মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ১৬৬
সলাত অধ্যায়
দুরূদ পাঠের হিকমত
১৬৬. হযরত আবু হুমায়দ সাঈদী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবা কিরাম (রা) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার প্রতি কিভাবে দুরূদ পাঠ করব? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ তোমরা বল-

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى ‌أَزْوَاجِهِ ‌وَذُرِّيَّتِهِ، ‌كَمَا ‌صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

অর্থাৎ হে আল্লাহ্! তুমি মুহাম্মদ ﷺ তাঁর সহধর্মিনীগণ ও বংশধরগণের প্রতি রহমত বর্ষণ কর যেভাবে তুমি রহমত বর্ষণ করেছ ইব্রাহীম (আ) এর পরিবার-পরিজনের প্রতি। তুমি বরকত নাযিল কর মুহাম্মদ ﷺ ও তাঁর সহধর্মিনীগণ ও বংশধরগণের প্রতি যেভাবে তুমি বরকত নাযিল করেছ ইব্রাহীম (আ) এর পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও মর্যাদাবান।" (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِىْ حُمَيْدٍ السَّاعِدِيُّ قَالَ : قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " قُولُوا : اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ".
(رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আলোচ্য হাদীসে দুরূদ শরীফের শব্দগুচ্ছ উপরে বর্ণিত হাদীসের শব্দমালা থেকে কিছুটা ভিন্ন মনে হয়। কিন্তু অর্থের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বিশেষজ্ঞ আলিমগণ এভাবে সামঞ্জস্য বিধান করেন যে, এ দু'টির যে কোন একটি সালাতে পাঠ করা যেতে পারে। কিন্তু প্রথমোক্ত দুরূদের উপরই বেশিরভাগ আমল চলে আসছে।

আলোচ্য হাদীসে 'আ-ল' (ال) এর বিপরীতে " أزواجه وذريته " তাঁর স্ত্রীগণ ও সন্তান-সন্ততি এসেছে। এ থেকে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, প্রথমোক্ত হাদীসে যে 'আল' (ال) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা দ্বারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পূতঃ পবিত্র সহধর্মিনীগণ ও সন্তান-সন্ততিগণকেই বুঝানো হয়েছে। দুরূদ ও সালামে তাদের সংশ্লিষ্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁদেরকে বিপুল সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন। বলা বাহুল্য, এ হচ্ছে তাঁদের দুর্লভ সৌভাগ্য! তবে এর দ্বারা একথা বুঝা সমীচীন নয় যে, তাঁরা সকল উম্মাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। একথা এভাবে বুঝে নেয়া যায় যে, কোন কোন অনুরাগী ভক্ত যখন তাঁর সম্মানিত বুযুর্গের প্রতি কোন বিশেষ উপহার পাঠায় তখন তার লক্ষ্য উক্ত বুবুর্গ ও পরিবারের সদস্যরাই হয়ে থাকে। উক্ত উপহার সামগ্রী সে বুযুর্গ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করুন এটাই সে কামনা করে। যদিও পরিবারের বাইরে অনেকেই তাঁদের চাইতে উত্তম লোকও থেকে থাকেন। সুতরাং বলা যায়, দুরূদ ও সালাম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি অগাধ ভালবাসার নযরানা স্বরূপ পেশ করা হয়। এটাকে প্রকৃতিগত ভালবাসার নিয়মের দৃষ্টিতেই দেখা উচিত। এর উপর ভিত্তি করে উত্তম-অধমের কোন বিচার করা রুচিসম্মত নয়।

সালাতে দুরূদ শরীফের স্থান ও তার হিকমত
একথা সর্বজনবিদিত যে, দুরূদ শরীফ সালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর পাঠ করা হয়। আর এটাই এর জন্য উপযুক্ত স্থান আল্লাহর বান্দাগণ রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রদর্শিত শিক্ষা লাভের মাধ্যমেই ঈমান আনার সুযোগ লাভকরেছে। আল্লাহকে জানা এবং সালাতে তাঁর মহান দরবারে উপস্থিতি, তাসবীহ-তাহলীল পাঠ এবং মুনাজাত করার মধ্য দিয়ে এক ধরনের মি'রাজ নসীব হয় আর শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পাঠের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। কাজেই আল্লাহর গুণগান থেকে অবসর গ্রহণের পূর্বে, নিজের জন্য কিছু প্রার্থনার আগে মুসল্লী নবী কারীম ﷺ-এর অনুগ্রহ অনুভব করে, তাঁর প্রদর্শিত পথের কথা স্মরণ করে তাঁর জন্য আল্লাহর মহান দরবারে দু'আ করে। তার ও তাঁর পূতঃপবিত্র স্ত্রীগণের ও সন্তান-সন্ততির জন্য নিজের সর্বোত্তম সম্বল দুরূদের মাধ্যমে দু'আ করে। এর চাইতে উত্তমরূপে তাঁর অনুগ্রহ স্মরণের কোন উপযুক্ত প্রক্রিয়া হতে পারে না। এজন্যেই রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবা কিরামকে দুরূদ শরীফের এহেন শব্দগুচ্ছ শিক্ষা দিয়েছেন।

এখানে দুরূদ শরীফের বর্ণনা যেহেতু সালাত সম্পর্কীয় আলোচনার এক পর্যায়ে এসেছে তাই দু'টি হাদীস বর্ণনাই আমি যথেষ্ট মনে করছি। এ ছাড়া এ ধারাবাহিকতায় যে সব হাদীস দুরূদ শরীফের ফযীলাতের সাথে সংশ্লিষ্ট কিতাব সমূহে বর্ণিত আছে ইনশাআল্লাহ তা কিতাবুদ দাওয়াতে সবিস্তার আলোচনা করব। পূর্বোল্লিখিত দুরূদে ইব্রাহিমী ব্যতীত নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত 'সালাত ও সালাম' সম্পর্কীয় হাদীস ইনশাআল্লাহ্ হযরত আবদুল্লাহ্ বরাতে যথাস্থানে আলোচনা করব।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান