মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ২১৪
আখলাক অধ্যায়
ওয়াদা পূরণ ও ওয়াদা ভঙ্গ করা

প্রতিজ্ঞা ও ওয়াদা করে তা পূরণ করা আসলে সত্যবাদিতারই একটি ব্যবহারিক রূপ, আর ওয়াদা ভঙ্গ করা মিথ্যার একটি বাস্তব প্রতিফলন। এ জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর নৈতিক শিক্ষায় ওয়াদাভঙ্গ থেকে বেঁচে থাকার এবং সর্বদা ওয়াদা পূরণ করার ব্যাপারেও কঠোর তাকীদ দিয়েছেন।

মাত্র কয়েক পৃষ্ঠা পূর্বে ঐ হাদীস অতিক্রান্ত হয়েছে, যেখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ কয়েকটি উত্তম চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে বলেছেন: "যে ব্যক্তি এ বিষয়গুলোর সঠিক অনুসরণের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিচ্ছি।" এগুলোর মধ্যে তিনি ওয়াদা পূরণের বিষয়টিও উল্লেখ করেছিলেন।

কিতাবুল ঈমানে বায়হাকীর বরাতে হযরত আনাস (রাঃ)-এর ঐ হাদীস উল্লিখিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রতিজ্ঞা পালন করে না, দ্বীনের মধ্যে তার কোন অংশ নেই।
এখানে এ ধারার আরো কিছু হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে:

মুনাফিকের পরিচয়
২১৪. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখলে তার খিয়ানত করে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ : إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ " (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই হাদীসে তিনটি ভয়ানক অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে মুলাকাত করার আশা পোষণ করে, সে কখনো এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করে নিজেকে অপরাধীর তালিকাভুক্ত করতে পারে না। মু'মিন ব্যক্তি কখনো মিথ্যা বলতে পারেন না, ওয়াদা ভঙ্গ করতে পারেন না এবং আমানতের খিয়ানতও করতে পারেন না। এ ধরনের মন্দ আমলের অভ্যাস একমাত্র মুনাফিকদের হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, মিথ্যা ওয়াদা করে এবং আখিরাতের হিসাব-নিকাশকে ভয় করে না, সে অনায়াসে আল্লাহর বান্দাদের সাথে মিথ্যা বলতে পারে, তাদের আমানত বিনষ্ট করতে পারে এবং তাদের সাথে ওয়াদা করে ওয়াদা ভঙ্গ করতে পারে।

যদি কোন মুসলমান আকীদার দিক থেকে মুনাফিক না হয়, কিন্তু এ তিনটি দোষে দুষ্ট হয়, তাহলে তাকে মুনাফিকের আচরণবিশিষ্ট ব্যক্তি বলতে হবে এবং তার আমলনামায় তার মন্দ আমলের জন্য গুনাহ লিখা হবে। তওবা ও ইস্তিগফার না করলে এ ধরনের ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। কিন্তু আকীদাগত মুনাফিকের সাথে এ ধরনের বান্দার পার্থক্য রয়েছে। শাস্তি ভোগ করার পর আচরণগত মুনাফিক কোন এক পর্যায়ে আল্লাহ চাইলে জাহান্নাম থেকে রেহাই পেতে পারে। কিন্তু আকীদাগত মুনাফিক চিরদিনের জন্য জাহান্নামবাসী হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান