কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

৪৭. ঈমান এবং ঈমানের শাখা প্রশাখার বিবরণ

হাদীস নং: ৫০২১
আন্তর্জতিক নং: ৫০২১

পরিচ্ছেদঃ মুনাফিকের আলামত

৫০২০. আলী ইবনে হুজর (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি : সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তা পূর্ণ করে না এবং তার নিকট আমানত রাখা হলে তার খিয়ানত করে।

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ

الْمُنَافِقُ শব্দটির উৎপত্তি نِفَاقُ থেকে। نِفَاق (নিফাক) অর্থ ধোঁকা দেওয়া, প্রতারণা করা, কথায় ও কাজে মিল না রাখা, অন্তরে অসাধুতা পোষণ করে বাইরে সাধুতা প্রকাশ করা। শরী'আতের পরিভাষায় নিফাক দু'প্রকার। বড় নিফাক ও ছোট নিফাক। বড় নিফাক হল বিশ্বাসগত। অর্থাৎ অন্তরে কুফর বিদ্যমান রেখে মুখে ঈমান ও ইসলাম প্রকাশ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় যারা মুনাফিক ছিল, তাদের নিফাক এ রকমই ছিল। কুরআন মাজীদ তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে এবং তাদেরকে কাফের ঘোষণা করে সতর্ক করে দিয়েছে যে, তাদের পরিণাম ও ঠিকানা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর। ছোট নিফাক হল কর্মগত নিফাক। অর্থাৎ প্রকাশ্যে নিজেকে সৎ ও সাধু পুরুষরূপে প্রদর্শন করা আর অন্তরে তার বিপরীত অবস্থা পোষণ করা। নামের দিক থেকে যদিও এটা ছোট নিফাক, কিন্তু গুনাহ হিসেবে মোটেই ছোট নয়। হাদীছে যেসব বিষয়কে এরূপ নিফাক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তার প্রত্যেকটিই কবীরা গুনাহ। যেমন মিথ্যা বলা, আমানতের খেয়ানত করা ইত্যাদি। এ হাদীছে যে মুনাফিকের আলামত বলা হয়েছে, তা দ্বারা মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় বিদ্যমান মুনাফিকদের বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বাসগত মুনাফিক। এ আলামতগুলো তাদের মধ্যেই বিদ্যমান ছিল। এসব আলামতের প্রত্যেকটিই কর্মগত নিফাক। তবে সেকালে এগুলো ইঙ্গিত বহন করত যে, যাদের মধ্যে এগুলো আছে, বিশ্বাসগত দিক থেকে তারা মুনাফিক। অর্থাৎ নিজেদেরকে মুমিন বলে পরিচয় দিলেও প্রকৃতপক্ষে তারা কাফের। বর্তমানকালে মানুষের আমল-আখলাকের ব্যাপক অধঃপতন ঘটেছে। তাই এসব আলামত মুমিনদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। হাদীছের ভাষায় এরূপ মুমিনও এক রকম মুনাফিক। তবে তারা বিশ্বাসগত মুনাফিক নয়; বরং কর্মগত মুনাফিক। অর্থাৎ তাদের কাজকর্ম প্রকৃত মুনাফিকদের কাজকর্মের মতো। তাদেরই মতো এরাও বলে এক, করে আরেক। অথচ এমন হওয়া উচিত নয়। যে ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন, তার কথায়-কাজে মিল থাকা উচিত। তার কাজকর্ম কিছুতেই মুনাফিকদের মতো প্রতারণামূলক হওয়া উচিত নয়। আলোচ্য হাদীছে যে মুনাফিকদের আলামত বলা হয়েছে, তা বিশ্বাসগত মুনাফিক ও কর্মগত মুনাফিক উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। যারা কর্মর্গত দিক থেকে মুনাফিক, বিশ্বাসগত দিক থেকে নয়, অর্থাৎ যাদের অন্তরে ঈমান আছে, হাদীছের শব্দ দ্বারা তাদের খুব সাবধান হওয়া উচিত যে, কতগুলো মন্দকর্মে লিপ্ত থাকার কারণে তাদেরকেও মুনাফিক নামে অভিহিত করা হয়েছে। একজন মুমিনের পক্ষে তা কতইনা লজ্জাজনক! সুতরাং তাদের উচিত এসব কর্ম থেকে তাওবা করে বিশ্বাস ও কর্ম উভয় দিক থেকেই প্রকৃত মুমিন হয়ে যাওয়া। এ হাদীছে মুনাফিকের আলামত বলা হয়েছে তিনটি। কিন্তু অপর এক হাদীছে আছে, মুনাফিকের আলামত চারটি। ইরশাদ হয়েছে- أَرْبَعٌ مَن كُنَّ فيه كانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، ومَن كَانَتْ فيه خَصْلَةٌ منهنَّ كَانَتْ فيه خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حتَّى يَدَعَهَا: إذَا اؤْتُمِنَ خَانَ، وإذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وإذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وإذَا خَاصَمَ فَجَرَ ‘চারটি বিষয় যে ব্যক্তির মধ্যে থাকবে সে একজন খাঁটি মুনাফিক সাব্যস্ত হবে। যার মধ্যে তা থেকে একটি থাকবে তার মধ্যে মুনাফিকীরই একটা খাসলত থাকবে, যাবৎ না সে তা ছেড়ে দেয়। তা হচ্ছে- তার কাছে যখন আমানত রাখা হয় খেয়ানত করে, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন প্রতিশ্রুতি দেয় তা ভঙ্গ করে আর যখন কলহ-বিবাদ করে তখন সীমালঙ্ঘন করে।' (সহীহ বুখারী : ৩৪; সহীহ মুসলিম: ৫৮; সুনানে আবূ দাউদ: ৪৬৮৮; জামে তিরমিযী: ২৬৩২ সহীহ ইবনে হিব্বান: ২৫৪) প্রথম হাদীছে মুনাফিকদের যে তিনটি আলামত বলা হয়েছে, তার দু'টি এ হাদীছেও আছে। তা হল মিথ্যা বলা ও আমানতের খেয়ানত করা। ওয়াদা ভঙ্গ করার কথাটি এ হাদীছে নেই। সুতরাং এ হাদীছে বর্ণিত চারটি আলামতের সঙ্গে উপরের হাদীছের তৃতীয় আলামতটি যোগ করলে মোট আলামত হয় পাঁচটি। পূর্ণ পাঁচটি দুই হাদীছের কোনওটিতেই বর্ণিত হয়নি। বস্তুত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীছে স্থান-কাল-পাত্রের দিকে লক্ষ রাখা হত। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেখানে যে আলামতগুলোর কথা উল্লেখ করার প্রয়োজন হয়েছে, সেখানে কেবল সেগুলোই বর্ণিত হয়েছে। তাই কোথাও তিনটি আলামত উল্লেখ করা হয়েছে এবং কোথাও চারটি। তার মানে এ নয় যে, এর অতিরিক্ত কোনও আলামত নেই। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, উভয় হাদীছের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। কেননা এই হাদীছে তিনটি আলামত উল্লেখ করার দ্বারা এ কথা প্রমাণ হয় না যে, অপর হাদীছে বর্ণিত চতুর্থটি আলামত নয়। মূল কথা হচ্ছে সবগুলোই মুনাফিকের আলামত, তবে সময় অনুপাতে একেকবার একেক ধরনের আলামত উল্লেখ করা হয়েছে। মুনাফিকের প্রথম আলামত এ হাদীছে বর্ণিত তিনটি আলামতের প্রথমটি হচ্ছে- إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ (যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে)। এর দ্বারা মিথ্যা কথা কত গুরুতর পাপ তা অনুমান করা যায়। কেননা প্রকৃত মুনাফিক হচ্ছে একজন সুবিধাবাদী কাফের। সে অন্তরে তার কুফর ও বেঈমানী গোপন রাখে আর বিভিন্ন স্বার্থ ও সুবিধাভোগের খাতিরে নিজেকে মুসলিম বলে জাহির করে। তার সবচে' বড় মিথ্যাচার হচ্ছে কাফের হয়েও নিজেকে মু'মিন ও মুসলিম বলে প্রকাশ করা। এত বড় বিষয়েও যখন সে মিথ্যা বলতে দ্বিধাবোধ করে না, তখন অন্যান্য ক্ষেত্রে তার মিথ্যা বলাটা তো খুবই স্বাভাবিক। মোটকথা মিথ্যা বলাটা মুনাফিকের স্বভাব। কাজেই একজন মুসলিম ব্যক্তির কোনওক্রমেই মিথ্যা বলা উচিত নয়। একবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবন জারাদ রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ! মু'মিন কি ব্যাভিচার করতে পারে? তিনি বললেন, হাঁ, কখনও তার দ্বারা এটা ঘটে যেতে পারে। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, মু'মিন কি চুরি করতে পারে? তিনি বললেন, হাঁ, এটাও তার দ্বারা কখনও ঘটে যেতে পারে। তাঁর শেষ প্রশ্ন ছিল- يَا نَبِيَّ اللَّهِ ، هَلْ يَكْذِبُ الْمُؤْمِنُ؟ قَالَ: " لَا " . ثُمَّ أَتْبَعَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ هَذِهِ الْكَلِمَةَ: إِنَّمَا يَفْتَرِي الْكَذِبَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْكَاذِبُونَ ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ! মু'মিন কি মিথ্যা বলতে পারে? তিনি বললেন, না। এই বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াত পাঠ করলেন- إِنَّمَا يَفْتَرِي الْكَذِبَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْكَاذِبُونَ নিশ্চয়ই মিথ্যা রচনা তো (নবী নয়, বরং) তারাই করে, যারা আল্লাহর আয়াতের উপর ঈমান রাখে না। প্রকৃতপক্ষে তারাই মিথ্যাবাদী। (সূরা নাহল (১৬), আয়াত ১০৫) (খারাইতী, মাসাবিউল আখলাক: ১২৭) মিথ্যা বলাটা এক রকম বিশ্বাসঘাতকতাও বটে। কেননা মিথ্যা যাকে বলা হয়, সে তো সেই কথাটিকে সত্যই মনে করে এবং বক্তাকে সে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু মিথ্যুক ব্যক্তি তার বিশ্বাসের পরিপন্থী কাজ করে। তার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তাকে দিয়ে মিথ্যা গ্রহণ করায়। এটা তো মারাত্মক বিশ্বাসঘাতকতা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীছে ইরশাদ করেন- كَبُرَتْ خِيَانَةً أَنْ تُحَدِّثَ أَخَاكَ حَدِيثًا هُوَ لَكَ بِهِ مُصَدِّقٌ، وَأَنْتَ لَهُ بِهِ كَاذِبٌ ‘এটা এক মহা বিশ্বাসঘাতকতা যে, তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে কোনও কথা বলছ আর সে তোমাকে বিশ্বাস করছে, অথচ তুমি তার সঙ্গে মিথ্যা বলছ।' (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৭১; আল-আদাবুল মুফরাদ: ৩৯৩; খারাইতী, মাসাবিউল আখলাক : ১০৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ২০৮৪৬; শু'আবুল ঈমান: ৪৪৭৯; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩৫৭৯; তাবারানী, মুসনাদুশ শামিয়্যীন: ৪৯৫; মুসনাদে আহমাদ: ১৭৬৩৫) মুনাফিকের দ্বিতীয় আলামত মুনাফিকের দ্বিতীয় আলামত হল- وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ (যখন ওয়াদা করে, তা ভঙ্গ করে)। মু'মিন ব্যক্তি ওয়াদা রক্ষাকারী হয়ে থাকে। ওয়াদাভঙ্গ কথা দ্বারাও হতে পারে, কাজ দ্বারাও হতে পারে। উভয়টিই মুনাফিকের আলামত। তবে এটা মুনাফিকের আলামত হবে তখনই, যখন ওয়াদা দেওয়ার সময়ই মনে মনে তা রক্ষা করার নিয়ত না থাকে। পক্ষান্তরে যদি রক্ষা করার নিয়ত থাকে কিন্তু বাস্তবিক কোনও ওজরবশত সে তা রক্ষা করতে না পারে, তবে তা মুনাফিকের আলামতরূপে গণ্য হবে না। এক হাদীছে আছে- إِذَا وَعَدَ الرَّجُلُ أَخَاهُ، وَمِنْ نِيَّتِهِ أَنْ يَفِيَ لَهُ ، فَلَمْ يَفِ وَلَمْ يَجِئْ لِلْمِيعَادِ، فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ‘কোনও ব্যক্তি যদি তার ভাইয়ের সঙ্গে কোনও ওয়াদা করে এবং সে ওয়াদা পূরণ করার নিয়তও তার থাকে, কিন্তু পরে সে তা পূরণ করতে না পারে এবং সময়মতো আসতে সক্ষম না হয়, তবে তার কোনও গুনাহ হবে না।' (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯৫; জামে' তিরমিযী: ২৬৩৩; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫০৮০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২০৮৩৮) সুতরাং কেউ যখন কোনও ওয়াদা করে, তখন অবশ্যই তা পূরণ করার নিয়ত থাকতে হবে। পূরণ করার নিয়ত না থাকলে তা মিথ্যা কথা ও বিশ্বাসঘাতকতা বলে গণ্য হবে, যা কিনা মুনাফিকীর আলামত। কোনও মুমিন ও ভদ্র ব্যক্তির কিছুতেই এটা করা উচিত নয়। বলা হয়ে থাকে, ভদ্র লোক যখন কোনও ওয়াদা করে, তখন সে তা অবশ্যই পূরণ করে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমির ইবন রাবী'আ রাযি. বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়িতে আসলেন। তখন আমি শিশু। আমি খেলতে বের হয়ে গেলাম। আমার মা আমাকে ডাকলেন, হে আব্দুল্লাহ! এসো, তোমাকে দেব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে কী দেওয়ার ইচ্ছা করেছ? তিনি বললেন, তাকে একটি খেজুর দেওয়ার ইচ্ছা করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তা না করলে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যা লেখা হত। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯১; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ২০৮৩৯; শু'আবুল ঈমান: ৪৪৮২; মুসনাদে আহমাদ: ১৫৭০২; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক: ২০২) হাদীছটি দ্বারা বোঝা গেল ওয়াদা পূরণ না করলে তা মিথ্যা কথা বলে গণ্য হয়। এমনকি সে ওয়াদা শিশুর সঙ্গে করলেও। আর তা মুনাফিকীর আলামত তো বটেই। মুনাফিকের তৃতীয় আলামত মুনাফিকের তৃতীয় আলামত হচ্ছে- وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ (যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, সে তাতে খেয়ানত করে)। আমানত রক্ষা করা মু'মিন ব্যক্তির এক অপরিহার্য গুণ। আল্লাহ তা'আলা মু'মিনের পরিচয় দিতে গিয়ে যেসকল গুণের উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে এটিও একটি। ইরশাদ হয়েছে- وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ ‘এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।' (সূরা মা'আরিজ (৭০), আয়াত ৩২) যেহেতু আমানত রক্ষা মু'মিনের অপরিহার্য গুণ, তাই আমানতের খেয়ানত করতে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে- يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং জেনেশুনে নিজেদের আমানতের খেয়ানত করো না। (সূরা আনফাল (৮), আয়াত ২৭) এতে সম্বোধন করা হয়েছে 'মুমিন' বলে। অর্থাৎ খেয়ানত করা মু'মিনের কাজ হতে পারে না। আর আলোচ্য হাদীছ দ্বারা জানা গেল এটা মুনাফিকের আলামত। আমানতের খেয়ানত করা কঠিন পাপ। এক হাদীছ দ্বারা জানা যায়, আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার দ্বারা সব গুনাহ মাফ হয়, কিন্তু আমানতের খেয়ানত করার গুনাহ মাফ হয় না। কিয়ামতের দিন খেয়ানতকারীকে ডেকে বলা হবে, তোমার কাছে যে আমানত রাখা হয়েছিল তা আদায় করো। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! এটা কীভাবে সম্ভব, যখন আমরা দুনিয়া থেকে চলে এসেছি? তখন ঘোষণা করা হবে, একে জাহান্নামে নিয়ে যাও। সুতরাং এহেন কঠিন পাপ থেকে প্রত্যেক মুমিনকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. যে ব্যক্তি নিজেকে মুমিন বলে পরিচয় দেয়, তার কিছুতেই মিথ্যা বলা সাজে না। খ. আমাদেরকে অবশ্যই ওয়াদা রক্ষায় যত্নবান থাকতে হবে। গ. আমানতের খেয়ানত করা কঠিন পাপ। এর থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন