মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩৩
সলাত অধ্যায়
জুমু'আ বারের বিশেষ আমল হল দুরূদ শরীফ
২৩৩. হযরত আওস ইবনে আওস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে জুমু'আর দিন সর্বশ্রেষ্ঠ, কারণ এ দিনই আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনই তাঁর ওফাত হয়েছে। এদিনই শিঙগায় ফুৎকার ধ্বনিত হবে এবং পুন:জীবিত করার লক্ষ্যে শিঙগায় ফুৎকার দেওয়া হবে। কাজেই তোমরা এদিনে আমার প্রতি বেশি বেশি দুরূদ পাঠ করবে। তোমাদের দুরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। সাহাবা কিরাম বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে আমাদের দুরূদ কিভাবে পেশ করা হবে অথচ আপনার পবিত্র দেহ মাটিতে মিশে যাবে? তিনি বললেন, নবীদের শরীর মাটির জন্য (ফলে কবরে তাঁদের পবিত্র দেহ অক্ষত থাকে, মাটি কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা) আল্লাহ্ হারাম করে দিয়েছেন। (আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, দারিমী ও বায়হাকীর দাওয়াতুল কাবীর গ্রন্থ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَوْسِ بْنِ أَوْسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ ، وَفِيهِ قُبِضَ ، وَفِيهِ النَّفْخَةُ ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ ، فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ » قَالَ : قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَكَيْفَ تُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ؟ قَالَ يَقُولُونَ بَلِيتَ قَالَ : « إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ » (رواه ابوداؤد والنسائى وابن ماجه والدارمى والبيهقى فى الدعوات الكبير)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উপরে বর্ণিত হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর হাদীসের মত আওস ইবনে আওস সাকাফীর হাদীসে জুমু'আর দিনে সংঘটিত অসাধারণ ঘটনাসমূহের বিবরণ দিয়ে মূলতঃ জুমু'আর দিনের গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। তবে পরের হাদীসে অতিরিক্ত এতটুকু বর্ণনা করা হয়েছে যে, এদিনে বেশি বেশি দুরূদ পড়া চাই। রমাযানুল মুবারকের বিশেষ আমল যেমন কুরআন তিলাওয়াত এবং তা যেমন রমাযানের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত, হাজ্জের সফরে তালবীয়া যেমন বিশেষ আমল তদ্রুপ হাদীসের আলোকে জুমু'আর দিনের বিশেষ আমল হল দুরূদ পাঠ। তাই এ দিনে বেশি বেশি দুরূদ পাঠ করা উচিত।

ইন্তিকালের পর নবী কারীম ﷺ এর প্রতি দুরূদ পাঠ এবং হায়াতুন্নবী প্রসঙ্গ
এই হাদীসে নবী কারীম ﷺ তাঁর প্রতি অধিক দুরূদ পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, আল্লাহ্ তা'আলা উম্মাতের দুরূদ আমার কাছে পৌছে দেন এবং এ পদ্ধতি আমার ইন্তিকালের পরেও অব্যাহত থাকবে। অন্য হাদীসে এও বর্ণিত আছে যে, "নবী কারীম ﷺ এর কাছে ফিরিশতা দুরূদ পৌছিয়ে দেন।” একথা শুনবার অব্যবহিত পরেই সাহাবা কিরামের মনে এই প্রশ্ন উঠল যে, আপনার জীবদ্দশায় ফিরিশতার মাধ্যমে আমাদের দুরূদ পেশ করা হবে একথা আমাদের বোধগম্য হল, কিন্তু আপনার ইন্তিকালের পর যখন আপনাকে দাফন করা হবে এবং সাধারণ নিয়ম অনুসারে আপনার শরীর মাটিতে একাকার হয়ে যাবে, তখন আমাদের দুরূদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে? নবী কারীম ﷺ বললেন: আল্লাহর নির্দেশে নবী-রাসূলদের শরীর কবরে পূর্ববৎ অবস্থায় অটুট থাকে। মাটির স্বাভাবিক প্রভাব নবীদের দেহে কার্যকর হয় না। যেভাবে পৃথিবীতে বিশেষ ব্যবস্থাপনায়ও ঔষধের সাহায্যে মৃত্যুর পর মরদেহ অটুট রাখা হয়, ঠিক একইভাবে আল্লাহ্ তাঁর বিশেষ কুদরত ও নির্দেশে নবী-রাসূলদের তিরোধানের পর তাঁদের শরীর অটুট ও অক্ষুন্ন রাখেন এবং সেখানে তাঁদের এক বিশেষ ধরনের জীবন দান করেন (যেরূপ পৃথিবীতে থাকাকালীন সময় ছিল)। তাই ইন্তিকালের পরেও দুরূদ পৌঁছাবার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান