশাক পরিধান করিয়াছেন। এই কথা শুনিয়া আবু বাকরা (রাঃ) বাধা দিয়া বলিলেন, চুপ কর, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি ঐ বাদশাহকে অপমান ও তিরস্কার করে, যাহাকে আল্লাহ্ এই যমীনের বাদশাহ্ বানাইয়াছেন, আল্লাহ্ ও তাহাকে (অপমানকারীকে) অপমান করিবেন। —তিরমিযী এবং তিরমিযী বলিয়াছেন, এই হাদীসটি হাসান ও গরীব।
وَعَن زِيادِ بنِ كُسَيبٍ العَدَوِيِّ قَالَ: كُنْتُ مَعَ أَبِي بَكْرَةَ تَحْتَ مِنْبَرِ ابْنِ عَامِرٍ وَهُوَ يَخْطُبُ وَعَلَيْهِ ثِيَابٌ رِقَاقٌ فَقَالَ أَبُو بِلَال: انْظُرُوا إِلَى أَمِير نايلبس ثِيَابَ الْفُسَّاقِ. فَقَالَ أَبُو بَكْرَةَ: اسْكُتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُول: «مَنْ أَهَانَ سُلْطَانَ اللَّهِ فِي الْأَرْضِ أَهَانَهُ اللَّهُ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. ইবনে আমের যেই পোশাক বা কাপড় পরিয়াছিলেন উহা পরা হারাম ছিল না। অবশ্য এই জাতীয় বিলাসিতার কাপড় ফাসেক লোকেরাই সাধারণতঃ পরিত। সুতরাং এই ধরনের কাপড় পরিলে সে ফাসেক হইয়া যায় না। এই ধরনের সমালোচনা করিতে বারণ করা হইয়াছে।
২. এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাসকের অবাধ্যতা করার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, কেউ শাসককে অপমান ও অপদস্থ করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে অপদস্থ করবেন। শাসককে অপদস্থ করার অর্থ তার আদেশ-নিষেধ না মানা, তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, তার সমালোচনা করা, তার কাজকর্ম নিয়ে উপহাস করা ইত্যাদি। এসব করা কিছুতেই সমীচীন নয়। কেননা মুসলিম শাসক জনগণের জন্য আল্লাহ তা'আলার ছায়াস্বরূপ। ছায়া দ্বারা যেমন মানুষ রোদের তাপ থেকে রক্ষা পায়, তেমনি শাসকের দ্বারাও মানুষ তাদের জান-মালের নিরাপত্তা লাভ করে। শাসক মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়। ফলে মানুষ নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে এবং নির্বিঘ্নে আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকতে পারে। শাসক জনগণের রক্ষক ও পাহারাদারস্বরূপ। পাহারাদার না থাকলে যেমন বকরির পাল হিংস্র পশুর খোরাক হয়ে যায়, তেমনি রাষ্ট্রের কোনও শাসক না থাকলে সর্বত্র নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ে, প্রত্যেকে গায়ের জোরে অন্যের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, ফলে চারদিকে মারামারি হানাহানি শুরু হয়ে যায় আর এভাবে মানুষের দীন-দুনিয়া সব বরবাদ হয়ে যায়। সুতরাং মানুষের জন্য শাসক আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় রহমত। তার বিরোধিতা ও অবাধ্যতা করার দ্বারা মানুষ সে রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। যেখানে রহমত থাকে না, সেখানে গজব ছাড়া আর কী থাকতে পারে? কাজেই যার বিরোধিতার দরুন গজবের এ পরিস্থিতি দেখা দিল, এর খেসারতও তো তাকেই সবার আগে দিতে হবে। শাসকের আনুগত্য করা ছিল আল্লাহরই হুকুম। সে হুকুম অমান্য করে যখন সে আল্লাহরও অবাধ্য হয়ে গেছে, তখন তাকে শাস্তি তো পেতেই হবে। এর জন্য আখিরাতে যে শাস্তি বরাদ্দ আছে তা তো আছেই, দুনিয়ায়ও তার জন্য রয়েছে কঠিন লাঞ্ছনা। যে শাসকের সে বিরোধিতা করেছে, হয়তো সে তারই কোপানলে পড়বে, নয়তো পরবর্তীতে যে শাসক আসবে, সেও তাকে সন্দেহের চোখে দেখবে। এভাবে তার দুনিয়ার জীবন সংকীর্ণ হয়ে পড়বে। কাজেই শাসক যদি ন্যায়পরায়ণ হয়, তবে তো বিরোধিতা করার প্রশ্নই আসে না। এমনকি যদি জালেমও হয়, তবুও সর্বাত্মক ক্ষতি থেকে বাঁচার লক্ষ্যে কিংবা মন্দের ভালো মেনে নেওয়ার নীতিতে তার বিরোধিতা করা হতে বিরত থাকাই শ্রেয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
শরী'আতসম্মত কারণ ছাড়া কোনও অবস্থায়ই শাসকের বিরোধিতা করতে নেই।
২. এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাসকের অবাধ্যতা করার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, কেউ শাসককে অপমান ও অপদস্থ করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে অপদস্থ করবেন। শাসককে অপদস্থ করার অর্থ তার আদেশ-নিষেধ না মানা, তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, তার সমালোচনা করা, তার কাজকর্ম নিয়ে উপহাস করা ইত্যাদি। এসব করা কিছুতেই সমীচীন নয়। কেননা মুসলিম শাসক জনগণের জন্য আল্লাহ তা'আলার ছায়াস্বরূপ। ছায়া দ্বারা যেমন মানুষ রোদের তাপ থেকে রক্ষা পায়, তেমনি শাসকের দ্বারাও মানুষ তাদের জান-মালের নিরাপত্তা লাভ করে। শাসক মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়। ফলে মানুষ নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে এবং নির্বিঘ্নে আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকতে পারে। শাসক জনগণের রক্ষক ও পাহারাদারস্বরূপ। পাহারাদার না থাকলে যেমন বকরির পাল হিংস্র পশুর খোরাক হয়ে যায়, তেমনি রাষ্ট্রের কোনও শাসক না থাকলে সর্বত্র নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ে, প্রত্যেকে গায়ের জোরে অন্যের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, ফলে চারদিকে মারামারি হানাহানি শুরু হয়ে যায় আর এভাবে মানুষের দীন-দুনিয়া সব বরবাদ হয়ে যায়। সুতরাং মানুষের জন্য শাসক আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় রহমত। তার বিরোধিতা ও অবাধ্যতা করার দ্বারা মানুষ সে রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। যেখানে রহমত থাকে না, সেখানে গজব ছাড়া আর কী থাকতে পারে? কাজেই যার বিরোধিতার দরুন গজবের এ পরিস্থিতি দেখা দিল, এর খেসারতও তো তাকেই সবার আগে দিতে হবে। শাসকের আনুগত্য করা ছিল আল্লাহরই হুকুম। সে হুকুম অমান্য করে যখন সে আল্লাহরও অবাধ্য হয়ে গেছে, তখন তাকে শাস্তি তো পেতেই হবে। এর জন্য আখিরাতে যে শাস্তি বরাদ্দ আছে তা তো আছেই, দুনিয়ায়ও তার জন্য রয়েছে কঠিন লাঞ্ছনা। যে শাসকের সে বিরোধিতা করেছে, হয়তো সে তারই কোপানলে পড়বে, নয়তো পরবর্তীতে যে শাসক আসবে, সেও তাকে সন্দেহের চোখে দেখবে। এভাবে তার দুনিয়ার জীবন সংকীর্ণ হয়ে পড়বে। কাজেই শাসক যদি ন্যায়পরায়ণ হয়, তবে তো বিরোধিতা করার প্রশ্নই আসে না। এমনকি যদি জালেমও হয়, তবুও সর্বাত্মক ক্ষতি থেকে বাঁচার লক্ষ্যে কিংবা মন্দের ভালো মেনে নেওয়ার নীতিতে তার বিরোধিতা করা হতে বিরত থাকাই শ্রেয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
শরী'আতসম্মত কারণ ছাড়া কোনও অবস্থায়ই শাসকের বিরোধিতা করতে নেই।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
