মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৮- রোযার অধ্যায়
হাদীস নং: ২০৪৪
৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৪৪। হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, হুযুর, আপনি কিরূপে রোযা রাখেন (বলুন—যাহাতে আমি উহার অনুসরণ করিতে পারি? হুযূর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহার উপর বড় রাগ করিলেন। হযরত ওমর যখন তাহার রাগ দেখিলেন বলিলেন, আল্লাহকে পরওয়ারদেগাররূপে, ইসলামকে দ্বীনরূপে এবং হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে নবীরূপে পাইয়া আমরা খুশী হইয়াছি। আমরা আল্লাহর নিকট পানা চাহি আল্লাহর ক্রোধ এবং তাহার রাসূলের ক্রোধ হইতে। হযরত ওমর এই বাক্যগুলি বরাবর বলিতে রহিলেন যাহাতে তাহার ক্রোধ থামিয়া গেল। অতঃপর হযরত ওমর জিজ্ঞাসা করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। তাহার কাজ কেমন, যে সারা বছর রোযা রাখে? হুযুর বলিলেন, সে রোযাও রাখে না এবং বে-রোযাও থাকে না; অথবা তিনি বলিলেন, সে রোযা রাখেও নাই এবং রোযা ছাড়েও নাই। পুনঃ হযরত ওমর জিজ্ঞাসা করিলেন, হুযুর! তাহার কাজ কেমন, যে দুই দিন রোযা রাখে এবং এক দিন রোযা ছাড়ে? হুযুর বলিলেন, এইরূপ রাখিতে সক্ষম হয় কি কেহ। অতঃপর হযরত ওমর জিজ্ঞাসা করিলেন, তাহার কাজ কেমন, যে এক দিন রোযা রাখে আর এক দিন রোযা ছাড়ে? হুযুর বলিলেন, ইহা দাউদ নবীর রোযা। পুনরায় হযরত ওমর জিজ্ঞাসা করিলেন, তাহার কাজ কেমন, যে এক দিন রোযা রাখে এবং দুই দিন ছাড়ে? তিনি বলিলেন, আমি কামনা করি যে, আমাকে এইরূপ শক্তি দেওয়া হউক। অতঃপর রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন প্রত্যেক মাসের তিন দিন এবং এ রমযান হইতে ঐ রমযান—ইহা হইল পূর্ণ বছরের রোযা আর আরাফার দিনের রোযা - আমি আশা করি, আল্লাহর নিকট উহা মুছিয়া দিবে উহার পূর্বের বছরের ও পরের বছরের গোনাহ্ এবং আশুরার রোযা আমি আশা করি, আল্লাহর নিকট উহা মুছিয়া দিবে উহার পূর্বেকার বছরের গোনাহ্। -মুসলিম
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ: أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ كَيْفَ تَصُومُ فَغَضِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ قَوْله. فَلَمَّا رأى عمر رَضِي الله عَنْهُم غَضَبَهُ قَالَ رَضِينَا بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ غَضَبِ اللَّهِ وَغَضب رَسُوله فَجعل عمر رَضِي الله عَنْهُم يُرَدِّدُ هَذَا الْكَلَامَ حَتَّى سَكَنَ غَضَبُهُ فَقَالَ عمر يَا رَسُول الله كَيفَ بِمن يَصُومُ الدَّهْرَ كُلَّهُ قَالَ: «لَا صَامَ وَلَا أَفْطَرَ» . أَوْ قَالَ: «لَمْ يَصُمْ وَلَمْ يُفْطِرْ» . قَالَ كَيْفَ مَنْ يَصُومُ يَوْمَيْنِ وَيُفْطِرُ يَوْمًا قَالَ: «وَيُطِيقُ ذَلِكَ أَحَدٌ» . قَالَ كَيْفَ مَنْ يَصُوم يَوْمًا وَيفْطر يَوْمًا قَالَ: «ذَاك صَوْم دَاوُد عَلَيْهِ السَّلَام» قَالَ كَيْفَ مَنْ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمَيْنِ قَالَ: «وَدِدْتُ أَنِّي طُوِّقْتُ ذَلِكَ» . ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ثَلَاث مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ فَهَذَا صِيَامُ الدَّهْرِ كُلِّهِ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ» . رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
‘হুযূর রাগ করিলেন – কেননা, সে ব্যক্তির উচিত ছিল যে, সে নিজে কিরূপে রোযা রাখিবে তাহা জিজ্ঞাসা করা। তাহা হইলে তিনি তাহার অবস্থার অনুরূপ উপদেশ দিতেন। "সে রোযা রাখেও নাই, ছাড়েও নাই', – ইহা হুযূর এ জন্য বলিলেন যে, সে হুযুরের সুন্নতের খেলাফ করিল অথবা হুযুরের উক্তিটি তাহার পক্ষেই প্রযোজ্য, যে নিষিদ্ধ তারিখেও বাদ না দিয়া পূর্ণ বছর রোযা রাখিয়াছে। ‘ইহা নবী দাউদের রোযা’—অর্থাৎ, ইহাই উত্তম কিন্তু এক দিন রাখা এবং দুইদিন না রাখা হইল উত্তমতর। তবে নিজের শরীরের হক, বিবি বাচ্চার হক ও আত্মীয় স্বজনের হক সম্পর্কে ত্রুটি না করিয়া এবং আবশ্যক মত জেহাদের ক্ষমতা বজায় রাখিয়া কেহ যদি নিষিদ্ধ দিন ব্যতীত সারা বছর রোযা রাখিতে চাহে, তাহার জন্য হুযূর নিষেধ করিয়াছেন বলিয়া আলেমগণ মনে করেন না। এ সকল নিষেধ তাহাদের জন্যই যাহারা উল্লিখিত শর্ত পালনে সক্ষম নহেন।
