মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ১৮২
আখলাক অধ্যায়
দীর্ঘ নীরবতা ও উত্তম আচরণ দুনিয়াতে হালকা, আখিরাতে ভারী
১৮২. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ﷺ বললেনঃ হে আবু যর! আমি কি তোমাকে এমন দুটো অভ্যাস বলব না যা দুনিয়ার বুকে হালকা এবং আখিরাতের মীযানে ভারী? আবু যর বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন। নবী ﷺ বললেন: দীর্ঘ নীরবতা ও উত্তম আচরণ। যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! মাখলূকের আমলের মধ্যে এ দুটো আমল বে-মিসাল বা অতুলনীয়। (বায়হাকীঃ শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَنَسٍ ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : " يَا أَبَا ذَرٍّ ، أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى خَصْلَتَيْنِ هُمَا أَخَفُّ عَلَى الظَّهْرِ ، وَأَثْقَلُ فِي الْمِيزَانِ؟ " قُلْتُ : بَلَى ، قَالَ : " طُولُ الصَّمْتِ ، وَحُسْنُ الْخُلُقِ ، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا عَمِلَ الْخَلَائِقُ بِمِثْلِهِمَا " (رواه البيهقى فى شعب الايمان)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

দীর্ঘ নীরবতার অর্থ হল অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা। যে অপ্রয়োজনীয় ও অন্যায় কথাবার্তা থেকে নিজের জিহ্বার হিফাযত করে, সে নিজেকে অনেক পাপ থেকে রক্ষা করে এবং যে পাপ হতে নিজেকে রক্ষা করে, সে আখিরাতের মীযানে নিজের নেক আমলকে অনেক ভারী পাবে।

মানুষের সাথে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা না বলা বা মানুষের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘরের কোণে আবদ্ধ থাকার দলীল হিসেবে এ হাদীস ব্যবহার করা অনুচিত। স্বয়ং নবী করীম ﷺ দীর্ঘ নীরবতা পালনকারী ছিলেন। অথচ তিনি দিন-রাত আল্লাহর দীনকে বিভিন্নভাবে মানুষের কাছে পেশ করেছেন। আল্লাহর দীনের দাওয়াত পেশ করার জন্য বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন। মানুষের কাছে দাওয়াত পেশ করার সামান্য সুযোগও হারাননি তিনি। তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে তালীম ও তারবিয়াত দিয়েছেন। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য বা পরিবার-পরিজনকে সুখী ও সন্তুষ্ট করার জন্য। যতটুকু কথাবর্তা বলার প্রয়োজন হতো, ততটুকু কথা তিনি বলতেন। এছাড়া যে সামান্য সময় থাকত সে সময়ে তিনি নীরবতা পালন করতেন, আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতেন। তাই নীরবতা পালনের ক্ষেত্রে নবী করীম ﷺ-এর আদর্শ আমাদের জন্য অনুসরণযোগ্য।

বান্দার উত্তম আচরণও আখিরাতের পাল্লায় খুব ভারী। উত্তম আচরণের দ্বারা মানুষের সমাজে মহব্বত ও হৃদ্যতার সৃষ্টি হয় এবং আল্লাহর দীনের প্রচার ও প্রসার খুব সহজ হয়। তাই আল্লাহ কিয়ামতের দিন উত্তম আচরণের প্রতিদান খুব বেশি দিবেন। দীর্ঘ নীরবতা ও উত্তম আচরণ আমল হিসেবে মোটেই কঠিন নয়, বরং যে কোন মানুষ অনায়াসে তা করতে পারে। অথচ আখিরাতের আদালতে এ দুটো সাধারণ কাজের জন্য অনেক সওয়াব দান করা হবে। নবী করীম ﷺ এ দুটো অভ্যাসকে বান্দার অতুলনীয় আমল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান