মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৫- নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৪৯৩
৫০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৯৩। হযরত নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর যমানায় একবার সূর্যগ্রহণ হইল। তিনি দুই দুই রাকআত করিয়া নামায পড়িতে রহিলেন এবং (মসজিদে থাকিয়া) গ্রহণের অবস্থা জিজ্ঞাসা করিতে রহিলেন, যাবৎ না সূর্য পরিষ্কার হইয়া গেল। –আবু দাউদ
নাসায়ীর বর্ণনায় আছে, যখন সূর্যগ্রহণ হইল, নবী করীম (ﷺ) নামায পড়িলেন আমাদের (নিয়মিত) নামাযের ন্যায় রুকূ-সজদা দিয়া। নাসায়ীর অপর বর্ণনায় আছে, (নো'মান বলেন,) নবী করীম (ﷺ) একদিন তাড়াতাড়ি মসজিদের দিকে বাহির হইলেন আর তখন সূর্যগ্রহণ হইয়াছিল। তখন তিনি নামায পড়িতে রহিলেন যাবৎ না সূর্য পরিষ্কার হইয়া গেল। অতঃপর বলিলেন, জাহিলী যুগের লোকেরা বলিত, চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণগ্রস্ত হয় না পৃথিবীর মহান ব্যক্তিদের মধ্য হইতে কোন মহান ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ ব্যতীত। অথচ সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণগ্রস্ত হয় না কাহারও মরণ বা জীবনের কারণে। উহারা হইতেছে আল্লাহর সৃষ্টি জগতের দুইট সৃষ্টি। তিনি তাঁহার সৃষ্টিতে যাহা ইচ্ছা সৃষ্টি করিতে পারেন। সুতরাং উহাদের যেটিই গ্রহণগ্রস্ত হয় তোমরা নামায পড়িতে থাকিবে, যাবৎ না উহা আলোকময় হয় অথবা (যাবৎ না) তিনি অন্য কোন ব্যাপার সৃষ্টি করেন।
নাসায়ীর বর্ণনায় আছে, যখন সূর্যগ্রহণ হইল, নবী করীম (ﷺ) নামায পড়িলেন আমাদের (নিয়মিত) নামাযের ন্যায় রুকূ-সজদা দিয়া। নাসায়ীর অপর বর্ণনায় আছে, (নো'মান বলেন,) নবী করীম (ﷺ) একদিন তাড়াতাড়ি মসজিদের দিকে বাহির হইলেন আর তখন সূর্যগ্রহণ হইয়াছিল। তখন তিনি নামায পড়িতে রহিলেন যাবৎ না সূর্য পরিষ্কার হইয়া গেল। অতঃপর বলিলেন, জাহিলী যুগের লোকেরা বলিত, চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণগ্রস্ত হয় না পৃথিবীর মহান ব্যক্তিদের মধ্য হইতে কোন মহান ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ ব্যতীত। অথচ সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণগ্রস্ত হয় না কাহারও মরণ বা জীবনের কারণে। উহারা হইতেছে আল্লাহর সৃষ্টি জগতের দুইট সৃষ্টি। তিনি তাঁহার সৃষ্টিতে যাহা ইচ্ছা সৃষ্টি করিতে পারেন। সুতরাং উহাদের যেটিই গ্রহণগ্রস্ত হয় তোমরা নামায পড়িতে থাকিবে, যাবৎ না উহা আলোকময় হয় অথবা (যাবৎ না) তিনি অন্য কোন ব্যাপার সৃষ্টি করেন।
وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: كَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ وَيَسْأَلُ عَنْهَا حَتَّى انْجَلَتِ الشَّمْسُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ. وَفِي رِوَايَةِ النَّسَائِيِّ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى حِينَ انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ مِثْلَ صَلَاتِنَا يَرْكَعُ وَيَسْجُدُ
وَلَهُ فِي أُخْرَى: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمًا مُسْتَعْجِلًا إِلَى الْمَسْجِدِ وَقَدِ انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ فَصَلَّى حَتَّى انْجَلَتْ ثُمَّ قَالَ: إِنَّ أَهْلَ الْجَاهِلِيَّةِ كَانُوا يَقُولُونَ: إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَا يَنْخَسِفَانِ إِلَّا لِمَوْتِ عَظِيمٍ مِنْ عُظَمَاءِ أَهْلِ الْأَرْضِ وَإِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَا يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ وَلَكِنَّهُمَا خَلِيقَتَانِ مِنْ خَلْقِهِ يُحْدِثُ اللَّهُ فِي خَلْقِهِ مَا شَاءَ فَأَيُّهُمَا انْخَسَفَ فَصَلُّوا حَتَّى ينجلي أَو يحدث الله أمرا
وَلَهُ فِي أُخْرَى: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمًا مُسْتَعْجِلًا إِلَى الْمَسْجِدِ وَقَدِ انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ فَصَلَّى حَتَّى انْجَلَتْ ثُمَّ قَالَ: إِنَّ أَهْلَ الْجَاهِلِيَّةِ كَانُوا يَقُولُونَ: إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَا يَنْخَسِفَانِ إِلَّا لِمَوْتِ عَظِيمٍ مِنْ عُظَمَاءِ أَهْلِ الْأَرْضِ وَإِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَا يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ وَلَكِنَّهُمَا خَلِيقَتَانِ مِنْ خَلْقِهِ يُحْدِثُ اللَّهُ فِي خَلْقِهِ مَا شَاءَ فَأَيُّهُمَا انْخَسَفَ فَصَلُّوا حَتَّى ينجلي أَو يحدث الله أمرا
হাদীসের ব্যাখ্যা:
গ্রহণের নামাযের রাকআত, রুকূ ও কেয়াম সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন বিবরণ ও পরস্পর বিরোধী বর্ণনা রহিয়াছে। উহার মীমাংসায় ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এক রাকআতে দুই রুকু ও দুই কেয়ামের হাদীসকেই বিশ্বস্ততর বলিয়া মত প্রকাশ করিয়াছেন। বোখারী ও মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত হযরত আয়েশা ও ইবনে আব্বাসের হাদীসে (১ ও ৩) ইহা রহিয়াছে। অপরপক্ষে ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এক রুকূর হাদীসকেই গ্রহণ করিয়াছেন। নাসায়ী কর্তৃক (প্রথম বর্ণনায়) বর্ণিত নো'মান ইবনে বশীরের এই হাদীস, আবু দাউদ, নাসায়ী ও তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনে আসের হাদীস ; আবু দাউদ ও নাসায়ী কর্তৃক বর্ণিত সামুরা ইবনে জুনদুবের হাদীস এবং বোখারী কর্তৃক বর্ণিত আবু বাকরার হাদীসে ইহা রহিয়াছে। তাহার মতে ইহা হইল অপরাপর নামাযের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইহার ব্যতিক্রমের জন্য সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহ প্রমাণ আবশ্যক; অথচ ব্যতিক্রমের হাদীসসমূহ নিঃসন্দেহ নহে। সে সমূহ মুখতারেব। কোনটিতে দুই কোনটিতে তিন, কোনটিতে চার আর কোনটিতে পাঁচ রুকূর কথা রহিয়াছে, অথচ ঘটনা বিভিন্ন ছিল বলিয়াও প্রমাণ নাই। ইমাম নববী (রঃ) ইহার দাবী করিলেও মোল্লা আলী কারী দশ বছরে পাঁচ-ছয়বার সূর্যগ্রহণের দাবীকে অস্বীকার করিয়াছেন। ইমাম মুহাম্মদ (রঃ) বলেন, রুকূ আসলে হুযূর (ﷺ) একটাই করিয়াছিলেন, কিন্তু উহা সাধারণ নিয়মের খেলাফ অতি দীর্ঘ করায় সম্ভবত সামনের দিকের মোকতাদীগণ হুযূর (ﷺ) কি করিতেছেন তাহা দেখার জন্য মাথা উঠাইয়াছিলেন এবং পুনঃ রুকূতে গিয়াছিলেন, আর পিছনের মোকতাদীগণ মনে করিয়াছিলেন যে ইহা নূতন রুকৃ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বালক হওয়ার কারণে এবং হযরত আয়েশা (রাঃ) নারী হওয়ার দরুন একেবারে পিছনের দিকেই ছিলেন।
