আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৩৭৫৯
২১০৭. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ)- এর মর্যাদা
৩৪৮৮। হাফস ইবনে উমর (রাহঃ) .... মাসরূক (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জন্মগতভাবে বা ইচ্ছাকৃতভাবে অশ্লীল ভাষী ছিনে না; তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আমার সর্বাধিক প্রিয় যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি আরো বলেছেন, তোমরা চার ব্যক্তির নিকট হতে কুরআন শিক্ষা কর, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, সালিম মাওলা আবু হুযাইফা, উবাই ইবনে কা‘ব ও মু‘আয ইবনে জাবাল (রাযিঃ)।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন- لَمْ يَكُنْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَاحِشًا ولَا مُتَفَحِّشًا (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্লীল ছিলেন না। তিনি কৃত্রিমভাবেও অশ্লীলতা প্রকাশ করতেন না)। فَاحِش শব্দটির উৎপত্তি الْفُحْش থেকে। এর অর্থ কোনওকিছু সীমাতিরিক্ত হয়ে যাওয়া, যদ্দরুন তা নিন্দাযোগ্য হয়ে যায়। এটা কথা, কাজ, গুণ ও অবস্থা সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বলা হয়- طَوِيْلٌ فَاحِش (অতিরিক্ত লম্বা)। অর্থাৎ বিদঘুটে পরিমাণ লম্বা। তবে শব্দটি বেশিরভাগ ব্যবহার হয় কথার ক্ষেত্রে। যে কথায় সীমালঙ্ঘন হয়, তাকেই فَاحِش বলে। অশালীন ও অশ্লীল কথায় সীমালঙ্ঘন হয় বলে তাকে فَاحِش বলা হয়।

مُتَفَحِّش শব্দটির উৎপত্তি التفحش থেকে। এর অর্থ ইচ্ছাকৃতভাবে অশালীন ও অশ্লীল কথা বলা, এরূপ কথা বেশি বেশি বলা, এরূপ কথা কৃত্রিমভাবে বলা। যে ব্যক্তির স্বভাবে অশ্লীলতা নেই, কেবল অন্যের কথা বিবৃত করার জন্য বা অন্য কোনও উদ্দেশ্যে স্বভাববহির্ভূতভাবে অশ্লীল ও অশালীন কথা বলে, তাকে مُتَفَحِّش বলা হয়।

ইমাম দাউদী রহ. বলেন, فَاحِش বলে ওই ব্যক্তিকে, যে অশ্লীল কথা বলে। আর مُتَفَحِّش বলে ওই ব্যক্তিকে, যে মানুষকে হাসানোর জন্য অশ্লীল আচরণ করে।

তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনও প্রকারেই অশালীন ছিলেন না। তিনি স্বভাবগতভাবেও অশালীন কথা বলতেন না ও অশালীন কাজ করতেন না এবং কৃত্রিমভাবেও তিনি এরূপ কথা বলা ও এরূপ কাজ করা থেকে বিরত থাকতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلَاقًا (তোমাদের মধ্যে চরিত্রে যে ব্যক্তি সর্বোত্তম, সেই তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ লোক)। কেননা যার চরিত্র ভালো, সে সদাসর্বদা ভালো কাজ করে এবং সর্বপ্রকার মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। বলাবাহুল্য, যে ব্যক্তি কেবল ভালো কাজই করে, কখনও কোনও মন্দ কাজ করে না, সে তো শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হবেই। এ কথাটি দ্বারা মানুষকে সচ্চরিত্র অবলম্বনে উৎসাহিত করা উদ্দেশ্য। হাদীছটি প্রমাণ করে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। কেননা গোটা মানবজাতির মধ্যে আখলাক-চরিত্রে তিনিই ছিলেন সর্বোত্তম।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. অশ্লীলতা একটি মন্দ স্বভাব। কারও এ স্বভাব থাকলে তার তা নিরাময়ের সাধনা করা উচিত।

খ. কখনও স্বভাববহির্ভূতভাবেও অশালীন ও অশ্লীল কথা বলা বা এরূপ কাজ করা উচিত নয়।

গ. শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে হলে স্বভাব-চরিত্র উন্নত করতে হবে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন