মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩২
সলাত অধ্যায়
উম্মাতে মুসলিমার বিশেষ প্রতীক ও সামষ্টিক সালাত জুমু'আ ও দুই ঈদের সালাত

দিন রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামা'আতের সাথে আদায় করার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া যে সকল সুন্নাত ও নফল একাকী আদায় করা হয় সে সম্পর্কে রাসূলূল্লাহ্ ﷺ-এর বাণীও আমলসমূহ ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে। এছাড়াও এমন কতিপয় সালাত রয়েছে যা সামষ্টিকভাবে আদায় করা হয় এবং তা উম্মাতের ঐক্যের বিশেষ প্রতীকরূপে স্বীকৃত। এসবের মধ্যে রয়েছে জুমু'আর সালাত যা সপ্তাহান্তে একবার আদায় করা হয় এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাত যা বছরে একবার করে আদায় করা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামা'আতের সাথে আদায় করায় যে উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে বিশাল স্থান জুড়ে রয়েছে জুমু'আর এবং দুই ঈদের সালাত। এ ছাড়া আরো কিছু রহস্য নিহিত রয়েছে যা সপ্তাহান্তে ও বছরান্তে সামষ্টিক সালাত আদায়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়। প্রথমতঃ জুমু'আর সালাতের ব্যাপারে কতিপয় হাদীস পাঠ করা যেতে পাবে। আল্লাহ্ চাহেত এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত হাদীসসমূহের উদ্দেশ্য বুঝে পাঠক এর থেকে সঠিক দিক নির্দেশনা লাভ করবেন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে কেবল এলাকাবাসী জামা'আতে অংশগ্রহণ করে। তাই সপ্তাহে একটি দিন রাখা হয়েছে যাতে পুরো শহরবাসী কিংবা মহল্লার সকল মুসলমান এক বিশেষ সালাতের জন্য এক বড় মসজিদে জমায়েত হন। আর ঐ জমায়েতের জন্য যুহরের দীর্ঘ সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং যুহরের চার রাক'আত সালাতের বিপরীতে জুমু'আর সালাত দুই রাক'আত রাখা হয়েছে। শরী'আতে জুমু'আর সালাতের বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে এবং নবীযুগ, তৎপরবর্তী সাহাবী ও তাবিঈ যুগ পেরিয়ে অধ্যাবধি কার্যকর। তা যে বিশেষ স্থান জুড়ে রয়েছে তা থেকে জানা যায় যে, শহর কিংবা বস্তিতে বিশাল আকারে এক স্থানে জুমু'আর সালাতের আয়োজন করা উচিত। হ্যাঁ তবে এরূপ বিশাল মসজিদ যদি না থাকে যাতে গোটা শহর ও বস্তি সব এলাকার লোক একত্রে সালাত আদায় করতে পারে তবে শহরে জুমু'আর জন্য আরো মসজিদ তৈরি করা যেতে পারে। তবে এদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যে, এক মহল্লায় যেন একটি জামে' মসজিদই থাকে। পক্ষান্তরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মসজিদে যদি পৃথকভাবে জুমু'আর সালাতের আয়োজন করা হয় তবে তা শরী'আত প্রবর্তিত জুমু'আর সালাতের উদ্দেশ্য পরিপন্থী কাজ হবে। বলা বাহুল্য এই জমায়েত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের দিক থেকে অফুরান উপকারিতা বয়ে আনায় দুই রাক'আত সালাতের পরিবর্তে 'খুতবা' অপরিহার্য করা হয়েছে। এসব কাজ সম্পাদনের জন্য জুমু'আর দিনকে নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ সপ্তাহের সাতদিনের মধ্যে এ দিনটি সর্বাধিক মাহাত্ম্যপূর্ণ ও বরকতময়। রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহ্ যেমন তাঁর রহমত ও সাহায্য ধন্য করার লক্ষ্যে স্বীয় বান্দার প্রতি গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন এবং বছরের একটি বিশেষ রাতে (শবে কাদরে) নাযিল করেন, তেমনি সপ্তাহের সাতদিনের মধ্যে জুমু'আর দিনে বান্দার প্রতি বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। আর তাই তো এ দিনের আল্লাহ্ তা'আলা বিরাট বিরাট গুরুত্বপূর্ণ কাজ সংঘটিত করেছেন। এই গরুত্বের দিক বিবেচনা করেই সামষ্টিকভাবে সালাত আদায়ের লক্ষ্য জুমু'আর দিনকে ধার্য করা হয়েছে। তাই এ সালাতে অংশগ্রহণের ব্যাপারেও জোর তাকিদ দেয়া হয়েছে এবং এ সালাত আদায়ের লক্ষ্যে গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে সুগন্ধি লাগিয়ে মসজিদে যাবার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। যাতে সাপ্তাহিক এই সালাতে মুসলমানরা দু'আ ও যিকর দ্বারা আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে মনোনিবেশ করে আভ্যন্তরীণ ও আধ্যাত্মিক বরকত লাভের পাশাপাশি বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে পারে এবং এই জমায়েতকে যেন ফিরিশতাদের জমায়েতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তোলা যায়। এই ভূমিকার পর জুমু'আ বার এবং জুমু'আর সালাত সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীসমূহ পাঠ করা যেতে পারে।
২৩২. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: সূর্য উদিত হয় এমন দিনগুলোর (সপ্তাহের সাত দিনের) মধ্যে জুমু'আর দিন হল সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। সেদিনে আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়, তাঁকে ঐদিনই তাঁকে তা থেকে বের (করে দুনিয়ায় পাঠান হয় সেখানে তাঁর বংশধরের আবাদ) করা হয়। আর কিয়ামতও সংঘটিত হবে জুমু'আর দিন। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ ، وَفِيهِ أُدْخِلَ الْجَنَّةَ ، وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهَا ، وَلَا تَقُومُ السَّاعَةُ إِلَّا فِي يَوْمِ الْجُمُعَةِ » (رواه مسلم)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান