মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১৪- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩১৬০
৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬০। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ কোন নারীকে তাহার ফুফুর সাথে (বিবাহবন্ধনে) একত্র করা যাইবে না। আর না কোন নারীকে তাহার খালার সাথে। মোত্তাঃ
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ: الْفَصْل الأول
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يُجْمَعُ بَيْنَ الْمَرْأَة وعمتها وَلَا بَين الْمَرْأَة وخالتها»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

যাহাদিগকে বিবাহ করা হারাম

কোরআনে বলা হইয়াছে, “তোমাদের বাপ যে নারীকে বিবাহ করিয়াছে তাহাকে বিবাহ করিবে না, কিন্তু যাহা হইয়া গিয়াছে। নিশ্চয় ইহা অশ্লীল ও ঘৃণ্য বিষয় এবং খারাব পন্থা। এছাড়া তোমাদের প্রতি হারাম করা হইয়াছে তোমাদের জননীদিগকে, তোমাদের কন্যাদিগকে, তোমাদের ভগিনীদিগকে, তোমাদের ফুফুদিগকে, তোমাদের খালাদিগকে, তোমাদের ভাতিজীদিগকে, তোমাদের ভাগিনীদিগকে, তোমাদের দুধমাদিগকে — যাহারা তোমাদিগকে দুধ পান করাইয়াছে, তোমাদের দুধ ভগিনীদিগকে, তোমাদের শাশুড়ীদিগকে, তোমাদের সম্ভোগ করা বিবিদের কন্যাদিগকে—যাহারা (সাধারণত) তোমাদের ঘরেই লালিত হইয়া থাকে। হাঁ, যদি তোমরা বিবিদেরকে সম্ভোগ না করিয়া থাক, তবে তাহাদের কন্যাদিগকে বিবাহ করিতে আপত্তি নাই । আর তোমাদের প্রতি হারাম করা হইয়াছে তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদিগকে এবং দুই ভগিনীদের মধ্যে একত্রীকরণকে — তবে যাহা ইসলাম-পূর্বযুগে হইয়া গিয়াছে (তাহা মাফ)। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও দয়াবান। এভাবে তোমাদের প্রতি হারাম করা হইয়াছে সেসকল নারী, যাহাদের স্বামী রহিয়াছে, কিন্তু তোমাদের দাসীরা ব্যতীত (—তাহাদের কাফের স্বামী থাকিতেও ইদ্দতের পর তাহাদিগকে সম্ভোগ করিতে পার)। ইহাই তোমাদের প্রতি আল্লাহর নির্ধারণ।” (সূরা-নিসা, আয়াত ২২, ২৩, ২৪)
কোরআনে এখানে পাঁচটি কারণের উল্লেখ রহিয়াছে, যেসকল কারণে কয়েক প্রকার নারীকে বিবাহ করা হারাম।
১। নসব বা রক্তের সম্পর্কের কারণ। এ কারণে চারি প্রকারের নারী হারাম হইয়াছেঃ
(ক) নিজের ঔরসজাত নারী। অর্থাৎ, নিজের কন্যা, কন্যার কন্যা, পুত্রের কন্যা, যত নীচে যাক না কেন। কোরআনে এখানে 'কন্যা' শব্দ এই ব্যাপক অর্থেই ব্যবহৃত হইয়াছে।
(খ) যাহার ঔরসে জন্ম। অর্থাৎ, আপন জননী, জননীর জননী, জনকের জননী। অর্থাৎ, নানী দাদী যত উপরে যাক না কেন। এখানে 'জননী' শব্দও ব্যাপক অর্থেই ব্যবহৃত হইয়াছে।
(গ) মা-বাপের ঔরসজাত নারী। অর্থাৎ, সহোদরা, সৎ ও পেট ভগিনী ; তাহাদের কন্যা ও ভাইদের কন্যা, যত নীচে যাক না কেন।
(ঘ) দাদা-নানা, দাদী-নানীর ঔরসজাত অর্থাৎ, ফুফু ও খালা, কিন্তু তাহাদের কন্যারা হারাম নহে।
২। দুধপান সম্পর্কের কারণ। এই কারণেও প্রায় ততজন হারাম হয়, যতজন রক্তের কারণে হারাম হয়।
৩। শ্বশুরত্ব বা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণ। এ কারণে স্ত্রীর মা, স্ত্রীর নানী, দাদী যত উপরে যাক না কেন এবং আপন সম্ভোগ করা স্ত্রীর অপর ঘরের কন্যা। ইহারা সকলেই সর্বদার জন্য হারাম। কিন্তু স্ত্রীর ভগিনী বন্ধন থাকা পর্যন্ত হারাম। স্ত্রীকে তালাক দিলে বা স্ত্রী মরিয়া গেলে তাহার ভগিনীকে বিবাহ করা হারাম নহে।
৪। অন্যের বন্ধনে থাকার কারণে। এ কারণে যে নারীর স্বামী আছে তাহাকে বিবাহ করা হারাম। —অনুবাদক
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান