মা'আরিফুল হাদীস

যাকাত অধ্যায়

হাদীস নং: ২১
যাকাত অধ্যায়
মুহাদ্দিসীনে কেরাম কিতাবুয যাকাতেই ঐসব হাদীসও লিপিবদ্ধ করে থাকেন, যেগুলোতে বলা হয়েছে যে, কোন্ অবস্থায় সওয়াল করা নিষেধ এবং কোন অবস্থায় এর অনুমতি রয়েছে। তাদের এ নীতির অনুসরণেই এ মা'আরিফুল হাদীসেও ঐসব হাদীস এখানে আনা হচ্ছে।
২১. হযরত হুব্‌শী ইবনে জুনাদাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: সওয়াল করা জায়েয নয় ধনী ব্যক্তির জন্য এবং সুস্থ-সবল মানুষের জন্য। তবে এমন ব্যক্তির জন্য জায়েয, যাকে অভাব ও দারিদ্র্য মাটিতে ফেলে দিয়েছে অথবা কোন অসহনীয় ঋণের বোঝা তার উপর চেপে গিয়েছে। আর যে ব্যক্তি (অভাবের তাড়নায় নয়; বরং কেবল) সম্পদ বৃদ্ধির জন্য মানুষের কাছে হাত পাতে, কিয়ামতের দিন তার এ ভিক্ষাবৃত্তি তার মুখে একটি ক্ষত হিসাবে ফুটে উঠবে এবং এ ভিক্ষালব্ধ মাল জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর হবে, যা সে ভক্ষণ করবে। এখন যার মন চায় সে সওয়াল কম করুক আর যার মন চায় সে বেশী করে সওয়াল করুক (এবং আখেরাতে এর ফল ভোগের জন্য প্রস্তুত থাকুক)। -তিরমিযী
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ حُبْشِيِّ بْنِ جُنَادَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لاَ تَحِلُّ لِغَنِيٍّ ، وَلاَ لِذِي مِرَّةٍ سَوِيٍّ ، إِلاَّ لِذِي فَقْرٍ مُدْقِعٍ ، أَوْ غُرْمٍ مُفْظِعٍ ، وَمَنْ سَأَلَ النَّاسَ لِيُثْرِيَ بِهِ مَالَهُ ، كَانَ خُمُوشًا فِي وَجْهِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ ، وَرَضْفًا يَأْكُلُهُ مِنْ جَهَنَّمَ ، وَمَنْ شَاءَ فَلْيُقِلَّ ، وَمَنْ شَاءَ فَلْيُكْثِرْ
(رواه الترمذى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসেও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযি. বর্ণিত (১৪ নং) হাদীসের মত ধনী দ্বারা ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য, যে বর্তমানে সাহায্যের মুখাপেক্ষী ও অভাবী নয়, (যদিও সে নেসাবের মালিক ও সম্পদশালী নাও হয়।) এমন ব্যক্তির জন্য এবং ঐ সুস্থ-সবল ব্যক্তির জন্য, যে পরিশ্রম করে নিজের জীবিকা উপার্জন করতে পারে, এ হাদীসে সওয়াল করতে নিষেধ করা হয়েছে। সাধারণ নিয়ম ও মাসআলা এটাই যে, এমন ব্যক্তির জন্য কারো সামনে হাত পাতা উচিত নয়। হ্যাঁ, অভাব ও দারিদ্র্য যদি কাউকে একেবারে ধরাশায়ী করে দিয়ে থাকে আর সওয়াল ছাড়া তার অন্য কোন উপায় না থাকে অথবা কোন অর্থদণ্ড কিংবা কোন ভারী ঋণের বোঝা যদি তার উপর চেপে বসে থাকে এবং অন্যদের নিকট থেকে সাহায্য গ্রহণ ছাড়া এটা আদায় করতে না পারে, তাহলে এসব অবস্থায় তার জন্য সওয়াল করার ও সাহায্য প্রার্থনার অবকাশ রয়েছে।

হাদীসের শেষে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রয়োজন ও অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে নয়; বরং নিজের আর্থিক অবস্থা ভাল ও উন্নত করার জন্য অন্যের সামনে ভিক্ষার হাত প্রসারিত করে, তাকে কিয়ামতের দিন এ শাস্তি দেওয়া হবে যে, তার মুখমন্ডলে একটি বিশ্রী ক্ষত থাকবে। তাছাড়া ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে সে যা উপার্জন করেছিল সেটাকে জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর বানিয়ে দেওয়া হবে এবং তাকে এটা ভক্ষণ করতে বাধ্য করা হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান