মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ৯০
রিকাক অধ্যায়
বার্ধক্যের পূর্বে যৌবন, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতা, অভাবের পূর্বে প্রাচুর্য, ব্যস্ততার পূর্ব অবসর এবং মৃত্যুর পূর্বে জীবনের সদ্ব্যবহার কর
৯০. হযরত আমর ইবন মায়মুন আওদী (রা) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল ﷺ এক ব্যক্তিকে নসীহত করার সময় বলেছেন: পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসের সদ্ব্যবহার কর। তোমার বার্ধক্যের পূর্বে তোমার যৌবনের, তোমার অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতার, তোমার অভাবের পূর্বে তোমার প্রাচুর্যের, তোমার কর্মব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসরের এবং তোমার মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনের। (তিরমিযী)
کتاب الرقاق
عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ الْأَوْدِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِرَجُلٍ وَهُوَ يَعِظُهُ : " اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ , شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ , وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ , وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ , وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغُلِكَ , وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ " (رواه الترمذى)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীসে পাঁচটা জিনিসের পূর্বে পাঁচটা জিনিসের সদ্ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। সদ্ব্যবহার করার অর্থ হল, আল্লাহ যে পাঁচটা নিয়ামত দিয়েছেন সেগুলোকে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল ও আখিরাতের যিন্দেগীতে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সদ্ব্যবহার করতে হবে। মু'মিন ব্যক্তি আগামীকালের জন্য কোন নেক আমল ফেলে রাখেন না। আগামীকাল কি ঘটবে তা কারো জানা নেই।
বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে ইবাদত-বন্দেগীতে নিয়োজিত করার প্রয়োজন রয়েছে। ইবাদত-বন্দেগীর জন্য প্রচুর উদ্যম ও শক্তির প্রয়োজন, যৌবনকালে মানুষ যত বেশি ইবাদত-বন্দেগী করতে সক্ষম, বার্ধক্যকালে তত বেশি করতে সক্ষম নয়। বার্ধক্যের বোঝা বহন করে সুন্দর ও নিখুঁতভাবে ইবাদত-বন্দেগী করা সম্ভব নয়। যৌবনকালে যে ইবাদত-বন্দেগী করা হয়, তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। কিয়ামতের দিন অসহনীয় সূর্যতাপের মধ্যে যারা আল্লাহর আরশের ছায়া পেয়ে প্রাণ শীতল করবেন তাদের একজন হলেন, যিনি আল্লাহর ইবাদতে নিজের যৌবনকে নিয়োজিত করেছেন।
স্বাস্থ্য আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত। স্বাস্থ্য ভাল থাকা অবস্থায় আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করা একান্ত আবশ্যক। মানুষ কখন রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে তা সে জানে না। সুস্থ অবস্থাকে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তষ্টি হাসিলের জন্য ব্যবহার করতে হবে। যারা এ ব্যাপারে অলসতা করে এবং সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে কাজে নিয়োজিত করে সফলতা অর্জন করে না, তারা মস্ত বোকামী করে এবং তাদের পরিণাম ফল খারাপ হবে।
প্রাচুর্য আল্লাহর অপূর্ব নিয়ামত, এটা চিরস্থায়ী ও অফুরন্ত নয়। যে কোন সময় এ নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দান-খয়রাতের দ্বারা বুলন্দ মরতবা হাসিল করার ক্ষেত্রে কোনরূপ গড়িমসি করা বা আজ নয় কাল করার মনোভাব পোষণ করা উচিত নয়। সময়মত সম্পদকে যথাযথ ব্যয় না করা শুধু সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়, তাতে গুনাহও রয়েছে। যে ব্যক্তির উপর হজ্জ করা ফরয ছিল, সে যদি অবহেলাবশত হজ্জ পালন না করে থাকে এবং পরবর্তীকালে সম্পদ না থাকার কারণে তা সম্পাদন না করতে পারে, তাহলে মালদার অবস্থায় হজ্জ না করার জন্য গুনাহগার হবে।
অবসরও এক ধরনের নিয়ামত। আল্লাহ কোন মানুষকে জীবিকার জন্য দিন-রাত মশগুল রাখেন, আবার কোন কোন ব্যক্তিকে অতি সহজে তা দান করেন। এভাবে অবসর দান করে বা ব্যস্ত রেখে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন। আমাদের সমাজে এ অনুভূতি খুবই কম। অনেক দুর্ভাগ্যবান ব্যক্তি নিজের মূল্যবান অবসর সময়কে সৎকর্মে ব্যয় না করে তাস-পাশা, খোশগল্প বা বাজে পুস্তক পাঠে ব্যয় করেন। আল্লাহ কিয়ামতের দিন মানুষকে তার সময় সম্পর্কে সওয়াল করবেন। তাই পরকালের যিন্দেগীতে যাতে লজ্জিত ও লাঞ্ছিত হতে না হয় তার জন্য কর্মব্যস্ততার পূর্বে অবসরের সদ্ব্যবহার করা উচিত।
যিন্দেগী সবচেয়ে অনির্ভরযোগ্য ও ক্ষণস্থায়ী। এক মুহূর্তের খবরও মানুষের জানা নেই। যে কোন মুহূর্তে পরপারের নোটিশ আসতে পারে এবং নোটিশ এসে গেলে শত চেষ্টা করেও রেহাই পাওয়া যাবে না। মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হলে ইস্তেগফারের দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং মৃত্যু হয়ে গেলে আমলনামা সিল হয়ে যায়। অথচ মৃত্যুর পর থেকে বান্দা নতুন আচরণ ও নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে আল্লাহ ও রাসূলের হুকুমের অধীন করেনি এবং জীবনের, গাড়ি আনন্দ-স্ফূর্তির অলিগলিতে পরিচালনা করেছে, সে আখিরাতের যিন্দেগীতে অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা ও অন্ধকারের সম্মুখীন হবে। তার প্রতি পদক্ষেপ বিপদসঙ্কুল হবে। কবরে রাখার সাথে সাথে তাকে সওয়াল-জওয়াব করা হবে। তাই মৃত্যুর পূর্বে জীবনের পুঁজিকে কাজে নিয়োজিত করে আল্লাহর মহব্বত ও কুরবত হাসিলের চেষ্টা করা দরকার।
বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে ইবাদত-বন্দেগীতে নিয়োজিত করার প্রয়োজন রয়েছে। ইবাদত-বন্দেগীর জন্য প্রচুর উদ্যম ও শক্তির প্রয়োজন, যৌবনকালে মানুষ যত বেশি ইবাদত-বন্দেগী করতে সক্ষম, বার্ধক্যকালে তত বেশি করতে সক্ষম নয়। বার্ধক্যের বোঝা বহন করে সুন্দর ও নিখুঁতভাবে ইবাদত-বন্দেগী করা সম্ভব নয়। যৌবনকালে যে ইবাদত-বন্দেগী করা হয়, তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। কিয়ামতের দিন অসহনীয় সূর্যতাপের মধ্যে যারা আল্লাহর আরশের ছায়া পেয়ে প্রাণ শীতল করবেন তাদের একজন হলেন, যিনি আল্লাহর ইবাদতে নিজের যৌবনকে নিয়োজিত করেছেন।
স্বাস্থ্য আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত। স্বাস্থ্য ভাল থাকা অবস্থায় আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করা একান্ত আবশ্যক। মানুষ কখন রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে তা সে জানে না। সুস্থ অবস্থাকে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তষ্টি হাসিলের জন্য ব্যবহার করতে হবে। যারা এ ব্যাপারে অলসতা করে এবং সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে কাজে নিয়োজিত করে সফলতা অর্জন করে না, তারা মস্ত বোকামী করে এবং তাদের পরিণাম ফল খারাপ হবে।
প্রাচুর্য আল্লাহর অপূর্ব নিয়ামত, এটা চিরস্থায়ী ও অফুরন্ত নয়। যে কোন সময় এ নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দান-খয়রাতের দ্বারা বুলন্দ মরতবা হাসিল করার ক্ষেত্রে কোনরূপ গড়িমসি করা বা আজ নয় কাল করার মনোভাব পোষণ করা উচিত নয়। সময়মত সম্পদকে যথাযথ ব্যয় না করা শুধু সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়, তাতে গুনাহও রয়েছে। যে ব্যক্তির উপর হজ্জ করা ফরয ছিল, সে যদি অবহেলাবশত হজ্জ পালন না করে থাকে এবং পরবর্তীকালে সম্পদ না থাকার কারণে তা সম্পাদন না করতে পারে, তাহলে মালদার অবস্থায় হজ্জ না করার জন্য গুনাহগার হবে।
অবসরও এক ধরনের নিয়ামত। আল্লাহ কোন মানুষকে জীবিকার জন্য দিন-রাত মশগুল রাখেন, আবার কোন কোন ব্যক্তিকে অতি সহজে তা দান করেন। এভাবে অবসর দান করে বা ব্যস্ত রেখে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন। আমাদের সমাজে এ অনুভূতি খুবই কম। অনেক দুর্ভাগ্যবান ব্যক্তি নিজের মূল্যবান অবসর সময়কে সৎকর্মে ব্যয় না করে তাস-পাশা, খোশগল্প বা বাজে পুস্তক পাঠে ব্যয় করেন। আল্লাহ কিয়ামতের দিন মানুষকে তার সময় সম্পর্কে সওয়াল করবেন। তাই পরকালের যিন্দেগীতে যাতে লজ্জিত ও লাঞ্ছিত হতে না হয় তার জন্য কর্মব্যস্ততার পূর্বে অবসরের সদ্ব্যবহার করা উচিত।
যিন্দেগী সবচেয়ে অনির্ভরযোগ্য ও ক্ষণস্থায়ী। এক মুহূর্তের খবরও মানুষের জানা নেই। যে কোন মুহূর্তে পরপারের নোটিশ আসতে পারে এবং নোটিশ এসে গেলে শত চেষ্টা করেও রেহাই পাওয়া যাবে না। মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হলে ইস্তেগফারের দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং মৃত্যু হয়ে গেলে আমলনামা সিল হয়ে যায়। অথচ মৃত্যুর পর থেকে বান্দা নতুন আচরণ ও নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে আল্লাহ ও রাসূলের হুকুমের অধীন করেনি এবং জীবনের, গাড়ি আনন্দ-স্ফূর্তির অলিগলিতে পরিচালনা করেছে, সে আখিরাতের যিন্দেগীতে অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা ও অন্ধকারের সম্মুখীন হবে। তার প্রতি পদক্ষেপ বিপদসঙ্কুল হবে। কবরে রাখার সাথে সাথে তাকে সওয়াল-জওয়াব করা হবে। তাই মৃত্যুর পূর্বে জীবনের পুঁজিকে কাজে নিয়োজিত করে আল্লাহর মহব্বত ও কুরবত হাসিলের চেষ্টা করা দরকার।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)