মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং: ৯৮
রিকাক অধ্যায়
যে জিনিস হযরত মু'আয (রা)-কে কাঁদিয়েছে
৯৮. হযরত উমর ইবন খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত, একদিন তিনি মসজিদে নববীর দিকে রওনা হলেন এবং সেখানে মু'আয (রা) ইবন জাবালকে পেলেন। তিনি নবী করীম ﷺ-এর রওযার কাছে বসে কাঁদছিলেন। উমর (রা) জিজ্ঞেস করলেন, কি জিনিস তোমাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে যা শুনেছিলাম তা আমাকে কাঁদাচ্ছে। তিনি বলেছেন: সামান্য রিয়া ও শিরক এবং যে আল্লাহর দোস্তের সাথে শত্রুতা করল, সে অবশ্যই আল্লাহর সাথে দ্বন্দুযুদ্ধে অবতীর্ণ হল। আল্লাহ মহব্বত করেন কর্তব্যপরায়ণ মুত্তাকী এবং গোপনে ইবাদতকারীদেরকে, যারা অদৃশ্য হলে কেউ তাদের সন্ধান করে না এবং যারা উপস্থিত থাকলে কেউ তাদের আহবান করে না এবং নিকটেও যায় না। তাদের অন্তর হিদায়াতের চেরাগ এবং তারা ফিতনার অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসেন। (ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী: শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الرقاق
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ، أَنَّهُ خَرَجَ يَوْمًا إِلَى مَسْجِدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَوَجَدَ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ قَاعِدًا عِنْدَ قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْكِي؟ فَقَالَ : مَا يُبْكِيكَ؟ قَالَ : يُبْكِينِي شَيْءٌ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ : « إِنَّ يَسِيرَ الرِّيَاءِ شِرْكٌ ، وَإِنَّ مَنْ عَادَى لِلَّهِ وَلِيًّا ، فَقَدْ بَارَزَ اللَّهَ بِالْمُحَارَبَةِ ، إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْأَبْرَارَ الْأَتْقِيَاءَ الْأَخْفِيَاءَ ، الَّذِينَ إِذَا غَابُوا لَمْ يُفْتَقَدُوا ، وَإِنْ حَضَرُوا لَمْ يُدْعَوْا ، وَلَمْ يُعْرَفُوا قُلُوبُهُمْ مَصَابِيحُ الْهُدَى ، يَخْرُجُونَ مِنْ كُلِّ غَبْرَاءَ مُظْلِمَةٍ » (رواه ابن ماجه والبيهقى فى شعب الايمان)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রিয়া খুবই ঘৃণিত আমল। পানি যেভাবে আগুন নিভিয়ে দেয় সেভাবে রিয়া সৎকর্মের নূরকে নিভিয়ে দেয়। রিয়াকার তার নিজের সুনাম ও জনপ্রিয়তার জন্য কাজ করে। এটা সৎকর্মের লেবাসে এক নিকৃষ্ট ধরনের শিরক। আল্লাহ রিয়াকারদের উপর অসন্তুষ্ট। তিনি তাদের প্রদর্শিত আমল কবুল করবেন না। লোক দেখানোর জন্য সাহায্য করা হলে বা কোন কাজ করার সময় সামান্য প্রদর্শনমূলক মনোভাব ও আচরণ করলে তা 'রিয়া' হিসেবে গণ্য হবে এবং ছোট রিয়াও শিরকের মধ্যে শামিল। খুব সতর্কতার সাথে সৎকর্ম এবং ইবাদত না করলে তা পুণ্যদানকারী না হয়ে আযাবদানকারী হবে। কোন নফল ইবাদত না করলে আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন না কিন্তু রিয়ার সাথে যে ইবাদত করা হবে, তা শাস্তির যোগ্য অপরাধ হবে। যারা আল্লাহকে ভালবাসেন এবং রিয়ার হাকীকত সম্পর্কে ওয়াকিফহাল, তারা রিয়ার আগুন থেকে নিজেকে বাঁচবার জন্য সর্বদা চিন্তিত ও সতর্ক থাকেন। তারা গোপনে ইবাদত করেন। তারা চোখের অন্তরালে সৎকর্ম করেন।

যেসব বান্দা যথাযথভাবে কর্তব্য সম্পাদন করেন, জীবনের যাবতীয় ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে চলেন এবং মানুষের চোখের অন্তরালে সৎকর্ম করেন, সেসব বান্দা খুবই ভাগ্যবান এবং তারা কখনো আল্লাহর রহমত ও নিআমত থেকে বঞ্চিত হবেন না।

অনেক সৎকর্ম ও ফরয রয়েছে যা মানুষের চোখের অন্তরালে করা সম্ভব নয়, বরং অসংখ্য মানুষের সামনে তা করতে হয়। যেমন দীনের দাওয়াত পেশ করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য পালনীয় যিম্মাদারী এবং তা মানুষের সামনে পেশ করতে হয়। এ শ্রেনীর লোকও আল্লাহর মাহবুব বান্দা। তাদের কথা এ হাদীসে উল্লেখ না করার অর্থ এ নয় যে, তারা প্রকাশ্যে যে মহান যিম্মাদারী পালন করছেন তার গুরুত্ব কম। কুরআন-হাদীস অনুসারে ইসলামের দাওয়াত পেশ করার যিম্মাদারী বিরাট এবং তার সওয়াবও অত্যধিক। তবে নিয়্যত পরিষ্কার রাখতে হবে। নিজের সম্মান বা প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর পয়গাম তাঁর বান্দাদের কাছে পেশ করতে হবে। বলা বাহুল্য, যারা আখিরাতের মহব্বতে দুনিয়ার যিন্দেগীর আরাম-আয়েশ কুরবান করেন, আল্লাহর দীনের পতাকা সমুন্নত করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন এবং প্রয়োজনবোধে প্রিয় জীবন আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেন, তারা আল্লাহর দোস্ত। যারা আল্লাহর দোস্তের কাজে বাধা দান করে, তারা নিজে তাদেরকে ঘৃণা করে এবং তাদের শত্রুতা করে বিরাট বিপদের ঝুঁকি গ্রহণ করে। কারণ আল্লাহর দোস্তদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করা বা যুদ্ধ করার অর্থ হল আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা শত্রুতা করা। আর আল্লাহর বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করবে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে ব্যর্থ ও অপমানিত হবে। নির্বুদ্ধিতার কারণে অনেক লোক এ ধরনের আল্লাহদ্রোহী বা আল্লাহর দোস্তদের বিরুদ্ধাচারণকারীদের সাময়িক সাফল্যকে খুব বড় চোখে দেখেন। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তাঁর বিদ্রোহী বান্দাদেরকে খুব বেশি শাস্তি প্রদান করার জন্য সাময়িক সাফল্য দান করেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান