মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৯- কুরআনের ফাযাঈল অধ্যায়
হাদীস নং: ২২২০
২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২২০। হযরত যায়দ ইবনে সাবেত (রাঃ) বলেন, ইয়ামামা যুদ্ধের সময় (অর্থাৎ, অব্যবহিত পরে) খলীফা আবু বকর আমাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। আমি যাইয়া দেখি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাঁহার নিকট বসা। হযরত আবু বকর বলিলেন, ওমর আমার নিকট আসিয়া বলেন, ইয়ামামা যুদ্ধে বহু হাফেযে কোরআন শহীদ হইয়াছেন, আমার আশংকা হয়, যদি বিভিন্ন স্থানে এভাবে হাফেযে কোরআন শহীদ হইতে থাকেন, তাহা হইলে কোরআনের অনেকাংশ লোপ পাইবে। অতএব, আমি সঙ্গত মনে করি যে, আপনি কোরআনকে (মাসহাফ বা কিতাব আকারে) একত্র করিতে নির্দেশ দিবেন। আমি ওমরকে বলিলাম, আপনি এমন কাজ কেমন করিয়া করিবেন যাহা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) করেন নাই? ওমর (রাঃ) বলিলেন, খোদার কসম, ইহা অতি উত্তম হইবে। এইরূপে ওমর আমাকে ইহা বার বার বলিতে লাগিলেন। অবশেষে ইহার জন্য আল্লাহ্ আমার অন্তরকে প্রশস্ত করিয়া দিলেন এবং আমিও সঙ্গত মনে করিলাম যাহা ওমর সঙ্গত মনে করিয়াছেন।
যায়দ বলেন, হযরত আবু বকর আমাকে বলিলেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান ও বিশ্বাসী জোয়ান, যাহার প্রতি আমরা কোন সন্দেহ পোষণ করি না, তুমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর ওহীও লিখিতে। সুতরাং তুমি কোরআনের আয়াতসমূহ অনুসন্ধান কর এবং উহা (মাসহাফ আকারে) একত্র কর ? যায়দ বলেন, যদি তাঁহারা আমাকে পাহাড়সমূহের একটি পাহাড় স্থানান্তরিত করার দায়িত্ব অর্পণ করিতেন, তবে উহা আমার পক্ষে কোরআন একত্র করার যে গুরুদায়িত্ব তাহারা আমার উপর অর্পণ করিলেন, তাহা অপেক্ষা অধিকতর দুঃসাধ্য হইত না। যায়দ বলেন, আমি বলিলাম, আপনারা কেমন করিয়া এমন কাজ করিবেন যাহা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) করেন নাই ? তিনি বলিলেন, খোদার কসম, ইহা বড় উত্তম কাজ।
মোটকথা, হযরত আবু বকর এভাবে আমাকে পুনঃ পুনঃ বলিতে লাগিলেন, অবশেষে আল্লাহ্ আমার অন্তরকেও প্রশস্ত করিয়া দিলেন, যাহার জন্য হযরত আবু বকর ও ওমরের অন্তরকে প্রশস্ত করিয়া দিয়াছেন। সুতরাং আমি উহা সংগ্রহ করিলাম খেজুর ডালা, সাদা পাথর, পশুর হাড় ও মানুষের (হাফেযদের) অন্তর বা স্মৃতি হইতে। অবশেষে সূরা তওবার শেষাংশ— 'লাকাদ জা-আকুম রাসূলুম মিন আনফুসিকুম' – হইতে সূরার শেষ পর্যন্ত পাইলাম আবু খুযাইমা আনসারীর নিকট। উহা আমি তিনি ছাড়া অপর কাহারও নিকট পাই নাই। (যায়দ বলেন,) এই লিখিত সহীফাগুলি খলীফা হযরত আবু বকরের নিকট ছিল, যাবৎ না আল্লাহ্ তা'আলা তাঁহাকে উঠাইয়া লন। অতঃপর খলীফা হযরত ওমর ফারুকের নিকট তাঁহার জীবনাবধি, অতঃপর তাঁহার কন্যা উম্মুল মু'মিনীন হযরত হাফসার নিকট। —বুখারী
যায়দ বলেন, হযরত আবু বকর আমাকে বলিলেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান ও বিশ্বাসী জোয়ান, যাহার প্রতি আমরা কোন সন্দেহ পোষণ করি না, তুমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর ওহীও লিখিতে। সুতরাং তুমি কোরআনের আয়াতসমূহ অনুসন্ধান কর এবং উহা (মাসহাফ আকারে) একত্র কর ? যায়দ বলেন, যদি তাঁহারা আমাকে পাহাড়সমূহের একটি পাহাড় স্থানান্তরিত করার দায়িত্ব অর্পণ করিতেন, তবে উহা আমার পক্ষে কোরআন একত্র করার যে গুরুদায়িত্ব তাহারা আমার উপর অর্পণ করিলেন, তাহা অপেক্ষা অধিকতর দুঃসাধ্য হইত না। যায়দ বলেন, আমি বলিলাম, আপনারা কেমন করিয়া এমন কাজ করিবেন যাহা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) করেন নাই ? তিনি বলিলেন, খোদার কসম, ইহা বড় উত্তম কাজ।
মোটকথা, হযরত আবু বকর এভাবে আমাকে পুনঃ পুনঃ বলিতে লাগিলেন, অবশেষে আল্লাহ্ আমার অন্তরকেও প্রশস্ত করিয়া দিলেন, যাহার জন্য হযরত আবু বকর ও ওমরের অন্তরকে প্রশস্ত করিয়া দিয়াছেন। সুতরাং আমি উহা সংগ্রহ করিলাম খেজুর ডালা, সাদা পাথর, পশুর হাড় ও মানুষের (হাফেযদের) অন্তর বা স্মৃতি হইতে। অবশেষে সূরা তওবার শেষাংশ— 'লাকাদ জা-আকুম রাসূলুম মিন আনফুসিকুম' – হইতে সূরার শেষ পর্যন্ত পাইলাম আবু খুযাইমা আনসারীর নিকট। উহা আমি তিনি ছাড়া অপর কাহারও নিকট পাই নাই। (যায়দ বলেন,) এই লিখিত সহীফাগুলি খলীফা হযরত আবু বকরের নিকট ছিল, যাবৎ না আল্লাহ্ তা'আলা তাঁহাকে উঠাইয়া লন। অতঃপর খলীফা হযরত ওমর ফারুকের নিকট তাঁহার জীবনাবধি, অতঃপর তাঁহার কন্যা উম্মুল মু'মিনীন হযরত হাফসার নিকট। —বুখারী
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ: أَرْسَلَ إِلَيَّ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مَقْتَلَ أَهْلِ الْيَمَامَةِ. فَإِذَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عِنْدَهُ. قَالَ أَبُو بَكْرٍ إِنَّ عُمَرَ أَتَانِي فَقَالَ إِنَّ الْقَتْلَ قَدِ اسْتَحَرَّ يَوْمَ الْيَمَامَةِ بِقُرَّاءِ الْقُرْآنِ وَإِنِّي أَخْشَى أَنِ اسْتَحَرَّ الْقَتْلُ بِالْقُرَّاءِ بِالْمَوَاطِنِ فَيَذْهَبُ كَثِيرٌ مِنَ الْقُرْآنِ وَإِنِّي أَرَى أَنْ تَأْمُرَ بِجَمْعِ الْقُرْآنِ قُلْتُ لِعُمَرَ كَيْفَ تَفْعَلُ شَيْئًا لَمْ يَفْعَلْهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ عُمَرُ هَذَا وَاللَّهِ خَيْرٌ فَلم يزل عمر يراجعني فِيهِ حَتَّى شرح الله صَدْرِي لذَلِك وَرَأَيْت الَّذِي رَأَى عُمَرُ قَالَ زَيْدٌ قَالَ أَبُو بَكْرٍ إِنَّكَ رَجُلٌ شَابٌّ عَاقِلٌ لَا نَتَّهِمُكَ وَقَدْ كُنْتَ تَكْتُبُ الْوَحْيَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَتَبَّعِ الْقُرْآنَ فَاجْمَعْهُ فَوَاللَّهِ لَوْ كَلَّفُونِي نَقْلَ جَبَلٍ مِنَ الْجِبَالِ مَا كَانَ أَثْقَلَ عَلَيَّ مِمَّا أَمَرَنِي بِهِ مِنْ جمع الْقُرْآن قَالَ: قلت كَيفَ تَفْعَلُونَ شَيْئا لم يَفْعَله النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ هُوَ وَاللَّهِ خير فَلم أزل أراجعه حَتَّى شرح الله صَدْرِي للَّذي شرح الله لَهُ صدر أبي بكر وَعمر. فَقُمْت فَتَتَبَّعْتُ الْقُرْآنَ أَجْمَعُهُ مِنَ الْعُسُبِ وَاللِّخَافِ وَصُدُورِ الرِّجَال حَتَّى وجدت من سُورَة التَّوْبَة آيَتَيْنِ مَعَ أَبِي خُزَيْمَةَ الْأَنْصَارِيِّ لَمْ أَجِدْهَا مَعَ أَحَدٍ غَيْرِهِ (لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ)
حَتَّى خَاتِمَةِ بَرَاءَةَ. فَكَانَتِ الصُّحُفُ عِنْدَ أَبِي بَكْرٍ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ ثُمَّ عِنْدَ عُمَرَ حَيَاته ثمَّ عِنْد حَفْصَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ
حَتَّى خَاتِمَةِ بَرَاءَةَ. فَكَانَتِ الصُّحُفُ عِنْدَ أَبِي بَكْرٍ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ ثُمَّ عِنْدَ عُمَرَ حَيَاته ثمَّ عِنْد حَفْصَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
নবী করীম (ﷺ)-এর ওফাতের অব্যবহিত পরেই ইয়ামামার যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং উহাতে মিথ্যা নবী মুসায়লামাতুল কাযযাব মারা যায় এবং মুসলমানদের মধ্যেও সাত শত আর কাহারও মতে বার শত 'কারীউল কোরআন' শহীদ হন। আর কারী বলা হইত তৎকালে কোরআনের আলেম ও হাফেযকে।
'আবু খুযায়মা ব্যতীত কাহারও নিকট পাই নাই'—অর্থাৎ, লিখিতরূপে কাহারও নিকট পাই নাই।
ইহাতে কোরআন রক্ষার ব্যাপারে কোন দোষ বর্তাইতেছে না। কারণ, হাড় বা চামড়ায় লিখা হুয়রের দপ্তরে না পাওয়া গেলেও বহু হাফেয সাহাবীর সিনায় ইহা বিদ্যমান ছিল। স্বয়ং সংকলক হযরত যায়দ ও হযরত ওমর ইহার হাফেয ছিলেন। এছাড়া হযরত আবু বকর, ওসমান, আলী, উবাই ইবনে কা'ব ও আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ এবং আরও বহু হাফেয সাহাবী তখন বিদ্যমান ছিলেন।
‘সহীফাগুলি’–‘সহীফা' অর্থ পুস্তিকা, গ্রন্থের খণ্ড। ইহাতে বুঝা গেল যে, চামড়া অথবা তৎকালের মোটা কাগজে লিখা এই কোরআনখানি কয়েক খণ্ডে বিভক্ত ছিল।
'আবু খুযায়মা ব্যতীত কাহারও নিকট পাই নাই'—অর্থাৎ, লিখিতরূপে কাহারও নিকট পাই নাই।
ইহাতে কোরআন রক্ষার ব্যাপারে কোন দোষ বর্তাইতেছে না। কারণ, হাড় বা চামড়ায় লিখা হুয়রের দপ্তরে না পাওয়া গেলেও বহু হাফেয সাহাবীর সিনায় ইহা বিদ্যমান ছিল। স্বয়ং সংকলক হযরত যায়দ ও হযরত ওমর ইহার হাফেয ছিলেন। এছাড়া হযরত আবু বকর, ওসমান, আলী, উবাই ইবনে কা'ব ও আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ এবং আরও বহু হাফেয সাহাবী তখন বিদ্যমান ছিলেন।
‘সহীফাগুলি’–‘সহীফা' অর্থ পুস্তিকা, গ্রন্থের খণ্ড। ইহাতে বুঝা গেল যে, চামড়া অথবা তৎকালের মোটা কাগজে লিখা এই কোরআনখানি কয়েক খণ্ডে বিভক্ত ছিল।
