মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ১৮৩
আখলাক অধ্যায়
মন্দ সাথীর চেয়ে একাকিত্ব এবং একাকিত্ব থেকে ভাল সাথী উত্তম
১৮৩. হযরত ইমরান ইবন হিত্তান (রা) বলেন, আমি আবু যর (রা)-এর খিদমতে হাযির হলাম এবং তাঁকে কাল চাদর আবৃত অবস্থায় মসজিদে একাকী পেলাম। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু যর! কেন এ একাকী? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, মন্দ সাথীর সাথে থাকার চেয়ে একাকিত্ব উত্তম, এবং ভাল সাথীর সঙ্গে বসা একাকিত্ব থেকে উত্তম, উত্তম বচন নীরবতা থেকে উত্তম এবং নীরবতা মন্দ বচন থেকে উত্তম। (বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الاخلاق
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حِطَّانَ قَالَ : لَقِيتُ أَبَا ذَرٍّ فَوَجَدْتُهُ فِي الْمَسْجِدِ مُخْتَبِئًا بِكِسَاءٍ أَسْوَدَ وَحْدَهُ ، فَقَالَ : يَا أَبَا ذَرٍّ ، مَا هَذِهِ الْوَحْدَةُ؟ فَقَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " الْوَحْدَةُ خَيْرٌ مِنْ جَلِيسِ السَّوْءِ ، وَالْجَلِيسُ الصَّالِحُ خَيْرٌ مِنَ الْوَحْدَةِ ، وَإِمْلَاءُ الْخَيْرِ خَيْرٌ مِنَ السُّكُوتِ ، وَالسُّكُوتُ خَيْرٌ مِنْ إِمْلَاءِ الشَّرِّ " (رواه البيهقى فى شعب الايمان)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

মন্দ সাথীদের সাথে উঠা-বসা করা অনুচিত। মন্দ সাথীদের মজলিসে যোগদান করা অন্যায় ও অনুচিত। মন্দ ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে বা তাদের সাথে চলাফেরা করলে তাদের মন্দ আমলের প্রভাব ভাল মানুষের উপর পড়তে পারে। তাই মন্দ সাথী এবং তাদের সাথে উঠা-বসা করা থেকে দূরে থাকা বা তাদের সংশ্রব ত্যাগ করে একাকী যিন্দেগী যাপন করা উত্তম। কিন্তু আল্লাহর দীন মানুষের কাছে পৌছানো বা আল্লাহর বান্দাদেরকে সংশোধন করার উদ্দেশ্যে মন্দ মানুষের সাথে মেলামেশা করা নাজায়েয নয়। বরং আল্লাহর বাণী পৌঁছান ও সংশোধন করার চেষ্টা করা মু'মিন বান্দার কর্তব্য। পাপী ব্যক্তিকে ঘৃণা না করে পাপকে ঘৃণা করতে হবে এবং মন্দ ব্যক্তিকে পাপের সমুদ্র থেকে উদ্ধার করার ঐকান্তিক ইচ্ছা বিশ্বাসী ব্যক্তির থাকা উচিত। প্রশ্ন হল, বারবার দাওয়াত দেয়ার বা নসীহত করার পরও যখন কোন ব্যক্তি দাওয়াত কবুল করে না, বরং বিরোধিতা করে, তখন দাওয়াত প্রদানকারীর কর্তব্য কি হবে? দাওয়াত প্রদানকারী কি এ ধরনের বান্দার পেছনে সময় ব্যয় করবেন? দাওয়াত প্রদান করা ঈমানদার ব্যক্তির দীনি কর্তব্য। বলপূর্বক কাউকে হিদায়াত দান করা যাবে না। মানুষকে হিদায়াত করা বা না করা একমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভর করে এবং তিনি আকাঙ্ক্ষী বান্দাদেরকে হিদায়াত করেন। তাই দাওয়াত দান করার পর বিরোধিতা শুরু হলে বা কোনরূপ ফল না পাওয়া গেলে বিশ্বাসী ব্যক্তি আল্লাহর অন্য বান্দাদের কাছে ইসলামের পয়গাম পেশ করতে পারেন।

উত্তম সাথী থাকা অবস্থায় একাকী যিন্দেগী যাপন করাকে পসন্দ করা হয়নি। যারা ইসলামের সমাজ-জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী যিন্দেগী যাপন করার জন্য বিভিন্ন বাহানা ও অজুহাত তালাশ করেন, তাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, ইসলামে কোনরূপ বৈরাগ্যবাদের স্থান নেই এবং রাসূলের আদর্শ হল সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করা এবং আল্লাহর বান্দাদের কাছে আল্লাহর দীনকে পেশ করা। তাই উত্তম কথাকে নীরবতা থেকে শ্রেয় আখ্যায়িত করা হয়েছে। উত্তম কথা বলা মু'মিনের ঈমানের অপরিহার্য অংশ। কোন কোন ক্ষেত্রে উত্তম কথা না বলে নীরবতা অবলম্বন করলে গুনাহ হবে। একমাত্র মন্দ বচন ও অসঙ্গত কালাম থেকে জিহ্বার হিফাযত করতে হবে। অন্য কোন অবস্থায় নীরবতা অবলম্বন করা যাবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান