মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৪- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়
হাদীস নং: ৩১৭০
৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৭০। হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইন যুদ্ধের তারিখে আওতাসের দিকে এক সৈন্যদল পাঠাইলেন। তাহারা শত্রুর সম্মুখীন হইল এবং তাহাদের সাথে যুদ্ধ করিল, অবশেষে তাহাদের উপর জয়ী হইল এবং বহু নারী তাহাদের অধিকারে আসিল। অতঃপর নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে কিছু কিছু লোক ঐ নারীদের মুশরিক স্বামী থাকার কারণে তাহাদের সাথে সহবাস করাকে দূষণীয় মনে করিতে লাগিল। তখন আল্লাহ্ তা'আলা এ ব্যাপারে আয়াত নাযিল করিলেন, " এবং (তোমাদের প্রতি হারাম করা হইয়াছে) সধবা নারী, কিন্তু যাহারা তোমাদের অধিকারে আসিয়াছে (তাহারা নহে)।” রাবী বলেন, অর্থাৎ, তাহারা তোমাদের জন্য হালাল যখন তাহাদের ইন্দত পূর্ণ হইয়া যায়। মুসলিম
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ بَعَثَ جَيْشًا إِلَى أَوْطَاسٍ فَلَقُوا عَدُوًّا فَقَاتَلُوهُمْ فَظَهَرُوا عَلَيْهِمْ وَأَصَابُوا لَهُمْ سَبَايَا فَكَأَنَّ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَحَرَّجُوا مِنْ غِشْيَانِهِنَّ مِنْ أَجْلِ أَزْوَاجِهِنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى فِي ذَلِكَ (وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاء إِلَّا مَا ملكت أَيْمَانكُم)
أَيْ فَهُنَّ لَهُمْ حَلَالٌ إِذَا انْقَضَتْ عِدَّتُهُنَّ. رَوَاهُ مُسلم
أَيْ فَهُنَّ لَهُمْ حَلَالٌ إِذَا انْقَضَتْ عِدَّتُهُنَّ. رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
(১) যুদ্ধবন্দিনীদের উপভোগ করা একমাত্র তখনই জায়েয যখন ইমাম বা সরকার তাহাদিগকে যোদ্ধাদের মধ্যে নিয়মিতভাবে বন্টন করিয়া দেন এবং বন্টন দ্বারা তাহাদের উপর যোদ্ধাদের মালিকানা স্থাপিত হয়। অতঃপর যে যাহার মালিকানায় আসিয়াছে কেবল সে-ই তাহাকে উপভোগ করিতে পারে। (২) তাহার কাফের স্বামী কাফের দেশে থাকার কারণে তাহাদের মধ্যকার বিবাহবন্ধন ছিন্ন হইয়া যায়, কিন্তু (৩) স্বামী-স্ত্রী উভয় এক সাথে বন্দী হইলে তাহাদের বিবাহবন্ধন অটুট থাকে। (৪) ইমাম শাফেয়ীর মতে বন্টিত হওয়ার পরও তাহাকে উপভোগ করার অধিকার তাহার মালিকের নাই, যাবৎ না সে মুসলমান হয় এবং উহা দ্বারা তাহার কাফেরী বিবাহ ছিন্ন হইয়া না যায়। তাঁহার মতে হাদীস ও আয়াতে এখানে সেসকল বন্দিনীকে উপভোগ করার অনুমতি দেওয়া হইয়াছে, যাহারা মুসলমান হইয়া গিয়াছিল এবং এ কারণে তাহাদের কাফেরী বিবাহ ছিন্ন হইয়া গিয়াছিল। (৫) বিবাহবন্ধন দ্বারা স্ত্রীর উপর স্বামীর যে অধিকার স্থাপিত হয় তাহা হইল, শুধু তাহাকে উপভোগ করার অধিকার, শরীরের অধিকার নহে। স্বামী আপন স্ত্রীকে বিক্রয় করিতে পারে না। কিন্তু বাঁদী-দাসীর উপর মালিকের যে অধিকার স্থাপিত হয় তাহা হইল শরীরের অধিকার। সুতরাং প্রথম অধিকার অপেক্ষা এ অধিকার সবল ও পূর্ণতম। অতএব, তাহাকে (দাসীকে) উপভোগ করার জন্য বিবাহের প্রয়োজন করে না। (৬) দাসী উপভোগ করার ব্যাপারে সংখ্যার সীমাবদ্ধতা নাই। কারণ, যে যুগে কলকব্জার প্রচলন ছিল না, সমস্ত শ্রমই ছিল মানুষভিত্তিক, তখন কাজের জন্য কাহারও পক্ষে একাধিক দাসী রাখার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। অন্যের নিকট বিবাহ দিলে তাহার কাজের অসুবিধা ঘটার কথাকেও উড়াইয়া দেওয়া যায় না (যদিও বিবাহ দেওয়া জায়েয)। এমতাবস্থায় তাহার শক্তিতে কুলাইলে তাহাদের (একাধিকের) যৌনক্ষুধা মিটাইবার চেষ্টা করা অন্যায় বিবেচিত হইতে পারে না। তবে কেবল যৌন বিলাসিতার জন্য দাসীর বহর রাখা ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবী ও তাবেয়ীনের মধ্যে কেহই এইরূপ করেন নাই। এ যুগে এ আলোচনার প্রয়োজনও নাই।
