মা'আরিফুল হাদীস

যাকাত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩১
যাকাত অধ্যায়
যাকাত ছাড়া অন্যান্য আর্থিক দান-খয়রাত
৩১. হযরত ফাতেমা বিনতে কায়েস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: মানুষের মালের মধ্যে যাকাত ছাড়াও আরো হক রয়েছে। তারপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন:

لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡہَکُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَالۡمَغۡرِبِ وَلٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَالۡمَلٰٓئِکَۃِ وَالۡکِتٰبِ وَالنَّبِیّٖنَ ۚ وَاٰتَی الۡمَالَ عَلٰی حُبِّہٖ ذَوِی الۡقُرۡبٰی وَالۡیَتٰمٰی وَالۡمَسٰکِیۡنَ وَابۡنَ السَّبِیۡلِ ۙ وَالسَّآئِلِیۡنَ وَفِی الرِّقَابِ ۚ وَاَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَاٰتَی الزَّکٰوۃَ الخ

অর্থাৎ, প্রকৃত পুণ্য (এর মাপকাঠি) এটা নয় যে, তোমরা (ইবাদতে) পশ্চিম দিকে মুখ করবে, না পূর্ব দিকে; বরং প্রকৃত পুণ্যের পথ কেবল তাদের পথ, যারা ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি, আখেরাত দিবসের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, আল্লাহর কিতাবের প্রতি ও তাঁর নবী রাসূলদের প্রতি। আর তারা সম্পদের ভালবাসা সত্ত্বেও তা খরচ করে আত্মীয়দের উপর, ইয়াতীমদের উপর, মিসকীনদের উপর, পথিক মুসাফিরদের উপর সওয়ালকারীদের উপর এবং দাসমুক্তির কাজে। আর তারা ঠিকমত নামায আদায় করে ও যাকাত প্রদান করে। -তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারেমী
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ قَيْسٍ ، قَالَتْ : قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ فِي الْمَالِ لَحَقًّا سِوَى الزَّكَاةِ ، ثُمَّ تَلاَ لَيْسَ البِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ المَشْرِقِ وَالمَغْرِبِ الآيَةَ.....
(رواه الترمذى وابن ماجه والدارمى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীসটির উদ্দেশ্য এই যে, কেউ যেন এ ভুল বুঝাবুঝির শিকার না হয় যে, নির্ধারিত যাকাত (অর্থাৎ, বধিষ্ণু সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ) আদায় করে দেওয়ার পর মানুষের উপর আল্লাহর আর কোন হক ও দাবী অবশিষ্ট থাকে না এবং সে এ সংক্রান্ত সকল দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যায়। ব্যাপারটি আসলে এমন নয়; বরং বিশেষ বিশেষ অবস্থায় যাকাত আদায় করে দেওয়ার পরও আল্লাহর অভাবী বান্দাদের সাহায্যের দায়িত্ব বিত্তবানদের উপর থেকে যায়। যেমন, একজন ধনী মানুষ হিসাব করে সম্পূর্ণ যাকাত আদায় করে দিয়ে দিল, তারপর সে জানতে পারল যে, তার কোন প্রতিবেশী উপোস করছে অথবা অমুক আত্মীয় চরম অভাবে রয়েছে কিংবা কোন অভিজাত বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি অথবা কোন মুসাফির এমন অবস্থায় তার কাছে এসে পৌছল যে, এ মুহূর্তে তার সাহায্যের প্রয়োজন। এসব অবস্থায় এ অভাবী ও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যাবে।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এখানে এ বিষয়টি বর্ণনা করলেন এবং প্রমাণ হিসাবে সূরা বাকারার উপরের আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন। এ আয়াতে পুণ্য কর্মসমূহের তালিকায় ঈমানের পর ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ইত্যাদি শ্রেণীসমূহের আর্থিক সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। এরপর নামায কায়েম ও যাকাত আদায়ের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, এখানে ঐসব দুর্বল ও অভাবী শ্রেণীর মানুষদের আর্থিক সাহায্যের যে কথা বলা হয়েছে, এটা যাকাতের বাইরে অন্যান্য দান-খয়রাত। কেননা, যাকাতের আলোচনা এ আয়াতেই স্বতন্ত্রভাবে বর্তমান রয়েছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান