কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
৯. জিহাদের বিধানাবলী
হাদীস নং: ২৭৭১
আন্তর্জাতিক নং: ২৭৮০
৭২. যুদ্ধের সরঞ্জাম সংগ্রহের পর যদি কেউ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করতে পারে, তবে তা অন্য মুহাজিরকে দিবে।
২৭৭১. মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) ..... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আসলাম গোত্রের জনৈক যুবক বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি জিহাদে যেতে চাই, কিন্তু আমার কাছে কোন মাল-সম্পদ নেই, যা দিয়ে জিহাদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করতে পারি। তিনি বললেনঃ তুমি অমুক আনসারীর কাছে যাও, সে তো যুদ্ধে যাওয়ার জন্য সব সংগ্রহ করেছিল কিন্তু সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তুমি তাঁর কাছে গিয়ে বলবে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তোমাকে সালাম জানিয়েছে এবং তুমি তাকে এও বলবেঃ তুমি জিহাদের জন্য যে সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছ, তা আমাকে দিয়ে দাও। তখন সে (যুবক) তার কাছে যায় এবং এ কথা তাঁকে বলে। তখন সে ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে বলে, হে অমুক! যুদ্ধে গমনের জন্য তুমি যেসব জিনিস প্রস্তুত করেছ, তা এই যুবককে দিয়ে দাও এবং তা থেকে কিছুই বাকী রেখো না। আল্লাহর শপথ! তুমি এ থেকে কিছু রেখে দিবে না, তাহলে আল্লাহ্ এতে বরকত দান করবেন।
باب فِيمَا يُسْتَحَبُّ مِنْ إِنْفَادِ الزَّادِ فِي الْغَزْوِ إِذَا قَفَلَ
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، أَخْبَرَنَا ثَابِتٌ الْبُنَانِيُّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ فَتًى، مِنْ أَسْلَمَ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُرِيدُ الْجِهَادَ وَلَيْسَ لِي مَالٌ أَتَجَهَّزُ بِهِ . قَالَ " اذْهَبْ إِلَى فُلاَنٍ الأَنْصَارِيِّ فَإِنَّهُ كَانَ قَدْ تَجَهَّزَ فَمَرِضَ فَقُلْ لَهُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُقْرِئُكَ السَّلاَمَ وَقُلْ لَهُ ادْفَعْ إِلَىَّ مَا تَجَهَّزْتَ بِهِ " . فَأَتَاهُ فَقَالَ لَهُ ذَلِكَ فَقَالَ لاِمْرَأَتِهِ يَا فُلاَنَةُ ادْفَعِي لَهُ مَا جَهَّزْتِنِي بِهِ وَلاَ تَحْبِسِي مِنْهُ شَيْئًا فَوَاللَّهِ لاَ تَحْبِسِينَ مِنْهُ شَيْئًا فَيُبَارِكَ اللَّهُ فِيهِ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে আসলাম গোত্রীয় যে যুবকের কথা বলা হয়েছে তার নাম জানা যায় না। এতটুকু তো স্পষ্ট যে, তিনি একজন সাহাবী ছিলেন। অত্যন্ত গরীব হওয়ায় জিহাদে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও সাওয়ারী, অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না। তিনি তার এ সমস্যার কথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালেন। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের কাছে এমন ব্যবস্থা ছিল না, যা দ্বারা তার এ সমস্যার সমাধান করে দেবেন। তবে তিনি তাকে হতাশও করলেন না। তাকে অপর এক সাহাবীর কাছে পাঠিয়ে দিলেন, যে সাহাবী জিহাদে যেতে মনস্থ করেছিলেন এবং সেজন্য যথাযথ প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার পক্ষে আর যাওয়া সম্ভব নয়। এ সাহাবী সম্পর্কেও জানা যায় না যে, তিনি কে ছিলেন। সুতরাং তিনি তার কাছে চলে গেলেন এবং সেই সাহাবী তার স্ত্রীকে হুকুম দিলেন যেন তার যুদ্ধে যাবার সরঞ্জামাদি এই যুবককে দিয়ে দেয়। এভাবে তার সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।
ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ের হাদীছসমূহ দ্বারা এ কথাই বোঝাতে চাচ্ছিলেন যে, কারও নিজের পক্ষে যদি কোনও অভাবী বা সংকটাপন্ন লোকের সাহায্য করা সম্ভব না হয়, তবে সে যদি তাকে এমন কোনও লোকের সন্ধান দিয়ে দেয় যার পক্ষে সাহায্য করা সম্ভব, তাতেও সে নিজে সাহায্য করার ছাওয়াব পেয়ে যাবে। কথাটি এভাবেও বলা যায় যে, ওই ব্যক্তি নিজে সাহায্য করে যে ছাওয়াব পাবে, এ ব্যক্তি তার সন্ধান দেওয়ার দ্বারাও অনুরূপ ছাওয়াবের অধিকারী হবে। এ ঘটনায় তা-ই হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে ওই যুবক সাহাবীর প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিতে না পারায় তাকে এমন ব্যক্তির সন্ধান দিয়ে দিয়েছেন, যে তা করতে সক্ষম।
সাহাবায়ে কিরামের আখিরাতমুখিতায় কোনও খাদ ছিল না। তারা প্রাণভরে আখিরাতের ছাওয়াব ও মুক্তি কামনা করতেন আর সেজন্য যে-কোনও রকম সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে উন্মুখ হয়ে থাকতেন। অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে যে সাহাবী যুদ্ধে যেতে অসমর্থ হয়ে পড়েছিলেন তাকেই দেখুন না, কিভাবে তিনি সংগতিহীন ওই যুবক সাহাবীকে নিজের সবটা সরঞ্জাম দিয়ে দিলেন! চিন্তাটা ছিল এরকম যে, আমি নিজে যখন যেতে পারছি না তখন আরেকজনকে তো যাওয়ার সুযোগ করে দিই আর এভাবে জিহাদের যে অভাবনীয় ছাওয়াব, তা অর্জনের সুযোগ তাকেও করে দিই আর সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে আমিও তা অর্জন করে নিই। বলাবাহুল্য, এটা ওই সাহাবীর অবারিত উদারতারও পরিচয় বহন করে।
অসুস্থ সাহাবী নিজ স্ত্রীকে তার সরঞ্জামাদি দিয়ে দেওয়ার হুকুম করেই ক্ষান্ত হলেন না, সেইসঙ্গে এই তাগিদও করলেন যেন তা থেকে কিছুই রেখে না দেয়। মানসিকতা এরকম যে, এসব সরঞ্জাম তো আমি জিহাদে যাওয়ার জন্যই যোগাড় করেছিলাম। সুতরাং তা জিহাদের কাজেই লাগুক। কিভাবে তারা দুনিয়ার সঙ্গে দিলের বন্ধন ছিন্ন করে ফেলেছিলেন! মনের সম্পর্ক কেবলই আখিরাতের সঙ্গে। তিনি স্ত্রীকে তাগিন করে দিলেন যেন যোগাড় করা সামান থেকে কিছুই রেখে না দেয়। কারণ রাখলে তাতে বরকত হবে না। বরকত হবে না এক তো এ কারণে যে, সে রাখাটা হবে তার মালিকের ইচ্ছার বাইরে। তাছাড়া তা সংগ্রহ করা হয়েছিল তো জিহাদের জন্য, ঘরে রাখার জন্য নয়। রেখে দিলে তা একরকম দুনিয়াপ্রীতি হল। দুনিয়াপ্রীতির সঙ্গে আমাদের কী সম্পর্ক? সুতরাং সবটা দিয়ে দাও। তাতেই বরকত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজের পক্ষে কোনও অভাবগ্রস্তের অভাব মেটানো সম্ভব না হলে তাকে এমন কোনও ব্যক্তির সন্ধান দেওয়া উচিত, যার তা মেটানোর ক্ষমতা আছে।
খ. নিজের সামর্থ্য থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায়ই নেক কাজের সদিচ্ছা ও আগ্রহ থাকা চাই। তা থাকলে কোনও না কোনওভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তা করার তাওফীকও লাভ হয়ে যায়।
গ. কোনও সৎকর্মের প্রস্তুতি গ্রহণের পর বিশেষ ওযরবশত তা করা সম্ভব না হলে প্রস্তুতি হিসেবে যা-কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছিল তা এমন কোনও ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া উচিত, যে সেই কাজটি করতে পারবে।
ঘ. আল্লাহর পথে কোনওকিছু খরচ করার জন্য নির্দিষ্ট করা হলে আল্লাহপ্রেমিকের উচিত তা আল্লাহর পথেই খরচ করা, যদিও আইনত তা খরচ করা ওয়াজিব না হয়।
ঙ. অসুখ-বিসুখ ইত্যাদিকে কোনও নেককাজ থেকে বিরত থাকার পক্ষে বাহানা বানানো উচিত নয়। নিজে কাজটি করতে না পারলেও কাজটি যাতে হয়ে যায়, মনেপ্রাণে তার কামনা থাকা উচিত।
ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ের হাদীছসমূহ দ্বারা এ কথাই বোঝাতে চাচ্ছিলেন যে, কারও নিজের পক্ষে যদি কোনও অভাবী বা সংকটাপন্ন লোকের সাহায্য করা সম্ভব না হয়, তবে সে যদি তাকে এমন কোনও লোকের সন্ধান দিয়ে দেয় যার পক্ষে সাহায্য করা সম্ভব, তাতেও সে নিজে সাহায্য করার ছাওয়াব পেয়ে যাবে। কথাটি এভাবেও বলা যায় যে, ওই ব্যক্তি নিজে সাহায্য করে যে ছাওয়াব পাবে, এ ব্যক্তি তার সন্ধান দেওয়ার দ্বারাও অনুরূপ ছাওয়াবের অধিকারী হবে। এ ঘটনায় তা-ই হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে ওই যুবক সাহাবীর প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিতে না পারায় তাকে এমন ব্যক্তির সন্ধান দিয়ে দিয়েছেন, যে তা করতে সক্ষম।
সাহাবায়ে কিরামের আখিরাতমুখিতায় কোনও খাদ ছিল না। তারা প্রাণভরে আখিরাতের ছাওয়াব ও মুক্তি কামনা করতেন আর সেজন্য যে-কোনও রকম সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে উন্মুখ হয়ে থাকতেন। অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে যে সাহাবী যুদ্ধে যেতে অসমর্থ হয়ে পড়েছিলেন তাকেই দেখুন না, কিভাবে তিনি সংগতিহীন ওই যুবক সাহাবীকে নিজের সবটা সরঞ্জাম দিয়ে দিলেন! চিন্তাটা ছিল এরকম যে, আমি নিজে যখন যেতে পারছি না তখন আরেকজনকে তো যাওয়ার সুযোগ করে দিই আর এভাবে জিহাদের যে অভাবনীয় ছাওয়াব, তা অর্জনের সুযোগ তাকেও করে দিই আর সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে আমিও তা অর্জন করে নিই। বলাবাহুল্য, এটা ওই সাহাবীর অবারিত উদারতারও পরিচয় বহন করে।
অসুস্থ সাহাবী নিজ স্ত্রীকে তার সরঞ্জামাদি দিয়ে দেওয়ার হুকুম করেই ক্ষান্ত হলেন না, সেইসঙ্গে এই তাগিদও করলেন যেন তা থেকে কিছুই রেখে না দেয়। মানসিকতা এরকম যে, এসব সরঞ্জাম তো আমি জিহাদে যাওয়ার জন্যই যোগাড় করেছিলাম। সুতরাং তা জিহাদের কাজেই লাগুক। কিভাবে তারা দুনিয়ার সঙ্গে দিলের বন্ধন ছিন্ন করে ফেলেছিলেন! মনের সম্পর্ক কেবলই আখিরাতের সঙ্গে। তিনি স্ত্রীকে তাগিন করে দিলেন যেন যোগাড় করা সামান থেকে কিছুই রেখে না দেয়। কারণ রাখলে তাতে বরকত হবে না। বরকত হবে না এক তো এ কারণে যে, সে রাখাটা হবে তার মালিকের ইচ্ছার বাইরে। তাছাড়া তা সংগ্রহ করা হয়েছিল তো জিহাদের জন্য, ঘরে রাখার জন্য নয়। রেখে দিলে তা একরকম দুনিয়াপ্রীতি হল। দুনিয়াপ্রীতির সঙ্গে আমাদের কী সম্পর্ক? সুতরাং সবটা দিয়ে দাও। তাতেই বরকত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজের পক্ষে কোনও অভাবগ্রস্তের অভাব মেটানো সম্ভব না হলে তাকে এমন কোনও ব্যক্তির সন্ধান দেওয়া উচিত, যার তা মেটানোর ক্ষমতা আছে।
খ. নিজের সামর্থ্য থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায়ই নেক কাজের সদিচ্ছা ও আগ্রহ থাকা চাই। তা থাকলে কোনও না কোনওভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তা করার তাওফীকও লাভ হয়ে যায়।
গ. কোনও সৎকর্মের প্রস্তুতি গ্রহণের পর বিশেষ ওযরবশত তা করা সম্ভব না হলে প্রস্তুতি হিসেবে যা-কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছিল তা এমন কোনও ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া উচিত, যে সেই কাজটি করতে পারবে।
ঘ. আল্লাহর পথে কোনওকিছু খরচ করার জন্য নির্দিষ্ট করা হলে আল্লাহপ্রেমিকের উচিত তা আল্লাহর পথেই খরচ করা, যদিও আইনত তা খরচ করা ওয়াজিব না হয়।
ঙ. অসুখ-বিসুখ ইত্যাদিকে কোনও নেককাজ থেকে বিরত থাকার পক্ষে বাহানা বানানো উচিত নয়। নিজে কাজটি করতে না পারলেও কাজটি যাতে হয়ে যায়, মনেপ্রাণে তার কামনা থাকা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
