মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ১৯৪
আখলাক অধ্যায়
সততা ও আমানতদারী এবং মিথ্যা ও খিয়ানত প্রসঙ্গ

রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের শিক্ষা ও আদর্শে যেসব সুন্দর চরিত্র ও সদগুণসমূহের উপর সবিশেষ জোর দিয়েছেন এবং যেগুলোকে ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ সাব্যস্ত করেছেন, এগুলোর মধ্যে সত্যবাদিতা ও আমানতদারীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের এ হাদীসটি "কিতাবুল ঈমানে" উল্লেখ করে আসা হয়েছে যে, মিথ্যা বলা, আমানতে খেয়ানত করা এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা মুনাফেকীর আলামতসমূহের মধ্যে অন্যতম এবং যার মধ্যে এ দোষগুলোর সমন্বয় ঘটে, সে মুনাফেক।

অনুরূপভাবে ঐ হাদীসটিও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “যার মধ্যে আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা নেই, তার মধ্যে ঈমান নেই।" এ হাদীসটিও পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে যে, "মু'মিন ব্যক্তি মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত হতে পারে না।" এখন এখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঐসব বাণী লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে, যেগুলোর মধ্যে তিনি সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে এবং মিথ্যা ও প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকতে সরাসরি নির্দেশ করেছেন।

সত্য জান্নাতের দিকে এবং মিথ্যা দোযখের দিকে পরিচালিত করে
১৯৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেনঃ সত্য কথা বলা তোমাদের কর্তব্য। কেননা সিদক বা সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে এবং নেকী জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। যখন মানুষ সত্য বলে এবং সত্য গ্রহণ করে, তখন আল্লাহর দরবারে তার নাম সিদ্দীক বা সত্যবাদী হিসেবে লেখা হয়। মিথ্যার ব্যাপারে তোমরা সতর্ক থাক। কেননা মিথ্যা বদকর্মের দিকে নিয়ে যায় এবং বদকর্ম জাহান্নামে নিয়ে যায়। যখন মানুষ মিথ্যা বলে এবং মিথ্যা গ্রহণ করে, তখন আল্লাহর কাছে তার নাম মিথ্যাবাদী হিসেবে লিখিত হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ ، فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ ، وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقًا ، وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ ، فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ ، وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا » (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সত্য কথা বলার ফায়দা দুনিয়া ও আখিরাতে প্রচুর রয়েছে। সত্যবাদী ব্যক্তিকে মানুষ বিশ্বাস করে এবং সম্মান করে। মিথ্যাবাদী মানুষ প্রভাব-প্রতিপত্তির দ্বারা যা করতে পারে না, সত্যবাদী মানুষ তার সত্যবাদিতার দ্বারা তা করতে পারে। এমনকি কোন স্বার্থের সংঘাতের কারণে কোন ব্যক্তি শত্রু হয়ে গেলেও যখন সে আবেগমুক্ত হয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, তখন সত্যবাদীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে।

সত্য বলার নিয়ামত অফুরন্ত। এটা সকল মানুষের মধ্যে সৎকর্ম করার অভ্যাস সৃষ্টি করে এবং তাকে আল্লাহর দরবারে সিদ্দীকের পর্যায়ে উন্নীত করে। যে সিদ্দীকের পর্যায়ে উন্নীত হয়, সে কিয়ামতের দিন ভয়াবহ বিপদ থেকে মাহফূয থাকবে। আল্লাহ তাকে তার সত্যবাদিতার জন্য নিয়ামতভরা জান্নাত দান করবেন।

মিথ্যা কথা বলার অমঙ্গল অফুরন্ত। মিথ্যাবাদী ব্যক্তিকে তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ছেলে-মেয়ে কেউ বিশ্বাস করে না। মিথ্যাবাদী ব্যক্তি প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী হওয়ার কারণে মানুষ তার সাথে স্বার্থের কারণে সম্পর্কিত হলেও অন্তর থেকে তারা তাকে ঘৃণা করে।

মিথ্যা যাবতীয় পাপের মূল। এটা এক জঘন্য অপরাধ। মিথ্যার অভ্যাস মানুষকে দুষ্কর্মের দিকে পরিচালিত করে এবং আল্লাহর দফতরে তার নাম মিথ্যাবাদী হিসেবে লিখিত হয়। দুষ্কর্মের কারণে যার নাম আল্লাহর দফতরে মিথ্যাবাদী তথা জঘন্য অপরাধকারী হিসেবে লিখিত হয়, তার জন্য জাহান্নামের কঠিন আযাব অবধারিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান