মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১৪- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩২০২
৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মোহর
৩২০২। হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, একটি স্ত্রীলোক রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি নিজেকে আপনার জন্য হেবা করিলাম। এই বলিয়া সে দীর্ঘ সময় দাড়াইয়া রহিল, (কিন্তু হুযুর কোন উত্তর দিলেন না, যাহাতে তাঁহার নারাযী বুঝা গেল। ইহাতে) এক ব্যক্তি দাঁড়াইয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, আমার সাথে তাহার বিবাহ দিন, যদি তাহাতে আপনার কোন আবশ্যক না থাকে। হুযুর বলিলেনঃ তোমার নিকট তাহাকে মহর দেওয়ার মত কোন জিনিস আছে কি ? সে বলিল, আমার নিকট আমার এই তহবন্দটি ছাড়া কিছুই নাই। হুযূর বলিলেন, একটি লোহার আংটি হইলেও তালাশ করিয়া দেখ। সে তালাশ করিল, কিন্তু কিছু পাইল না। তখন রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তোমার কিছু কোরআন জানা আছে কি? সে বলিল, হ্যাঁ, অমুক অমুক সূরা জানা আছে। হুযূর বলিলেন, যাও, তোমার কোরআনের যাহা জানা আছে তাহার বিনিময়ে তোমার সাথে তাহার বিবাহ দিলাম। অপর বর্ণনামতে, “যাও তোমার সাথে তাহার বিবাহ দিলাম, তুমি তাহাকে কোরআন শিক্ষা দাও।” –মোত্তাঃ
بَابُ الصَّدَاقِ: الْفَصْل الأول
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي وَهَبْتُ نَفْسِي لَكَ فَقَامَتْ طَوِيلًا فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ زَوِّجْنِيهَا إِنْ لَمْ تَكُنْ لَكَ فِيهَا حَاجَةٌ فَقَالَ: «هَلْ عِنْدَكَ مِنْ شَيْءٍ تُصْدِقُهَا؟» قَالَ: مَا عِنْدِي إِلَّا إِزَارِي هَذَا. قَالَ: «فَالْتَمِسْ وَلَوْ خَاتَمًا مِنْ حَدِيدٍ» فَالْتَمَسَ فَلَمْ يَجِدْ شَيْئًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ شَيْءٌ» قَالَ: نَعَمْ سُورَةُ كَذَا وَسُورَةُ كَذَا فَقَالَ: «زَوَّجْتُكَهَا بِمَا مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: «انْطَلِقْ فَقَدْ زَوَّجْتُكَهَا فَعَلِّمْهَا مِنَ الْقُرْآنِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

মহর

'মহর' অর্থ, স্ত্রী নিজকে স্বামীর প্রতি অর্পণ করার পরিবর্তে যাহা তাহাকে দেওয়া হয় তাহা। ইহাতে স্বামীর এই বিবাহের আগ্রহ প্রকাশ পায় এবং স্ত্রীর মর্যাদা বাড়ে।
কোরআনে 'মোহাররামাত' বা বিবাহ নিষিদ্ধ নারীদের বর্ণনার পর বলা হইয়াছে—
وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاءَ ذَٰلِكُمْ أَن تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم “এছাড়া অন্য নারী তোমাদের জন্য হালাল করা হইল, তাহাদিগকে তোমরা তোমাদের মাল দ্বারা গ্রহণ করিবে।” (সূরা নিসা, আয়াত ২৪) অপর আয়াতে রহিয়াছেঃ وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً “নারীদেরে মহর দাও খুশীর সাথে।” (সূরা নিসা, আয়াত ৪)
এসকল আয়াত হইতে ইমামগণ ইহাই বুঝিয়াছেন যে, মহর ব্যতীত বিবাহ জায়েয নহে। তবে মহরের ন্যূনতম পরিমাণ সম্পর্কে তাঁহাদের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। কারণ, এ ব্যাপারে হাদীস বিভিন্ন। ইমাম শাফেয়ীর মতে যে কোন পরিমাণ মহর দ্বারাই বিবাহ করা যাইতে পারে। ইমাম মালেকের মতে তিন দেরহামের কম মহরে বিবাহ জায়েয নহে। আর ইমাম আ'যম আবু হানীফার মতে দশ দেরহামের কমে মহর হইতে পারে না। মহরের ঊর্ধ্বতম পরিমাণ নির্ধারিত নহে। কর্মী-বেশীও নির্ধারণ করিতে পারে। কোরআনে বলা হইয়াছে, “যদি তোমরা নারীদের কাহাকেও ঢের মহরও দিয়া থাক, তবু তোমরা উহার কিছুই পুনঃ গ্রহণ করিবে না।” (সূরা নিসা, আয়াত ২০)
তবে মহর বেশী নির্ধারণ করা উত্তম নহে। হুযুরের বিবিদের কাহারও মহর ১৩১।০ তোলা রূপার অধিক ছিল না। কন্যাদের মধ্যে বিবি ফাতেমা যাহরার মহর ছিল এক বর্ণনামতে চারি শত মিসকাল রূপা (১৫০ তোলার সমান); আর অপর বর্ণনামতে চারি শত দেরহাম বা ১০৫ তোলা রূপা। (মেরকাত) বর্তমানে (১৩৭৭ সাল) রূপার তোলা ৬ টাকা; সুতরাং 'মহরে ফাতেমীর' পরিমাণ হইল, প্রথম বর্ণনামতে ৯০০ টাকা আর দ্বিতীয় বর্ণনামতে ৬৩০ টাকা। —অনুবাদক

ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেন, হুযূর (ﷺ) এখানে কোরআন শিক্ষার উজরত বা পারিশ্রমিককেই মহর নির্ধারণ করিলেন। সুতরাং বুঝা গেল যে, কোরআন শিক্ষার পরিবর্তে পারিশ্রমিক লওয়া জায়েয। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেন, “কোরআনের বিনিময়ে বিবাহ দিলাম” –এখানে ইহার এরূপ অর্থ করা ঠিক নহে; বরং ইহার অর্থ হইবে, তোমার কোরআন জানা থাকার কারণে তোমার সাথে তাহার বিবাহ দিলাম, যাহাতে সে তোমার নিকট কোরআন শিখিতে পারে। মহর তুমি পরে দিবে। শেষ বাক্যগুলি এখানে উহ্য রহিয়াছে। ইমাম সাহেবের মতে কোরআন শিক্ষা, আযান ও ইমামত প্রভৃতি এবাদত-কার্যের জন্য উজরত বা পারিশ্রমিক লওয়া জায়েয নহে। তবে তাঁহার অনুসারীদের মধ্যে মুতাআখখেরীন বা পরবর্তী আলেমগণ জরুরতের কারণে ইহাকে জায়েয বলিয়া ফওয়া দিয়াছেন। কারণ, আর্থিক অনটন ও দ্বীনি কাজে উৎসাহের অভাবে পারিশ্রমিক না লইলে এযুগে এসকল কাজ বন্ধ হইয়া যাওয়ার আশংকা রহিয়াছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৩২০২ | মুসলিম বাংলা