মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩২৫
সলাত অধ্যায়
মৃতের গোসল ও কাফন

আল্লাহর যে বান্দা মৃত্যুবরণ করে দুনিয়া থেকে আখিরাতের পথে পাড়ি জমায়—ইসলামী শরীআত তাকে সম্মানজনকভাবে বিদায় জানানোর একটি বিশেষ পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে পবিত্র, ইবাদাতসমৃদ্ধ, সমবেদনা-পরিপূর্ণ সম্মানজনক একটি পদ্ধতি। প্রথমত মৃতকে এমনভাবে গোসল দিতে হবে যেমন জীবিত অপবিত্র মানুষ ভালভাবে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করে থাকে। এ গোসলে পবিত্রতা অর্জন ছাড়াও গোসলের বিশেষ নিয়ম-কানুনের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। গোসলের সময় পানিতে এমন বস্তু মিশানো উচিত জীবদ্দশায় মানুষ যা ব্যবহার করে, তাছাড়া কর্পূর জাতীয় সুগন্ধি পানিতে মিশানো যেতে পারে। এতে মৃতের শরীর পবিত্র হওয়ার পাশাপাশি সুগন্ধিময় হয়ে উঠবে। তারপর অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় দিয়ে কাপন পরাতে হবে। কিন্তু কোন অবস্থায় অপচয় করা যাবে না। এরপর জামা'আতের সাথে তার জানাযার সালাতের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তার জন্য দু'আ ও মাগফিরাত কামনা করতে হবে। এরপর শেষ বিদায় জানানোর উদ্দেশ্যে গোরস্থান যাওয়া উচিত। এরপর অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাকে কবরে রেখে আল্লাহর রহমতের হাতে ন্যস্ত করে আসতে হবে। এ পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী ও হিদায়াত সমৃদ্ধ নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ পাঠ করা যেতে পারে।
৩২৫. হযরত উম্মু আতিয়‍্যা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা রাসূল তনয়াকে গোসল দানকালে রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের নিকট এলেন। তিনি বললেন: তাকে তিনবার অথবা পাঁচবার কিংবা প্রয়োজন মনে করলে আরো অধিক বার বরই কচিপাতা দিয়ে পানি গরম করে গোসল দাও। সবশেষে কর্পূর মিশিয়ে দেবে। তোমাদের গোসল দেওয়া শেষ হলে আমাকে জানাবে। আমরা গোসল কার্য শেষ করে তাঁকে জানালাম। তিনি তাঁর তহবন্দ দিয়ে বললেন: এটা তাঁর শরীরের সাথে লাগিয়ে পরিয়ে দাও। অন্য বর্ণনায় আছে, তোমরা তাকে তিনবার, পাঁচবার কিংবা সাতবার-বেজোড় গোসল দাও এবং তোমরা ডানদিক থেকে এবং উযূর অঙ্গসমূহ থেকে ধোয়া শুরু করো। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، قَالَتْ : دَخَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَغْسِلُ ابْنَتَهُ ، فَقَالَ : « اغْسِلْنَهَا ثَلاَثًا ، أَوْ خَمْسًا ، أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ ، إِنْ رَأَيْتُنَّ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ ، وَاجْعَلْنَ فِي الآخِرَةِ كَافُورًا ، أَوْ شَيْئًا مِنْ كَافُورٍ فَإِذَا فَرَغْتُنَّ ، فَآذِنَّنِي » قَالَتْ : فَلَمَّا فَرَغْنَا آذَنَّاهُ ، فَأَلْقَى إِلَيْنَا حِقْوَهُ ، فَقَالَ : « أَشْعِرْنَهَا إِيَّاهُ » وَفىْ رِوَايَةٍ اغْسِلْنَهَا وِتْرًا ثَلَاثًا ، أَوْ خَمْسًا أَوْ سَبْعًا وَابْدَأْنَ بِمَيَامِنِهَا ، وَمَوَاضِعِ الوُضُوءِ مِنْهَا. (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত অনরূপ এক রিওয়ায়াত থেকে জানা যায় যে, আলোচ্য হাদীসে নবী কারীম ﷺ-এর যে কন্যাকে গোসলের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। তিনি হলেন তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা হযরত যায়নাব (রা), আবুল আ'সের সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তিনি অষ্টম হিজরীর প্রথম দিকে ইন্তিকাল করেন। যে সকল মহিলা সাহাবী তাঁর গোসলে অংশগ্রহণ করছিলেন। তাঁদের মধ্যে আলোচ্য হাদীসের রাবী উম্মু আতিয়‍্যা আনসারিয়‍্যা (রা) ছিলেন অন্যতমা। এ ধরনের খিদমত আঞ্জাম দানের ক্ষেত্রে তিনি সদা প্রস্তুত থাকতেন। মৃত মহিলাদের লাশ গোসল করানোর ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। বিশিষ্ট তাবিঈ ইবনে সীরীন (র) বলেন, আমি মৃতকে গোসল দানের পদ্ধতি তাঁর কাছেই শিখেছি।

আলোচ্য হাদীসে বরইপাতা দিয়ে পানি গরম করার বিষয় উল্লিখিত হয়েছে। কারণ এর দ্বারা সহজেই শরীরের ময়লা দূর হয়ে যায়। এই যুগে শরীর পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন করে তোলার লক্ষ্যে যেমন আমরা সাবান ব্যবহার করে থাকি, তেমনি সে যুগেও লোকেরা শরীরের ময়লা দূর করার উদ্দেশ্যে বরই পাতা দিয়ে পানি গরম করে নিত। তাই নবী কারীম ﷺ তিনবার গোসল করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রয়োজনবোধে তিনবারেরও অধিক সংখ্যার ক্ষেত্রে হওয়ার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত, কেননা বোজোড় সংখ্যা আল্লাহর কাছে পসন্দনীয়। অর্থাৎ তিন, পাঁচবার ও প্রয়োজনবোধে সাতবারও গোসল করানো যেতে পারে। শেষবারে কর্পূর মিশিয়েও গোসল দেওয়া যেতে পারে যাতে সুগন্ধি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ব্যবস্থাই মৃতের সম্মান ও মর্যাদার দিক স্পষ্ট।

রাসূলুল্লাহ ﷺ আলোচ্য হাদীসে নিজ কন্যাকে নিজের তহবন্দ দিয়ে গোসলকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তারা যেন তা তার দেহের সাথে লাগিয়ে পরান। এ পর্যায়ে আলিমগণ বলেন, আল্লাহর কোন প্রিয় মকবুল বান্দার পোশাক যদি বরকতের উদ্দেশ্যে মৃতকে পরিয়ে দেওয়া হয় তবে তা যেমন জায়িয। তেমনি উপকৃত হওয়ারও আশা করা যেতে পারে। তবে এসবের উপর ভিত্তি করে যদি আমল বাদ দিয়ে অচেতনভাবে দিন কাটায়, তবে নিঃসন্দেহে তা হবে গুমরাহী।

আলোচ্য রিওয়ায়াত দ্বারা একথা বুঝা যাচ্ছে না যে, নবী তনয়াকে কয় কাপড়ে কাফন পরানো হয়েছে। কিন্তু হাফিয ইবনে হাজার (র) জাওযাকীর সূত্রে উম্মু আতিয়্যা (রা) থেকে এটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।

فكفناها في خمسة أثواب وخمرناها كما يخمر الحي

"আমরা নবী দূহিতাকে পাঁচটি কাপড় দ্বারা কাফন পরিয়েছি "এবং জীবিতাবস্থায় যেমন তিনি ওড়না পরতেন তেমনি তাকে ওড়না পরিয়েছি।"

এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে মহিলাদের জন্য পাঁচটি কাপড় কাফনরূপে ব্যবহার করা সুন্নাতরূপে নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান