মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৪- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়
হাদীস নং: ৩১৬৯
৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬৯। হযরত ওকবা ইবনে হারেস (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, তিনি আবু এহাব ইবনে আযীযের একটি কন্যাকে বিবাহ করিলেন। অতঃপর একটি স্ত্রীলোক আসিয়া বলিল, আমি ওকবাকে এবং সে যাহাকে বিবাহ করিয়াছে তাহাকে দুধ খাওয়াইয়াছি। ওকরা তাহাকে বলিলেন, আমি জানি না যে, আপনি আমাকে দুধ খাওয়াইয়াছেন এবং কখনও আমাকে ইহা বলেন নাই। অতঃপর ওকবা আবু এহাব পরিবারের নিকট লোক পাঠাইয়া তাহাদিগকে ইহা জিজ্ঞাসা করিলেন। তাহারা বলিল, আমরাও জানি না যে, সে আমাদের পাত্রীকে দুধ খাওয়াইয়াছে। অতঃপর ওকবা মদীনায় নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলেন এবং তাহাকে ইহা জিজ্ঞাসা করিলেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেনঃ তোমরা কিভাবে এক সাথে থাকিতে পার যখন বলা হইয়াছে যে, তোমরা দুধ-ভাই বোন। সুতরাং একবা তাহাকে পৃথক করিয়া দিল এবং সেই নারী অন্যকে বিবাহ করিল। বোখারী
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ: أَنَّهُ تَزَوَّجَ ابْنَةً لِأَبِي إِهَابِ بْنِ عَزِيزٍ فَأَتَتِ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ: قَدْ أَرْضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي تَزَوَّجَ بِهَا فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ: مَا أَعْلَمُ أَنَّكِ قَدْ أَرْضَعْتِنِي وَلَا أَخْبَرْتِنِي فَأَرْسَلَ إِلَى آلِ أَبِي إِهَابٍ فَسَأَلَهُمْ فَقَالُوا: مَا عَلِمْنَا أَرْضَعْتَ صَاحِبَتُنَا فَرَكِبَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ فَسَأَلَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَيْفَ وَقَدْ قِيلَ؟» فَفَارَقَهَا عُقْبَةُ وَنَكَحَتْ زوجا غَيره. رَوَاهُ البُخَارِيّ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. এ হাদীস অনুসারে কেহ কেহ বলেন, এ ব্যাপারে একজন স্ত্রীলোকের সাক্ষ্যই গৃহীত হইবে, কিন্তু আমাদের হানাফীয়াদের মতে দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন নারী ব্যতীত গৃহীত হইবে না। হাদীসে এহতিয়াত বা সতর্কতার পন্থাই বাতলানো হইয়াছে, যাহাতে লোক অযথা দুর্নাম করিতে না পারে। কেহ কাহাকেও দুধ খাওয়াইলে তাহা মানুষের কাছে প্রকাশ করিয়া দেওয়া উচিত, যেন পরে এইরূপ গোলযোগ না বাধে।
২. এ হাদীছটি তাকওয়া-পরহেযগারী সম্পর্কিত। কোনও কাজ সুস্পষ্ট হারাম না হলেও যদি হারাম হওয়ার আভাসমাত্রও থাকে, তবে মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তির উচিত তা থেকে বিরত থাকা। হযরত উকবা ইবনুল হারিছ রাযি. যে মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন, তিনি যে তাঁর দুধবোন তা প্রমাণিত হয়নি। একজন স্ত্রীলোকের কথায় তা প্রমাণিত হয়ও না। এর জন্য দু'জন সাক্ষী দরকার। কিন্তু এ ঘটনায় দেখা যাচ্ছে একজন মহিলা এসে দাবি করেছেন যে, আমি উকবাকে এবং সে যাকে বিবাহ করেছে তাকে দুধপান করিয়েছি। তিনি বলতে চাচ্ছিলেন যে, তারা দু'জন দুধভাইবোন। এ কারণে তাদের মধ্যে বিবাহ হতে পারে না। কিন্তু সে স্ত্রীলোকটি তার দাবির পক্ষে কোনও সাক্ষী পেশ করতে পারেনি। তাই তাদের দু'জনের দুধভাইবোন হওয়া প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু যেহেতু স্ত্রীলোকটি এরকম এক দাবি করে বসেছেন, তাই হযরত উকবা রাযি.-এর অন্তরে খটকা দেখা দিয়েছে যে, তিনি যাকে বিবাহ করেছেন তাকে স্ত্রীরূপে রাখবেন না ছেড়ে দেবেন। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও পর্যন্ত বেঁচে আছেন, তাই এ বিষয়ে নিজে নিজে ফয়সালা না নিয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরামর্শ নেওয়া জরুরি মনে করলেন। সুতরাং অবিলম্বে মক্কা মুকাররামা থেকে মদীনা মুনাউওয়ারার সফর করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্ত্রীলোকটির দাবির কথা তাঁকে শোনালেন এবং এ অবস্থায় তাঁর কী করণীয় তা জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
كَيْفَ؟ وَقَدْ قِيلَ ‘কীভাবে (তুমি তাকে রাখবে), অথচ বলা হয়েছে (সে তোমার দুধবোন)'? অর্থাৎ এ অবস্থায় স্ত্রীরূপে তাকে রেখে দিলে তোমার দাম্পত্য জীবন সুখকর হবে না। তোমাদের অন্তরে সবসময় একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব লেগে থাকবে যে, বাস্তবিকই তোমরা দুধভাইবোন কি না। ফলে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে তোমরা পরস্পর ঘনিষ্ঠ হতে পারবে না। তাছাড়া লোকেও এ নিয়ে কানাঘুষা করবে। নানাজনে নানা কথা বলবে। তাতে সামাজিকভাবে তুমি হেয় হয়ে যাবে। তোমার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে। যে কাজে মর্যাদাহানী হয়, তা থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। কাজেই তোমার বিবাহিতাকে স্ত্রীরূপে রেখে দেওয়াটা হারাম না হলেও তাকওয়া-পরহেযগারী ও মার্জিত রুচির পরিপন্থী অবশ্যই। সুতরাং তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। তাতে তোমারও মান-সম্মান রক্ষা পাবে এবং তোমার স্ত্রীরও। তারপর তোমরা প্রত্যেকে নতুন বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ হলে সুখের ও স্বস্তিকর জীবন উপভোগ করতে পারবে।
হযরত উকবা রাযি. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ পরামর্শ গ্রহণ করলেন। তিনি তাঁর এ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি নিজেও নতুন বিবাহ করলেন এবং তার এ স্ত্রীও নতুন স্বামী গ্রহণ করলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যে কাজ করার দ্বারা মানুষের পক্ষ থেকে অবৈধতায় লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ উঠতে পারে, তা থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
খ. যে বিষয় জানা জরুরি, তা জানার জন্য যদি সফর করার দরকার হয় এবং তা করা সম্ভবও হয়, তবে অবশ্যই তা করতে হবে। ইমাম শা‘বী রহ. বলেন, কোনও ব্যক্তি যদি এমন একটি কথাও জানার জন্য শামের এক প্রান্ত থেকে ইয়ামানের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সফর করে, যে কথাটি তার পরবর্তী জীবনে উপকারে আসবে, তবে আমি মনে করি না তার সে সফর ব্যর্থ গেছে।
গ. দাম্পত্য জীবন যাতে সুখকর হয়, সে লক্ষ্যে বিবাহের আগেই বৈধ-অবৈধের বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া উচিত।
ঘ. বিবাহের পর যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুধভাইবোনের সম্পর্ক থাকার কোনও সন্দেহ দেখা দেয়, তবে নিশ্চিতভাবে তা প্রমাণিত না হলেও স্বস্তিকর জীবন উপভোগের উদ্দেশ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোই শ্রেয়। এটা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পক্ষেই কল্যাণকর।
২. এ হাদীছটি তাকওয়া-পরহেযগারী সম্পর্কিত। কোনও কাজ সুস্পষ্ট হারাম না হলেও যদি হারাম হওয়ার আভাসমাত্রও থাকে, তবে মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তির উচিত তা থেকে বিরত থাকা। হযরত উকবা ইবনুল হারিছ রাযি. যে মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন, তিনি যে তাঁর দুধবোন তা প্রমাণিত হয়নি। একজন স্ত্রীলোকের কথায় তা প্রমাণিত হয়ও না। এর জন্য দু'জন সাক্ষী দরকার। কিন্তু এ ঘটনায় দেখা যাচ্ছে একজন মহিলা এসে দাবি করেছেন যে, আমি উকবাকে এবং সে যাকে বিবাহ করেছে তাকে দুধপান করিয়েছি। তিনি বলতে চাচ্ছিলেন যে, তারা দু'জন দুধভাইবোন। এ কারণে তাদের মধ্যে বিবাহ হতে পারে না। কিন্তু সে স্ত্রীলোকটি তার দাবির পক্ষে কোনও সাক্ষী পেশ করতে পারেনি। তাই তাদের দু'জনের দুধভাইবোন হওয়া প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু যেহেতু স্ত্রীলোকটি এরকম এক দাবি করে বসেছেন, তাই হযরত উকবা রাযি.-এর অন্তরে খটকা দেখা দিয়েছে যে, তিনি যাকে বিবাহ করেছেন তাকে স্ত্রীরূপে রাখবেন না ছেড়ে দেবেন। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও পর্যন্ত বেঁচে আছেন, তাই এ বিষয়ে নিজে নিজে ফয়সালা না নিয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরামর্শ নেওয়া জরুরি মনে করলেন। সুতরাং অবিলম্বে মক্কা মুকাররামা থেকে মদীনা মুনাউওয়ারার সফর করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্ত্রীলোকটির দাবির কথা তাঁকে শোনালেন এবং এ অবস্থায় তাঁর কী করণীয় তা জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
كَيْفَ؟ وَقَدْ قِيلَ ‘কীভাবে (তুমি তাকে রাখবে), অথচ বলা হয়েছে (সে তোমার দুধবোন)'? অর্থাৎ এ অবস্থায় স্ত্রীরূপে তাকে রেখে দিলে তোমার দাম্পত্য জীবন সুখকর হবে না। তোমাদের অন্তরে সবসময় একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব লেগে থাকবে যে, বাস্তবিকই তোমরা দুধভাইবোন কি না। ফলে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে তোমরা পরস্পর ঘনিষ্ঠ হতে পারবে না। তাছাড়া লোকেও এ নিয়ে কানাঘুষা করবে। নানাজনে নানা কথা বলবে। তাতে সামাজিকভাবে তুমি হেয় হয়ে যাবে। তোমার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে। যে কাজে মর্যাদাহানী হয়, তা থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। কাজেই তোমার বিবাহিতাকে স্ত্রীরূপে রেখে দেওয়াটা হারাম না হলেও তাকওয়া-পরহেযগারী ও মার্জিত রুচির পরিপন্থী অবশ্যই। সুতরাং তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। তাতে তোমারও মান-সম্মান রক্ষা পাবে এবং তোমার স্ত্রীরও। তারপর তোমরা প্রত্যেকে নতুন বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ হলে সুখের ও স্বস্তিকর জীবন উপভোগ করতে পারবে।
হযরত উকবা রাযি. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ পরামর্শ গ্রহণ করলেন। তিনি তাঁর এ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি নিজেও নতুন বিবাহ করলেন এবং তার এ স্ত্রীও নতুন স্বামী গ্রহণ করলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যে কাজ করার দ্বারা মানুষের পক্ষ থেকে অবৈধতায় লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ উঠতে পারে, তা থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
খ. যে বিষয় জানা জরুরি, তা জানার জন্য যদি সফর করার দরকার হয় এবং তা করা সম্ভবও হয়, তবে অবশ্যই তা করতে হবে। ইমাম শা‘বী রহ. বলেন, কোনও ব্যক্তি যদি এমন একটি কথাও জানার জন্য শামের এক প্রান্ত থেকে ইয়ামানের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সফর করে, যে কথাটি তার পরবর্তী জীবনে উপকারে আসবে, তবে আমি মনে করি না তার সে সফর ব্যর্থ গেছে।
গ. দাম্পত্য জীবন যাতে সুখকর হয়, সে লক্ষ্যে বিবাহের আগেই বৈধ-অবৈধের বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া উচিত।
ঘ. বিবাহের পর যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুধভাইবোনের সম্পর্ক থাকার কোনও সন্দেহ দেখা দেয়, তবে নিশ্চিতভাবে তা প্রমাণিত না হলেও স্বস্তিকর জীবন উপভোগের উদ্দেশ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোই শ্রেয়। এটা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পক্ষেই কল্যাণকর।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
