মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং: ৮১
রিকাক অধ্যায়
যাদেরকে আল্লাহ শোকরগুযার বান্দা হিসেবে লিখবেন
৮১. হযরত আমর ইবন শু'আয়ব থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা থেকে এবং পিতা তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার মধ্যে দুটো স্বভাব রয়েছে, আল্লাহ তাকে শোকরগুযার ও সবরকারী হিসেবে লিখবেন। যে দীনের ব্যাপারে তার চেয়ে অধিক মর্যাদার অধিকারীর দিকে নজর করে ও তাকে অনুসরণ করে: আর দুনিয়ার ব্যাপারে তার চেয়ে নিম্ন মর্যাদার অধিকারীর দিকে নজর করে এবং আল্লাহ তাকে যে নিয়ামত দান করেছেন তার জন্য প্রশংসা করে, তাকে আল্লাহ শোকরগুযার ও সবরকারী হিসেবে লিখবেন। যে দীনের ব্যাপারে তার নিম্ন মর্যাদার অধিকারীর দিকে নজর করে এবং দুনিয়ার ব্যাপারে তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদার অধিকারীর দিকে নজর করে এবং যা তাকে দান করা হয়নি তার জন্য আফসোস করে, আল্লাহ তার নাম, শোকরগুযার ও সবরকারী হিসেবে লিখবেন না। (তিরমিযী)
کتاب الرقاق
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ ، عَنْ جَدِّهِ عَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : « خَصْلَتَانِ مَنْ كَانَتَا فِيهِ كَتَبَهُ اللَّهُ شَاكِرًا صَابِرًا ، وَمَنْ لَمْ تَكُونَا فِيهِ لَمْ يَكْتُبْهُ اللَّهُ شَاكِرًا وَلَا صَابِرًا ، مَنْ نَظَرَ فِي دِينِهِ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَهُ فَاقْتَدَى بِهِ ، وَنَظَرَ فِي دُنْيَاهُ إِلَى مَنْ هُوَ دُونَهُ فَحَمِدَ اللَّهَ عَلَى مَا فَضَّلَهُ اللهُ عَلَيْهِ كَتَبَهُ اللَّهُ شَاكِرًا وَصَابِرًا ، وَمَنْ نَظَرَ فِي دِينِهِ إِلَى مَنْ هُوَ دُونَهُ ، وَنَظَرَ فِي دُنْيَاهُ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَهُ فَأَسِفَ عَلَى مَا فَاتَهُ مِنْهُ لَمْ يَكْتُبْهُ اللَّهُ شَاكِرًا وَلَا صَابِرًا » (رواه الترمذى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

দীনের ব্যাপারে নজর উর্ধ্বমুখী করার মধ্যে ফায়দা রয়েছে। সৎকর্মের জন্য মনের মধ্যে ঈর্ষা পোষণ করা বা ভাল কাজ করার জন্য কারো সাথে প্রতিযোগিতা করার মধ্যে কোন লোকসান নেই, বরং কল্যাণ রয়েছে। যে সৎ নিয়্যত সহকারে দীনি কাজে প্রতিযোগিতা করে, সে নিজেকে উন্নত করে। যে দীনি কাজে ঊর্ধ্বতন মর্যাদার অধিকারীর দিকে দৃষ্টিপাত করে এবং তাকে অনুসরণ করে, সে দীনের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য শ্রম ও মেহনত করে। অনেক লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বস্তু ত্যাগ করে এবং নফসের অনেক দাবি প্রত্যাখ্যান করে। বস্তুত নফসের সাথে অবিরাম সংগ্রাম করার কারণে সে নিজের মধ্যে সবর ও শোকরের গুণাবলী সৃষ্টি করে।

অনুরূপভাবে যখন সে দুনিয়ার ব্যাপারে তার চেয়ে কম সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী ব্যক্তির দিকে নজর করে, তখন সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ এবং নিজের বিত্ত ও সম্পদের উপর সন্তুষ্ট থাকে। বান্দা যখন তার অবস্থার উপর সন্তুষ্ট থাকে এবং যা আল্লাহ তাকে দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তখন আল্লাহও তার উপর সন্তুষ্ট হন। দুনিয়া ও আখিরাতে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। তাই এ দুটো গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ সবর ও শোকরের বুলন্দ মাকাম দান করেন।

হাদীসের শেষাংশে বলা হয়েছে, এ দুটো স্বভাবের বিপরীত স্বভাব যাদের রয়েছে তাদেরকে শোকরগুযার ও সবরকারী হিসেবে গণ্য করা হবে না। যার ভিতর এ দুটো গুণ নেই, তার মধ্যে বিপরীতধর্মী দুটো মন্দ অভ্যাস সৃষ্টি হয়। দীনের ব্যাপারে সে নীচের দিকে নজর দেয়ার কারণে তার তরক্কী না হয়ে বরং অবনতি হয় এবং দুনিয়ার ব্যাপারে উপরের দিকে নজর দেয়ার কারণে তার মন হিংসা ও অশান্তির অনলে পুড়তে থাকে। বান্দা যখন তার দোষে নিজেকে অশান্তি ও অবনতির দিকে ঠেলে দেয়, তখন আল্লাহ তাকে কি করে সবর ও শোকরের আলীশান মাকাম দান করতে পারেন? বরং এ দুটো বদ অভ্যাসের কারণে বান্দা যদি সীমা অতিক্রম করে বসে, তাহলে আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট ও নারায হবেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান