মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৫- নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৩১১
৩৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইশরাক ও চাশ্তের সালাত
১৩১১। হযরত আবু যর গেফারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ প্রভাত হইবা মাত্রই তোমাদের প্রত্যেকের প্রত্যেক গ্রন্থির জন্যই একটি সদকা (দান) করা আবশ্যক হয়। তবে (জানিবে, তোমাদের প্রত্যেক তসবীহ্'ই একটি সদকা, প্রত্যেক 'তাহমীদ'ই একটি সদকা, প্রত্যেক 'তাহ্লীল'ই একটি সদকা, প্রত্যেক 'তকবীর'ই একটি সদকা এবং সৎ কাজের আদেশ একটি সদকা এবং অসৎ কাজে নিষেধও সদকাবিশেষ। অবশ্য যোহার সময়ে দুই রাকআত নামায পড়া সমস্তের পরিবর্তে যথেষ্ট। —মুসলিম
بَابُ صَلَاةِ الضُّحى
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا من الضُّحَى» . رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. আমাদের শরীরের প্রত্যেক অণু-পরমাণুর জন্যই আমাদের পক্ষে আল্লাহর শুকরিয়ায় একটা দান করা আবশ্যক। তবে তিনি দয়া করিয়া আমাদের প্রত্যেক তসবীহ্-তাহলীলকেও একটি দানরূপে গ্রহণ করেন।
‘তসবীহ্’——'সোবহানাল্লাহ্' বলা। 'তাহমীদ’– 'আলহামদু লিল্লাহ্' বলা। 'তাহলীল'—'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্' বলা। 'তকবীর' – 'আল্লাহু আকবর' বলা।
২. এ হাদীছে আমাদের জানানো হয়েছে যে, প্রতিদিন ভোরবেলা যখন ঘুম থেকে জাগা হয়, তখন আমাদের শরীরে যতটি জোড়া আছে তার প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে একেকটি সদাকা ওয়াজিব হয়ে যায়। কেন তা ওয়াজিব হয়? ওয়াজিব হয় দুই কারণে। একটি বিগত নি'আমতের শোকরস্বরূপ, আরেকটি ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার অছিলাস্বরূপ।
ঘুম মৃত্যুর ভাই। অর্থাৎ এক ধরনের মরণ। অনেক সময় ঘুমের ভেতর মানুষের আসল মৃত্যুও ঘটে যায়। কখনও কখনও রোগব্যাধির কারণে অঙ্গহানিও ঘটে। সকালে ঘুম ভাঙার পর যখন দেখা যায় এর কিছুই হয়নি, সম্পূর্ণ সুস্থ দেহে ঘুম ভেঙেছে, তখন আল্লাহ তা'আলার কৃতজ্ঞতা আদায় অবশ্যকর্তব্য হয়ে যায়। কেননা সুস্থ দেহে ঘুম থেকে জাগ্রত করে তোলা কেবল তাঁরই দান। এটা তাঁর অনেক বড় নি'আমত যে, ঘুমের মাধ্যমে তিনি গত দিনের ক্লান্তি দূর করে শরীর-মন চাঙ্গা করে দিয়েছেন এবং সুস্থ-সবলরূপে নতুন আরেকটি দিনে কাজকর্মে নেমে পড়ার সুযোগ দান করেছেন। এ নি'আমতের দাবি প্রাণভরে তাঁর শোকর আদায় করা।
দ্বিতীয়ত এই যে নতুন একটি দিনের শুরু হল, এ দিনটি কিভাবে যাবে আল্লাহ তা'আলা ছাড়া কেউ তা জানে না। আল্লাহ তা'আলাই সকল উপকার-ক্ষতির মালিক। তিনি যাকে নিরাপদে রাখেন কেবল সে-ই নিরাপদ থাকতে পারে। তিনি নিজ নিরাপত্তা তুলে নিলে কারও পক্ষে বালা-মসিবত থেকে মুক্ত ও সুস্থ-সবল থাকা সম্ভব নয়। কাজেই যে দিনটি শুরু হল এ দিনে যাতে আল্লাহ তা'আলা নিরাপদে রাখেন এবং কোনও বালা- মসিবত স্পর্শ করতে না পারে, সে উদ্দেশ্যেও সদাকা করা কর্তব্য। হাদীছ দ্বারা জানা যায়, সদাকা আল্লাহ তা'আলার ক্রোধ নিবারণ করে ও বালা-মসিবত দূর করে।
হাদীছের ভাষ্যমতে যখন প্রতিটি জোড়ার সঙ্গে সদাকার সম্পর্ক রয়েছে, তা আল্লাহ তাআলার শোকর আদায়ের জন্য হোক বা বালা-মসিবত থেকে আত্মরক্ষার জন্য হোক, তখন যতগুলো জোড়া ঠিক ততটি সদাকা করা কর্তব্য। এক হাদীছ দ্বারা জানা যায়, মানবদেহে মোট ৩৬০টি জোড়া আছে। এর অর্থ দাঁড়ায় প্রত্যেককে অন্ততপক্ষে ৩৬০টি সদাকা করতে হবে। ব্যাপারটা কি কঠিন মনে হয় না? এ প্রশ্নই এক সাহাবী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে করেছিলেন। তার উত্তরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানান, মসজিদে নাকের শ্লেষ্মা পড়ে থাকা অবস্থায় দেখলে তা দূর করে দেওয়াও একটা সদাকা। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করে দেওয়াও একটি সদাকা। যদি তা না পার তবে চাশতের দু' রাক'আত নামায পড়লেই তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। আলোচ্য হাদীছেও তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদিকে একেকটি সদাকা বলা হয়েছে। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
- إِنَّكَ إِذَا أَعَنْتَ الرَّجُلَ فِي دَابَّتِهِ وَحَمَلْتَهُ عَلَيْهَا أَوْ رَفَعْتَ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ فَهُوَصَدَقَةٌ
“তুমি যদি কাউকে তার পশু ব্যবহারে সাহায্য কর এবং তাকে তার উপর সওয়ার করিয়ে দাও আর তার মালামাল তার পিঠে তুলে দাও, তবে সেটাও সদাকা ।”সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৮৯১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০০৯
সুবহানাল্লাহ! কত সহজ আমাদের এ দীন। কাজে কাজে ছাওয়াব। সদাকা করার জন্য আল্লাহর পথে টাকাপয়সাই খরচ করতে হবে এমন কোনও কথা নেই। যার পক্ষে যা সম্ভব সে তা-ই করবে। অর্থব্যয় করতে না পারলে আল্লাহর পথে শারীরিক শক্তি ব্যয় করার দ্বারাও সদাকা হয়ে যায়। এমনকি মুখের ভালো কথা দ্বারাও সদাকা হয়ে যায়। কুরআন তিলাওয়াত করাও সদাকা। 'ইলমে দীন হাসিল করাও সদাকা। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলাও সদাকা। একেকবার বললে একেকটি সদাকা হয়ে যায়। এবারে চিন্তা করুন ৩৬০টি জোড়ার বিনিময়ে ৩৬০টি সদাকা কত সহজে আদায় করা যেতে পারে! এত সহজ সুযোগ গ্রহণ না করলে তা কত বড়ই না গাফলাতি হবে! আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সে গাফলাতি থেকে রক্ষা করুন।
এ হাদীছ দ্বারা চাশতের দু' রাক'আত নামাযের ফযীলত জানা গেল। দু' রাকআত নামায দ্বারা ৩৬০টি জোড়ার সদাকা আদায় হয়ে যায়। অর্থাৎ চাশতের দু' রাক'আত নামায যেন ৩৬০টি সদাকার সমান। সুবহানাল্লাহ! কত সহজে ৩৬০টি সদাকার সমান ছাওয়াব লাভের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এত সহজ সুযোগ কি আমরা গ্রহণ করব না?
প্রকাশ থাকে যে, على শব্দটি সাধারণত কোনওকিছুর আবশ্যিক ও ওয়াজিব হওয়াকে বোঝায়। এর দ্বারা বাহ্যত বোঝা যায় এ হাদীছে বর্ণিত সদাকা ওয়াজিব পর্যায়ের। প্রকৃতপক্ষে তা নয়। কেননা চাশতের নামায শরী'আত ওয়াজিব করেনি; বরং মুস্তাহাব। এ মুস্তাহাব আমল দ্বারা যখন ৩৬০টি জোড়ার সদাকা আদায় হয়ে যায়, তখন বোঝা গেল এ সদাকা ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব। على অব্যয় দ্বারা এ মুস্তাহাবকেই তাকীদ ও জোরদার করা হয়েছে মাত্র।
আরও উল্লেখ্য, এ হাদীছে বর্ণিত আমলসমূহের দ্বারা যে ৩৬০টি জোড়ার সদাকা দেওয়া হয় তার মানে এ নয় যে, এর বিনিময়ে বান্দার বাড়তি কোনও ছাওয়াব থাকবে না, সদাকাতেই সব শেষ হয়ে যাবে। পূর্বে আমরা জানতে পেরেছি সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি যিকর দ্বারা যে ছাওয়াব পাওয়া যায় তাতে মীযান (দাড়িপাল্লা) ভরে যায়। কাজেই এসব আমল দ্বারা সদাকা আদায় হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়তি ছাওয়াবও অবশ্যই থাকবে। আল্লাহ তা'আলা অসীম রহমতের মালিক। এক আমলের বিনিময়ে তিনি বান্দাকে হাজারও রকমের উপকার দান করতে পারেন। তিনি প্রাচুর্যময়। তিনি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে। বান্দার সাথে তার সাধারণ হিসাবনিকাশ ও অনুমান-কল্পনার উর্ধ্বেই তিনি আচরণ করে থাকেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সৎকর্মের ব্যাপকতা বোঝা যায়। সৎকর্ম ও সদাকা নির্দিষ্ট কোনও কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যে-কোনও ভালো কাজই সদাকারূপে গণ্য। এ সদাকা ঘরে-বাইরে, দিনে-রাতে, শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে, সকল সময়, সকল অবস্থায় করা যায়।
খ. চাশতের নামায অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। অন্ততপক্ষে ৩৬০টি সদাকার সমান। কাজেই এটা ছাড়া উচিত নয়।
‘তসবীহ্’——'সোবহানাল্লাহ্' বলা। 'তাহমীদ’– 'আলহামদু লিল্লাহ্' বলা। 'তাহলীল'—'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্' বলা। 'তকবীর' – 'আল্লাহু আকবর' বলা।
২. এ হাদীছে আমাদের জানানো হয়েছে যে, প্রতিদিন ভোরবেলা যখন ঘুম থেকে জাগা হয়, তখন আমাদের শরীরে যতটি জোড়া আছে তার প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে একেকটি সদাকা ওয়াজিব হয়ে যায়। কেন তা ওয়াজিব হয়? ওয়াজিব হয় দুই কারণে। একটি বিগত নি'আমতের শোকরস্বরূপ, আরেকটি ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার অছিলাস্বরূপ।
ঘুম মৃত্যুর ভাই। অর্থাৎ এক ধরনের মরণ। অনেক সময় ঘুমের ভেতর মানুষের আসল মৃত্যুও ঘটে যায়। কখনও কখনও রোগব্যাধির কারণে অঙ্গহানিও ঘটে। সকালে ঘুম ভাঙার পর যখন দেখা যায় এর কিছুই হয়নি, সম্পূর্ণ সুস্থ দেহে ঘুম ভেঙেছে, তখন আল্লাহ তা'আলার কৃতজ্ঞতা আদায় অবশ্যকর্তব্য হয়ে যায়। কেননা সুস্থ দেহে ঘুম থেকে জাগ্রত করে তোলা কেবল তাঁরই দান। এটা তাঁর অনেক বড় নি'আমত যে, ঘুমের মাধ্যমে তিনি গত দিনের ক্লান্তি দূর করে শরীর-মন চাঙ্গা করে দিয়েছেন এবং সুস্থ-সবলরূপে নতুন আরেকটি দিনে কাজকর্মে নেমে পড়ার সুযোগ দান করেছেন। এ নি'আমতের দাবি প্রাণভরে তাঁর শোকর আদায় করা।
দ্বিতীয়ত এই যে নতুন একটি দিনের শুরু হল, এ দিনটি কিভাবে যাবে আল্লাহ তা'আলা ছাড়া কেউ তা জানে না। আল্লাহ তা'আলাই সকল উপকার-ক্ষতির মালিক। তিনি যাকে নিরাপদে রাখেন কেবল সে-ই নিরাপদ থাকতে পারে। তিনি নিজ নিরাপত্তা তুলে নিলে কারও পক্ষে বালা-মসিবত থেকে মুক্ত ও সুস্থ-সবল থাকা সম্ভব নয়। কাজেই যে দিনটি শুরু হল এ দিনে যাতে আল্লাহ তা'আলা নিরাপদে রাখেন এবং কোনও বালা- মসিবত স্পর্শ করতে না পারে, সে উদ্দেশ্যেও সদাকা করা কর্তব্য। হাদীছ দ্বারা জানা যায়, সদাকা আল্লাহ তা'আলার ক্রোধ নিবারণ করে ও বালা-মসিবত দূর করে।
হাদীছের ভাষ্যমতে যখন প্রতিটি জোড়ার সঙ্গে সদাকার সম্পর্ক রয়েছে, তা আল্লাহ তাআলার শোকর আদায়ের জন্য হোক বা বালা-মসিবত থেকে আত্মরক্ষার জন্য হোক, তখন যতগুলো জোড়া ঠিক ততটি সদাকা করা কর্তব্য। এক হাদীছ দ্বারা জানা যায়, মানবদেহে মোট ৩৬০টি জোড়া আছে। এর অর্থ দাঁড়ায় প্রত্যেককে অন্ততপক্ষে ৩৬০টি সদাকা করতে হবে। ব্যাপারটা কি কঠিন মনে হয় না? এ প্রশ্নই এক সাহাবী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে করেছিলেন। তার উত্তরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানান, মসজিদে নাকের শ্লেষ্মা পড়ে থাকা অবস্থায় দেখলে তা দূর করে দেওয়াও একটা সদাকা। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করে দেওয়াও একটি সদাকা। যদি তা না পার তবে চাশতের দু' রাক'আত নামায পড়লেই তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। আলোচ্য হাদীছেও তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদিকে একেকটি সদাকা বলা হয়েছে। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
- إِنَّكَ إِذَا أَعَنْتَ الرَّجُلَ فِي دَابَّتِهِ وَحَمَلْتَهُ عَلَيْهَا أَوْ رَفَعْتَ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ فَهُوَصَدَقَةٌ
“তুমি যদি কাউকে তার পশু ব্যবহারে সাহায্য কর এবং তাকে তার উপর সওয়ার করিয়ে দাও আর তার মালামাল তার পিঠে তুলে দাও, তবে সেটাও সদাকা ।”সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৮৯১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০০৯
সুবহানাল্লাহ! কত সহজ আমাদের এ দীন। কাজে কাজে ছাওয়াব। সদাকা করার জন্য আল্লাহর পথে টাকাপয়সাই খরচ করতে হবে এমন কোনও কথা নেই। যার পক্ষে যা সম্ভব সে তা-ই করবে। অর্থব্যয় করতে না পারলে আল্লাহর পথে শারীরিক শক্তি ব্যয় করার দ্বারাও সদাকা হয়ে যায়। এমনকি মুখের ভালো কথা দ্বারাও সদাকা হয়ে যায়। কুরআন তিলাওয়াত করাও সদাকা। 'ইলমে দীন হাসিল করাও সদাকা। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলাও সদাকা। একেকবার বললে একেকটি সদাকা হয়ে যায়। এবারে চিন্তা করুন ৩৬০টি জোড়ার বিনিময়ে ৩৬০টি সদাকা কত সহজে আদায় করা যেতে পারে! এত সহজ সুযোগ গ্রহণ না করলে তা কত বড়ই না গাফলাতি হবে! আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সে গাফলাতি থেকে রক্ষা করুন।
এ হাদীছ দ্বারা চাশতের দু' রাক'আত নামাযের ফযীলত জানা গেল। দু' রাকআত নামায দ্বারা ৩৬০টি জোড়ার সদাকা আদায় হয়ে যায়। অর্থাৎ চাশতের দু' রাক'আত নামায যেন ৩৬০টি সদাকার সমান। সুবহানাল্লাহ! কত সহজে ৩৬০টি সদাকার সমান ছাওয়াব লাভের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এত সহজ সুযোগ কি আমরা গ্রহণ করব না?
প্রকাশ থাকে যে, على শব্দটি সাধারণত কোনওকিছুর আবশ্যিক ও ওয়াজিব হওয়াকে বোঝায়। এর দ্বারা বাহ্যত বোঝা যায় এ হাদীছে বর্ণিত সদাকা ওয়াজিব পর্যায়ের। প্রকৃতপক্ষে তা নয়। কেননা চাশতের নামায শরী'আত ওয়াজিব করেনি; বরং মুস্তাহাব। এ মুস্তাহাব আমল দ্বারা যখন ৩৬০টি জোড়ার সদাকা আদায় হয়ে যায়, তখন বোঝা গেল এ সদাকা ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব। على অব্যয় দ্বারা এ মুস্তাহাবকেই তাকীদ ও জোরদার করা হয়েছে মাত্র।
আরও উল্লেখ্য, এ হাদীছে বর্ণিত আমলসমূহের দ্বারা যে ৩৬০টি জোড়ার সদাকা দেওয়া হয় তার মানে এ নয় যে, এর বিনিময়ে বান্দার বাড়তি কোনও ছাওয়াব থাকবে না, সদাকাতেই সব শেষ হয়ে যাবে। পূর্বে আমরা জানতে পেরেছি সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি যিকর দ্বারা যে ছাওয়াব পাওয়া যায় তাতে মীযান (দাড়িপাল্লা) ভরে যায়। কাজেই এসব আমল দ্বারা সদাকা আদায় হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়তি ছাওয়াবও অবশ্যই থাকবে। আল্লাহ তা'আলা অসীম রহমতের মালিক। এক আমলের বিনিময়ে তিনি বান্দাকে হাজারও রকমের উপকার দান করতে পারেন। তিনি প্রাচুর্যময়। তিনি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে। বান্দার সাথে তার সাধারণ হিসাবনিকাশ ও অনুমান-কল্পনার উর্ধ্বেই তিনি আচরণ করে থাকেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সৎকর্মের ব্যাপকতা বোঝা যায়। সৎকর্ম ও সদাকা নির্দিষ্ট কোনও কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যে-কোনও ভালো কাজই সদাকারূপে গণ্য। এ সদাকা ঘরে-বাইরে, দিনে-রাতে, শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে, সকল সময়, সকল অবস্থায় করা যায়।
খ. চাশতের নামায অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। অন্ততপক্ষে ৩৬০টি সদাকার সমান। কাজেই এটা ছাড়া উচিত নয়।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
