মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১১- হজ্জ্বের অধ্যায়
হাদীস নং: ২৫৫৫
২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিদায় হজের বৃত্তান্তের বিবরণ
২৫৫৫। হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় নয় বছর অতিবাহিত করিলেন হজ্জ না করিয়া, অতঃপর দশম বৎসর লোকের মধ্যে ঘোষণা করা হইল যে, 'রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বৎসর হজ্জে যাইবেন। সুতরাং মদীনায় বহু লোক আগমন করিল। অতঃপর আমরা তাহার সহিত হজ্জে রওয়ানা হইলাম এবং যখন যুলহুলায়ফা পর্যন্ত পৌঁছিলাম তখন (হযরত আবু বকরের স্ত্রী) আসমা বিনতে উমাইস মুহাম্মাদ ইবনে আবু বকরকে প্রসব করিলেন। অতএব, আসমা রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইলেন যে, এখন আমি কি করিব? হুযুর বলিলেনঃ তুমি গোসল কর এবং কাপড়ের নেকড়া দ্বারা কমিয়া লেঙ্গুট পর, তৎপর এহরাম বাঁধ! জাবের বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে (দুই রাকআত এহরামের) নামায পড়িলেন, অতঃপর কাসওয়া উটনীতে সওয়ার হইলেন—অবশেষে যখন বায়দা নামক স্থানে উটনী তাহাকে লইয়া সোজা হইয়া দাড়াইল, তিনি আল্লাহর তওহীদ সম্বলিত এই তালবিয়া পড়িলেন, “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি'মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা শারীকা লাকা।”
জাবের (রাঃ) বলেন, তখন আমরা হজ্জ ছাড়া কিছুর নিয়ত করি নাই, আমরা উমরার কথা জানিতাম না। (উহা হজ্জের সাথে করা যাইতে পারে কিনা ?) অবশেষে যখন আমরা তাঁহার সাথে বায়তুল্লাহর হেরেমে পৌঁছিলাম, তিনি 'হাজারে আসওয়াদ' হাতে স্পর্শ করিয়া চুমা দিলেন, অতঃপর সাত পাক বায়তুল্লাহ্ প্রদক্ষিণ করিলেন ; তিন পাক জোরে পদক্ষেপ করিলেন এবং চারি পাক স্বাভাবিকভাবে চলিলেন। অতঃপর 'মাকামে ইবরাহীম'-এর দিকে অগ্রসর হইলেন এবং কোরআনের এই আয়াত পাঠ করিলেন, “এবং মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থানে পরিণত কর (অর্থাৎ, উহার নিকট নামায পড়)।" এ সময় হুযুর দুই রাকআত নামায পড়িলেন মাকামে ইবরাহীমকে নিজের ও বায়তুল্লাহর মধ্যখানে রাখিয়া (অর্থাৎ, তাহার সম্মুখে মাকামে ইবরাহীম আর উহার সম্মুখে বায়তুল্লাহ্)। অপর বর্ণনায় আছে, ঐ দুই রাকআতে হুযুর সুরা 'কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ' ও 'কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন পড়িয়াছিলেন। অতঃপর হাজারে আসওয়াদের দিকে প্রত্যাবর্তন করিলেন এবং উহাকে স্পর্শ করিয়া চুমা দিলেন। তৎপর দরজা দিয়া সাফা পর্বতের দিকে বাহির হইলেন এবং যখন সাফার নিকটে পৌঁছিলেন, কোরআনের এই আয়াত পাঠ করিলেন, “নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত" এবং বলিলেন, আমি উহা ধরিয়া আরম্ভ করিব যাহা ধরিয়া আল্লাহ্ আরম্ভ করিয়াছেন। সুতরাং তিনি সাফা হইতে আরম্ভ করিলেন এবং উহার উপরে চড়িলেন যাহাতে তিনি আল্লাহর ঘর দেখিতে পাইলেন। তখন তিনি কেবলা অর্থাৎ, আল্লাহর ঘরের দিকে ফিরিয়া আল্লাহর তওহীদের ঘোষণা করিলেন এবং তাঁহার মহিমা বর্ণনা করিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা'বূদ নাই, তিনি অদ্বিতীয়, তাহার কোন শরীক নাই, তাহারই শাসন এবং তাহারই সমস্ত প্রশংসা, তিনি হইতেছেন সর্বশক্তিমান। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা'বুদ নাই, তিনি অদ্বিতীয়। তিনি তাহার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করিয়াছেন এবং তাহার বান্দাকে সাহায্য দান করিয়াছেন এবং একাকী সমস্ত সম্মিলিত শক্তিকে পরাভূত করিয়াছেন। ইহা তিনি তিনবার বলিলেন এবং ইহাদের মধ্যখানে কিছু দো'আ করিলেন। অতঃপর সাফা হইতে অবতরণ করিলেন এবং ত্বরিতে মারওয়া অভিমুখে হাটিয়া চলিলেন, যাবৎ না তাহার পা মোবারক উপত্যকা সমতলে। অতঃপর তিনি দৌড়াইয়া চলিলেন, যাবৎ না উপত্যকা অতিক্রম করিলেন, যখন চড়াইতে উঠিলেন স্বাভাবিকভাবে হাটিয়া চলিলেন, যাবৎ না মারওয়ায় পৌঁছিলেন। তথায় তিনি ঐরূপই করিলেন, যেরূপ সাফার উপর করিয়াছিলেন। এমন কি যখন মারওয়ার শেষ চলা সমাপ্ত হইল, মারওয়ার উপর দাড়াইয়া লোকদের সম্বোধন করিলেন। আর লোকেরা ছিল তখন তাহার নীচে। তিনি বলিলেন, যদি আমি আমার ব্যাপারে পূর্বে বুঝিতে পারিতাম যাহা আমি পরে বুঝিতে পারিয়াছি, তাহা হইলে কখনও আমি কোরবানীর পশু সঙ্গে আনিতাম না এবং ইহাকে উমরার রূপ দান করিতাম। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাহার সঙ্গে কোরবানীর পশু নাই, সে যেন এহরাম খুলিয়া ফেলে এবং ইহাকে উমরার রূপ দান করে। এ সময় সুরাকা ইবনে মালেক ইবনে জুশুম দাড়াইয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ । ইহা কি আমাদের এ বৎসরের জন্যই, না চিরকালের জন্য ? তখন রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন হাতের অঙ্গুলীসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢুকাইয়া দুইবার বলিলেন, উমরা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করিল। না; বরং চিরকালের—চিরকালের জন্য।
এ সময় হযরত আলী ইয়ামন হইতে (যিনি তথায় বিচারক পদে নিযুক্ত ছিলেন) নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোরবানীর পশু লইয়া আসিলেন। তখন হুযূর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, যখন তুমি এহরাম বাঁধিয়াছিলে কিসের এহরাম বাঁধিয়াছিলে? (হজ্জের না উমরার না উভয়ের?) তিনি বলিলেন, আমি এইরূপ বলিয়াছি—“হে খোদা! আমি এহরাম বাঁধিতেছি যেভাবে এহরাম বাঁধিয়াছেন তোমার রাসূল।" তখন হুযুর বলিলেন, তবে তুমি এহরাম খুলিও না। কেননা, আমার সাথে কোরবানীর পশু রহিয়াছে। হযরত জাবের বলেন, যেসকল পশু হযরত আলী ইয়ামন হইতে আনিয়াছিলেন, আর যাহা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাথে আনিয়াছিলেন তাহা একত্রে হইল একশত। জাবের বলেন, সুতরাং নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং যাহাদের সাথে তাহার ন্যায় কোরবানীর পশু ছিল তাহারা ব্যতীত সকল লোকই এহরাম খুলিয়া ফেলিল এবং মাথা ছাঁটাইল। অতঃপর যখন (৮ই যিলহজ্জ) তরবিয়ার দিন আসিল, (যাহারা এহরাম খুলিয়া ফেলিয়াছিলেন তাহারা সকলেই নূতনভাবে এহরাম বাঁধিলেন এবং মিনার দিকে রওয়ানা হইলেন এবং নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সওয়ার হইয়া গেলেন এবং তথায় যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামায পড়িলেন। অতঃপর তথায় সামান্য সময় অপেক্ষা করিলেন, যাহাতে সূর্য উঠিল। এ সময় তিনি হুকুম করিলেন, কেহ যাইয়া যেন নামেরায় তাঁহার জন্য একটি পশমের তাবু খাটায় এবং রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিকে রওয়ানা হইয়া গেলেন। তখন কুরাইশরা নিঃসন্দেহ ছিল যে, হুজুর নিশ্চয়ই মাশআরুল হারামের নিকটেই অবস্থান করিবেন, যেমন কুরাইশরা জাহেলিয়াতে করিত (এবং সাধারণের সাথে আরাফাতে অবস্থান করিবেন না। যাহাতে তাহাদের মান হানি হয়); কিন্তু রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মুখে অগ্রসর হইতে রহিলেন, যাবৎ না আরাফার নিকট যাইয়া পৌঁছিলেন এবং দেখিলেন, তথায় নামেরায় তাহার জন্য তাঁবু খাটান হইয়াছে। সুতরাং তিনি প্রায় অবতরণ করিলেন ও অবস্থান গ্রহণ করিলেন)। অবশেষে যখন সূর্য ঢলিল তিনি তাহার কাসওয়া উটনী সাজাইতে আদেশ দিলেন, আর উহা সাজানো হইল এবং তিনি 'বতনে ওয়াদী' বা আরানা উপত্যকায় পৌঁছিলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দান করিলেন এবং বলিলেন:
"তোমাদের একের জান ও মাল তোমাদের অপরের প্রতি (সকল দিনে, সকল মাসে, সকল স্থানে) হারাম—যেভাবে এই দিনে, এই মাসে, এই শহরে হারাম। শুন, মূর্খতার যুগের সকল অপকাজ রহিত হইল এবং মূর্খতার যুগের রক্তের দাবীসমূহও রহিত হইল, আর আমাদের রক্তের দাবীসমূহের যে দাবী আমি প্রথমে রহিত করিলাম, তাহা হইল (আমার নিজ বংশের আয়াস) ইবনে রবীয়া ইবনে হারেসের রক্তের দাবী। সে বনী সা'দ গোত্রে দুধপান অবস্থায় ছিল, এমন অবস্থায় হুযাইল গোত্রের লোকেরা তাহাকে হত্যা করে। এভাবে মূর্খতার যুগের সুদ রহিত হইল, আর আমাদের সুদসমূহের যে সুদ আমি প্রথমে রহিত করিলাম, তাহা হইল (আমার চাচা ) আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের সুদ। উহা সমস্ত রহিত হইল।"
দ্বিতীয় কথা হইল, “তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করিবে। কেননা, তোমরা তাহাদিগকে গ্রহণ করিয়াছ আল্লাহর জামানতে এবং আল্লাহর নির্দেশে তাহাদের গুপ্ত অঙ্গকে হালাল করিয়াছ। তাহাদের উপর তোমাদের হক হইল, তাহারা যেন তোমাদের জেনানা মহলে অপর কাহাকেও যাইতে না দেয়, যাহা তোমরা না পছন্দ করিয়া থাক। যদি তাহারা তাহা করে, তবে তাহাদিগকে মারিবে অকঠোর মার, আর তোমাদের উপর তাহাদের হক হইল, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাহাদের অন্ন ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করিবে ( বাসস্থানসহ)। "
তৃতীয় কথা হইল, "আমি তোমাদের মধ্যে এমন এক (মূল) জিনিস রাখিয়া যাইতেছি, যদি তোমরা উহা ধরিয়া থাক, তবে তোমরা আমার পর কখনও বিপথগামী হইবে না—তাহা হইতেছে আল্লাহর কিতাব।"
হে লোকসকল, তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে, তখন তোমরা কি বলিবে? তাহারা উত্তর করিল, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি নিশ্চয় আমাদিগকে আল্লাহর বাণী পৌঁছাইয়াছেন, আপন কর্তব্য সম্পাদন করিয়াছেন এবং আমাদের কল্যাণ কামনা করিয়াছেন। তখন তিনি আপন শাহাদত অঙ্গুলী আকাশের দিকে উঠাইয়া এবং উহা দ্বারা মানুষের দিকে ইঙ্গিত করিয়া তিনবার বলিলেন, আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থাক, আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থাক।
অতঃপর বেলাল আযান দিলেন ও একামত বলিলেন এবং হুযুর যোহর পড়িলেন। বেলাল পুনরায় একামত বলিলেন এবং হুযূর আসর পড়িলেন এবং উহাদের মধ্যখানে অপর কোন নফল পড়িলেন না। তৎপর তিনি কাওয়া উটনীতে সওয়ার হইয়া মাওকেফে (অবস্থানস্থলে) পৌঁছিলেন এবং উহার পিছন দিক (জাবালে রহমতের নীচে) পাথরসমূহের দিকে এবং হাবলুল মাশাতকে আপন সম্মুখে করিয়া কেবলার দিকে হইলেন। এইভাবে তিনি দাড়াইয়া রহিলেন, যাবৎ না সূর্য ডুবিয়া গেল এবং পিতাভ বর্ণ কিছুটা চলিয়া গেল। অবশেষে সূর্য গোলক সম্পূর্ণ নীচে অদৃশ্য হইয়া গেল। অতঃপর তিনি উসামাকে আপন সওয়ারীর পিছনে সওয়ার বসাইলেন এবং সওয়ারী চালাইতে রহিলেন, যাবৎ না মুখদালেফায় পৌঁছিলেন। তথায় তিনি এক আযান ও দুই একামতের সহিত মাগরিব ও এশা পড়িলেন এবং উহাদের মধ্যখানে কোন না পড়িলেন না। অতঃপর শুইয়া রহিলেন, যাবৎ না উষার উদয় হইল। তৎপর যখন উষা পরিষ্কার হইয়া গেল আযান ও একামতের সাথে ফজরের নামায পড়িলেন। অতঃপর তিনি কাসওয়ায় সওয়ার হইলেন, যাহাতে তিনি মাশআরুল হারাম নামক স্থানে পৌঁছিলেন। তথায় তিনি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর নিকট দো'আ করিলেন, তাঁহার মহত্ত্ব ঘোষণা করিলেন, কলেমায়ে তওহীদ পড়িলেন। এবং তাহার একত্ব ঘোষণা করিলেন। তিনি তথায় দাড়াইয়া এইরূপ করিতে রহিলেন, যাবৎ না আকাশ খুব ফর্সা হইয়া গেল। অতঃপর তিনি সূর্যোদয়ের পূর্বেই সওয়ারী চালাইয়া দিলেন এবং (আপন চাচাত ভাই) ফযল ইবনে আব্বাসকে সওয়ারীর পিছনে বসাইলেন, যাহাতে তিনি 'বনে মুহাসসির' নামক স্থানে পৌঁছিলেন এবং সওয়ারীকে কিছু উত্তেজিত করিলেন। অতঃপর তিনি মধ্যম পথ ধরিলেন যাহা বড় জামরার দিকে গিয়াছে, সুতরাং তিনি ঐ জামরার নিকট পৌঁছিলেন, যাহা গাছের নিকটে আছে (অর্থাৎ, বড় জামরা) এবং বাতনে ওয়াদী অর্থাৎ, নীচের খালি জায়গা হইতে উহার উপর সাতটি কাঁকর মারিলেন, মর্মর দানার মত কাকর এবং প্রত্যেক কাকরের সাথে আল্লাহু আকবর বলিলেন। অতঃপর তথা হইতে ফিরিলেন কোরবানগাহের দিকে এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি উট কোরবানী করিলেন, আর যাহা বাকী রহিল তাহা হযরত আলীকে দিলেন, তিনি তাহা কোরবানী করিলেন। তিনি আপন পশুতে আলীকেও শরীক করিলেন। তখন তিনি নির্দেশ দিলেন যাহাতে প্রত্যেক পশু হইতে কিছু অংশ লওয়া হয় এবং একত্রে পাকানো হয়। সেমতে একটি ডেগে উহা পাকানো হইল এবং তাহারা উভয়ে উহার গোশত খাইলেন ও শুরুয়া পান করিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হইলেন এবং বায়তুল্লাহর দিকে রওয়ানা হইলেন এবং মক্কায় যাইয়া যোহর পড়িলেন। অতঃপর তিনি (আপন গোত্র) বনী আব্দুল মুত্তালিবের নিকট পৌঁছিলেন, যাহারা যমযমের পাড়ে দাঁড়াইয়া লোকদেরে পানি পান করাইতেছিলেন। তিনি তাহাদেরকে বলিলেন, হে বনী আব্দুল মুত্তালিব। টান, টান, যদি আমি আশংকা না করিতাম যে, পানি পান করানো ব্যাপারে লোক তোমাদিগকে পরাভূত করিয়া দিবে, তবে আমি নিজেও তোমাদের সাথে পানি টানিতাম। তখন তাহারা তাহাকে এক বালতি পানি দিলেন এবং উহা হইতে তিনি কিছু পান করিলেন।
জাবের (রাঃ) বলেন, তখন আমরা হজ্জ ছাড়া কিছুর নিয়ত করি নাই, আমরা উমরার কথা জানিতাম না। (উহা হজ্জের সাথে করা যাইতে পারে কিনা ?) অবশেষে যখন আমরা তাঁহার সাথে বায়তুল্লাহর হেরেমে পৌঁছিলাম, তিনি 'হাজারে আসওয়াদ' হাতে স্পর্শ করিয়া চুমা দিলেন, অতঃপর সাত পাক বায়তুল্লাহ্ প্রদক্ষিণ করিলেন ; তিন পাক জোরে পদক্ষেপ করিলেন এবং চারি পাক স্বাভাবিকভাবে চলিলেন। অতঃপর 'মাকামে ইবরাহীম'-এর দিকে অগ্রসর হইলেন এবং কোরআনের এই আয়াত পাঠ করিলেন, “এবং মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থানে পরিণত কর (অর্থাৎ, উহার নিকট নামায পড়)।" এ সময় হুযুর দুই রাকআত নামায পড়িলেন মাকামে ইবরাহীমকে নিজের ও বায়তুল্লাহর মধ্যখানে রাখিয়া (অর্থাৎ, তাহার সম্মুখে মাকামে ইবরাহীম আর উহার সম্মুখে বায়তুল্লাহ্)। অপর বর্ণনায় আছে, ঐ দুই রাকআতে হুযুর সুরা 'কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ' ও 'কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন পড়িয়াছিলেন। অতঃপর হাজারে আসওয়াদের দিকে প্রত্যাবর্তন করিলেন এবং উহাকে স্পর্শ করিয়া চুমা দিলেন। তৎপর দরজা দিয়া সাফা পর্বতের দিকে বাহির হইলেন এবং যখন সাফার নিকটে পৌঁছিলেন, কোরআনের এই আয়াত পাঠ করিলেন, “নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত" এবং বলিলেন, আমি উহা ধরিয়া আরম্ভ করিব যাহা ধরিয়া আল্লাহ্ আরম্ভ করিয়াছেন। সুতরাং তিনি সাফা হইতে আরম্ভ করিলেন এবং উহার উপরে চড়িলেন যাহাতে তিনি আল্লাহর ঘর দেখিতে পাইলেন। তখন তিনি কেবলা অর্থাৎ, আল্লাহর ঘরের দিকে ফিরিয়া আল্লাহর তওহীদের ঘোষণা করিলেন এবং তাঁহার মহিমা বর্ণনা করিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা'বূদ নাই, তিনি অদ্বিতীয়, তাহার কোন শরীক নাই, তাহারই শাসন এবং তাহারই সমস্ত প্রশংসা, তিনি হইতেছেন সর্বশক্তিমান। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা'বুদ নাই, তিনি অদ্বিতীয়। তিনি তাহার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করিয়াছেন এবং তাহার বান্দাকে সাহায্য দান করিয়াছেন এবং একাকী সমস্ত সম্মিলিত শক্তিকে পরাভূত করিয়াছেন। ইহা তিনি তিনবার বলিলেন এবং ইহাদের মধ্যখানে কিছু দো'আ করিলেন। অতঃপর সাফা হইতে অবতরণ করিলেন এবং ত্বরিতে মারওয়া অভিমুখে হাটিয়া চলিলেন, যাবৎ না তাহার পা মোবারক উপত্যকা সমতলে। অতঃপর তিনি দৌড়াইয়া চলিলেন, যাবৎ না উপত্যকা অতিক্রম করিলেন, যখন চড়াইতে উঠিলেন স্বাভাবিকভাবে হাটিয়া চলিলেন, যাবৎ না মারওয়ায় পৌঁছিলেন। তথায় তিনি ঐরূপই করিলেন, যেরূপ সাফার উপর করিয়াছিলেন। এমন কি যখন মারওয়ার শেষ চলা সমাপ্ত হইল, মারওয়ার উপর দাড়াইয়া লোকদের সম্বোধন করিলেন। আর লোকেরা ছিল তখন তাহার নীচে। তিনি বলিলেন, যদি আমি আমার ব্যাপারে পূর্বে বুঝিতে পারিতাম যাহা আমি পরে বুঝিতে পারিয়াছি, তাহা হইলে কখনও আমি কোরবানীর পশু সঙ্গে আনিতাম না এবং ইহাকে উমরার রূপ দান করিতাম। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাহার সঙ্গে কোরবানীর পশু নাই, সে যেন এহরাম খুলিয়া ফেলে এবং ইহাকে উমরার রূপ দান করে। এ সময় সুরাকা ইবনে মালেক ইবনে জুশুম দাড়াইয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ । ইহা কি আমাদের এ বৎসরের জন্যই, না চিরকালের জন্য ? তখন রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন হাতের অঙ্গুলীসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢুকাইয়া দুইবার বলিলেন, উমরা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করিল। না; বরং চিরকালের—চিরকালের জন্য।
এ সময় হযরত আলী ইয়ামন হইতে (যিনি তথায় বিচারক পদে নিযুক্ত ছিলেন) নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোরবানীর পশু লইয়া আসিলেন। তখন হুযূর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, যখন তুমি এহরাম বাঁধিয়াছিলে কিসের এহরাম বাঁধিয়াছিলে? (হজ্জের না উমরার না উভয়ের?) তিনি বলিলেন, আমি এইরূপ বলিয়াছি—“হে খোদা! আমি এহরাম বাঁধিতেছি যেভাবে এহরাম বাঁধিয়াছেন তোমার রাসূল।" তখন হুযুর বলিলেন, তবে তুমি এহরাম খুলিও না। কেননা, আমার সাথে কোরবানীর পশু রহিয়াছে। হযরত জাবের বলেন, যেসকল পশু হযরত আলী ইয়ামন হইতে আনিয়াছিলেন, আর যাহা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাথে আনিয়াছিলেন তাহা একত্রে হইল একশত। জাবের বলেন, সুতরাং নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং যাহাদের সাথে তাহার ন্যায় কোরবানীর পশু ছিল তাহারা ব্যতীত সকল লোকই এহরাম খুলিয়া ফেলিল এবং মাথা ছাঁটাইল। অতঃপর যখন (৮ই যিলহজ্জ) তরবিয়ার দিন আসিল, (যাহারা এহরাম খুলিয়া ফেলিয়াছিলেন তাহারা সকলেই নূতনভাবে এহরাম বাঁধিলেন এবং মিনার দিকে রওয়ানা হইলেন এবং নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সওয়ার হইয়া গেলেন এবং তথায় যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামায পড়িলেন। অতঃপর তথায় সামান্য সময় অপেক্ষা করিলেন, যাহাতে সূর্য উঠিল। এ সময় তিনি হুকুম করিলেন, কেহ যাইয়া যেন নামেরায় তাঁহার জন্য একটি পশমের তাবু খাটায় এবং রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিকে রওয়ানা হইয়া গেলেন। তখন কুরাইশরা নিঃসন্দেহ ছিল যে, হুজুর নিশ্চয়ই মাশআরুল হারামের নিকটেই অবস্থান করিবেন, যেমন কুরাইশরা জাহেলিয়াতে করিত (এবং সাধারণের সাথে আরাফাতে অবস্থান করিবেন না। যাহাতে তাহাদের মান হানি হয়); কিন্তু রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মুখে অগ্রসর হইতে রহিলেন, যাবৎ না আরাফার নিকট যাইয়া পৌঁছিলেন এবং দেখিলেন, তথায় নামেরায় তাহার জন্য তাঁবু খাটান হইয়াছে। সুতরাং তিনি প্রায় অবতরণ করিলেন ও অবস্থান গ্রহণ করিলেন)। অবশেষে যখন সূর্য ঢলিল তিনি তাহার কাসওয়া উটনী সাজাইতে আদেশ দিলেন, আর উহা সাজানো হইল এবং তিনি 'বতনে ওয়াদী' বা আরানা উপত্যকায় পৌঁছিলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দান করিলেন এবং বলিলেন:
"তোমাদের একের জান ও মাল তোমাদের অপরের প্রতি (সকল দিনে, সকল মাসে, সকল স্থানে) হারাম—যেভাবে এই দিনে, এই মাসে, এই শহরে হারাম। শুন, মূর্খতার যুগের সকল অপকাজ রহিত হইল এবং মূর্খতার যুগের রক্তের দাবীসমূহও রহিত হইল, আর আমাদের রক্তের দাবীসমূহের যে দাবী আমি প্রথমে রহিত করিলাম, তাহা হইল (আমার নিজ বংশের আয়াস) ইবনে রবীয়া ইবনে হারেসের রক্তের দাবী। সে বনী সা'দ গোত্রে দুধপান অবস্থায় ছিল, এমন অবস্থায় হুযাইল গোত্রের লোকেরা তাহাকে হত্যা করে। এভাবে মূর্খতার যুগের সুদ রহিত হইল, আর আমাদের সুদসমূহের যে সুদ আমি প্রথমে রহিত করিলাম, তাহা হইল (আমার চাচা ) আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের সুদ। উহা সমস্ত রহিত হইল।"
দ্বিতীয় কথা হইল, “তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করিবে। কেননা, তোমরা তাহাদিগকে গ্রহণ করিয়াছ আল্লাহর জামানতে এবং আল্লাহর নির্দেশে তাহাদের গুপ্ত অঙ্গকে হালাল করিয়াছ। তাহাদের উপর তোমাদের হক হইল, তাহারা যেন তোমাদের জেনানা মহলে অপর কাহাকেও যাইতে না দেয়, যাহা তোমরা না পছন্দ করিয়া থাক। যদি তাহারা তাহা করে, তবে তাহাদিগকে মারিবে অকঠোর মার, আর তোমাদের উপর তাহাদের হক হইল, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাহাদের অন্ন ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করিবে ( বাসস্থানসহ)। "
তৃতীয় কথা হইল, "আমি তোমাদের মধ্যে এমন এক (মূল) জিনিস রাখিয়া যাইতেছি, যদি তোমরা উহা ধরিয়া থাক, তবে তোমরা আমার পর কখনও বিপথগামী হইবে না—তাহা হইতেছে আল্লাহর কিতাব।"
হে লোকসকল, তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে, তখন তোমরা কি বলিবে? তাহারা উত্তর করিল, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি নিশ্চয় আমাদিগকে আল্লাহর বাণী পৌঁছাইয়াছেন, আপন কর্তব্য সম্পাদন করিয়াছেন এবং আমাদের কল্যাণ কামনা করিয়াছেন। তখন তিনি আপন শাহাদত অঙ্গুলী আকাশের দিকে উঠাইয়া এবং উহা দ্বারা মানুষের দিকে ইঙ্গিত করিয়া তিনবার বলিলেন, আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থাক, আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থাক।
অতঃপর বেলাল আযান দিলেন ও একামত বলিলেন এবং হুযুর যোহর পড়িলেন। বেলাল পুনরায় একামত বলিলেন এবং হুযূর আসর পড়িলেন এবং উহাদের মধ্যখানে অপর কোন নফল পড়িলেন না। তৎপর তিনি কাওয়া উটনীতে সওয়ার হইয়া মাওকেফে (অবস্থানস্থলে) পৌঁছিলেন এবং উহার পিছন দিক (জাবালে রহমতের নীচে) পাথরসমূহের দিকে এবং হাবলুল মাশাতকে আপন সম্মুখে করিয়া কেবলার দিকে হইলেন। এইভাবে তিনি দাড়াইয়া রহিলেন, যাবৎ না সূর্য ডুবিয়া গেল এবং পিতাভ বর্ণ কিছুটা চলিয়া গেল। অবশেষে সূর্য গোলক সম্পূর্ণ নীচে অদৃশ্য হইয়া গেল। অতঃপর তিনি উসামাকে আপন সওয়ারীর পিছনে সওয়ার বসাইলেন এবং সওয়ারী চালাইতে রহিলেন, যাবৎ না মুখদালেফায় পৌঁছিলেন। তথায় তিনি এক আযান ও দুই একামতের সহিত মাগরিব ও এশা পড়িলেন এবং উহাদের মধ্যখানে কোন না পড়িলেন না। অতঃপর শুইয়া রহিলেন, যাবৎ না উষার উদয় হইল। তৎপর যখন উষা পরিষ্কার হইয়া গেল আযান ও একামতের সাথে ফজরের নামায পড়িলেন। অতঃপর তিনি কাসওয়ায় সওয়ার হইলেন, যাহাতে তিনি মাশআরুল হারাম নামক স্থানে পৌঁছিলেন। তথায় তিনি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর নিকট দো'আ করিলেন, তাঁহার মহত্ত্ব ঘোষণা করিলেন, কলেমায়ে তওহীদ পড়িলেন। এবং তাহার একত্ব ঘোষণা করিলেন। তিনি তথায় দাড়াইয়া এইরূপ করিতে রহিলেন, যাবৎ না আকাশ খুব ফর্সা হইয়া গেল। অতঃপর তিনি সূর্যোদয়ের পূর্বেই সওয়ারী চালাইয়া দিলেন এবং (আপন চাচাত ভাই) ফযল ইবনে আব্বাসকে সওয়ারীর পিছনে বসাইলেন, যাহাতে তিনি 'বনে মুহাসসির' নামক স্থানে পৌঁছিলেন এবং সওয়ারীকে কিছু উত্তেজিত করিলেন। অতঃপর তিনি মধ্যম পথ ধরিলেন যাহা বড় জামরার দিকে গিয়াছে, সুতরাং তিনি ঐ জামরার নিকট পৌঁছিলেন, যাহা গাছের নিকটে আছে (অর্থাৎ, বড় জামরা) এবং বাতনে ওয়াদী অর্থাৎ, নীচের খালি জায়গা হইতে উহার উপর সাতটি কাঁকর মারিলেন, মর্মর দানার মত কাকর এবং প্রত্যেক কাকরের সাথে আল্লাহু আকবর বলিলেন। অতঃপর তথা হইতে ফিরিলেন কোরবানগাহের দিকে এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি উট কোরবানী করিলেন, আর যাহা বাকী রহিল তাহা হযরত আলীকে দিলেন, তিনি তাহা কোরবানী করিলেন। তিনি আপন পশুতে আলীকেও শরীক করিলেন। তখন তিনি নির্দেশ দিলেন যাহাতে প্রত্যেক পশু হইতে কিছু অংশ লওয়া হয় এবং একত্রে পাকানো হয়। সেমতে একটি ডেগে উহা পাকানো হইল এবং তাহারা উভয়ে উহার গোশত খাইলেন ও শুরুয়া পান করিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হইলেন এবং বায়তুল্লাহর দিকে রওয়ানা হইলেন এবং মক্কায় যাইয়া যোহর পড়িলেন। অতঃপর তিনি (আপন গোত্র) বনী আব্দুল মুত্তালিবের নিকট পৌঁছিলেন, যাহারা যমযমের পাড়ে দাঁড়াইয়া লোকদেরে পানি পান করাইতেছিলেন। তিনি তাহাদেরকে বলিলেন, হে বনী আব্দুল মুত্তালিব। টান, টান, যদি আমি আশংকা না করিতাম যে, পানি পান করানো ব্যাপারে লোক তোমাদিগকে পরাভূত করিয়া দিবে, তবে আমি নিজেও তোমাদের সাথে পানি টানিতাম। তখন তাহারা তাহাকে এক বালতি পানি দিলেন এবং উহা হইতে তিনি কিছু পান করিলেন।
بَابُ قِصَّةِ حَجَّةِ الْوَدَاعِ: الْفَصْل الأول
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَثَ بِالْمَدِينَةِ تِسْعَ سِنِينَ لَمْ يَحُجَّ ثُمَّ أَذَّنَ فِي النَّاسِ بالحجِّ فِي الْعَاشِرَةِ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَاجٌّ فَقَدِمَ الْمَدِينَةَ بَشَرٌ كَثِيرٌ فَخَرَجْنَا مَعَهُ حَتَّى إِذَا أَتَيْنَا ذَا الْحُلَيْفَةِ فَوَلَدَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ مُحَمَّدَ بْنَ أَبِي بَكْرٍ فَأَرْسَلَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَيْفَ أصنعُ؟ قَالَ: «اغتسِلي واستثقري بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِي» فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتَّى إِذَا اسْتَوَتْ بِهِ نَاقَتُهُ عَلَى الْبَيْدَاءِ أَهَلَّ بِالتَّوْحِيدِ «لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ» . قَالَ جَابِرٌ: لَسْنَا نَنْوِي إِلَّا الْحَجَّ لَسْنَا نَعْرِفُ الْعُمْرَةَ حَتَّى إِذَا أَتَيْنَا الْبَيْتَ مَعَهُ اسْتَلَمَ الرُّكْنَ فَطَافَ سَبْعًا فَرَمَلَ ثَلَاثًا وَمَشَى أَرْبَعًا ثُمَّ تَقَدَّمَ إِلَى مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ فَقَرَأَ: (وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبراهيمَ مُصَلَّى)
فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ فَجَعَلَ الْمَقَامَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْبَيْتِ وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّهُ قَرَأَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ: (قُلْ هوَ اللَّهُ أَحَدٌ و (قُلْ يَا أيُّها الكافِرونَ)
ثُمَّ رَجَعَ إِلَى الرُّكْنِ فَاسْتَلَمَهُ ثُمَّ خَرَجَ مِنَ الْبَابِ إِلَى الصَّفَا فَلَمَّا دَنَا مِنَ الصَّفَا قَرَأَ: (إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شعائِرِ اللَّهِ)
أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللَّهُ بِهِ فَبَدَأَ بِالصَّفَا فَرَقِيَ عَلَيْهِ حَتَّى رَأَى الْبَيْتَ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَوَحَّدَ اللَّهَ وَكَبَّرَهُ وَقَالَ: «لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ» . ثُمَّ دَعَا بَيْنَ ذَلِكَ قَالَ مِثْلَ هَذَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ نَزَلَ وَمَشَى إِلَى الْمَرْوَةِ حَتَّى انْصَبَّتْ قَدَمَاهُ فِي بَطْنِ الْوَادِي ثُمَّ سَعَى حَتَّى إِذَا صَعِدْنَا مَشَى حَتَّى أَتَى الْمَرْوَةَ فَفَعَلَ عَلَى الْمَرْوَةِ كَمَا فَعَلَ عَلَى الصَّفَا حَتَّى إِذَا كَانَ آخِرُ طَوَافٍ عَلَى الْمَرْوَةِ نَادَى وَهُوَ عَلَى الْمَرْوَةِ وَالنَّاسُ تَحْتَهُ فَقَالَ: «لَوْ أَنِّي اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِي مَا اسْتَدْبَرْتُ لَمْ أسق الهَدْيَ وجعلتُها عُمْرةً فمنْ كانَ مِنْكُم لَيْسَ مَعَهُ هَدْيٌ فَلْيَحِلَّ وَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَةً» . فَقَامَ سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلِعَامِنَا هَذَا أَمْ لِأَبَدٍ؟ فَشَبَّكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَصَابِعَهُ وَاحِدَةً فِي الْأُخْرَى وَقَالَ: «دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِي الْحَجِّ مَرَّتَيْنِ لَا بَلْ لِأَبَدِ أَبَدٍ» . وَقَدِمَ عَلِيٌّ مِنَ الْيَمَنِ بِبُدْنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ: «مَاذَا قُلْتَ حِينَ فَرَضْتَ الْحَجَّ؟» قَالَ: قُلْتُ: اللهُمَّ إِنِّي أُهِلُّ بِمَا أهلَّ بهِ رسولُكَ قَالَ: «فَإِنَّ مَعِي الْهَدْيَ فَلَا تَحِلَّ» . قَالَ: فَكَانَ جَمَاعَةُ الْهَدْيِ الَّذِي قَدِمَ بِهِ عَلِيٌّ مِنَ الْيَمَنِ وَالَّذِي أَتَى بِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِائَةً قَالَ: فَحَلَّ النَّاسُ كُلُّهُمْ وَقَصَّرُوا إِلَّا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم وَمن كَانَ مَعَه من هدي فَمَا كَانَ يَوْمُ التَّرْوِيَةِ تَوَجَّهُوا إِلَى مِنًى فَأَهَلُّوا بِالْحَجِّ وَرَكِبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى بِهَا الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ وَالْفَجْرَ ثُمَّ مَكَثَ قَلِيلًا حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ وَأَمَرَ بِقُبَّةٍ مِنْ شَعَرٍ تُضْرَبُ لَهُ بِنَمِرَةَ فَسَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا تَشُكُّ قُرَيْشٌ إِلَّا أَنَّهُ وَاقِفٌ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ كَمَا كَانَتْ قُرَيْشٌ تَصْنَعُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَأجَاز رَسُول الله صلى حَتَّى أَتَى عَرَفَةَ فَوَجَدَ الْقُبَّةَ قَدْ ضُرِبَتْ لَهُ بِنَمِرَةَ فَنَزَلَ بِهَا حَتَّى إِذَا زَاغَتِ الشَّمْسُ أَمَرَ بِالْقَصْوَاءِ فَرُحِلَتْ لَهُ فَأَتَى بَطْنَ الْوَادِي فَخَطَبَ النَّاسَ وَقَالَ: «إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا أَلَا كُلُّ شَيْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَيَّ مَوْضُوعٌ وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ وَإِنَّ أَوَّلَ دَمٍ أَضَعُ مِنْ دِمَائِنَا دَمُ ابْنِ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ وَكَانَ مُسْتَرْضَعًا فِي بَنِي سَعْدٍ فَقَتَلَهُ هُذَيْلٌ وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ مِنْ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَقَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ كِتَابَ اللَّهِ وَأَنْتُمْ [ص:786] تُسْأَلُونَ عَنِّي فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُونَ؟» قَالُوا: نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ. فَقَالَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى النَّاسِ: «اللَّهُمَّ اشْهَدْ اللَّهُمَّ اشْهَدْ» ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ أَذَّنَ بِلَالٌ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعَصْرَ وَلَمْ يُصَلِّ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ثُمَّ رَكِبَ حَتَّى أَتَى الْمَوْقِفَ فَجَعَلَ بَطْنَ نَاقَتِهِ الْقَصْوَاءِ إِلَى الصَّخَرَاتِ وَجَعَلَ حَبْلَ الْمُشَاةِ بَيْنَ يَدَيْهِ وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَذَهَبَتِ الصُّفْرَةُ قَلِيلًا حَتَّى غَابَ الْقُرْصُ وَأَرْدَفَ أُسَامَةَ وَدَفَعَ حَتَّى أَتَى الْمُزْدَلِفَةَ فَصَلَّى بِهَا الْمَغْرِبَ وَالْعَشَاءَ بِأَذَانٍ وَاحِدٍ وَإِقَامَتَيْنِ وَلَمْ يُسَبِّحْ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتَّى طَلَعَ الْفَجْرُ فَصَلَّى الْفَجْرَ حِينَ تَبَيَّنَ لَهُ الصُّبْحُ بِأَذَانٍ وَإِقَامَةٍ ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتَّى أَتَى الْمَشْعَرَ الْحَرَامَ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَدَعَاهُ وَكَبَّرَهُ وَهَلَّلَهُ وَوَحَّدَهُ فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى أَسْفَرَ جِدًّا فَدَفَعَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَأَرْدَفَ الْفَضْلَ بْنَ عَبَّاسٍ حَتَّى أَتَى بَطْنَ مُحَسِّرٍ فَحَرَّكَ قَلِيلًا ثُمَّ سَلَكَ الطَّرِيقَ الْوُسْطَى الَّتِي
تَخْرُجُ
عَلَى الْجَمْرَةِ الْكُبْرَى حَتَّى أَتَى الْجَمْرَةَ الَّتِي عِنْدَ الشَّجَرَةِ فَرَمَاهَا بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ مَعَ كُلِّ حَصَاةٍ مِنْهَا مِثْلَ حَصَى الْخَذْفِ رَمَى مِنْ بَطْنِ الْوَادِي ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَى الْمَنْحَرِ فَنَحَرَ ثَلَاثًا وَسِتِّينَ بَدَنَةً بِيَدِهِ ثُمَّ أَعْطَى عَلِيًّا فَنَحَرَ مَا غَبَرَ وَأَشْرَكَهُ فِي هَدْيِهِ ثُمَّ أَمَرَ مِنْ كُلِّ بَدَنَةٍ بِبَضْعَةٍ فَجُعِلَتْ فِي قِدْرٍ فَطُبِخَتْ فَأَكَلَا مِنْ لَحْمِهَا وَشَرِبَا مِنْ مَرَقِهَا ثُمَّ رَكِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَفَاضَ إِلَى الْبَيْتِ فَصَلَّى بِمَكَّةَ الظُّهْرَ فَأَتَى عَلَى بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ يَسْقُونَ عَلَى زَمْزَمَ فَقَالَ: «انْزِعُوا بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَوْلَا أَنْ يَغْلِبَكُمُ النَّاسُ عَلَى سِقَايَتِكُمْ لَنَزَعْتُ مَعَكُمْ» . فَنَاوَلُوهُ دَلْوًا فَشَرِبَ مِنْهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ فَجَعَلَ الْمَقَامَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْبَيْتِ وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّهُ قَرَأَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ: (قُلْ هوَ اللَّهُ أَحَدٌ و (قُلْ يَا أيُّها الكافِرونَ)
ثُمَّ رَجَعَ إِلَى الرُّكْنِ فَاسْتَلَمَهُ ثُمَّ خَرَجَ مِنَ الْبَابِ إِلَى الصَّفَا فَلَمَّا دَنَا مِنَ الصَّفَا قَرَأَ: (إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شعائِرِ اللَّهِ)
أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللَّهُ بِهِ فَبَدَأَ بِالصَّفَا فَرَقِيَ عَلَيْهِ حَتَّى رَأَى الْبَيْتَ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَوَحَّدَ اللَّهَ وَكَبَّرَهُ وَقَالَ: «لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ» . ثُمَّ دَعَا بَيْنَ ذَلِكَ قَالَ مِثْلَ هَذَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ نَزَلَ وَمَشَى إِلَى الْمَرْوَةِ حَتَّى انْصَبَّتْ قَدَمَاهُ فِي بَطْنِ الْوَادِي ثُمَّ سَعَى حَتَّى إِذَا صَعِدْنَا مَشَى حَتَّى أَتَى الْمَرْوَةَ فَفَعَلَ عَلَى الْمَرْوَةِ كَمَا فَعَلَ عَلَى الصَّفَا حَتَّى إِذَا كَانَ آخِرُ طَوَافٍ عَلَى الْمَرْوَةِ نَادَى وَهُوَ عَلَى الْمَرْوَةِ وَالنَّاسُ تَحْتَهُ فَقَالَ: «لَوْ أَنِّي اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِي مَا اسْتَدْبَرْتُ لَمْ أسق الهَدْيَ وجعلتُها عُمْرةً فمنْ كانَ مِنْكُم لَيْسَ مَعَهُ هَدْيٌ فَلْيَحِلَّ وَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَةً» . فَقَامَ سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلِعَامِنَا هَذَا أَمْ لِأَبَدٍ؟ فَشَبَّكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَصَابِعَهُ وَاحِدَةً فِي الْأُخْرَى وَقَالَ: «دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِي الْحَجِّ مَرَّتَيْنِ لَا بَلْ لِأَبَدِ أَبَدٍ» . وَقَدِمَ عَلِيٌّ مِنَ الْيَمَنِ بِبُدْنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ: «مَاذَا قُلْتَ حِينَ فَرَضْتَ الْحَجَّ؟» قَالَ: قُلْتُ: اللهُمَّ إِنِّي أُهِلُّ بِمَا أهلَّ بهِ رسولُكَ قَالَ: «فَإِنَّ مَعِي الْهَدْيَ فَلَا تَحِلَّ» . قَالَ: فَكَانَ جَمَاعَةُ الْهَدْيِ الَّذِي قَدِمَ بِهِ عَلِيٌّ مِنَ الْيَمَنِ وَالَّذِي أَتَى بِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِائَةً قَالَ: فَحَلَّ النَّاسُ كُلُّهُمْ وَقَصَّرُوا إِلَّا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم وَمن كَانَ مَعَه من هدي فَمَا كَانَ يَوْمُ التَّرْوِيَةِ تَوَجَّهُوا إِلَى مِنًى فَأَهَلُّوا بِالْحَجِّ وَرَكِبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى بِهَا الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ وَالْفَجْرَ ثُمَّ مَكَثَ قَلِيلًا حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ وَأَمَرَ بِقُبَّةٍ مِنْ شَعَرٍ تُضْرَبُ لَهُ بِنَمِرَةَ فَسَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا تَشُكُّ قُرَيْشٌ إِلَّا أَنَّهُ وَاقِفٌ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ كَمَا كَانَتْ قُرَيْشٌ تَصْنَعُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَأجَاز رَسُول الله صلى حَتَّى أَتَى عَرَفَةَ فَوَجَدَ الْقُبَّةَ قَدْ ضُرِبَتْ لَهُ بِنَمِرَةَ فَنَزَلَ بِهَا حَتَّى إِذَا زَاغَتِ الشَّمْسُ أَمَرَ بِالْقَصْوَاءِ فَرُحِلَتْ لَهُ فَأَتَى بَطْنَ الْوَادِي فَخَطَبَ النَّاسَ وَقَالَ: «إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا أَلَا كُلُّ شَيْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَيَّ مَوْضُوعٌ وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ وَإِنَّ أَوَّلَ دَمٍ أَضَعُ مِنْ دِمَائِنَا دَمُ ابْنِ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ وَكَانَ مُسْتَرْضَعًا فِي بَنِي سَعْدٍ فَقَتَلَهُ هُذَيْلٌ وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ مِنْ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَقَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ كِتَابَ اللَّهِ وَأَنْتُمْ [ص:786] تُسْأَلُونَ عَنِّي فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُونَ؟» قَالُوا: نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ. فَقَالَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى النَّاسِ: «اللَّهُمَّ اشْهَدْ اللَّهُمَّ اشْهَدْ» ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ أَذَّنَ بِلَالٌ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعَصْرَ وَلَمْ يُصَلِّ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ثُمَّ رَكِبَ حَتَّى أَتَى الْمَوْقِفَ فَجَعَلَ بَطْنَ نَاقَتِهِ الْقَصْوَاءِ إِلَى الصَّخَرَاتِ وَجَعَلَ حَبْلَ الْمُشَاةِ بَيْنَ يَدَيْهِ وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَذَهَبَتِ الصُّفْرَةُ قَلِيلًا حَتَّى غَابَ الْقُرْصُ وَأَرْدَفَ أُسَامَةَ وَدَفَعَ حَتَّى أَتَى الْمُزْدَلِفَةَ فَصَلَّى بِهَا الْمَغْرِبَ وَالْعَشَاءَ بِأَذَانٍ وَاحِدٍ وَإِقَامَتَيْنِ وَلَمْ يُسَبِّحْ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتَّى طَلَعَ الْفَجْرُ فَصَلَّى الْفَجْرَ حِينَ تَبَيَّنَ لَهُ الصُّبْحُ بِأَذَانٍ وَإِقَامَةٍ ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتَّى أَتَى الْمَشْعَرَ الْحَرَامَ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَدَعَاهُ وَكَبَّرَهُ وَهَلَّلَهُ وَوَحَّدَهُ فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى أَسْفَرَ جِدًّا فَدَفَعَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَأَرْدَفَ الْفَضْلَ بْنَ عَبَّاسٍ حَتَّى أَتَى بَطْنَ مُحَسِّرٍ فَحَرَّكَ قَلِيلًا ثُمَّ سَلَكَ الطَّرِيقَ الْوُسْطَى الَّتِي
تَخْرُجُ
عَلَى الْجَمْرَةِ الْكُبْرَى حَتَّى أَتَى الْجَمْرَةَ الَّتِي عِنْدَ الشَّجَرَةِ فَرَمَاهَا بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ مَعَ كُلِّ حَصَاةٍ مِنْهَا مِثْلَ حَصَى الْخَذْفِ رَمَى مِنْ بَطْنِ الْوَادِي ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَى الْمَنْحَرِ فَنَحَرَ ثَلَاثًا وَسِتِّينَ بَدَنَةً بِيَدِهِ ثُمَّ أَعْطَى عَلِيًّا فَنَحَرَ مَا غَبَرَ وَأَشْرَكَهُ فِي هَدْيِهِ ثُمَّ أَمَرَ مِنْ كُلِّ بَدَنَةٍ بِبَضْعَةٍ فَجُعِلَتْ فِي قِدْرٍ فَطُبِخَتْ فَأَكَلَا مِنْ لَحْمِهَا وَشَرِبَا مِنْ مَرَقِهَا ثُمَّ رَكِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَفَاضَ إِلَى الْبَيْتِ فَصَلَّى بِمَكَّةَ الظُّهْرَ فَأَتَى عَلَى بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ يَسْقُونَ عَلَى زَمْزَمَ فَقَالَ: «انْزِعُوا بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَوْلَا أَنْ يَغْلِبَكُمُ النَّاسُ عَلَى سِقَايَتِكُمْ لَنَزَعْتُ مَعَكُمْ» . فَنَاوَلُوهُ دَلْوًا فَشَرِبَ مِنْهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
(১) ‘আমরা উমরার কথা জানিতাম না'—জাহেলিয়াত যুগে মুশরিকরা হজ্জের মাসে অর্থাৎ, শাওয়াল, যিকা'দা ও যিলহজ্জ মাসে উমরা করিত না। হুযুর যে উমরার নিয়ত করিয়াছেন তাহাও আমরা কতক লোক অবগত ছিলাম না। (২) 'হাজারে আসওয়াদকে চুমা দিলেন' – উহা হাত বা ছড়ি ইত্যাদির দ্বারা স্পর্শ করিয়া হাতকেই চুমা দিতে হয়। (৩) 'তিনবার জোরে পদক্ষেপ করিলেন'—ইহাকে 'রমল' বলে। (৪) 'মাকামে ইবরাহীম'—–সেই পাথর খণ্ডের নাম, যাহার উপর দাঁড়াইয়া হযরত ইবরাহীম (আঃ) কা'বাঘর নির্মাণ করিয়াছিলেন। উহা এখন কাবাঘরের অদূরে মাতাফের (তওয়াফের জায়গার) মধ্যে রক্ষিত আছে, উহাকে সম্মুখে করিয়া দুই রাকআত নামায পড়িতে হয়। (৫) 'দরজা দিয়া'—অর্থাৎ, মসজিদুল হারামের 'বাবুস সাফা' দরজা দিয়া — খানায়ে কা'বার দরজা দিয়া নহে। (৬) 'অতঃপর তিনি দৌড়াইয়া চলিলেন' – সাফা মারওয়ার মধ্যখানে এই দৌড়াদৌড়ি করাকে 'সায়ী' বলে। (৭) ‘উমরা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করিল'—অর্থাৎ, হজ্জের মাসে ইহা করা সিদ্ধ হইল চিরকালের জন্য। (৮) ‘আমি এহরাম বাঁধিলাম তোমার রাসূল যেভাবে বাঁধিয়াছেন'—ইহাতে বুঝা গেল যে, অন্যের বরাত দিয়া হজ্জের নিয়ত করা জায়েয আছে। (৯) ‘কেননা, আমার সাথে কোরবানীর পশু রহিয়াছে— যাহার সাথে কোরবানীর পশু থাকে সে এহরাম খুলিতে পারে না, যদিও উমরার নিয়ত করে—যাবৎ না হজ্জ শেষ করে এবং পশু জবাই করে। (১০) মক্কা মোআযযামা হইতে তায়েফের পথে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে প্রথমে মিনা। তথায়ই মসজিদে ‘খায়ফ' অবস্থিত। কাঁকর মারার জামরা এবং কোরবানীগাহও তথায়। অতঃপর ‘মুহাসসির' অতঃপর মুযদালেফা এবং তথায়ই 'মাশআরুল হারাম' একটি বিশেষ স্থানের নাম। অতঃপর 'নামেরা'। তথায়ও একটি মসজিদ আছে। অতঃপর ময়দানে আরাফাত আরাফাতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তেই জাবালে রহমত। জাবালে রহমতের পাদদেশেই হাবলুল মাশাত। 'আরানা' উপত্যকা আরাফাতের একটা স্থানবিশেষ। হুযূর তথায়ই ভাষণ দান করিয়াছিলেন। (১১) 'যেভাবে এই দিনে, এই মাসে ও এই শহরে হারাম' – জাহেলিয়াত যুগের লোকেরা রজব, যিকা'দা, যিলহজ্জ ও মুহাররম—এই চারি মাসকে অতি পবিত্র বলিয়া মনে করিত। তখন তাহারা লুটতরাজ ও যুদ্ধবিগ্রহ করিত না, এমন কি নিজের পিতৃহন্তাকেও বধ করিত না। ইহাকে তাহারা হারাম মনে করিত। হুযূর বলেন, মানুষের জীবন ও সম্পদে হস্তক্ষেপ করা সকল সময়েই এইরূপে হারাম (মেরকাত)। (১২) 'যোহর পড়িলেন এবং আসর পড়িলেন' – হুযূর আরাফাতে যোহর ও আসর এবং মুযদালেফাতে মাগরিব ও এশা এক সাথে পড়িয়াছেন। ইহাকে 'জামউ বাইনাস-সালাতাইন' বা দুই নামায একত্রে পড়া বলে। ইহার বিবরণ নামায অধ্যায়ে গিয়াছে। (১৩) ‘তাহাদের অনবস্ত্রের ব্যবস্থা করিবে'—নারীদের অন্নবস্ত্রের ভার পুরুষের উপর দিয়া ইসলাম নারী জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি করিয়াছে। তথাকথিত সভ্য জাতিসমূহের নারীরা আজ অন্নবস্ত্রের জন্য নানা অপকাজ করিতে বাধ্য হইয়াছে। ইহা সত্যই নারী জাতির পক্ষে বড় অবমাননাকর। (১৪) ‘সে যেন ইহাকে (হজ্জকে) উমরার রূপ দান করে’– হজ্জের নিয়ত পালটাইয়া উহাকে উমরায় পরিণত করা যায় কিনা এ ব্যাপারে ফকীহগণের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। অধিকাংশের মতে পারা যায় না। তাঁহাদের মতে ইহা সেই বৎসরের জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থা ছিল— যেমন অপর এক হাদীস হইতে বুঝা যায়—যাহাতে সাহাবীগণ জাহেলিয়াতের প্রথা ত্যাগ করেন।
