মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৫- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১২৮৮
৩৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - দুআ কুনূত।

দো'আ কুনূত কোন্ নামাযে পড়িতে হইবে, নামাযের কোন্ স্থলে পড়িতে হইবে এবং কতদিন পড়িতে হইবে–এ অধ্যায়ে সেসকল বিষয়ের হাদীস উদ্ধৃত হইয়াছে।
এ ব্যাপারের সমস্ত হাদীস আলোচনা করিয়া ইমাম আ'যম আবু হানীফা, ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী প্রমুখ ইমামগণ এ সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়াছেন যে, দো'আ কুনূত সর্বদা পড়িবে, তবে ইমাম আবু হানীফার মতে উহা বিতির নামাযেই পড়িতে হইবে, আর ইমাম মালেক ও শাফেয়ীর মতে ফজরের নামাযে পড়িবে। ইসলাম ও মুসলমানদের উপর বিপদকালে উহা সকল নামাযেই পড়িতে পারে, ইহাকে ‘কুনুতে নাযেলা' বলে। দো'আ কুনূতের স্থল সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেন, বিতির নামাযের শেষ রাকআতে কেরাআতের পর এবং রুকুর পূর্বে পড়িবে; কিন্তু ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেন, ফজরের নামাযের শেষ রাকআতে রুকুর পর দাঁড়াইয়া পড়িবে। —অনুবাদক
১২৮৮। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাহারও বিপক্ষে বা কাহারও পক্ষে দোআ করিবার ইচ্ছা করিতেন, তখন রুকুর পরে দো'আ কুনূত পড়িতেন। অনেক সময় যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ, রাব্বানা লাকাল হামদ বলিতেন, (তৎপর) বলিতেন: "হে খোদা, মুক্তিদান কর ওলীদ ইবনে ওলীদকে, সালামা ইবনে হেশামকে ও আয়্যাশ ইবনে আবু রবীআকে। হে খোদা, কঠোর কর তোমার শাস্তি মোযার গোত্রের প্রতি, কর উহাকে তাহাদের জন্য ইউসুফ নবীর দুর্ভিক্ষের অনুরূপ। ইহা তিনি উচ্চঃস্বরে বলিতেন, এছাড়া তিনি তাহার কোন কোন নামাযে আরবের কোন কোন গোত্রের প্রতি লক্ষ্য করিয়া বলিতেন, "হে খোদা, তুমি অভিসম্পাত কর অনুক অমুককে। " যাবৎ না আল্লাহ তা'আলা এই আয়াত নাযিল করিলেন, "(হে নবী!) এ ব্যাপারে আপনার কোন অধিকার নাই।" — মোত্তাঃ
بَاب الْقُنُوْتِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَدْعُوَ عَلَى أَحَدٍ أَوْ يَدْعُوَ لِأَحَدٍ قَنَتَ بَعْدَ الرُّكُوعِ فَرُبَّمَا قَالَ إِذَا قَالَ: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ: اللَّهُمَّ أَنْج الْوَلِيد بن الْوَلِيد وَسَلَمَة ابْن هِشَام وَعَيَّاش بن رَبِيعَةَ اللَّهُمَّ اشْدُدْ وَطْأَتَكَ عَلَى مُضَرَ وَاجْعَلْهَا سِنِينَ كَسِنِي يُوسُفَ يَجْهَرُ بِذَلِكَ وَكَانَ يَقُولُ فِي بَعْضِ صَلَاتِهِ: اللَّهُمَّ الْعَنْ فُلَانًا وَفُلَانًا لِأَحْيَاءٍ مِنَ الْعَرَبِ حَتَّى أَنْزَلَ اللَّهُ: (لَيْسَ لَك من الْأَمر شَيْء)

الْآيَة)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

‘ওলীদ ইবনে ওলীদ'—ইনি সায়ফুল্লাহ্ হযরত খালেদ ইবনে ওলীদের আপন ভাই। বদর যুদ্ধে কাফের অবস্থায় মুসলমানদের হাতে বন্দী হন, ভাইগণ যুদ্ধপণ দিয়া তাঁহাকে মুক্ত করেন; কিন্তু মক্কায় যাইয়া তিনি মুসলমান হইয়া যান, অতঃপর কাফেরদের হাতে বন্দী হন।
‘সালামা ইবনে হেশাম’—ইনি খোদা ও রাসূলের দুশমন আবু জাহলের আপন ভাই। ‘আয়্যাশ ইবনে আবু রবীআ' – আবু জাহলের বৈপিত্রেয় ভাই। ইঁহারা উভয়ে মক্কার প্রথম যুগের মুসলমান ছিলেন এবং কাফেরদের হাতে বন্দী হইয়া কঠোর নির্যাতন ভোগ করিয়াছিলেন। হুযুরের দো'আয় ইঁহারা তিন জনই মক্কা হইতে পলায়ন করিয়া হুয়ূরের নিকট মদীনায় পৌঁছিতে সক্ষম হন।
ইহাদের প্রতি কাফেরদের অসহনীয় অত্যাচার দেখিয়া মানবীয় প্রকৃতির বশে হুযূর ইঁহাদের জন্য দোআ এবং কাফেরদের জন্য বদ দো'আ করিতেছিলেন; কিন্তু ইহা আল্লাহ্ তা'আলার নাপছন্দ হয় এবং তাঁহাকে উক্ত আয়াত দ্বারা হুশিয়ার করিয়া দেন।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান