আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ১০১৭
৪৬৫- মজলিস থেকে বিদায়কালে সালাম প্রদানকারীর অধিকার।
১০১৭. মু’আবিয়া ইব্‌ন কুররা বলেন, একদা আমার পিতা আমাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেনঃ হে বৎস, তুমি যদি কোন মজলিসে উপকার লাভের আশায় বসিয়া থাক, আর কোন প্রয়োজনে তোমাকে সেখান হইতে তাড়াতাড়ি উঠিয়া যাইতে বাধ্য করে তবে (প্রস্থানকালে) বলিবেঃ সালামুন আলাইকুম! তাহা হইলে সেই মজলিসে অংশগ্রহণকারীগণ যে কল্যাণ লাভ করিবে তুমিও তাহা পাইবে আর যাহারা কোন মজলিসে অংশগ্রহণের পর আল্লাহ্‌কে স্মরণ করা ব্যতিরেকেই মজলিস ভঙ্গ করিয়া উঠিয়া যায়, তাহারা যেন একটা মৃত গাধা হইতে উঠিয়া গেল।
بَابُ حَقِّ مَنْ سَلَّمَ إِذَا قَامَ
حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ الْفَضْلِ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا بِسْطَامٌ قَالَ‏:‏ سَمِعْتُ مُعَاوِيَةَ بْنَ قُرَّةَ قَالَ‏:‏ قَالَ لِي أَبِي‏:‏ يَا بُنَيَّ، إِنْ كُنْتَ فِي مَجْلِسٍ تَرْجُو خَيْرَهُ، فَعَجِلَتْ بِكَ حَاجَةٌ فَقُلْ‏:‏ سَلاَمٌ عَلَيْكُمْ، فَإِنَّكَ تَشْرَكُهُمْ فِيمَا أَصَابُوا فِي ذَلِكَ الْمَجْلِسِ، وَمَا مِنْ قَوْمٍ يَجْلِسُونَ مَجْلِسًا فَيَتَفَرَّقُونَ عَنْهُ لَمْ يُذْكَرِ اللَّهُ، إِلاَّ كَأَنَّمَا تَفَرَّقُوا عَنْ جِيفَةِ حِمَارٍ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

যে মজলিস বা বৈঠকে আল্লাহ তা'আলার যিকির ও স্মরণ করা হয় না, সে মজলিস যে কত নিকৃষ্ট ও কদর্য, এ হাদীছে তা তুলে ধরা হয়েছে। তা তুলে ধরা হয়েছে উপমার মাধ্যমে। মজলিসটিকে তুলনা করা হয়েছে মড়া গাধার সঙ্গে। আর সে মজলিসে অংশগ্রহণকারীদেরকে তুলনা করা হয়েছে সেই মড়া গাধা খেয়ে যারা ওঠে তাদের সঙ্গে। গাধা এমনিই পশুদের মধ্যে নিম্নশ্রেণির। সেই গাধা যদি হয় মড়া, তবে তার কদর্যতার সীমা থাকে না। মড়া বস্তুটি গাধা হোক বা অন্য কোনও পশু, কোথাও পড়ে থাকলে তার উপর শকুনের দল হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তারা তা খেয়ে শেষ করে উড়ে চলে যায়। কোনও মানুষ সে মড়া পশুর কাছেও যায় না। কাছ দিয়ে যেতে হলে ঘৃণায় থুথু ফেলে ও নাক চেপে ধরে। এমনই ঘৃণ্য সে বস্তুটি। এই ঘৃণ্য বস্তুকে যারা খায় সেই শকুনকেও পাখিদের মধ্যে নিকৃষ্ট গণ্য করা হয়। এবার ভাবুন যে মজলিসকে এমন মড়া বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, সে মজলিস কত নিকৃষ্ট! আর যারা এমন মজলিসে অংশগ্রহণ করে মর্যাদায় তারা কতটা হীন! এ দৃষ্টান্ত দ্বারা আমাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যেন আমরা কিছুতেই এরূপ মজলিসে অংশগ্রহণ না করি। যদি কখনও কোনও মজলিসে অংশগ্রহণ করা হয়, তবে অবশ্যই যেন সেখানে আল্লাহর যিকির কিছু না কিছু করি। যেন দীনের আলোচনা করি, তাওবা-ইস্তিগফার করি, সদুপদেশ দিই, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করি। এ সবই আল্লাহর যিকির। কোনওরকম যিকিরই যদি না করি, তবে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। কেননা হাদীসে আছে-
وكان لهم حسرة (আর সে মজলিস তাদের জন্য হবে আক্ষেপ)। এ আক্ষেপ হবে আখিরাতে। অপর এক হাদীছে আছে-
مَا مِنْ قَوْمٍ جَلَسُوا مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللَّهَ فِيهِ، إِلَّا رَأَوْهُ حَسْرَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ
'যারাই এমন কোনও মজলিসে বসেছে, যে মজলিসে তারা আল্লাহর যিকির করেনি, কিয়ামতের দিন তারা সে মজলিসকে দেখতে পাবে আক্ষেপরূপে’। (মুসনাদে আহমাদ: ৭০৯৩)

আক্ষেপ হবে এ কারণে যে, সে মজলিসে জীবনের কতটা মূল্যবান সময় চলে গেল অথচ তার বিপরীতে এমন কিছুই অর্জিত হল না, যা আখিরাতে কাজে আসতে পারে। আখিরাতে যখন বান্দার কাছ থেকে তার আয়ুর হিসাব নেওয়া হবে, তখন সে দেখতে পাবে দুনিয়ায় বিভিন্ন মজলিসে এমন কত সময় সে কাটিয়েছে, যেসব মজলিসে সে আল্লাহর কোনও যিকির করেনি আর এভাবে অযথাই তার সে সময়গুলো নষ্ট হয়েছে। তখন যদি সে আল্লাহর যিকির করত, তবে আজ তা তার কতইনা কাজে আসত! এভাবে সে সেইসব মজলিসের জন্য আক্ষেপ করতে থাকবে।

বোঝা গেল আল্লাহ তা'আলার যিকিরই আসল জিনিস। আল্লাহর যিকির যাতে থাকে তা অশেষ মূল্যবান। আর আল্লাহর যিকির যাতে থাকে না, তার কোনও মূল্য নেই। বাহ্যদৃষ্টিতে তা যতই আড়ম্বরপূর্ণ হোক। মানুষের কাছে তা যতই প্রশংসিত হোক। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَلَا إِنَّ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ ، مَلْعُونٌ مَا فِيهَا ، إِلَّا ذِكْرُ اللَّهِ، وَمَا وَالاهُ، وَعَالِمٌ أَوْ مُتَعَلِّمُ
'শোনো! নিঃসন্দেহে দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত তার মধ্যে যা-কিছু আছে সবই, তবে আল্লাহর যিকির এবং যা-কিছু তার নিকটবর্তী (যা আল্লাহ ভালোবাসেন), আলেম ও তালিবে ইলম।' (জামে তিরমিযী: ২৩২২; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪১১২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪০২৯)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা'আলার যিকির করার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।

খ. হাদীছটি মজলিস ও বৈঠকে আল্লাহ তা'আলার যিকির ও স্মরণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।

গ. সমাবেশ ও মজমায় আল্লাহ তা'আলার যিকির না হওয়াটা বিপজ্জনক।

ঘ. জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বড় মূল্যবান। তাই একটি মুহূর্তও পরকালীন অর্জন ব্যতিরেকে কাটাতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আল-আদাবুল মুফরাদ - হাদীস নং ১০১৭ | মুসলিম বাংলা