মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৫- নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৪০৫
৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪০৫। হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রাঃ) বলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুইটি খোতবা দান করিতেন এবং উভয় খোতবার মধ্যস্থলে বসিতেন। তিনি উহাতে, কিছু কোরআন পাঠ করিতেন এবং লোকদের উপদেশ দিতেন। সুতরাং তাহার নামায ছিল মধ্যম এবং খোতবাও ছিল মধ্যম মুসলিম
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كَانَتْ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُطْبَتَانِ يَجْلِسُ بَيْنَهُمَا يقْرَأ الْقُرْآن وَيذكر النَّاس فَكَانَت صلَاته قصدا وخطبته قصدا. رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূল স. জুমআর পূর্বে দাঁড়িয়ে দুটি খুৎবা দিতেন এবং দুই খুৎবার মাঝে বসতেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, জুমআর খুৎবা দাঁড়িয়ে দেয়া এবং দুই খুৎবার মাঝে বৈঠক করা ছুন্নাত। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (তাতারখানিয়া: ২/৫৬৩, বাদায়েউস সানায়ে’: ২/২৭৬)
খুৎবার সময় সকলকে দেখা এবং নিজেকে সকলের সামনে প্রকাশ করা খুৎবার বিষয়বস্তু মানুষকে বুঝানোর জন্য সহায়ক হয়। এ কারণে জুমআ এবং ঈদ ছাড়াও অন্যান্য খুৎবা দাঁড়িয়ে দেয়া ছুন্নাত। বিবাহের খুৎবা, ইসিত্মসকার খুৎবা ইত্যাদি সবই এ নিয়মের আওতাধীন। আর এটাই খুৎবার ছুন্নাত তরীকা যা উম্মাত প্রজন্ম পরম্পরায় আজও আকড়ে আছে।
২. এ বর্ণনায় হযরত জাবির ইবন সামুরা রাযি. নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে অনেক নামায পড়েছেন এবং তাঁর অনেক খুতবা শুনেছেন। তাঁর সে নামায ও খুতবা কেমন হত, খুব বেশি লম্বা না বেশি খাটো, না অন্যকিছু? তিনি জানাচ্ছেন, তা হত মাঝামাঝি পরিমাণ, বেশি লম্বাও না এবং বেশি খাটোও না।
নামায বেশি লম্বা না করার অর্থ এই নয় যে, নামায পূর্ণাঙ্গ করা হত না। ফরয- ওয়াজিবের পাশাপাশি যেসব সুন্নত-মুস্তাহাব আছে তাও তিনি রক্ষা করতেন, যেমন তাঁর নামায সম্পর্কিত হাদীছসমূহ দ্বারা জানা যায়।
তবে সুন্নত-মুস্তাহাব রক্ষার পর ইমামের উচিত নামায বেশি লম্বা না করা, যাতে বৃদ্ধ, অসুস্থ ও অন্যান্য জরুরত ব্যস্ত মুক্তাদীদের কষ্ট না হয়। কোনও কোনও হাদীছে যে ইমামকে নামায সংক্ষেপ করতে বলা হয়েছে তার অর্থ এটাই। অর্থাৎ সুন্নত-মুস্তাহাবের পর বেশি দীর্ঘ না করা। উদাহরণত "ইশা ও আসরের নামাযে যে কিরাআত পড়া মুস্তাহাব তাকে 'আওসাতে মুফাসসাল' বলে। সূরা বুরূজ থেকে বায়্যিনাহ পর্যন্ত সূরাসমূহ। এর আগের সূরা হুজুরাত থেকে বুরূজ পর্যন্ত সূরাসমূহকে তিওয়ালে মুফাসসাল' বলে। এসব সূরা ফজর ও যোহরের নামাযে পড়া মুস্তাহাব। ইমামের উচিত সাধারণভাবে এ নিয়ম রক্ষা করা। যদি ‘ইশার নামাযে তিওয়ালে মুফাসসাল থেকে পড়ে আর তাতে মুসল্লীগণের কষ্ট হয়, তবে তা পড়া সমীচীন হবে না। হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি. কিছুদিন এরূপ করেছিলেন। তাতে এক মুসল্লীর কষ্ট হয় এবং তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ ব্যাপারে নালিশ করেন। তা শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মু'আয রাযি.-এর প্রতি অত্যন্ত রাগ করেন এবং তাঁকে আওসাতে মুফাসসাল থেকে পড়তে বলে দেন। এর দ্বারা বোঝা গেল ইমাম সুন্নত-মুস্তাহাবের দিকে লক্ষ করে নামায পড়াবেন। মুসল্লীদের কষ্ট হয় বলে সুন্নত-মুস্তাহাবও ছেড়ে দিয়ে নামায সংক্ষেপ করবে, সে কথা বলা হয়নি।
এমনিভাবে তাঁর খুতবা দীর্ঘ না হলেও এত সংক্ষেপও হত না যে, বক্তব্য বিষয় অস্পষ্ট থেকে যেত। খুতবার উদ্দেশ্য তো মানুষকে দীনী কথা বোঝানো। যে সংক্ষেপের কারণে তা বুঝতে কষ্ট হয় সে সংক্ষেপ দূষণীয়। খুতবায় তা পসন্দনীয় নয়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের খুতবা দীর্ঘ না হলেও অতি সংক্ষিপ্তও হত না; বরং মাঝামাঝি পর্যায়ের হত, যা দ্বারা তাঁর বক্তব্য শ্রোতাগণ ভালোভাবেই বুঝতে পারত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারাও 'ইবাদত-বন্দেগীতে মধ্যপন্থা রক্ষার গুরুত্ব বোঝা যায়।
খ. ইমামের কর্তব্য সুন্নত-মুস্তাহাব রক্ষার পর নামায অতি দীর্ঘ না করা।
গ. জুমু'আর খুতবাও বেশি লম্বা না করা বাঞ্ছনীয়।
খুৎবার সময় সকলকে দেখা এবং নিজেকে সকলের সামনে প্রকাশ করা খুৎবার বিষয়বস্তু মানুষকে বুঝানোর জন্য সহায়ক হয়। এ কারণে জুমআ এবং ঈদ ছাড়াও অন্যান্য খুৎবা দাঁড়িয়ে দেয়া ছুন্নাত। বিবাহের খুৎবা, ইসিত্মসকার খুৎবা ইত্যাদি সবই এ নিয়মের আওতাধীন। আর এটাই খুৎবার ছুন্নাত তরীকা যা উম্মাত প্রজন্ম পরম্পরায় আজও আকড়ে আছে।
২. এ বর্ণনায় হযরত জাবির ইবন সামুরা রাযি. নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে অনেক নামায পড়েছেন এবং তাঁর অনেক খুতবা শুনেছেন। তাঁর সে নামায ও খুতবা কেমন হত, খুব বেশি লম্বা না বেশি খাটো, না অন্যকিছু? তিনি জানাচ্ছেন, তা হত মাঝামাঝি পরিমাণ, বেশি লম্বাও না এবং বেশি খাটোও না।
নামায বেশি লম্বা না করার অর্থ এই নয় যে, নামায পূর্ণাঙ্গ করা হত না। ফরয- ওয়াজিবের পাশাপাশি যেসব সুন্নত-মুস্তাহাব আছে তাও তিনি রক্ষা করতেন, যেমন তাঁর নামায সম্পর্কিত হাদীছসমূহ দ্বারা জানা যায়।
তবে সুন্নত-মুস্তাহাব রক্ষার পর ইমামের উচিত নামায বেশি লম্বা না করা, যাতে বৃদ্ধ, অসুস্থ ও অন্যান্য জরুরত ব্যস্ত মুক্তাদীদের কষ্ট না হয়। কোনও কোনও হাদীছে যে ইমামকে নামায সংক্ষেপ করতে বলা হয়েছে তার অর্থ এটাই। অর্থাৎ সুন্নত-মুস্তাহাবের পর বেশি দীর্ঘ না করা। উদাহরণত "ইশা ও আসরের নামাযে যে কিরাআত পড়া মুস্তাহাব তাকে 'আওসাতে মুফাসসাল' বলে। সূরা বুরূজ থেকে বায়্যিনাহ পর্যন্ত সূরাসমূহ। এর আগের সূরা হুজুরাত থেকে বুরূজ পর্যন্ত সূরাসমূহকে তিওয়ালে মুফাসসাল' বলে। এসব সূরা ফজর ও যোহরের নামাযে পড়া মুস্তাহাব। ইমামের উচিত সাধারণভাবে এ নিয়ম রক্ষা করা। যদি ‘ইশার নামাযে তিওয়ালে মুফাসসাল থেকে পড়ে আর তাতে মুসল্লীগণের কষ্ট হয়, তবে তা পড়া সমীচীন হবে না। হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি. কিছুদিন এরূপ করেছিলেন। তাতে এক মুসল্লীর কষ্ট হয় এবং তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ ব্যাপারে নালিশ করেন। তা শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মু'আয রাযি.-এর প্রতি অত্যন্ত রাগ করেন এবং তাঁকে আওসাতে মুফাসসাল থেকে পড়তে বলে দেন। এর দ্বারা বোঝা গেল ইমাম সুন্নত-মুস্তাহাবের দিকে লক্ষ করে নামায পড়াবেন। মুসল্লীদের কষ্ট হয় বলে সুন্নত-মুস্তাহাবও ছেড়ে দিয়ে নামায সংক্ষেপ করবে, সে কথা বলা হয়নি।
এমনিভাবে তাঁর খুতবা দীর্ঘ না হলেও এত সংক্ষেপও হত না যে, বক্তব্য বিষয় অস্পষ্ট থেকে যেত। খুতবার উদ্দেশ্য তো মানুষকে দীনী কথা বোঝানো। যে সংক্ষেপের কারণে তা বুঝতে কষ্ট হয় সে সংক্ষেপ দূষণীয়। খুতবায় তা পসন্দনীয় নয়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের খুতবা দীর্ঘ না হলেও অতি সংক্ষিপ্তও হত না; বরং মাঝামাঝি পর্যায়ের হত, যা দ্বারা তাঁর বক্তব্য শ্রোতাগণ ভালোভাবেই বুঝতে পারত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারাও 'ইবাদত-বন্দেগীতে মধ্যপন্থা রক্ষার গুরুত্ব বোঝা যায়।
খ. ইমামের কর্তব্য সুন্নত-মুস্তাহাব রক্ষার পর নামায অতি দীর্ঘ না করা।
গ. জুমু'আর খুতবাও বেশি লম্বা না করা বাঞ্ছনীয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
