মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১৬- শপথ ও মান্নতের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৪৩৯
১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মান্নত
৩৪৩৯। হযরত আবু লুবাবা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি নবী (ﷺ)কে বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! আমার পরিপূর্ণ তওবা ইহাই হইবে যে, আমি আমার খান্দানী ঘরখানা পরিত্যাগ করিব, যেই ঘরে থাকিয়া আমি এই বিরাট পাপে লিপ্ত হইয়াছি এবং আমি (মনে মনে সংকল্প করিয়াছি যে,) সকাস্বরূপ আমার সমস্ত মাল-সম্পদ বর্জন করিয়া ফেলিব। উত্তরে তিনি বলিলেনঃ তোমার পক্ষ হইতে এক তৃতীয়াংশই যথেষ্ট। —রাযীন
وَعَن أبي لبَابَة: أَنَّهُ قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أَهْجُرَ دَارَ قَوْمِي الَّتِي أَصَبْتُ فِيهَا الذَّنْبَ وَأَنْ أَنْخَلِعَ مِنْ مَالِي كُلِّهِ صَدَقَةً قَالَ: «يُجْزِئُ عَنْكَ الثُّلُثُ» . رَوَاهُ رزين

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ঘটনার বিবরণঃ আবু লুবাবা আনসারী (রাঃ)-এর পরিবার-পরিজন ও বিষয়-সম্পত্তি ইহুদী এলাকায় ছিল বলিয়া তাঁহার উক্ত সম্প্রদায়ের সহিত বাহ্যিক হৃদ্যতা ছিল। যেই সময় নবী (ﷺ) বনী কুরাইযাকে অবরোধ করিয়াছিলেন, তখন তাহারা হুযূর (ﷺ)-এর কাছে দূতের মাধ্যমে এই সংবাদ পাঠাইল যে, আবু লুবাবাকে আমাদের কাছে পাঠাইয়া দিন, আমরা তাহার সঙ্গে পরামর্শ করিয়া সিদ্ধান্ত নিব যে, আমাদের কি করিতে হইবে। নবী (ﷺ) তাহাকে পাঠাইয়া দিলেন। তাহারা আবু লুবাবাকে জিজ্ঞাসা করিল, যদি আমরা নিজেদেরকে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নিকট সোপর্দ করি তাহা হইলে তিনি আমাদের সঙ্গে কি আচরণ করিবেন ? তখন আবু লুবাবা নিজের 'হলক' (গলা)-এর উপর হাত বুলাইয়া এই দিকে ইঙ্গিত করিলেন যে, তিনি তোমাদের যবাহ্ (হত্যা) করিয়া দিবেন; এই গোপনীয়তা প্রকাশ করিয়া চলিয়া যাইতে যাইতে তাঁহার মনে জাগিল যে, তিনি তো বিরাট আমানতের মধ্যে খেয়ানত করিয়া ফেলিয়াছেন এবং নিজের কৃতকর্মের উপর ভীষণ অনুতপ্ত হইলেন। এই প্রসঙ্গে কোরআনের এই আয়াত নাযিল হইলঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ এই ঘটনার পর আবু লুবাবা মসজিদের মধ্যে প্রবেশ করিলেন এবং নিজেকে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বাঁধিয়া নিলেন এবং বলিলেন, যতদিন পর্যন্ত আমার তওবা কবুল না হয়, ততদিন পর্যন্ত খানাপিনা আমার জন্য হারাম থাকিবে। কেবল নামাযের সময় তাঁহার এক মেয়ে আসিয়া বাধন খুলিয়া দিত এবং নামায শেষে আবার বাঁধিয়া দিত। অন্য কোন লোক তাহা খুলিতে চাহিলে তিনি নিষেধ করিয়া বলিতেন, যেই পর্যন্ত নবী (ﷺ) স্বয়ং আসিয়া আমাকে না খুলিবেন, সেই পর্যন্ত আমি এই স্থান হইতে যাইব না। এইভাবে তিনি সাত দিন ছিলেন। অবশেষে একদিন ক্ষুধার তাড়নায় অজ্ঞান হইয়া পড়িলেন। এই সময় আল্লাহর মেহেরবানী হইল এবং তাঁহার তওবা কবুল হইল। অতঃপর নবী (ﷺ) স্বয়ং আসিয়া তাহার বন্ধন খুলিয়া দিলেন। এই সময় তিনি নবী (ﷺ)-কে উক্ত কথাটি বলিয়াছিলেন, যাহা হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান