মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৫- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১২০০
৩১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১২০০। হযরত হুযায়ফা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, তিনি একবার নবী করীম (ﷺ)-কে রাতে নামায পড়িতে দেখিলেন, তিনি বলিতেছেনঃ আল্লাহ্ অতি মহান (তিনবার), সর্বস্বত্বের অধিকারী, প্রভাবশালী, মহোত্তম ও সম্মানিত। অতঃপর (তকবীরে তাহরীমা বলিয়া) প্রারম্ভিক দোআ পাঠ করিলেন এবং (সূরা ফাতেহার পর সূরা বাকারা পড়িলেন। অতঃপর রুকূ করিলেন প্রায় কেয়ামের সমপরিমাণ সময় এবং রুকূতে বলিলেন, সোবহানা রাব্বিয়াল আযীম। তৎপর রুকূ হইতে মাথা উঠাইলেন এবং প্রায় রুকূর সমপরিমাণ সময় দাঁড়াইয়া 'লি রাব্বিয়াল হামদ' পড়িতে রহিলেন। অতঃপর সজদাতে গেলেন, প্রায় কেয়ামের সমপরিমাণ সময় সজদাতে থাকিয়া 'সোবহানা রাব্বিয়াল আ'লা' বলিতে রহিলেন। তৎপর সজদা হইতে মাথা উঠাইলেন এবং দুই সজদার মধ্যখানে প্রায় সজদা পরিমাণ সময় বসিয়া 'রাব্বিগফির-লী' রাব্বিগফির-লী (পরওয়ারদেগার আমায় ক্ষমা কর! পরওয়ারদেগার আমায় ক্ষমা কর !!) বলিতে রহিলেন। এইরূপে তিনি চারি রাকআত নামায পড়িলেন যাহাতে সূরা বাকারা, সূরা আলে ইমরান, সূরা নেসা ও সূরা মায়েদা বা আনআম পাঠ করিলেন। —আবু দাউদ
عَنْ حُذَيْفَةَ: أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ وَكَانَ يَقُولُ: «الله أكبر» ثَلَاثًا «ذُو الْمَلَكُوتِ وَالْجَبَرُوتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ» ثُمَّ اسْتَفْتَحَ فَقَرَأَ الْبَقَرَةَ ثُمَّ رَكَعَ فَكَانَ رُكُوعُهُ نَحْوًا مِنْ قِيَامِهِ فَكَانَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ: «سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ» ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ فَكَانَ قِيَامُهُ نَحْوًا مِنْ رُكُوعِهِ يَقُولُ: «لِرَبِّيَ الْحَمْدُ» ثُمَّ سَجَدَ فَكَانَ سُجُودُهُ نَحْوًا مِنْ قِيَامِهِ فَكَانَ يَقُولُ فِي سُجُودِهِ: «سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى» ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ وَكَانَ يَقْعُدُ فِيمَا بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ نَحْوًا مِنْ سُجُودِهِ وَكَانَ يَقُولُ: «رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي» فَصَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ قَرَأَ فِيهِنَّ (الْبَقَرَةَ وَآلَ عِمْرَانَ وَالنِّسَاءَ وَالْمَائِدَةَ أَوِ الْأَنْعَامَ)

شَكَّ شُعْبَة)

رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রুকুর তাসবীহ হলো سُبْحَانَ رَبِّيَ العَظِيمِ এবং সিজদার তাসবীহ হলো سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى বলা। এ তাসবীহ ছাড়াও রসূলুল্লাহ স. মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন তাসবীহ পড়েছেন মর্মে হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে তাঁর সার্বক্ষণিক আমল ছিলো এটাই। অতএব, রসূলুল্লাহ স. এবং সাহাবায়ে কিরামের আমলের অনুসরণে আমরা এটাই আঁকড়ে ধরবো।

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الله بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُمَرَ بْنِ كَيْسَانَ قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي عَنْ وَهْبِ بْنِ مَانُوسٍ قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَشْبَهَ صَلاَةً بِصَلاَةِ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم مِنْ هَذَا الْفَتَى يَعْنِي عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ فَحَزَرْنَا فِي رُكُوعِهِ عَشْرَ تَسْبِيحَاتٍ وَفِي سُجُودِهِ عَشْرَ تَسْبِيحَاتٍ. ‏(رواه النسائى فى عَدَدِ التَّسْبِيحِ فِي السُّجُودِ-۱/۱۲٧)

হযরত আনাস রা. বলেন, আমি এই যুবক অর্থাৎ উমার বিন আব্দুল আজীজ-এর চেয়ে রসূলুল্লাহ স.-এর নামাযের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ নামায আদায়কারী আর কাউকে দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা তাঁর রুকুতে এবং সিজদাতে তাসবীহ পাঠের পরিমাণ দশবার হবে বলে অনুমান করেছি। (নাসাঈ: ১১৩৮)

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স. রুকু-সিজদায় দশবার তাসবীহ পড়তেন। মুসল্লীদেরকে এ আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। তারা দীর্ঘ নামাযে আগ্রহী হলে এবং তাদের মধ্যে অসুস্থ, দুর্বল বা ব্যসত্ম মানুষ না থাকলে ইমাম এ আমল করতে পারেন। কিন্তু মুক্তাদীদের জন্য কষ্টকর হলে রুকু-সিজদার তাসবীহ আরো কম পড়বে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারক এবং ইসহাক বিন ইবরাহীম (রাহওয়াইহ) ইমামের জন্য পাঁচবার তাসবীহ পাঠ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন যেন মুক্তাদীদের তিনবারের কম না হয়। (তিরমিযী-২৬১)

حَدَّثَنَا فَهْدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ: ثنا سُحَيْمٌ الْحَرَّانِيُّ، قَالَ: ثنا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ مُجَالِدٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ صِلَةَ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ: سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ ثَلَاثًا وَفِي سُجُودِهِ: سُبْحَانَ رَبِّي الْأَعْلَى ثَلَاثًا.

হযরত হুজাইফা রা. বলেন, রসূলুল্লাহ স. রুকুতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ এবং সিজদায় তিনবার سُبْحَانَ رَبِّي الْأَعْلَى বলতেন। (ত্বহাবী শরীফ: খ--১, পৃষ্ঠা-১৬৯, হাদীস নং-১৪১৭)

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূল স. রুকু-সিজদায় তিনবার তাসবীহ পাঠ করতেন। সুতরাং সকল মুসল্লীকেই সতর্ক থাকতে হবে যে, কারো রুকু-সিজদার তাসবীহ যেন তিনবারের কম না হয়। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪৯৪)

এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনে আব্দিল বার রহ. বলেন,

وَقَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَأَبو حَنِيفَةَ وَالشَّافِعِيُّ وَالْأَوْزَاعِيُّ وَأَبو ثَوْرٍ وَأَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ وَإِسْحَاقُ يَقُولُ الْمصَلِّي فِي رُكُوعِهِ سبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ ثَلَاثًا وَفِي السُّجُودِ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى ثَلَاثًا وَهُوَ أَقَلُّ التَّمَامِ وَالْكَمَالِ فِي ذَلِكَ وَقَالَ الثَّوْرِيُّ أَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ يَقُولَهَا الْإِمَامُ خَمْسًا فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ حَتَّى يُدْرِكَ الَّذِي خَلْفَهُ ثَلَاثَ تَسْبِيحَاتٍ وَحُجَّتُهُمْ حَدِيثُ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ

হযরত সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ, আওঝাঈ, আবু ছাওর, আহমাদ বিন হাম্বল এবং ইসহাক বিন রাহওয়াইহ রহ. বলেন, মুসল্লী রুকুতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ এবং সিজদায় তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى পড়বে। আর এটা হলো পূর্ণতার সর্বনি্ম পরিমাণ। হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহ. বলেন, আমার নিকট পছন্দনীয় এই যে, ইমাম সাহেব পাঁচবার তাসবীহ পাঠ করবে যেন মুক্তাদীগণ তিনবার পাঠ করতে পারে। এ সকল ইমামগণের দলীল হলো উকবা বিন আমের রা.-এর হাদীস। (আল ইসিত্মযকার: ১/৪৩২)
.
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান