আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ১০১৫
৪৬৩.মজলিসে গিয়া সালাম দেওয়া
১০১৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ তোমাদের মধ্যকার কোন ব্যক্তি যখন কোন মজলিসে গিয়া উপস্থিত হয় তখন তাহার উচিত সালাম করা। সে যদি ফিরিয়া যায় তখনও সালাম করিবে। কেননা পরের সালাম প্রথমে সালাম হইতে কম নহে। ১
بَابُ التَّسْلِيمِ إِذَا جَاءَ الْمَجْلِسَ
حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنِ ابْنِ عَجْلاَنَ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ‏:‏ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم‏:‏ إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمُ الْمَجْلِسَ فَلْيُسَلِّمْ، فَإِنْ رَجَعَ فَلْيُسَلِّمْ، فَإِنَّ الأُخْرَى لَيْسَتْ بِأَحَقَّ مِنَ الأولَى‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. এই রিওয়ায়াতের মূল আছে فإن الأخرى ليست بأحق من الأولى অর্থাৎ দ্বিতীয় সালাম প্রথম সালাম হইতে উত্তম নহে। কিন্তু মিশকাত শরীফে তিরমিযী ও আবূ দাউদ শরীফের উদ্ধৃতি দিয়া হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-র যে রিওয়ায়েত উদ্ধৃত করা হইয়াছে, তাহাতে আছে فليست الاولى احق الاخرى প্রথম সালাম দ্বিতীয় সালাম হইতে কোন অংশেই উত্তম নহে। এই বক্তব্যই অধিকতর যুক্তিযুক্ত কেননা প্রথম সালামের গুরুত্ব সম্পর্কে সকলেই জ্ঞাত। দ্বিতীয় সালামের গুরুত্বও যে কোন অংশে কম নহে, এই কথাটিই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝাইতে চাহিয়াছেন। এই কিতাবের ৯৮৬ নং হাদীসে হুবহু এই বক্তব্যই হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর রিওয়ায়েতের প্রকাশ পাইয়াছে। সাঈদ ইব্‌ন আবূ সাঈদের সূত্রে হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর অপর এক রিওয়ায়েতে অনুরূপ বর্ণনা রহিয়াছে।

২. সালাম দেওয়ার উদ্দেশ্য তাকে নিজের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া। সালামের মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, তুমি আমার দিক থেকে নিশ্চিন্ত থাকো। আমার দ্বারা তোমার কোনও ক্ষতি হবে না। কোনও মজলিসে পৌছে সালাম দিলে মজলিসে উপস্থিত লোকজন আশ্বস্ত হতে পারে যে, এই আগন্তুকের পক্ষ থেকে তাদের কোনও ভয় নেই। ফলে তারা নিশ্চিন্তমনে তাকে গ্রহণ করে নিতে পারে। এজন্যই মজলিসে পৌঁছে সালাম দিতে হয়। তাদের এই একই নিরাপত্তা ওই ব্যক্তির বিদায় গ্রহণকালেও পাওয়া দরকার। কেননা অনেক সময় মজলিসে আগন্তুক ব্যক্তি মজলিসের খবরাখবর জেনে যায়। তারপর সে ওই মজলিসের কথা অন্যত্র প্রচার করে কিংবা মজলিসের লোকজন সম্পর্কে অন্যদের অবহিত করে তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। কাজেই এ ব্যক্তি বিদায় নেওয়ার পর যে তাদের এরকম কোনও ক্ষতি করবে না, সে বিষয়ে তাদের নিশ্চিন্ত হওয়া দরকার। সালামের দ্বারা বিদায় নিলে তারা সে নিশ্চিন্ততা লাভ করতে পারে। কাজেই বিদায় গ্রহণকালেও সালাম দেওয়া উচিত। এজন্যই হাদীছটিতে বলা হয়েছে, শেষের সালাম অপেক্ষা প্রথমবারের সালাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। অর্থাৎ নিরাপত্তা ও নিরুদ্বেগের ব্যাপারে প্রথমবার সালাম দেওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, বিদায়কালীন সালামও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। সে সালামের গুরুত্ব প্রথমবারের তুলনায় মোটেই কম নয়। তাই সাক্ষাৎকালে যেমন সালাম দেওয়া হয়েছে, বিদায়কালেও তেমনি সালাম দেওয়া উচিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সালাম দেওয়ার দ্বারা সালামদাতার পক্ষ থেকে কোনওরূপ ক্ষতি ও অনিষ্ট সাধিত না হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। তাই সালামদাতার কর্তব্য সালামের এ অন্তর্নিহিত আবেদন সম্পর্কে সচেতন থাকা।

খ. মজলিসে উপস্থিত হওয়ার সময় বা কারও সঙ্গে সাক্ষাৎকালে যেমন সালাম দেওয়া হয়, তেমনি সালাম দিতে হবে বিদায়কালেও।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আল-আদাবুল মুফরাদ - হাদীস নং ১০১৫ | মুসলিম বাংলা