মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ৯৭
রিকাক অধ্যায়
মু'আয (রা)-এর প্রতি রাসূল ﷺ-এর ১০টি উপদেশ
৯৭. মু'আয (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে দশটা জিনিসের উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: যদি তোমাকে হত্যা করা হয় এবং পোড়ান হয়, তবুও তুমি আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না। যদি তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পত্তি ছেড়ে বের হয়ে যেতে বলা হয়, তবু কখনো তোমার পিতামাতার অবাধ্যতা করবে না। কখনো ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ত্যাগ করবে না, কেননা যে এক ফরয নামায ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করে, তার জন্য আল্লাহর কোন যিম্মাদারী থাকে না। কখনো শরাব পান করবে না, কেননা শরাব সকল অশ্লীল কাজের মূল। গুনাহ থেকে সাবধান, কেননা গুনাহর কারণে আল্লাহর ক্রোধ নাযিল হয়। মানুষ তোমাকে হালাক করলেও জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করবে না। যদি তুমি কোন জনপদে থাক এবং তাদের মধ্যে মহামারী দেখা দেয়, তাহলে দৃঢ়পদে থাকবে। তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করবে, তাদেরকে আদব শিখানোর ব্যাপারে কোনরূপ শিথিলতা করবে না এবং আল্লাহ সম্পর্কে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করবে। (মুসনাদে আহমদ)
کتاب الرقاق
عَنْ مُعَاذٍ قَالَ : أَوْصَانِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَشْرِ كَلِمَاتٍ قَالَ : " لَا تُشْرِكْ بِاللهِ شَيْئًا وَإِنْ قُتِلْتَ وَحُرِّقْتَ ، وَلَا تَعُقَّنَّ وَالِدَيْكَ ، وَإِنْ أَمَرَاكَ أَنْ تَخْرُجَ مِنْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ ، وَلَا تَتْرُكَنَّ صَلَاةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّدًا؛ فَإِنَّ مَنْ تَرَكَ صَلَاةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ ، وَلَا تَشْرَبَنَّ خَمْرًا؛ فَإِنَّهُ رَأْسُ كُلِّ فَاحِشَةٍ ، وَإِيَّاكَ وَالْمَعْصِيَةَ؛فَإِنَّ بِالْمَعْصِيَةِ حَلَّ سَخَطُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ، وَإِيَّاكَ وَالْفِرَارَ مِنَ الزَّحْفِ وَإِنْ هَلَكَ النَّاسُ ، وَإِذَا أَصَابَ النَّاسَ مُوتٌ وَأَنْتَ فِيهِمْ فَاثْبُتْ ، وَأَنْفِقْ عَلَى عِيَالِكَ مِنْ طَوْلِكَ ، وَلَا تَرْفَعْ عَنْهُمْ عَصَاكَ أَدَبًا وَأَخِفْهُمْ فِي اللهِ " (رواه احمد)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
শিরক চূড়ান্ত পর্যায়ের অকৃতজ্ঞতা। আল্লাহর সত্তা, গুণাবলী এবং এখতিয়ারের সাথে কোন জিনিস, মানুষ, কোন প্রাণী বা বস্তুকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট করার নাম শিরক। আসমান-যমীনের তামাম জিনিসের মালিকানা ও বাদশাহী একমাত্র আল্লাহর। দুনিয়ার যাবতীয় জিনিসের জন্য তিনি যে বিধান দিয়েছেন তাকে যদি কেউ অস্বীকার করে অন্য বিধান প্রণয়ন করে, তাহলে সে আল্লাহর অধিকার ও এখতিয়ারের সাথে শিরক করল।
শিরক সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং এ অপরাধ কোন অবস্থাতে করা বৈধ নয়। জীবন বিপন্ন হলেও আল্লাহর সাথে কোন সত্তা, বস্তু বা প্রতিষ্ঠানকে শরীক করা যাবে না। শত্রুর হুমকি বা জীবনের লোভে নিজের দীনকে পরিত্যাগ করা ঈমানদার ব্যক্তির স্বভাব-বিরুদ্ধ কাজ। ফিরাউনের দরবারের লোকজন এবং সারা দেশবাসীর সামনে যাদুকরগণ একত্ববাদ কবুল করার পর ফিরাউন তাদেরকে কঠিন শাস্তির হুমকি প্রদানের পরও তারা একত্ববাদ ত্যাগ করেননি। আরবের মুশরিকদের হাতে কত নরনারী প্রাণ দিয়েছেন; কিন্তু তাঁরা ঈমান ত্যাগ করেননি। বর্তমান শতাব্দীতেও বিভিন্ন দেশে অনেক আল্লাহর বান্দা ঈমানের বিনিময়ে জীবন খরিদ করেননি, বরং শিরক থেকে বাঁচবার জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। জীবন রক্ষা করার জন্য শুধুমাত্র মুখের দ্বারা সাময়িকভাবে কুফর ও শিরকের এলান করা যেতে পারে।
সন্তানের উপর পিতামাতার হক অত্যধিক। তাই পিতামাতার খিদমত করা, পিতামাতার কথা শোনা, তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখা সন্তানের কর্তব্য। পিতামাতার কোন হুকুম সন্তানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও তা পালন করতে হবে। কিন্তু সাধ্যাতীত কোন হুকুম করলে খুব নম্রভাবে তাদেরকে নিজের অক্ষমতার কথা বলতে হবে। তাদের আচরণ কঠিন ও পীড়াদায়ক হলেও 'উহ' শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করা যাবে না। কিন্তু তাদের হুকুম আল্লাহ ও রাসূলের হুকুমের বিপরীত হলে তা পালন করতে হবে না। তাদেরকে খুব বিনয়ের সঙ্গে তার কারণ বলতে হবে। কোন অবস্থাতেই তাদের সাথে কটু আচরণ করা যাবে না। পরিবার ও সম্পত্তি বর্জন করার হুকুম করলে তা পালন করার ব্যাপারেও শরীতসম্মত পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যদি তাদের এ হুকুম শরীআত মুতাবিক হয় বা তার দ্বারা শরীয়াতের কোন হুকুম লংঘিত না হয় কিংবা কোন লোকের বৈধ অধিকার উপেক্ষিত না হয় তাহলে তা পালন করা যাবে। পিতামাতার কল্যাণের জন্য সর্বদা দু'আ করা দরকার।
নামায দীনের স্তম্ভ। যেরূপ স্তম্ভ ধসে গেলে ইমারত ধসে যায়, সেরূপ নামায় ত্যাগ করলে ইসলামের বিল্ডিং অন্তর থেকে ধসে পড়বে। তাই নবী করীম ﷺ কোন অবস্থাতে নামায ত্যাগ করার অনুমতি দেননি। তায়েফবাসীদের পক্ষ থেকে সদকা, জিহাদ এবং সালাতকে সন্ধির বাইরে রাখার আবেদন করা হলে নবী করীম ﷺ নামায ছাড়া অপর দুটো জিনিসের ব্যাপারে তাদের আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন। কারণ নামায দ্বারা বান্দা তার প্রকৃত মুনিব ও মালিকের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করে। নামায বান্দার মনকে মনিবের তামাম হুকুম যথাযথভাবে পালন এবং পাপ-পঙ্কিল যিন্দেগী পরিহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। দুনিয়ার যাবতীয় প্রলোভন ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ইসলামের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য যে শক্তি ও মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন, তা নামাযের মাধ্যমে লাভ করা যায়। এ জন্য নামায কায়েম করা ইসলামী হুকুমতের অন্যতম ফরয বিধান। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
-"নামায কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।"
এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে যে, নামায কায়েম করতে হবে এবং নামায ত্যাগ করলে কুফর ও শিরকের বিপদে পতিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
নামায ত্যাগ করাকে পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কিরামের উম্মতদের বিপদের অন্যতম কারণ হিসেবে কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছেঃ
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
-"তাদের পর আসল পরবর্তীগণ, তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসা পরবশ হল। সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। (সূরা মারিয়ম : ৫৯)
আলোচ্য হাদীস এবং অনুরূপ অন্যান্য হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইমাম শাফিঈ নামায ত্যাগকারীকে হত্যা করার হুকুম দিয়েছেন। ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম মালিক নামায ত্যাগকারীকে ইসলামী শাসক কর্তৃক বন্দী করার এবং আরো যে কোন উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করার পক্ষে রায় দিয়েছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করার সামান্যতম অজুহাতও ইসলামে নেই।
শরাব যাবতীয় অশ্লীল কাজের উৎস। তাই শরাবকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবন থেকে নির্মূল করা একান্ত আবশ্যক। যে মুসলমান শরাব পান করাকে হারাম জ্ঞান করে বা নিজে শরাব পান করে না, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শরাবকে অবৈধ ঘোষণা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না, মনে করে তাতে দেশের আয় বৃদ্ধি হবে কিংবা শরাব খরিদ-বিক্রির পরিকল্পনার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে, সে গুনাহগার হবে। হয় সে শরাব বন্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করবে, না হয় পরিকল্পনাকারীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে। শরাবসহ প্রত্যেক দুষ্কর্ম আল্লাহর গযব আহবান করে। তাই ছোট-বড় সকল গুনাহ পরিহার করা উচিত।
মহামারী থেকে পলায়ন করার অর্থ হল পলায়নকারীর মনে বিপন্ন মানবতার জন্য কোন সহানুভূতি নেই। ঈমানদার ব্যক্তির মনে বিপন্ন মানবতার জন্য মহব্বত থাকে এবং তিনি মনে করেন যে, যাবতীয় মঙ্গল এবং অমঙ্গল আল্লাহর কাছ থেকে আসে। মহামারী থেকে পলায়ন করা বা বিপন্ন মানুষকে সাহায্য না করা মানবতা বিরোধী কাজ। যুদ্ধ থেকে পলায়ন করা কঠিন গুনাহ। যুদ্ধ থেকে পলায়নকারীকে আল্লাহ কখনো পসন্দ করেন না। আর তাই নবী করীম ﷺ এই দুটি ক্ষেত্র থেকে না পলানোর উপদেশ দিয়েছেন।
সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ করা যেমন কর্তব্য, তেমনি তাদেরকে আদব-আখলাক এবং দীন সম্পর্কে শিক্ষাদান করাও কর্তব্য। আল্লাহকে ভয় করে যিন্দেগী যাপন করার জন্য পরিবার-পরিজনকে হুকুম করতে হবে। পরিবার-পরিজনকে ইসলামী শিক্ষাদান করার ব্যাপারে কোনরূপ ত্রুটি বা দুর্বলতা প্রদর্শন করা উচিত নয়। এ ব্যাপারে সামান্য শিথিলতা করলে মারাত্মক লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ ফরমাচ্ছেনঃ
قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
"তোমাদের নিজেদেরকে এবং পরিবার-পরিজনকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর।"
আফসোস! বর্তমানকালে আমরা ছেলেমেয়েদেরকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তৈরি করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করি; কিন্তু তাদের আখিরাতের সুদীর্ঘ যিন্দেগীকে সুন্দর ও সুখময় করার জন্য বিন্দুমাত্র চেষ্টা করি না। মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ছেলেমেয়েদেরকে ইসলামী তা'লীম-তারবিয়াত, কুরআন-হাদীসের জ্ঞান (অর্থসহ কুরআন পাঠের ব্যবস্থা) দান না করলে কিয়ামতের দিন লজ্জিত হতে হবে।
শিরক সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং এ অপরাধ কোন অবস্থাতে করা বৈধ নয়। জীবন বিপন্ন হলেও আল্লাহর সাথে কোন সত্তা, বস্তু বা প্রতিষ্ঠানকে শরীক করা যাবে না। শত্রুর হুমকি বা জীবনের লোভে নিজের দীনকে পরিত্যাগ করা ঈমানদার ব্যক্তির স্বভাব-বিরুদ্ধ কাজ। ফিরাউনের দরবারের লোকজন এবং সারা দেশবাসীর সামনে যাদুকরগণ একত্ববাদ কবুল করার পর ফিরাউন তাদেরকে কঠিন শাস্তির হুমকি প্রদানের পরও তারা একত্ববাদ ত্যাগ করেননি। আরবের মুশরিকদের হাতে কত নরনারী প্রাণ দিয়েছেন; কিন্তু তাঁরা ঈমান ত্যাগ করেননি। বর্তমান শতাব্দীতেও বিভিন্ন দেশে অনেক আল্লাহর বান্দা ঈমানের বিনিময়ে জীবন খরিদ করেননি, বরং শিরক থেকে বাঁচবার জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। জীবন রক্ষা করার জন্য শুধুমাত্র মুখের দ্বারা সাময়িকভাবে কুফর ও শিরকের এলান করা যেতে পারে।
সন্তানের উপর পিতামাতার হক অত্যধিক। তাই পিতামাতার খিদমত করা, পিতামাতার কথা শোনা, তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখা সন্তানের কর্তব্য। পিতামাতার কোন হুকুম সন্তানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও তা পালন করতে হবে। কিন্তু সাধ্যাতীত কোন হুকুম করলে খুব নম্রভাবে তাদেরকে নিজের অক্ষমতার কথা বলতে হবে। তাদের আচরণ কঠিন ও পীড়াদায়ক হলেও 'উহ' শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করা যাবে না। কিন্তু তাদের হুকুম আল্লাহ ও রাসূলের হুকুমের বিপরীত হলে তা পালন করতে হবে না। তাদেরকে খুব বিনয়ের সঙ্গে তার কারণ বলতে হবে। কোন অবস্থাতেই তাদের সাথে কটু আচরণ করা যাবে না। পরিবার ও সম্পত্তি বর্জন করার হুকুম করলে তা পালন করার ব্যাপারেও শরীতসম্মত পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যদি তাদের এ হুকুম শরীআত মুতাবিক হয় বা তার দ্বারা শরীয়াতের কোন হুকুম লংঘিত না হয় কিংবা কোন লোকের বৈধ অধিকার উপেক্ষিত না হয় তাহলে তা পালন করা যাবে। পিতামাতার কল্যাণের জন্য সর্বদা দু'আ করা দরকার।
নামায দীনের স্তম্ভ। যেরূপ স্তম্ভ ধসে গেলে ইমারত ধসে যায়, সেরূপ নামায় ত্যাগ করলে ইসলামের বিল্ডিং অন্তর থেকে ধসে পড়বে। তাই নবী করীম ﷺ কোন অবস্থাতে নামায ত্যাগ করার অনুমতি দেননি। তায়েফবাসীদের পক্ষ থেকে সদকা, জিহাদ এবং সালাতকে সন্ধির বাইরে রাখার আবেদন করা হলে নবী করীম ﷺ নামায ছাড়া অপর দুটো জিনিসের ব্যাপারে তাদের আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন। কারণ নামায দ্বারা বান্দা তার প্রকৃত মুনিব ও মালিকের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করে। নামায বান্দার মনকে মনিবের তামাম হুকুম যথাযথভাবে পালন এবং পাপ-পঙ্কিল যিন্দেগী পরিহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। দুনিয়ার যাবতীয় প্রলোভন ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ইসলামের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য যে শক্তি ও মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন, তা নামাযের মাধ্যমে লাভ করা যায়। এ জন্য নামায কায়েম করা ইসলামী হুকুমতের অন্যতম ফরয বিধান। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
-"নামায কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।"
এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে যে, নামায কায়েম করতে হবে এবং নামায ত্যাগ করলে কুফর ও শিরকের বিপদে পতিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
নামায ত্যাগ করাকে পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কিরামের উম্মতদের বিপদের অন্যতম কারণ হিসেবে কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছেঃ
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
-"তাদের পর আসল পরবর্তীগণ, তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসা পরবশ হল। সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। (সূরা মারিয়ম : ৫৯)
আলোচ্য হাদীস এবং অনুরূপ অন্যান্য হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইমাম শাফিঈ নামায ত্যাগকারীকে হত্যা করার হুকুম দিয়েছেন। ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম মালিক নামায ত্যাগকারীকে ইসলামী শাসক কর্তৃক বন্দী করার এবং আরো যে কোন উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করার পক্ষে রায় দিয়েছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করার সামান্যতম অজুহাতও ইসলামে নেই।
শরাব যাবতীয় অশ্লীল কাজের উৎস। তাই শরাবকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবন থেকে নির্মূল করা একান্ত আবশ্যক। যে মুসলমান শরাব পান করাকে হারাম জ্ঞান করে বা নিজে শরাব পান করে না, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শরাবকে অবৈধ ঘোষণা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না, মনে করে তাতে দেশের আয় বৃদ্ধি হবে কিংবা শরাব খরিদ-বিক্রির পরিকল্পনার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে, সে গুনাহগার হবে। হয় সে শরাব বন্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করবে, না হয় পরিকল্পনাকারীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে। শরাবসহ প্রত্যেক দুষ্কর্ম আল্লাহর গযব আহবান করে। তাই ছোট-বড় সকল গুনাহ পরিহার করা উচিত।
মহামারী থেকে পলায়ন করার অর্থ হল পলায়নকারীর মনে বিপন্ন মানবতার জন্য কোন সহানুভূতি নেই। ঈমানদার ব্যক্তির মনে বিপন্ন মানবতার জন্য মহব্বত থাকে এবং তিনি মনে করেন যে, যাবতীয় মঙ্গল এবং অমঙ্গল আল্লাহর কাছ থেকে আসে। মহামারী থেকে পলায়ন করা বা বিপন্ন মানুষকে সাহায্য না করা মানবতা বিরোধী কাজ। যুদ্ধ থেকে পলায়ন করা কঠিন গুনাহ। যুদ্ধ থেকে পলায়নকারীকে আল্লাহ কখনো পসন্দ করেন না। আর তাই নবী করীম ﷺ এই দুটি ক্ষেত্র থেকে না পলানোর উপদেশ দিয়েছেন।
সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ করা যেমন কর্তব্য, তেমনি তাদেরকে আদব-আখলাক এবং দীন সম্পর্কে শিক্ষাদান করাও কর্তব্য। আল্লাহকে ভয় করে যিন্দেগী যাপন করার জন্য পরিবার-পরিজনকে হুকুম করতে হবে। পরিবার-পরিজনকে ইসলামী শিক্ষাদান করার ব্যাপারে কোনরূপ ত্রুটি বা দুর্বলতা প্রদর্শন করা উচিত নয়। এ ব্যাপারে সামান্য শিথিলতা করলে মারাত্মক লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ ফরমাচ্ছেনঃ
قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
"তোমাদের নিজেদেরকে এবং পরিবার-পরিজনকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর।"
আফসোস! বর্তমানকালে আমরা ছেলেমেয়েদেরকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তৈরি করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করি; কিন্তু তাদের আখিরাতের সুদীর্ঘ যিন্দেগীকে সুন্দর ও সুখময় করার জন্য বিন্দুমাত্র চেষ্টা করি না। মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ছেলেমেয়েদেরকে ইসলামী তা'লীম-তারবিয়াত, কুরআন-হাদীসের জ্ঞান (অর্থসহ কুরআন পাঠের ব্যবস্থা) দান না করলে কিয়ামতের দিন লজ্জিত হতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)