মা'আরিফুল হাদীস
যাকাত অধ্যায়
হাদীস নং: ২৩
যাকাত অধ্যায়
কোন্ পরিস্থিতিতে সওয়াল করা বৈধ আর কোন্ অবস্থায় নিষেধ
২৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি মানুষের কাছে সওয়াল করে, অথচ তার কাছে এ পরিমাণ সম্পদ আছে, যা তাকে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে ফিরিয়ে রাখে, কিয়ামতের দিন সে এ অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার সওয়াল তার মুখমন্ডলে একটি ক্ষতের আকৃতি ধারণ করবে। (মুখের ক্ষত বুঝানোর জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) 'ঘুমূশ', 'খুদূশ' নাকি 'কুদূহ' শব্দ ব্যবহার করেছেন, এ ব্যাপারে রাবীর সন্দেহ রয়েছে। তবে সবগুলো শব্দই সমার্থবোধক।) জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কি পরিমাণ মাল মানুষকে অমুখাপেক্ষী রাখে? তিনি বললেন: পঞ্চাশ দেরহাম অথবা এর সমমূল্যের সোনা। -আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, দারেমী
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَنْ سَأَلَ ، وَلَهُ مَا يُغْنِيهِ ، جَاءَتْ مَسْأَلَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي وَجْهِهِ خُمُوشٌ أَوْ خُدُوشٌ ، أَوْ كُدُوحٌ » ، قِيلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، مَا يُغْنِيهِ؟ قَالَ « خَمْسُونَ دِرْهَمًا ، أَوْ قِيمَتُهَا مِنَ الذَّهَبِ »
(رواه ابوداؤد والترمذى والنسائى وابن ماجه والدارمى)
(رواه ابوداؤد والترمذى والنسائى وابن ماجه والدارمى)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীসটির মর্ম এই যে, যার কাছে পঞ্চাশ দেরহাম অথবা এর কাছাকাছি সম্পদ বর্তমান থাকে- যা সে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে অথবা কোন ব্যবসায় লাগাতে পারে, তার জন্য সওয়াল করা গুনাহর কাজ। এমন ব্যক্তি কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার মুখমন্ডলে এ অবৈধ সওয়ালের কারণে বিশ্রী দাগ ও ক্ষত থাকবে।
এ হাদীসে যতটুকু অর্থ-সম্পদ থাকলে সওয়াল করার বৈধতা থাকে না, এর পরিমাণ পঞ্চাশ দেরহাম বলা হয়েছে। অন্য এক হাদীসে এক উকিয়্যা অর্থাৎ, চল্লিশ দেরহামের সমমূল্যের সম্পদের কথাও উল্লেখিত হয়েছে। আর একথা স্পষ্ট যে, এ দু'টির মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু আবূ দাউদ শরীফে সাহল ইবনুল হানযালিয়্যা বর্ণিত অপর এক হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: ما الغنى الذي لا تنبغي معه المسئلة (ধনী হওয়ার ঐ মাপকাঠিটি কি, যা বর্তমান থাকলে সওয়াল করা উচিত নয়?) তিনি উত্তরে বলেছিলেন: قدر ما يغديه ويعشيه এতটুকু যে, এর দ্বারা দুপুরের খানা ও রাতের খানা চলতে পারে।) এর দ্বারা জানা গেল যে, যদি কারো কাছে এক দিনের খাবারের ব্যবস্থাও থাকে, তাহলে তার জন্য সওয়াল করা বৈধ নয়।
ঐ অর্থ-বিত্ত যার ফলে যাকাত ফরয হয়, এর মাপকাঠি তো নির্ধারিত রয়েছে এবং এ সম্পর্কে অনেক হাদীসও আগেই বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ঐ পরিমাণ বিত্ত, যা বর্তমান থাকলে সওয়াল করা উচিত নয়, এর মাপকাঠি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীস ব্যাখ্যাতাগণ এ ভিন্ন ভিন্ন মাপকাঠির কয়েকটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমি অভাজনের নিকট এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এই যে, এটা বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, কোন কোন অবস্থা ও কোন কোন ব্যক্তি এমন হতে পারে যে, অল্প বিস্তর সম্পদ থাকলেও তাদের জন্য সওয়াল করার অবকাশ থাকতে পারে; কিন্তু এ সম্পদ যদি ৪০/৫০ দেরহামের কাছাকাছি হয়, তাহলে একেবারেই এর কোন অবকাশ নেই।
আর কোন কোন অবস্থা ও কোন কোন ব্যক্তি এমনও হতে পারে যে, তাদের কাছে যদি একদিনের খোরাকীও থাকে, তবুও তাদের জন্য সওয়াল করার কোন অবকাশ নেই। এর আরেকটি ব্যাখ্যা এভাবেও দেওয়া যায় যে, যেসব হাদীসে ৪০ অথবা ৫০ দেরহামকে মাপকাঠি সাব্যস্ত করা হয়েছে, সেখানে অবকাশ ও ফতওয়া হিসাবে তা বলা হয়েছে। আর যেখানে একদিনের খোরাকী থাকলেও সওয়াল করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেটা উচুস্তরের তাকওয়া ও কঠোর অনুশাসনের দিকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে।
এ হাদীসে যতটুকু অর্থ-সম্পদ থাকলে সওয়াল করার বৈধতা থাকে না, এর পরিমাণ পঞ্চাশ দেরহাম বলা হয়েছে। অন্য এক হাদীসে এক উকিয়্যা অর্থাৎ, চল্লিশ দেরহামের সমমূল্যের সম্পদের কথাও উল্লেখিত হয়েছে। আর একথা স্পষ্ট যে, এ দু'টির মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু আবূ দাউদ শরীফে সাহল ইবনুল হানযালিয়্যা বর্ণিত অপর এক হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: ما الغنى الذي لا تنبغي معه المسئلة (ধনী হওয়ার ঐ মাপকাঠিটি কি, যা বর্তমান থাকলে সওয়াল করা উচিত নয়?) তিনি উত্তরে বলেছিলেন: قدر ما يغديه ويعشيه এতটুকু যে, এর দ্বারা দুপুরের খানা ও রাতের খানা চলতে পারে।) এর দ্বারা জানা গেল যে, যদি কারো কাছে এক দিনের খাবারের ব্যবস্থাও থাকে, তাহলে তার জন্য সওয়াল করা বৈধ নয়।
ঐ অর্থ-বিত্ত যার ফলে যাকাত ফরয হয়, এর মাপকাঠি তো নির্ধারিত রয়েছে এবং এ সম্পর্কে অনেক হাদীসও আগেই বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ঐ পরিমাণ বিত্ত, যা বর্তমান থাকলে সওয়াল করা উচিত নয়, এর মাপকাঠি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীস ব্যাখ্যাতাগণ এ ভিন্ন ভিন্ন মাপকাঠির কয়েকটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমি অভাজনের নিকট এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এই যে, এটা বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, কোন কোন অবস্থা ও কোন কোন ব্যক্তি এমন হতে পারে যে, অল্প বিস্তর সম্পদ থাকলেও তাদের জন্য সওয়াল করার অবকাশ থাকতে পারে; কিন্তু এ সম্পদ যদি ৪০/৫০ দেরহামের কাছাকাছি হয়, তাহলে একেবারেই এর কোন অবকাশ নেই।
আর কোন কোন অবস্থা ও কোন কোন ব্যক্তি এমনও হতে পারে যে, তাদের কাছে যদি একদিনের খোরাকীও থাকে, তবুও তাদের জন্য সওয়াল করার কোন অবকাশ নেই। এর আরেকটি ব্যাখ্যা এভাবেও দেওয়া যায় যে, যেসব হাদীসে ৪০ অথবা ৫০ দেরহামকে মাপকাঠি সাব্যস্ত করা হয়েছে, সেখানে অবকাশ ও ফতওয়া হিসাবে তা বলা হয়েছে। আর যেখানে একদিনের খোরাকী থাকলেও সওয়াল করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেটা উচুস্তরের তাকওয়া ও কঠোর অনুশাসনের দিকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)