মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১১- হজ্জ্বের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৭১৫
১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে
২৭১৫। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলিয়াছেন: অতঃপর আর হিজরত নাই, তবে জেহাদ ও সংকল্প (নিয়ত ) বাকী আছে। সুতরাং তোমাদের যখন জেহাদের জন্য বাহির হইতে বলা হইবে বাহির হইয়া পড়িবে। তিনি ঐ দিন পুনরায় বলিলেন, এই শহরকে আল্লাহ্ সম্মানিত করিয়াছেন সেদিন হইতে যেদিন তিনি আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করিয়াছেন। সুতরাং উহা আল্লাহর সম্মানেই সম্মানিত থাকিবে কেয়ামত পর্যন্ত। আমার পূর্বে কাহারও জন্য ইহাতে যুদ্ধ চালনা করা হালাল ছিল না, আর আমার জন্যও একদিনের সামান্য মাত্র সময়ই হালাল করা হইয়াছে। অতঃপর উহা আল্লাহর সম্মানেই সম্মানার্হ কেয়ামত পর্যন্ত। উহার কাঁটা গাছ পর্যন্ত কাটা যাইবে না, উহার শিকারকে তাড়ান চলিবে না এবং উহার পথে পড়া জিনিস কেহ উঠাইতে পারিবে না শোহরতকারী ব্যতীত। আর উহার ঘাসও কাটা চলিবে না। এ সময় (আমার পিতা) হযরত আব্বাস (রাঃ) বলিয়া উঠিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। ইযখার ব্যতীত। উহা লোকদের (কামারদের) জন্য ও ঘরের ছাদের জন্য দরকার। তখন তিনি বলিলেন, আচ্ছা ইযখার ব্যতীত। --মোত্তাঃ
بَابُ حَرَمِ مَكَّةَ حَرَسَهَا اللهُ تَعَالٰى: الْفَصْل الأول
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ: «لَا هِجرةَ وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوا» . وَقَالَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ: «إِنَّ هَذَا الْبَلَدَ حَرَّمَهُ اللَّهُ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فَهُوَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَإِنَّهُ لَمْ يحِلَّ القتالُ فيهِ لأحدٍ قبْلي وَلم يحِلَّ لِي إِلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ فَهُوَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا يُعْضَدُ شَوْكُهُ وَلَا يُنَفَّرُ صَيْدُهُ وَلَا يَلْتَقِطُ لُقَطَتُهُ إِلَّا مَنْ عَرَّفَهَا وَلَا يُخْتَلَى خَلَاهَا» . فَقَالَ الْعَبَّاسُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِلَّا الْإِذْخِرَ فَإِنَّهُ لِقَيْنِهِمْ وَلِبُيُوتِهِمْ؟ فَقَالَ: «إِلَّا الْإِذْخِرَ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. এ হাদীছে মক্কা বিজয়ের পর হিজরত করতে নিষেধ করা হয়েছে। হিজরতের হুকুম ছিল মক্কা বিজয়ের আগে। কেননা তখন মক্কায় অবস্থান করে কারও পক্ষে তার ঈমান- আমলের হেফাজত করা সম্ভব ছিল না। মক্কার মুশরিকগণ মু'মিনদের উপর চরম জুলুম- নির্যাতন চালাত। তাদেরকে ইসলাম পরিত্যাগের জন্য বাধ্য করত। এহেন পরিস্থিতিতে দীন ও ঈমান হেফাজতের লক্ষ্যে মু'মিনদের জন্য হিজরত করা ফরয ছিল। হিজরতের ৮ম বছরে মক্কা বিজয় হয়ে গেলে সেই পরিস্থিতি বাকি থাকেনি। এখানকার সকলেই ইসলাম কবুল করে নিয়েছে। প্রত্যেক মু'মিনের পক্ষে জীবন নিরাপদ হয়ে গেছে। ফলে হিজরতেরও প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে। তাই বলা হয়েছে, মক্কা বিজয়ের পর এখান থেকে আর হিজরত নেই। তাই বলে এর দ্বারা হিজরতের বিধান রহিত হয়ে যায়নি। যদি কখনও কোথাও এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়, যেখানে বসবাস করে ঈমান-আমলের হেফাজত করা সম্ভব নয়, তখন সেখান থেকে হিজরত করা ফরয হয়ে যাবে। সুতরাং এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-

 لا تنقطِعُ الهجرةُ حتَّى تنقَطعَ التَّوبةُ، ولا تنقطِعُ التَّوبةُ حتَّى تطلعَ الشَّمسُ مِن مغربِها

অর্থ: হিজরত বন্ধ হবে না, যতক্ষণ না তাওবার দরজা বন্ধ হবে আর তাওবার দরজা বন্ধ হবে না, যতক্ষণ না পশ্চিম থেকে সূর্য উদিত হবে।
অতঃপর হাদীছে বলা হয়েছে, জিহাদ ও জিহাদের নিয়ত আছে। অর্থাৎ মক্কাবাসীর জন্য এখন হিজরত নেই বটে, কিন্তু জিহাদ আছে। অর্থাৎ এখন তারা ইসলামের দাওয়াত নিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে এবং যখন প্রয়োজন দেখা দেবে জিহাদ করবে। কার্যত জিহাদের পরিস্থিতি না থাকলে জিহাদের নিয়ত রাখবে।
সাধারণ অবস্থায় জিহাদ ফরযে কিফায়া। অর্থাৎ কখনও কোথাও জিহাদের পরিস্থিতি দেখা দিলে একদল লোকের উপর তাতে যোগদান করা অবশ্যকর্তব্য। প্রয়োজন পরিমাণ লোক যদি তাতে যোগদান না করে, তবে সকলেই জিহাদ তরকের জন্য গুনাহগার হবে।
হাদীছের শেষ বাক্যে ইরশাদ হয়েছে, যখন তোমাদেরকে জিহাদে বের হওয়ার জন্য ডাকা হয়, তখন বের হয়ে পড়ো। অর্থাৎ যখন তোমাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য তোমাদের প্রতি সাধারণ আহবান জানাবে, তখন তোমরা তার ডাকে সাড়া দিয়ে বের হয়ে পড়বে। এরকম বিশেষ পরিস্থিতিতে জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। তখন বিনা ওযরে কারও পক্ষে তা থেকে বিরত থাকা জায়েয নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারাও নিয়তের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কার্যত জিহাদ না থাকলেও অন্তরে জিহাদের নিয়ত থাকা জরুরি। সে নিয়ত দ্বারাও জিহাদের ছওয়াব হাসিল হবে।
খ. এ হাদীছ প্রমাণ করে, পবিত্র মক্কা আর কখনোই কুফরের দেশে পরিণত হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা এখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। আল্লাহ তা'আলা উত্তরোত্তর এর মর্যাদা বৃদ্ধি করুন- আমীন।

২. মক্কার হেরেমে হারাম হওয়া

মক্কা শরীফের চারিদিকে কতক স্থানকে আল্লাহ্ তা'আলা সম্মানিত করিয়াছেন। ইহাকে হেরেম (হারম) বলে। ইহাতে এমন কতক কাজ নিষিদ্ধ যাহা বাহিরে নিষিদ্ধ নহে। যথা, যুদ্ধ করা, তথাকার কোন গাছ কাটা বা মশা-মাছি প্রভৃতি প্রাণী হত্যা করা। পাকা স্তম্ভ দ্বারা ইহার সীমা চিহ্নিত করা হইয়াছে। ইহার সব দিকের দূরত্ব সমান নহে, তানঈমের দূরত্ব সর্বাপেক্ষা কম।
"আমার জন্য যুদ্ধ সামান্য সময় হালাল করা হইয়াছে" — ইহাতে স্পষ্টভাবে বুঝা গেল যে, মক্কা যুদ্ধ অর্থাৎ, শক্তি দ্বারাই জয় করা হইয়াছে। সন্ধি দ্বারা নহে। আর শক্তি দ্বারা বিজিত ভূমির মালিক ইসলামী সরকার। কিন্তু হুযূর (ﷺ) উহা মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করিয়া দেন। সুতরাং উহার ভূমি বেচাবিক্রি জায়েয নহে, ইমাম আ'যমের ইহাই মত।
(১) ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ২৭১৫ | মুসলিম বাংলা