মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৫- নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৪০৬
৪৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুতবাহ্ ও সালাত
১৪০৬। হযরত আম্মার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিতে শুনিয়াছি, কোন ব্যক্তির নামাযের দীর্ঘতা এবং খোড়বার সংক্ষিপ্ততা তাহার শরীআতে সূক্ষ্ম জ্ঞানেরই পরিচায়ক। সুতরাং তোমরা নামাযকে দীর্ঘ করিবে এবং খোত্বাকে সংক্ষেপ করিবে। নিশ্চয়, কোন কোন বক্তৃতা (খোত্ত্বা) জাদুস্বরূপ। মুসলিম
بَابُ الْخُطْبَةِ وَالصَّلَاةِ
وَعَنْ عَمَّارٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ طُولَ صَلَاةِ الرَّجُلِ وَقِصَرَ خُطْبَتِهِ مَئِنَّةٌ مِنْ فِقْهِهِ فَأَطِيلُوا الصَّلَاة واقصروا الْخطْبَة وَإِن من الْبَيَان سحرًا» . رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. 'নামাযকে দীর্ঘ করিবে'—অর্থাৎ, খোতবার তুলনায় দীর্ঘ, আসলে দীর্ঘ নহে। কেননা, পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, হুযূরের নামায মধ্যম ছিল। 'বক্তৃতা জাদুস্বরূপ'—অর্থাৎ, ইহা জাদুর কাজ করে। সুতরাং খোতবা সংক্ষেপে দিবে এবং জ্ঞানগর্ভ ও তথ্যপূর্ণ কথায় দিবে।
২. এ হাদীছটি কোনও কোনও সূত্রে আরও বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। তাতে আছে, আবু ওয়াইল রহ. বলেন, একদিন আম্মার রাযি. আমাদের সামনে ভাষণ দেন। তিনি সে ভাষণ দেন সংক্ষেপে অথচ হৃদয়গ্রাহীভাবে। তিনি মিম্বর থেকে নামলে আমরা বললাম, হে আবুল ইয়াকযান! আপনি অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী অথচ সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়েছেন। আপনি যদি আরও লম্বা করতেন। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
إِنَّ طُوْلَ صَلَاةِ الرَّجُلِ وَقِصَرَ خُطْبَتِهِ مَئِنَّةٌ مِنْ فِقْهِهِ ‘কোনও ব্যক্তির সালাত দীর্ঘ করা ও বক্তৃতা ছোট করা তার ফকীহ (দীনের বুঝসম্পন্ন) হওয়ার আলামত'। অর্থাৎ বক্তৃতা অপেক্ষা নামায দীর্ঘ করার দ্বারা প্রমাণ হয় তার মধ্যে দীনের গভীর ও সুস্পষ্ট বুঝ আছে। কেননা এরূপ ব্যক্তি জানে নামায মৌলিক ইবাদত। বান্দাকে ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। ভাষণ-বক্তৃতা মৌলিকভাবে ইবাদত নয়। বরং তা ইবাদতের জন্য সহায়ক। সে হিসেবে এটাও ইবাদত- পরোক্ষ ইবাদত। পরোক্ষ ইবাদতের চেয়ে মৌলিক ইবাদতের গুরুত্ব বেশি। তাই সময়ও এতেই বেশি দেওয়া উচিত। বান্দার সময় যত বেশি মৌলিক ইবাদতে ব্যয় করা যায় ততোই ভালো, যেহেতু এটা তার সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তাছাড়া নামায লম্বা করা হলে তার একটা বিশেষ ফায়দা এইও যে, যারা দূর থেকে আসে তাদের পক্ষে জামাত ধরা সহজ হয়।
বয়ান ও ভাষণের উদ্দেশ্য মানুষকে দীন বোঝানো। তাই এটা ততটুকুই বলা উচিত, যতটুকু মানুষ বুঝতে পারে ও মনে রাখতে পারে। যে অল্পটা মানুষের অন্তরে বসে যায়, তা ওই বেশিটার চেয়ে অনেক ভালো, যা তারা শুনল বটে কিন্তু মনে রাখতে পারল না। তাছাড়া বক্তৃতা লম্বা হলে তাতে কথা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে শ্রোতার পক্ষে তা গুছিয়ে নেওয়া এবং তার ভেতর থেকে জরুরি কথা আলাদা করে নেওয়া সহজ হয় না। এতে করে বক্তৃতা উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। হাঁ, এমন কোনও পরিস্থিতি যদি দেখা দেয় যখন বিশেষ কোনও অবস্থা বা বিশেষ কোনও ঘটনা বোঝানোর জন্য লম্বা-চওড়া কথা বলার প্রয়োজন হয়, সেটা ভিন্ন কথা। না হয় সাধারণ অবস্থায় মধ্যপন্থাই উত্তম। অর্থাৎ এত সংক্ষেপও হওয়া উচিত নয়, যদ্দরুন বিষয়বস্তু শ্রোতার কাছে অস্পষ্ট থেকে যায়। আবার এত দীর্ঘ হওয়াও বাঞ্ছনীয় নয়, যাতে আলোচনা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং সবটা কথা শ্রোতার পক্ষে হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
প্রকাশ থাকে যে, নামায লম্বা করারও একটা সীমারেখা আছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে যে পরিমাণ কিরাআত পড়তেন সে পরিমাণই পড়া উচিত। তারচে' বেশি লম্বা করা বাঞ্ছনীয় নয়। কেননা তাতে মুক্তাদীদের বাড়তি কষ্টের আশঙ্কা থাকে, বিশেষত অসুস্থ ও বৃদ্ধদের। তাই সুন্নত পরিমাণের চেয়ে বেশি লম্বা করতে হাদীছেও নিষেধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এক হল জুমু'আর খুতবা, আরেক হল খুতবার আগে বাংলায় বয়ান। খুতবার আগে আলাদা বয়ানের রেওয়াজ অনেক পুরোনো। সাহাবায়ে কেরামের আমলেও তা ছিল। যারা আগে আগে মসজিদে আসে, তাদেরকে আমলে উৎসাহিত করা ও দীনের খুঁটিনাটি বিষয়ে অবহিত করার জন্য এ বয়ান বেশ উপকারী। তাই খুতবা ও নামাযে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে লক্ষ রেখে এ বয়ান চালু রাখায় কোনও দোষ নেই। প্রয়োজনে এটা নামাযের পরেও করা যেতে পারে। বরং সেটাই বেশি ভালো।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ফিকহ ও দীনের বুঝ অতি মূল্যবান নি'আমত। প্রত্যেক মুমিনেরই এটা অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। এটা অর্জন করা যায় ফকীহ উলামার সাহচর্যে।
খ. জুমু'আর খুতবা যেন নামাযের চেয়ে বেশি লম্বা না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা উচিত।
২. এ হাদীছটি কোনও কোনও সূত্রে আরও বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। তাতে আছে, আবু ওয়াইল রহ. বলেন, একদিন আম্মার রাযি. আমাদের সামনে ভাষণ দেন। তিনি সে ভাষণ দেন সংক্ষেপে অথচ হৃদয়গ্রাহীভাবে। তিনি মিম্বর থেকে নামলে আমরা বললাম, হে আবুল ইয়াকযান! আপনি অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী অথচ সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়েছেন। আপনি যদি আরও লম্বা করতেন। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
إِنَّ طُوْلَ صَلَاةِ الرَّجُلِ وَقِصَرَ خُطْبَتِهِ مَئِنَّةٌ مِنْ فِقْهِهِ ‘কোনও ব্যক্তির সালাত দীর্ঘ করা ও বক্তৃতা ছোট করা তার ফকীহ (দীনের বুঝসম্পন্ন) হওয়ার আলামত'। অর্থাৎ বক্তৃতা অপেক্ষা নামায দীর্ঘ করার দ্বারা প্রমাণ হয় তার মধ্যে দীনের গভীর ও সুস্পষ্ট বুঝ আছে। কেননা এরূপ ব্যক্তি জানে নামায মৌলিক ইবাদত। বান্দাকে ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। ভাষণ-বক্তৃতা মৌলিকভাবে ইবাদত নয়। বরং তা ইবাদতের জন্য সহায়ক। সে হিসেবে এটাও ইবাদত- পরোক্ষ ইবাদত। পরোক্ষ ইবাদতের চেয়ে মৌলিক ইবাদতের গুরুত্ব বেশি। তাই সময়ও এতেই বেশি দেওয়া উচিত। বান্দার সময় যত বেশি মৌলিক ইবাদতে ব্যয় করা যায় ততোই ভালো, যেহেতু এটা তার সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তাছাড়া নামায লম্বা করা হলে তার একটা বিশেষ ফায়দা এইও যে, যারা দূর থেকে আসে তাদের পক্ষে জামাত ধরা সহজ হয়।
বয়ান ও ভাষণের উদ্দেশ্য মানুষকে দীন বোঝানো। তাই এটা ততটুকুই বলা উচিত, যতটুকু মানুষ বুঝতে পারে ও মনে রাখতে পারে। যে অল্পটা মানুষের অন্তরে বসে যায়, তা ওই বেশিটার চেয়ে অনেক ভালো, যা তারা শুনল বটে কিন্তু মনে রাখতে পারল না। তাছাড়া বক্তৃতা লম্বা হলে তাতে কথা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে শ্রোতার পক্ষে তা গুছিয়ে নেওয়া এবং তার ভেতর থেকে জরুরি কথা আলাদা করে নেওয়া সহজ হয় না। এতে করে বক্তৃতা উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। হাঁ, এমন কোনও পরিস্থিতি যদি দেখা দেয় যখন বিশেষ কোনও অবস্থা বা বিশেষ কোনও ঘটনা বোঝানোর জন্য লম্বা-চওড়া কথা বলার প্রয়োজন হয়, সেটা ভিন্ন কথা। না হয় সাধারণ অবস্থায় মধ্যপন্থাই উত্তম। অর্থাৎ এত সংক্ষেপও হওয়া উচিত নয়, যদ্দরুন বিষয়বস্তু শ্রোতার কাছে অস্পষ্ট থেকে যায়। আবার এত দীর্ঘ হওয়াও বাঞ্ছনীয় নয়, যাতে আলোচনা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং সবটা কথা শ্রোতার পক্ষে হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
প্রকাশ থাকে যে, নামায লম্বা করারও একটা সীমারেখা আছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে যে পরিমাণ কিরাআত পড়তেন সে পরিমাণই পড়া উচিত। তারচে' বেশি লম্বা করা বাঞ্ছনীয় নয়। কেননা তাতে মুক্তাদীদের বাড়তি কষ্টের আশঙ্কা থাকে, বিশেষত অসুস্থ ও বৃদ্ধদের। তাই সুন্নত পরিমাণের চেয়ে বেশি লম্বা করতে হাদীছেও নিষেধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এক হল জুমু'আর খুতবা, আরেক হল খুতবার আগে বাংলায় বয়ান। খুতবার আগে আলাদা বয়ানের রেওয়াজ অনেক পুরোনো। সাহাবায়ে কেরামের আমলেও তা ছিল। যারা আগে আগে মসজিদে আসে, তাদেরকে আমলে উৎসাহিত করা ও দীনের খুঁটিনাটি বিষয়ে অবহিত করার জন্য এ বয়ান বেশ উপকারী। তাই খুতবা ও নামাযে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে লক্ষ রেখে এ বয়ান চালু রাখায় কোনও দোষ নেই। প্রয়োজনে এটা নামাযের পরেও করা যেতে পারে। বরং সেটাই বেশি ভালো।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ফিকহ ও দীনের বুঝ অতি মূল্যবান নি'আমত। প্রত্যেক মুমিনেরই এটা অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। এটা অর্জন করা যায় ফকীহ উলামার সাহচর্যে।
খ. জুমু'আর খুতবা যেন নামাযের চেয়ে বেশি লম্বা না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা উচিত।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
