মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৯- কুরআনের ফাযাঈল অধ্যায়

হাদীস নং: ২২১৩
২. প্রথম অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২১৩। হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) বলেন, আমি মসজিদে আছি এমন সময় এক ব্যক্তি আসিয়া নামায পড়িতে লাগিল। সে এমন এক পাঠে কোরআন পড়িল যাহা আমার অজানা ছিল। অতঃপর অপর এক ব্যক্তি আসিল এবং প্রথম ব্যক্তি হইতে ভিন্নতর পাঠে কেরাআত পড়িল। যখন আমরা নামায শেষ করিলাম সকলেই রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম এবং আমি বলিলাম, হুযুর! এ ব্যক্তি এমন কেরাআতে কোরআন পড়িয়াছে যাহা আমার জানা নাই। অতঃপর দ্বিতীয় ব্যক্তি আসিয়া ইহার ভিন্নতর পাঠে কেরাআত পড়িল। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাদিগকে হুকুম করিলেন, তাহারা কোরআন পড়িল আর তিনি উভয়ের পড়াকেই শুদ্ধ বলিলেন। ইহাতে আমার মনে হুযূর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এমন এক সন্দেহের সৃষ্টি হইল যাহা জাহেলিয়াত যুগেও হয় নাই। যখন রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যাহা আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিয়াছে তাহা লক্ষ্য করিলেন, আমার সিনার উপর হাত মারিলেন। ইহাতে আমি ঘামে ভাসিয়া গেলাম এবং এতই ভীত হইলাম যেন আমি আল্লাহকে দেখিতেছি। এ সময় হুযূর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলিলেন, হে উবাই, আমার নিকট ওহী পাঠানো হইয়াছিল যে, কোরআন এক পাঠে (বা এক রীতিতে) পড়। কিন্তু আমি আল্লাহ্র নিকট আরয করিলাম যে, আপনি আমার উম্মতের প্রতি সহজ করিয়া দিন! আল্লাহ্ দ্বিতীয়বারে উত্তর দিলেন, তবে দুই রীতিতে পড়! আমি পুনরায় আরয করিলাম, আপনি আমার উম্মতের প্রতি আরও সহজ করিয়া দিন। তিনি তৃতীয়বারে আমাকে উত্তর করিলেন, তবে সাত রীতিতে পড়। কিন্তু তোমার প্রত্যেক আরযের পরিবর্তেই যাহা তোমাকে আমি দিয়াছি, তদভিন্নও এক একটি যাজ্ঞার অধিকার রহিল, তাহা তুমি করিতে পার। হুযূর বলেন, আমি বলিলাম, আল্লাহ্, আপনি আমার উম্মতকে মাফ করিয়া দিন। আল্লাহ্, আপনি আমার উম্মতকে মাফ করিয়া দিন। আর তৃতীয়টি আমি এমন দিনের জন্য পিছাইয়া রাখিলাম, যে দিন সমগ্র সৃষ্টি আমার সুপারিশের দিকে চাহিয়া থাকিবে, এমন কি হযরত ইবরাহীম (আঃ)-ও। –মুসলিম
وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: كُنْتُ فِي الْمَسْجِدِ فَدَخَلَ رَجُلٌ يُصَلِّي فَقَرَأَ قِرَاءَةً أَنْكَرْتُهَا عَلَيْهِ ثُمَّ دَخَلَ آخَرُ فَقَرَأَ قِرَاءَةً سِوَى قِرَاءَةِ صَاحِبِهِ فَلَمَّا قَضَيْنَا الصَّلَاةَ دَخَلْنَا جَمِيعًا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ إِنَّ هَذَا قَرَأَ قِرَاءَةً أَنْكَرْتُهَا عَلَيْهِ وَدخل آخر فَقَرَأَ سوى قِرَاءَة صَاحبه فَأَمَرَهُمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَرَآ فَحَسَّنَ شَأْنَهُمَا فَسَقَطَ فِي نَفْسِي مِنَ التَّكْذِيبِ وَلَا إِذْ كُنْتُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَلَمَّا رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا قَدْ غَشِيَنِي ضَرَبَ فِي صَدْرِي فَفِضْت عَرَقًا وكأنما أنظر إِلَى الله عز وَجل فَرَقَا فَقَالَ لِي: «يَا أُبَيُّ أُرْسِلَ إِلَيَّ أَن اقْرَأِ الْقُرْآنَ عَلَى حَرْفٍ فَرَدَدْتُ إِلَيْهِ أَنْ هَوِّنْ عَلَى أُمَّتِي فَرَدَّ إِلَيَّ الثَّانِيَةَ اقْرَأْهُ عَلَى حَرْفَيْنِ فَرَدَّدَتْ إِلَيْهِ أَنْ هَوِّنْ عَلَى أُمَّتِي فَرَدَّ إِلَيَّ الثَّالِثَةِ اقْرَأْهُ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ وَلَكَ بِكُلِّ رَدَّةٍ رَدَدْتُكَهَا مَسْأَلَةٌ تَسْأَلُنِيهَا فَقُلْتُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأُمَّتِي اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأُمَّتِي وَأَخَّرْتُ الثَّالِثَةَ لِيَوْمٍ يَرْغَبُ إِلَيَّ الْخَلْقُ كُلُّهُمْ حَتَّى إِبْرَاهِيم صلى الله عَلَيْهِ وَسلم» . رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হুযূর দুইটি আরয আপন উম্মতের জন্য করিলেন, আর একটি কুল-মাখলুকাতের জন্য রাখিলেন। নিজের বা নিজের পরিবার ও খান্দানের জন্য কিছুই নহে। ইহাতেই হুরকে যে আল্লাহ্ 'রাহমাতুললিল আলামীন' করিয়া পাঠাইয়াছেন তাহার যথার্থতা ও তাৎপর্য বুঝা যায়। আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা সাইয়্যেদেনা মুহাম্মাদ।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ২২১৩ | মুসলিম বাংলা