মা'আরিফুল হাদীস
সলাত অধ্যায়
হাদীস নং: ১৬৫
সলাত অধ্যায়
দুরূদ পাঠের হিকমত
বিশ্ব মানবতা বিশেষত যারা কোন নবী-রাসূল প্রদর্শিত পথ লাভ করে ঈমান গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেছে। আল্লাহর পর তাদের উপর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ নবী-রাসূলগণের। উম্মাতে মুহাম্মাদী ঈমান নামক অমূল্য সম্পদ লাভ করেছে, আল্লাহর সর্বশেষে নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ-এর মাধ্যমে। এজন্যই এই উম্মাত আল্লাহর পর সবচেয়ে বেশি ঋণী হযরত মুহাম্মদ ﷺ-এর কাছে। আল্লাহ্ তা'আলা যেহেতু বিশ্বের মালিক ও পালনকর্তা, তাই তিনি গোটা সৃষ্টি লোকের ইবাদত ও তাসবীহ্-তাহলীল পাওয়ার অধিকারী। একইভাবে নবী-রাসূলগণও তাঁদের উম্মাতের পক্ষ থেকে দুরূদ ও সালাম পাওয়ার অধিকারী। অর্থাৎ তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে তাঁর মর্যাদা সমুন্নত করার দু'আ করা উচিত। দুরূদ ও সালাম প্রেরণের এটাই মূলকথা। প্রকৃতপক্ষে এর দ্বারা আল্লাহর মহান দরবারে এসব মহান অনুগ্রহণকারীর প্রতি মহব্বতের হাদিয়া, শুক্রিয়া আদায় ও নযরানা নামের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। নতুবা আমাদের দু'আ তাঁদের কী প্রয়োজন? বাদশাহের জন্য ফকীরের হাদীয়া-তোহফার কী দরকার?
তথাপিও নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ্ আমাদের হাদীয়া তাঁর কাছে পৌঁছে দেন এবং আমাদের দু'আও প্রার্থনা অনুযায়ী তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা আরো সমুন্নত করেন। আমাদের সবচেয়ে বড় উপকার হল। এর ফলে তাঁর সাথে আমাদের ঈমানী বন্ধন সুদৃঢ় ও সুসংহত হয়। এতদ্ব্যতীত একবার দুরূদ পাঠ করা হলে কমপক্ষে আল্লাহর দশটি রহমত লাভ করা যায়। এ-ই হল মূলতঃ দুরূদ ও সালামের অন্তর্নিহিত রহস্য ও এর উপকারিতা।
দুরূদ ও সালামের ফলে শিরক সমূলে উৎপাটিত হয়ে যায়
দুরূদ ও সালামের একটি বিশেষ হিম্মত এও রয়েছে যে, এর দ্বারা শিরক সমূলে উৎপাটিত হয়ে যায়। আল্লাহ্ তা'আলার পর সবচেয়ে মর্যাদাবান ও সম্মানিত হচ্ছেন আম্বিয়া কিরাম (আ)। তাঁদের উপরই যখন দুরূদ ও সালাম পাঠের নির্দেশ রয়েছে তাই এথেকে জানা যায় যে, তিনিও নিরাপত্তা ও রহমত প্রাপ্তির মহান মর্যাদার অধিকারী যে, তাঁদের জন্য শান্তি-নিরাপত্তা ও রহমতের দু'আ করা হয়। রহমত ও নিরাপত্তার চাবিকাঠি যেহেতু তাঁদের হাতের মুঠোয় নিবদ্ধ নয়, তাই একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, তা অন্য কোন সৃষ্টির হাতে থাকতে পারে না। কেননা বিশ্বে তাঁদের মর্যাদা সর্বাপেক্ষা বেশি ভাল-মন্দ ব্যতীত অন্য কারো মুঠোয় নিবদ্ধ বলে মনে করাই হল শিরকের ভিত্তি। এই হুকুমের মাধ্যম আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে নবী ও রাসূলগণের প্রতি দুরূদ ও সালাম প্রেরণকারী করে দিয়েছেন। আর যে ব্যক্তি নবী-রাসূলগণের জন্য দু'আ করে, সে কেমন করে সৃষ্টি লোকের মধ্যে কারো ইবাদত করতে পারে?
আল-কুরআনে দুরূদ ও সালামের নির্দেশ
আল্লাহ তা'আলা সূরা আহযাবে অত্যন্ত চমৎকারভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দুরূদ ও সালাম প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
﴿إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا﴾
আল্লাহ্ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন, হে মুসলিমগণ! তোমারাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।" (৩৩, সূরা আহযাব: ৫৬)
এ আয়াতে নবী কারীম ﷺ-এর প্রতি যে দুরূদ ও সালামের নির্দেশ এসেছে। তাতে কিন্তু সালাত কিংবা সালাতবিহীন অবস্থার উল্লেখ নেই, যেমনিভাবে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর সপ্রশংস গুণগানের বিষয় নির্দেশ এসেছে। এতে সালাতরত অবস্থায় কিংবা সালাতবিহীন অবস্থা কোনটারই উল্লেখ নেই। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর নবুওয়্যাতের জ্যোতি দ্বারা যেমন আল্লাহর উদ্দেশ্য তাসবীহ্-তাহলীলের স্থান সালাত বুঝেছেন (যেমন পূর্বে উল্লিখিত এক হাদীসের এক স্থানে বলা হয়েছে فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمُ ও سَبِِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى আয়াত দু'টি অবতীর্ণ হল, তখন থেকে রাসূলুল্লাহ ﷺ রুকৃতে سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمُ এবং সেজদায় سُبْحَانَ رَبِِّيَ الْأَعْلَى পাঠের নির্দেশ দেন)
অধমের মতে, যখন সূরা আহযাবের صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيمًا আয়াত অবতীর্ণ হল তখন সম্ভবতঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবীদেরকে সালাতের শেষ বৈঠকে দুরূদ পাঠের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে কোন রিওয়ায়াত অধমের চোখে পড়েনি। যার ভিত্তিতে আমার এ ধারণা, পরবর্তী হাদীস প্রসঙ্গে তা আলোচনা করব। এবার হাদীস পাঠ করা যাক।
বিশ্ব মানবতা বিশেষত যারা কোন নবী-রাসূল প্রদর্শিত পথ লাভ করে ঈমান গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেছে। আল্লাহর পর তাদের উপর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ নবী-রাসূলগণের। উম্মাতে মুহাম্মাদী ঈমান নামক অমূল্য সম্পদ লাভ করেছে, আল্লাহর সর্বশেষে নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ-এর মাধ্যমে। এজন্যই এই উম্মাত আল্লাহর পর সবচেয়ে বেশি ঋণী হযরত মুহাম্মদ ﷺ-এর কাছে। আল্লাহ্ তা'আলা যেহেতু বিশ্বের মালিক ও পালনকর্তা, তাই তিনি গোটা সৃষ্টি লোকের ইবাদত ও তাসবীহ্-তাহলীল পাওয়ার অধিকারী। একইভাবে নবী-রাসূলগণও তাঁদের উম্মাতের পক্ষ থেকে দুরূদ ও সালাম পাওয়ার অধিকারী। অর্থাৎ তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে তাঁর মর্যাদা সমুন্নত করার দু'আ করা উচিত। দুরূদ ও সালাম প্রেরণের এটাই মূলকথা। প্রকৃতপক্ষে এর দ্বারা আল্লাহর মহান দরবারে এসব মহান অনুগ্রহণকারীর প্রতি মহব্বতের হাদিয়া, শুক্রিয়া আদায় ও নযরানা নামের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। নতুবা আমাদের দু'আ তাঁদের কী প্রয়োজন? বাদশাহের জন্য ফকীরের হাদীয়া-তোহফার কী দরকার?
তথাপিও নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ্ আমাদের হাদীয়া তাঁর কাছে পৌঁছে দেন এবং আমাদের দু'আও প্রার্থনা অনুযায়ী তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা আরো সমুন্নত করেন। আমাদের সবচেয়ে বড় উপকার হল। এর ফলে তাঁর সাথে আমাদের ঈমানী বন্ধন সুদৃঢ় ও সুসংহত হয়। এতদ্ব্যতীত একবার দুরূদ পাঠ করা হলে কমপক্ষে আল্লাহর দশটি রহমত লাভ করা যায়। এ-ই হল মূলতঃ দুরূদ ও সালামের অন্তর্নিহিত রহস্য ও এর উপকারিতা।
দুরূদ ও সালামের ফলে শিরক সমূলে উৎপাটিত হয়ে যায়
দুরূদ ও সালামের একটি বিশেষ হিম্মত এও রয়েছে যে, এর দ্বারা শিরক সমূলে উৎপাটিত হয়ে যায়। আল্লাহ্ তা'আলার পর সবচেয়ে মর্যাদাবান ও সম্মানিত হচ্ছেন আম্বিয়া কিরাম (আ)। তাঁদের উপরই যখন দুরূদ ও সালাম পাঠের নির্দেশ রয়েছে তাই এথেকে জানা যায় যে, তিনিও নিরাপত্তা ও রহমত প্রাপ্তির মহান মর্যাদার অধিকারী যে, তাঁদের জন্য শান্তি-নিরাপত্তা ও রহমতের দু'আ করা হয়। রহমত ও নিরাপত্তার চাবিকাঠি যেহেতু তাঁদের হাতের মুঠোয় নিবদ্ধ নয়, তাই একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, তা অন্য কোন সৃষ্টির হাতে থাকতে পারে না। কেননা বিশ্বে তাঁদের মর্যাদা সর্বাপেক্ষা বেশি ভাল-মন্দ ব্যতীত অন্য কারো মুঠোয় নিবদ্ধ বলে মনে করাই হল শিরকের ভিত্তি। এই হুকুমের মাধ্যম আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে নবী ও রাসূলগণের প্রতি দুরূদ ও সালাম প্রেরণকারী করে দিয়েছেন। আর যে ব্যক্তি নবী-রাসূলগণের জন্য দু'আ করে, সে কেমন করে সৃষ্টি লোকের মধ্যে কারো ইবাদত করতে পারে?
আল-কুরআনে দুরূদ ও সালামের নির্দেশ
আল্লাহ তা'আলা সূরা আহযাবে অত্যন্ত চমৎকারভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দুরূদ ও সালাম প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
﴿إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا﴾
আল্লাহ্ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন, হে মুসলিমগণ! তোমারাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।" (৩৩, সূরা আহযাব: ৫৬)
এ আয়াতে নবী কারীম ﷺ-এর প্রতি যে দুরূদ ও সালামের নির্দেশ এসেছে। তাতে কিন্তু সালাত কিংবা সালাতবিহীন অবস্থার উল্লেখ নেই, যেমনিভাবে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর সপ্রশংস গুণগানের বিষয় নির্দেশ এসেছে। এতে সালাতরত অবস্থায় কিংবা সালাতবিহীন অবস্থা কোনটারই উল্লেখ নেই। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর নবুওয়্যাতের জ্যোতি দ্বারা যেমন আল্লাহর উদ্দেশ্য তাসবীহ্-তাহলীলের স্থান সালাত বুঝেছেন (যেমন পূর্বে উল্লিখিত এক হাদীসের এক স্থানে বলা হয়েছে فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمُ ও سَبِِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى আয়াত দু'টি অবতীর্ণ হল, তখন থেকে রাসূলুল্লাহ ﷺ রুকৃতে سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمُ এবং সেজদায় سُبْحَانَ رَبِِّيَ الْأَعْلَى পাঠের নির্দেশ দেন)
অধমের মতে, যখন সূরা আহযাবের صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيمًا আয়াত অবতীর্ণ হল তখন সম্ভবতঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবীদেরকে সালাতের শেষ বৈঠকে দুরূদ পাঠের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে কোন রিওয়ায়াত অধমের চোখে পড়েনি। যার ভিত্তিতে আমার এ ধারণা, পরবর্তী হাদীস প্রসঙ্গে তা আলোচনা করব। এবার হাদীস পাঠ করা যাক।
১৬৫. হযরত কা'ব ইবনে উজরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে আপনার প্রতি দুরূদ পাঠ করব? আপনার প্রতি কিভাবে সালাম দেব তা আপনি ইতোপূর্বে (আল্লাহর তরফ থেকে আত্তাহিয়্যাতু শিক্ষা দিয়েছেন) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বললেন: তোমরা বলবে-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
"হে আল্লাহ্! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেভাবে ইব্রাহীম (আ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। (হে আল্লাহ্) তুমি বরকত নাযিল কর মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবার পরিজনের উপর, যেভাবে তুমি বরকত নাযিল করেছ ইব্রাহীম (আ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।" (বুখারী ও মুসলিম)
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
"হে আল্লাহ্! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেভাবে ইব্রাহীম (আ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। (হে আল্লাহ্) তুমি বরকত নাযিল কর মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবার পরিজনের উপর, যেভাবে তুমি বরকত নাযিল করেছ ইব্রাহীম (আ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।" (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ سَأَلْنَا رَسُولَ اللَّهِ ، فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ الصَّلاَةُ عَلَيْكُمْ اَهْلَ الْبَيْتِ فَاِن اللهَ قَدْ عَلَّمْنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكَ؟ فَقَالَ : " قُولُوا : اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ".
(رواه البخارى ومسلم)
(رواه البخارى ومسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
পূর্বে উল্লিখিত সূরা আহযাবে যেমন সালাত এবং সালাকের বাইরে কোন অবস্থার উল্লেখ না করেই দুরূদ পাঠের কথা বলা হয়েছে, তেমনি হযরত কা'ব ইবনে উজরা (রা.) বর্ণিত হাদীসেও সময়ের কোন উল্লেখ নেই। তবে একাধিক সাহাবী, বিশেষত হযরত আবূ মাসউদ আনসারী (রা) থেকে প্রায় অনুরূপ বিষয়বস্তু সম্বলিত একটি হাদীস বর্ণিত আছে। তার কোন কোন বর্ণনায় হাদীসের প্রশ্নাকারে রয়েছে: كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ إِذَا نَحْنُ صَلَّيْنَا عَلَيْكَ فِي صَلَواتِنَا "আমরা যখন সালাতরত থাকি তখন আপনার প্রতি কিভাবে দুরূদ পাঠ করব?'
(আবূ মাসউদ আনসারী (রা.) বর্ণিত হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তাতে نحن صلينا عَلَيْكَ فِي صَلواتنا শব্দগুচ্ছ নেই। এই শব্দগুচ্ছের সাথে আরো বাড়িয়ে এই হাদীসটি ইবনে খুযায়মা, ইবনে হিববান, হাকিম ও অন্যান্যগণ বর্ণনা করেছেন। ইমাম নববীকৃত শারহে মুসলিম, পৃ. ১৭৫; ফাতহুল বারী, তাফসীর অধ্যায়-সূরা আহযাব, পৃ ৩০৫, ১৯শ পারা।)
এ বর্ণনা থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, কিভাবে সালাতে দুরূদ পাঠ করা যায় সে সম্পর্কেই সাহাবীর প্রশ্ন ছিল। সম্ভবত একথা তার ভালভাবেই জানা ছিল যে, দুরূদের স্থান সালাতেই।
এছাড়া ইমাম হাকিম (র.) মুস্তাদরাকে শক্তিশালী সনদে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, يَتَشَهَِّدُ الرَّجُلُ ثُمَّ يُصَلِّىْ عَلَى النَّبِيِّ ثُمَّ يَدْعُوا لِنَفْسِهِ মুসল্লী যেন শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পাঠ করে, এরপর নবী কারীম ﷺ এর উপর দুরূদ পাঠ করে, এরপর নিজের জন্য দু'আ করে।
(ফাতহুল বারী, দাওয়াত অধ্যায়: অনুচ্ছেদ: বাবুস্ সালাত আলান নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, পৃ. ৫৫, ২৬- পারা।)
স্পষ্টতই হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা.) এ বাণী নবী কারীম ﷺ থেকে শুনেই প্রদান করেছেন। তিনি নিজের পক্ষ থেকে কে কিভাবে বলতে পারেন যে, তাশাহহুদের পর সালাতে দুরূদ পাঠ করা হবে?
মোটকথা এ বর্ণনাসমূহ সামনে রাখলে একথা পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, সূরা আহযাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উপর যে দুরূদ পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে সাহাবা কিরাম জানতেন যে, তা পাঠ করার স্থান সালাত এবং তা পঠিত হবে সালাতের শেষ বৈঠকে। এর পরই তারা তাঁর প্রতি কিভাবে ও কোন শব্দ দিয়ে দুরূদ পাঠ করবেন তা জানতে চান। এর জবাবে তিনি তাদের দুরূদে ইব্রাহিমী শিক্ষা দেন যা আমরা সালাতে পাঠ করে থাকি।
দুরূদ শরীফের 'আ-ল' (ال) শব্দের তাৎপর্য
দুরূদ শরীফে চারবার 'আল' (ال) শব্দ এসেছে। আমরা এর অর্থ করে থাকি পরিবার-পরিজন। আরবী ভাষার বিশেষত কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে 'আল' (ال) বলা হয় তাদের যারা তার সাথে পুরোপুরি সংশ্লিষ্ট ও সম্পৃক্ত, এ সম্পর্ক বংশগত হোক, কি অন্য আত্মীয়তার সম্পর্ক হোক (যেমন স্ত্রী ও সন্তানাদি) বন্ধুত্ব, সাহচর্য আনুগত্য১ ইত্যাদি কারণে হোক। তাই আভিধানিক অর্থ হিসেবে 'আল' (ال) এর উভয় অর্থই হতে পারে। কিন্তু পরে আবু হুমায়দ সাঈদী (রা.) বর্ণিত যে, হাদীসের উল্লেখ করা হচ্ছে তা থেকে জানা যাবে যে, এখানে 'আল' (ال) দ্বারা নবী কারীম ﷺএর পরিবার পরিজন অর্থাৎ তাঁর পূতঃ পবিত্র স্ত্রীগণ তাঁর ঔরষজাত সন্তান-সন্ততি বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা সর্বজ্ঞ।
১. টিকা: ইমাম রাগিব ইসফাহানী (র.) মুফরাদাতুল কুরআনে লিখেছেন-
ويستعمل فيمن يختص بالإنسان اختصاصا ذاتيا إما بقرابة قريبة أو بموالاة قال عز وجل (وآل إِبْرَاهِم وآل عمران) وَقَالَ أَدْخِلُوا الى فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ
(আবূ মাসউদ আনসারী (রা.) বর্ণিত হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তাতে نحن صلينا عَلَيْكَ فِي صَلواتنا শব্দগুচ্ছ নেই। এই শব্দগুচ্ছের সাথে আরো বাড়িয়ে এই হাদীসটি ইবনে খুযায়মা, ইবনে হিববান, হাকিম ও অন্যান্যগণ বর্ণনা করেছেন। ইমাম নববীকৃত শারহে মুসলিম, পৃ. ১৭৫; ফাতহুল বারী, তাফসীর অধ্যায়-সূরা আহযাব, পৃ ৩০৫, ১৯শ পারা।)
এ বর্ণনা থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, কিভাবে সালাতে দুরূদ পাঠ করা যায় সে সম্পর্কেই সাহাবীর প্রশ্ন ছিল। সম্ভবত একথা তার ভালভাবেই জানা ছিল যে, দুরূদের স্থান সালাতেই।
এছাড়া ইমাম হাকিম (র.) মুস্তাদরাকে শক্তিশালী সনদে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, يَتَشَهَِّدُ الرَّجُلُ ثُمَّ يُصَلِّىْ عَلَى النَّبِيِّ ثُمَّ يَدْعُوا لِنَفْسِهِ মুসল্লী যেন শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পাঠ করে, এরপর নবী কারীম ﷺ এর উপর দুরূদ পাঠ করে, এরপর নিজের জন্য দু'আ করে।
(ফাতহুল বারী, দাওয়াত অধ্যায়: অনুচ্ছেদ: বাবুস্ সালাত আলান নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, পৃ. ৫৫, ২৬- পারা।)
স্পষ্টতই হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা.) এ বাণী নবী কারীম ﷺ থেকে শুনেই প্রদান করেছেন। তিনি নিজের পক্ষ থেকে কে কিভাবে বলতে পারেন যে, তাশাহহুদের পর সালাতে দুরূদ পাঠ করা হবে?
মোটকথা এ বর্ণনাসমূহ সামনে রাখলে একথা পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, সূরা আহযাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উপর যে দুরূদ পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে সাহাবা কিরাম জানতেন যে, তা পাঠ করার স্থান সালাত এবং তা পঠিত হবে সালাতের শেষ বৈঠকে। এর পরই তারা তাঁর প্রতি কিভাবে ও কোন শব্দ দিয়ে দুরূদ পাঠ করবেন তা জানতে চান। এর জবাবে তিনি তাদের দুরূদে ইব্রাহিমী শিক্ষা দেন যা আমরা সালাতে পাঠ করে থাকি।
দুরূদ শরীফের 'আ-ল' (ال) শব্দের তাৎপর্য
দুরূদ শরীফে চারবার 'আল' (ال) শব্দ এসেছে। আমরা এর অর্থ করে থাকি পরিবার-পরিজন। আরবী ভাষার বিশেষত কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে 'আল' (ال) বলা হয় তাদের যারা তার সাথে পুরোপুরি সংশ্লিষ্ট ও সম্পৃক্ত, এ সম্পর্ক বংশগত হোক, কি অন্য আত্মীয়তার সম্পর্ক হোক (যেমন স্ত্রী ও সন্তানাদি) বন্ধুত্ব, সাহচর্য আনুগত্য১ ইত্যাদি কারণে হোক। তাই আভিধানিক অর্থ হিসেবে 'আল' (ال) এর উভয় অর্থই হতে পারে। কিন্তু পরে আবু হুমায়দ সাঈদী (রা.) বর্ণিত যে, হাদীসের উল্লেখ করা হচ্ছে তা থেকে জানা যাবে যে, এখানে 'আল' (ال) দ্বারা নবী কারীম ﷺএর পরিবার পরিজন অর্থাৎ তাঁর পূতঃ পবিত্র স্ত্রীগণ তাঁর ঔরষজাত সন্তান-সন্ততি বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা সর্বজ্ঞ।
১. টিকা: ইমাম রাগিব ইসফাহানী (র.) মুফরাদাতুল কুরআনে লিখেছেন-
ويستعمل فيمن يختص بالإنسان اختصاصا ذاتيا إما بقرابة قريبة أو بموالاة قال عز وجل (وآل إِبْرَاهِم وآل عمران) وَقَالَ أَدْخِلُوا الى فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)